somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

....................একটি ভৌতিক রাতের কাবজাব শিৎকার-চিৎকার....................

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধার আকাশটায় তাকাতেই দূর দিগন্তের সোনালী আভাটা চোখে পড়লো। নজড়কারা, মায়াবী সৌন্দর্যের সে আলো ভেদ করে ছুটে চলছি আমার পথ ধরে। খন্ড খন্ড মেঘের টুকরা সোনালী আকাশটাকে ঢেকে দিচ্ছে। ক্রমেই মায়া জাল ভেদ করে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে আমার চলার পথটুকু। হঠাৎ পশ্চিম আকাশে নজড় পরতেই দেখি মেঘের অন্ধকার চেপে ধরেছে চাঁদের টুটি। প্রাণপণ চেষ্টায় যখন চাঁদটুকু মেঘের অন্ধকারের সাথে পেরে উঠেনি তখন সত্যি সত্যি আধা ভৌতিক হয়ে উঠলো চারদিক। এরই মাঝে আমি পথ চলছি আমার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

শশ্মানঘাটের এ রাস্তাটা বরাবরই লোকজন এড়িয়ে চলে কোন এক অজানা কারনে। দুপাশের ঘন বাঁশঝাড়, আশাপাশে মানুষের কোন বসবাস না থাকায় এ রাস্তাটা আসলেই কিছুটা ভৌতিক লাগে। লোক মুখে শুনেছি অমাবস্যার অন্ধকারে এ শশ্মানঘাটে অস্তিত্বহীনদের মেলা বসে। ফিসফাস আওয়াজ হয়, অট্রহাসির শব্দ শোনা যায়। কিন্তু কেউ কখনও কাউকে দেখেনি। সেদিন অস্তিত্বহীন শব্দটা শুনে আমি হাসি। একজন ধমক দিয়ে বললো, ওদের নাকি এভাবেই বলতে হয়। ভূত বললে নাকি ওদের সাহস বেড়ে যায় তখন মানুষদের ভয় দেখায়। আমি আবার হাসি। এবার ভূতখেকো মজিদ ভাই খেকিয়ে উঠে। আমার নাকি সাহস বেড়ে গেছে। কিছুটা দৃষ্টিকটু তার দাঁতের দিকে আমার নজর পরলো দেখলাম দাঁত থেকে রক্ত বের হচ্ছে।

শো শো বাতাস বইছে। মেঘেরা প্রাণপণে এদিক ওদিক ছুটছে। এরই মাঝে চাঁদটুকু কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখা যায়। আমি জোড়ে হাঁটা শুরু করলাম। যে করেই হোক বৃষ্টির আগেই শশ্মানঘাটটা পার হতে হবে। বাতাসে বাশেঁ বাশেঁ সংঘর্ষের চিৎকার ভেসে আসছে। প্রকৃতির আকুলতা সাথে তাল মিলিয়ে বাঁশঝাড়ের প্রাণীগুলো করুন সুরে ঢেকে যাচ্ছে। আমার সেদিকে নজড় দেওয়ার সময় কোথায়? আমি ছুটছি আমার গন্তব্যে। বাতাসের তীব্রতা বেড়েছে, সেই সাথে কিছুটা ঠান্ডাও লাগছে। বুঝতে পারলাম অল্প দূরে কোথাও হয়তো বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। মনে মনে ভাবছি যে করেই হোক বৃষ্টির আগেই শশ্মানঘাটটা পার হতে হবে। আশে পাশে কোন মানব বসতি বা বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোন কিছু নেই। যদিওবা ঠিক শশ্মানঘাট টার উপরে একটা কালী মন্দীর আছে। কিন্তু সেখানে একা একা দাঁড়ানো কি সম্ভব? ভাবছি আর দৌড়াচ্ছি।

নাকে ধূপের গন্ধ আর পুড়া কয়লার গন্ধ ভেসে আসলো। বুঝতে পারছি শশ্মানঘাটের খুব কাছে পৌছে গেছি। সামনে দিয়ে চোখ জ্বলজ্বল করে কিছু প্রাণী সরে গেলো শশ্মানঘাট টার দিকে। রাতের অন্ধকারে শেয়ালেরা নদীর পাড়ের এ নির্জন শশ্মানঘাটটায় আসে কাঁকড়া ধরে খাওয়ার জন্য। শো শো একটা আওয়াজ আসছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই বৃষ্টি ভিজিয়ে দিলো। দৌড়ে কালিমন্দিরটার বাড়ান্দাতে উঠলাম। হাফাচ্ছি। লুঙিটা কাঁচা মেরে কোমরের সাথে বেঁধে দাড়িঁয়ে আছি। ভয় কাটানোর জন্য কিছুটা অন্য মনস্কভাব তৈরী করার চেষ্টা করলাম।

ছপাৎ...... ছপাৎ....... শব্দ শোনা যাচ্ছে। অন্ধকারে দূরের কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। রাস্তায় জমে যাওয়া বৃষ্টির পানির উপর দিয়ে কেউ দৌড়াচ্ছে সেটা স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে। আমি উপুর হয়ে মন্দিরের বাড়ান্দাটায় বসে পড়লাম। কেউ একজন মন্দিরের দিকেই দৌড়ে আসতেছে। আমি মাথা নিচু করেই 'কুউহ'র মতোন শব্দ করলাম। লোকটা বাড়ান্দার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। ঘন ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ এ বৃষ্টির মাঝেও শোনা যাচ্ছে। আমি বসে থেকেই প্রাণপণে চিৎকার দিয়ে বললাম 'কেডা?'। মনে হলো কন্ঠ দিয়ে কোন শব্দ বের হলোনা। কিন্তু লোকটা উল্টো পথে আবার দৌড় শুরু করলো। আমিও কি বুঝে লোকটার পিছনে দৌড়ানো শুরু করলাম জানিনা। কিন্তু লোকটি সম্ভবতঃ আমার দৌড়ানির শব্দ পেয়ে আরো জোড়ে দৌড় দেওয়া শুরু করলো। আমিও লোকটির পিছনে জোড়ে দৌড়াতে থাকলাম।

কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখলাম ঐ লোকটির সামনে দিয়ে আরেকজন দৌড়াচ্ছে। আমিতো অবাক। তা দেখে আমার সামনের লোকটি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে গেলো। আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। সবার সামনের লোকটিও দাঁড়িয়ে গেলো এবং আমাদের দিকে আসা শুরু করলো। বৃষ্টির মাঝেও ক্রমাগত ঘামছি। ধীর পায়ে পিছনের দিকে হাঁটতে থাকলাম খুব সাবধানে, সর্ন্তপনে। ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরে তাকালাম আরো কেউ আছে কিনা দেখার জন্য। তখনি সামনে ঝোপ করে শব্দ হলো। দেখি সবার সামনে থাকা লোকটি লাফ দিয়ে ধান ক্ষেতে পড়ে গেলো আর আমার সামনের লোকটি সোজা দৌড় শুরু করলো বাজারের দিকে। আমিও উনার পিছনে পিছনে দৌড়াতে থাকলাম। আর পিছন থেকে ধানক্ষেত থেকে শোনা যাচ্ছে স্বদেশ পাগলার গালি।

সবাইকে রইলো ভূত মেলায় নেমন্ত্রণ
১৫টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×