somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পার্বত্য অঞ্চল ভ্রমন (খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান) প্রস্তুতি পর্ব

০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভ্রমণ বিষয়ে আমার আগ্রহ অনেক আগে থেকেই। যখন যেটুকু ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছি, তা কাজে লাগিয়েছি। চাকুরি জীবনে প্রবেশের পর আমার ভ্রমনের আগ্রহ বেড়ে যায় অনেকাংশে। কারন ভ্রমনের যে খরচের প্রয়োজন হয় তার জন্য এখন চিন্তা করতে হয়না। তবে এখন চিন্তা করতে সময় ও সুযোগের। যেহেতু অর্থের জন্য এখন আর তেমন কোন চিন্তা করতে হচ্ছে না, তাই ইতিমধ্যেই প্রিয় সহধর্মিণী নিপাকে সাথে নিয়ে দেশের বেশকিছু যায়গা ভ্রমণ করেছি। কিন্তু বর্তমানে দুজনেরই অফিসে দায়িত্ব কর্তব্য বেড়ে যাওয়ায় নতুন কোন জায়গায় বেড়ানোর সময় বের করতে পারছিলাম না। আমি ছুটি পেলে নিপা ছুটি পায় না, আবার নিপা ছুটি পেলে আমি ছুটি পায় না। এমনিভাবে অনেক দিন পার হয়ে গেল কোথায় ভ্রমণ করা হয়নি।
অফিস, সংসার ও অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতে করতে আমার তো প্রায় দম বন্ধ হবার উপক্রম। নিপা বিষয়টা বুঝতে পারলো এবং আমাকে গ্রিণ সিগনাল দিল যে আমি আমার মত করে ভ্রমণ করলে সে কিছু মনে করবেনা। নিপার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম যখন দুজনে এক সঙ্গে ছুটি পাবো তখন এক সাথে বের হবো, পাশাপাশি আমি একা যখন ছুটি পাবো তখন আমার মত করে আমি বেড়াবো। ব্যাস, সিধান্ত যখন নেওয়া হয়ে গেছে, তখন চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের জন্য একটি ভ্রমণের প্ল্যান তৈরী করে ফেললাম। এর মধ্যে বেশ কিছু জায়গা ইতিমধ্যেই দেখা হয়েছে তবুও পুনরায় যেতে চাই, আবার কিছু এখনো দেখা হয়নি। প্ল্যানটা অনেকটা স্বপ্নের মত করে সাজিয়ে নিলামঃ
২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে যে স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে চাইঃ
১।কুয়াকাটা
গঙ্গামতির চরে দাঁড়িয়ে এক কাপ গরম চা খেতে খেতে সূর্যদয় দেখতে চাই। সন্ধ্যায় লেবুর চরে বসে গরম গরম কাঁকাড়া ভাজির স্বাদ গ্রহনের সময় দেখতে চাই কিভাবে সূর্য সমুদ্রে হারায়।
২।রাংগামাটি
কোন এক অলস দিনে কাপ্তাই লেকের এক মাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত লোকাল যাত্রি বাহী নৌকায় করে ঘুরে ঘুরে মন ভরে চোখ জুড়ীয়ে দেখে নিতে চাই সৌন্দর্যের কন্যা রাঙ্গামাটির আসল রুপ।
৩।বান্দরবান
বর্ষার কোন এক সময় রুমা হতে ঝিরিপথ ধরে হেটে চলে যেতে চাই বগা লেকে। ভরা পূর্নিমার রাতে বগা লেকের পাশে চুপচাপ বসে থাকতে চাই কিছুক্ষণ।
পাহাড়ের মাঝে কিভাবে সূর্যদয় হয় তা নিজ চোখে দেখতে চাই কেউকারাডং এর চূড়া থেকে।
৪।সেইন্টমার্টিন
ভাটার সময় হেটে হেটে সাগর পাড়ি দিয়ে যেতে চাই ছেড়া দ্বীপে।
জোসনাস্নাত রাতে হাতে বিশাল সাইজের একটা ডাব নিয়ে জেটির শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের দিকে মুখ করে তাকিয়ে থেকে উপলবদ্ধি করতে চাই কত খুদ্র এই আমি।
৫।হাতিয়া
চট্টগ্রাম থেকে উত্তাল বঙ্গোপসাগরের কিছু অংশ পাড়ি দিয়ে যেতে চাই হাতিয়া।
দুরের কোন এক পাথানে গিয়ে দিগন্ত বিসতৃত সবুজে ভরা খোলা মাঠে মহিষের পালের পেছনে পেছনে দৌড়াতে ইচছে করে।
নিঝুম দ্বীপের নিঝুম রিসোর্টে বসে নির্জনতার নির্জনতা উপভোগ করতে চাই।
৬।সুন্দরবন
কটকা থেকে জামতলা সী বিচের পথে সেই ছোট্ট পুকুরটির ধারে পৌছতে চাই সূ্য ওঠার আগেই। দেখতে চাই আমার চার পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে দলে দলে বিশাল সব হরিণ।
৭।নাটোর
সম মন মানষিকতার কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ভরা আমাবশ্যার রাতে ভুতের সন্ধানে নৌকায় করে চষে বেড়াতে চাই চলনবিলের এক মাথা থেকে আরেক মাথা।
প্ল্যান তৈরী শেষে সুযোগের অপেক্ষায় রইলাম। বেশিদিন দেরী করেতে হলোনা। জরুরী প্রয়োজনে নিপাকে ছুটি নিয়ে দেশের বাড়িতে যেতে হলো। যেহেতূ নিপা বাড়ি চলে গেছে অতএব বগুড়াতে আমার আর কোন সাংসারিক কাজ রইলনা। অফিসে ছুটির আবেদন দিলাম এবং তিন দিনের ছুটি পেয়েও গেলাম। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। কি করি আজ ভেবে না পাই, পথ হারিয়ে কোন বনে যাই। মানে কোন যায়গায় যাওয়া যায়।
যেহেতু নিপা সাথে নেই, একা একা যাবো, সেক্ষেত্রে একটু দূর্গম যায়গায় যাওয়া যেতেই পারে। ঠিক করলাম কাপ্তাই লেকের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরে দেখবো। সাথে কিছু পাহাড় পর্বত যোগ করা গেলে মন্দ হয় না। অতএব আমাকে যেতে হবে পার্বত্য অঞ্চলে। অফিস থেকে বাস কাউন্টার গুলোতে কল দিলাম। তথ্য পেলাম যে বগুড়া থেকে চট্টগ্রামের এভেইলেবেল বাস থাকলেও রাঙ্গামাটি , বান্দরবানের কোন সরাসরি বাস সার্ভিস নেই। একমাত্র শ্যামলী পরিবহনের বাস আছে যা সরাসরি খাগড়াছড়ি যায়। ৩১ জুলাই রাত পৌনে নয়টার বাসে টিকেট কনফার্ম করলাম।
এবার ভ্রমনের একটা খসড়া তৈরী করলামঃ
*আগষ্টের ১ তারিখ খাগড়াছড়ি পৌছাবো। যদি সকাল ১০ টার মধ্যে খাগড়াছড়ি পৌছাতে পারি তাহলে বাস থেকে নেমে দিঘিনালা হয়ে লংগদু ঘাটে পৌছানোর চেস্টা করবো। কারন তথ্য পেয়েছি যে লংগদু ঘাট থেকে কাপ্তাই লেক হয়ে রাঙ্গামাটির উদ্দ্যেশে শেষ নৌকা ছাড়ে দুপুর ১ টায়। আমার টার্গেট সেই নৌকায় ওঠা।
আর খাগড়াছড়ি পৌছাতে যদি সকাল ১০টা পার হয়ে যায় তাহলে দুপুর ১টার আগে লংগদু পৌছাতে পারবোনা। অতএব বিকল্প উপায় হলো যে মহালছড়ি চলে যাবো। যতটুকু তথ্য পেয়েছি বর্ষাকালে মহালছড়ি থেকে কাপ্তাই লেক হয়ে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত নৌকা চলে। যেহেতু এখন ভরা বর্ষা, অতএব নৌকা পেতে পারি।
*উপরের যেকোন উপায়ে কাপ্তাই লেক হয়ে আগষ্টের ১ তারিখেই রাঙ্গামাটি পৌছাবো। যদি সময় থাকে তবে রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ দেখবো। রাতে রাঙ্গামাটিতে অবস্থান করবো।
*আগষ্টের ২ তারিখে সকাল ৭টায় রাঙ্গামাটি থেকে কাপ্তাই লেক হয়ে নৌকায় করে বিলাইছড়ি যাবো।
*বিলাইছড়ি থেকে নৌকায় করে কাপ্তাই লেক হয়ে কাপ্তাই ঘাট পর্যন্ত পৌছাবো। আশা করি বিকেলের মধ্যেই কাপ্তাই ঘাটে পৌছে যাবো। আর এভাবেই সম্পন্ন হবে আমার কাপ্তাই লেকের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্রমন।
*কাপ্তাই থেকে সড়ক পথে বান্দরবান পৌছাবো।
*রাতে বান্দরবানে অবস্থান করবো।
*আগষ্টের ৩ তারিখ সারা দিনে বান্দরবানের যতটুকু পারি ঘুরে দেখবো।
*যেহেতু বান্দরবানের সাথে বগুড়ার সরাসরি বাস সার্ভিস নেই, সেহেতু সন্ধ্যার সময় বান্দরবান হতে চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশে রওনা দেবো।
*চট্টগ্রাম পৌছে ৩ তারিখ রাতেই বাসে বগুড়ার উদ্দ্যেশে রওনা দেবো।
*আগষ্টের ৪ তারিখ বগুড়া পৌছে অফিস করবো।

খসড়া তৈরী হয়ে গেছে। এবার পরের স্টেপ।
আজ ৩১ জুলাই। যেহেতু নিপা বাসায় নেই, অতএব আমার ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে দেবার মত কেউ নেই। দুপুরে অফিসে লাঞ্চ করে বাইক নিয়ে এক দৌড়ে বাসায় এসে আমার নতুন ব্যাকপ্যাকটা গুছিয়ে নিলাম। উল্লেখ্য এই নতুন ব্যাকপ্যাকটা আমার শ্যালক আমাকে গিফট করেছে। ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে রেখেই আবার অফিসে দৌড় দিলাম। রাত ৮টার দিকে অফিস দিকে বের হলাম। বাসায় এসে ড্রেস চেঞ্জ করে জিন্স আর টি চার্ট পরে কাঁধে ব্যাকপ্যাক ঝুলিয়ে বাস স্ট্যান্ডের উদ্দ্যেশে রিক্সায় উঠলাম। সঠিক সময়ে ঠনঠনিয়া বাস টার্মিনালে পৌছালাম। রাত পৌনে নয়টায় বাস ছাড়ার কথা থাকলেও বাস ছাড়লো রাত নটায়। আল্লাহর নাম নিয়ে রওনা দিলাম আমার আরো একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।

চলবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×