হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারের জন্য ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। ১লা জুলাই থেকে এ টাকা আদায় শুরু হয়েছে। এ টাকা ছাড়া বিমান কর্তৃপক্ষ কোন যাত্রীর বোর্ডিং পাস ছাড় করছে না। বিষয়টি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ বাড়তি এ টাকা আদায় নিয়ে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। বিমানবন্দরে এলে হঠাৎ করেই টাকা নেয়া হচ্ছে। বিমানবন্দর এলাকায় গতকাল গিয়ে দেখা গেছে- অনেকের কাছে ৫০০ টাকা দেয়ার মতো টাকাও ছিল না। তাদের বিদায় জানাতে আসা স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে কেউ কেউ এ টাকা সংগ্রহ করেছেন। গতকাল ওমান, দুবাই ও মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের কাছ থেকে এ টাকা আদায় নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ধাক্কাধাক্কি থেকে শুরু করে গায়ে হাত তোলার ঘটনাও ঘটে। বিমান কর্তৃপক্ষ বাড়তি এ টাকা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নেয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ওমানগামী যাত্রী হারুন বলেন, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বোর্ডিং পাস নিতে গেলে কাউন্টার থেকে বলা হয় ৫০০ টাকা দিতে হবে। কেন টাকা দিতে হবে জানতে চাইলে বলা হয়- পদ্মা সেতুর জন্য। মালয়েশিয়াগামী যাত্রী নূর আলম বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য ৫০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে বলে বিমানের লোকজন জানিয়েছে।
এদিকে বাড়তি টাকা আদায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স রসিদের ব্যবস্থা করেছে। এতে লেখা আছে- ডিআইএসএস অব ইউটি ট্যাক্স। বি ১৮ ৩৬৮০১ নম্বর রসিদের যাত্রী নূর আলমের টিকিটে নাম ও বিমানের টিকিট নম্বর তুলে ধরা হয়েছে। বিমান বন্দরের কর্মরত সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে স্পষ্ট সদুত্তর দিতে পারেননি। তারা বলেন, আমরা জানি- বিমানবন্দর ব্যবহারের জন্য এ টাকা আদায় করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর জন্য নয়। এ নিয়ে যাত্রীদের ভুল বোঝানো হচ্ছে।
পদ্মা সেতু: অনুদান নিতে একাউন্ট খুলছে সরকার
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বেচ্ছায় অনুদান দিতে আগ্রহীদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহে দু’টি ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে একটি হিসাবে দেশীয় মুদ্রা ও অন্যটিতে বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থ নেয়া হবে। এছাড়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এক মাসের বেতন অনুদান হিসেবে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। এ সেতুর জন্য নতুন আর্থিক কাঠামো করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়ে যাওয়ায় এর ব্যয় বাড়বে। একটি একাউন্ট খোলা হবে যাতে আগ্রহী বাংলাদেশীরা এ দেশীয় মুদ্রায় তাদের ইচ্ছামাফিক অর্থ দিতে পারেন। আর দ্বিতীয়টি খোলা হবে প্রবাসীদের জন্য, যাতে তারা বিদেশী মুদ্রায় সহায়তা দিতে পারেন। এ দু’টি একাউন্ট কিভাবে পরিচালিত হবে তার পদ্ধতি ও নীতিমালা চূড়ান্ত করার জন্য অর্থ বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ওই নীতিমালাটি তৈরি হয়ে অর্থমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যারা স্বেচ্ছায় পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বা নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চান, তাদের অর্থই এ হিসাব দু’টিতে নেয়া হবে। এজন্য কাউকে চাপ দেয়া হবে না। যে কোন শ্রেণী বা পেশার মানুষ এ হিসাবে অর্থ জমা দেয়ার সুযোগ পাবেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ওদিকে ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার জন্য চুক্তি করলেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সমপ্রতি তা বাতিল করে বিশ্বব্যাংক।
পদ্মা সেতু চাঁদার ভাগ নিয়ে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত ১ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভায় তদন্ত কমিটি গঠিত
পদ্মা সেতু নির্মাণের নামে আদায়কৃত চাঁদার টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আবদুল্যাহ আল হাসান সোহেল (২৪) নামে এক ছাত্রলীগ নেতা মারা গেছে। মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণে আদায়কৃত চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাদার বখশ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের মাঝামাঝি জায়গায় কথাকাটাকাটির জের ধরে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতাকর্মীদের মাঝে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। নিহত ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল্যাহ আল হাসান সোহেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয়বর্ষের ছাত্র (এতো বছর ড্রপ দেয়া) ও ছাত্রলীগের হল প্রস্তুত কমিটির শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক, সামনের নতুন কমিটির সম্ভাব্য একমাত্র সভাপতি পদপ্রার্থী এবং সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের সমর্থক। তার বাসা রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের সাবদী গ্রামে। চার ভাইবোনের মধ্যে সোহেল সবার বড়। তার পিতা আবদুস সালাম পেশায় একজন আমিন (ভূমি পরিমাপক) ও মা সানজেলা বেগম গৃহিণী। সে শেরবাংলা হলের ৩০৭ নম্বর কক্ষে থাকত।
দু’গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির পর রাত দেড়টা থেকে ভোর পর্যন্ত ওই দুটি হলে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু দেশি অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করলেও ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। পুরো ক্যাম্পাসে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। আবারও যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি পদ্মা সেতুতে সরকারের দুর্নীতির পর বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়ার পর গত সপ্তাহে ঘটাও করে রাবি ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য চাঁদা তোলা শুরু করে। সভাপতি গ্রুপের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতাকর্মীরা পদ্মা সেতুর নামে আদায় করা টাকার অধিকাংশই হরিলুট করে সামান্য কিছু জমা দিচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীরা সভাপতি গ্রুপের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করে।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
ওই ঘটনার জের ধরে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাদার বখশ হলের সামনে সাংগঠনিক সম্পাদক ও সভাপতি গ্রুপের নেতা তৌহিদ আল তুহিনের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের সমর্থক সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিমের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির সূত্র ধরেই একপর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। তুহিন আমার দেশকে বলেন, আমরা পদ্মা সেতুর ফান্ড কালেকশনে স্বচ্ছতার জন্য বক্স নিয়ে টাকা উঠালেও সেক্রেটারি গ্রুপের নেতা আরাফাত রাব্বি কোনো বক্স ছাড়াই বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ১২শ’ টাকা তুলে মাত্র ৩শ’ টাকা জমা দেয়। বাকি টাকার কোনো হিসাব সে দেয়নি। পদ্মা সেতুর অর্থায়নে আদায়কৃত টাকার বিষয়ে রোববার রাতে তাকিমের সঙ্গে তুহিনের কথা কাটাকাটির সময় তাকিম সভাপতি আহম্মেদ আলী সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য এবং তাকে গালিগালাজ করে। এ সময় সে সভাপতির মাদার বখশ হলের ২৩৮ নম্বর কক্ষ লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আমরা কিছু বলতে গেলে তাকিম পিস্তল দিয়ে আমাদের গুলি করতে থাকে বলে অভিযোগ করেন তুহিন।
এ সময় তুহিনের নেতৃত্বে সভাপতি গ্রুপের ২০/২৫ জন মাদার বখশ হলের সামনে এবং তাকিমের নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের ২০/২৫ জন সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে অবস্থান নিয়ে পিস্তল, হাসুয়া, রামদাসহ দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে প্রায় ২৫/৩০ রাউন্ড গোলাগুলি হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। সভাপতি গ্রুপের সমর্থকরা মাদার বখশ হলের ছাদে অবস্থান নিয়ে অপর পক্ষকে লক্ষ্য করে গুলি ও ইটপাটকেল ছোড়ে। সভাপতি গ্রুপ সমর্থকদের ছোড়া গুলি সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে থাকা আবদুল্যাহ আল হাসান সোহেলের মাথা ভেদ করে। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সোহেল। এ সময় আহত হয় আরও কয়েকজন নেতাকর্মী। গোলাগুলির শব্দে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আহতের প্রথমে রাবি চিকিত্সা কেন্দ্রে নেয়া হয়। সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ সোহেলকে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাত ২টার দিকে সোহেলকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে গতকাল সাড়ে ১২টায় সোহেলের মৃত্যু হয়।
সোহেলের সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল হক জাকির আমার দেশকে বলেন, মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমি সোহেলের কাছে ছিলাম। তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। রামেক থেকে স্থানান্তর করার পর ঢামেকে সোমবার সকালে ডাক্তাররা তার মাথায় অপারেশন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তার আগেই দুপুর সাড়ে ১২টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


