somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালেদা জিয়াকে খোলাচিঠি : তামাশা না করে সরাসরি আলোচনায় যান

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমস্যা সমাধানে সত্যিই যদি আন্তরিকতা থাকে, তাহলে আলোচনার জন্য কারো আহ্বান বা দাওয়াতের অপেক্ষা করতে হবে কেন আমার বুঝে আসে না। যদিও অনেকের মতেই বেগম খালেদা জিয়ার চব্বিশ তারিখের বক্তব্য অনেকটাই ‘গণতান্ত্রিক’। কিন্তু আমার মতে সংকট উত্তরণে তা যথেষ্ট নয়।

সেই বক্তব্যে আলোচনার হাল্কা আভাস থাকলেও ‘শক্তির’ মোকাবেলায় পাল্টা ‘শক্তি’ প্রদর্শনের একটা প্রচ্ছন্ন হুমকিও আছে এবং ইতোমধ্যেই দু’দলের ভেতরে-বাইরে যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল, এ যুদ্ধের সৈনিক সবাই সাধারণ জনতা। আহত-নিহত যা হবার তারাই হবে। শেষ বিচারে দু’পক্ষের সেনাপতি-হুকুমদাতারা বহাল তবিয়তেই থাকবেন। মাঝখান থেকে সাধারণ জনতার রক্তের স্রোত বয়ে যেতে পারে। কেন? আমাদের একফোঁটা রক্তের মূল্য আপনারা দু’নেত্রীর কেউ দিতে পারবেন? জীবনে কোনোদিন গায়ে সামান্য আঁচর খেয়েছেন?

সংবিধানে এবং মুখে যতই বলা হোক “একমাত্র জনগণই রাষ্ট্র ও ক্ষমতার মালিক”, বাস্তবে এটা ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয় তা আপনি ভালো করেই জানেন। আমরা কতটুকু কিসের মালিক তা তো দেখছিই, নতুন করে আর দেখাবার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তার চেয়ে বরং ওসব আপনাদেরই থাকুক, আমাদের কেবল শারীরিক-মানসিক মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের যথার্থ আন্তরিকতা দেখালেই চলবে। রাষ্ট্র ও ক্ষমতার মালিক একমাত্র জনগণ- এটা প্রত্যেক শাসকেরই ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি। তা সত্ত্বেও জনগণ যুদ্ধ অংশ নেয় ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তার জন্য।

প্রিয় বেগম জিয়া! আমি আপনাকেই বলছি, কারণ শেখ হাসিনাকে বলার কোনো স্থান দেখছি না। কেন দেখছি না তাও বলার সাহস আমার নেই। আপনি প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সম্মানিতা স্ত্রী। জিয়াউর রহমান সম্পর্কে যতটুকু জানি, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ধর্মের প্রতি যথেষ্ট অনুরাগী ছিলেন। তিনি আল্লাহ-রাসুলে বিশ্বাসী ছিলেন। আপনার রাজনীতি তিনি কতটুকু পছন্দ করতেন জানি না, তিনি পরকালে কতটুকু উপকৃত হচ্ছেন তাও জানি না। তবে জাতির দুর্দিনে এবং অপরিহার্য প্রয়োজনে রাজনীতিতে আপনার বিরল আত্মত্যাগ অনস্বীকার্য। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত্তিস্থাপনে আপনার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আপনি আপোষহীন নেত্রী, আবার জাতির প্রয়োজনে যেকোনো ত্যাগ-স্বীকারেরও সামর্থ রাখেন।

আপনার বয়স হয়েছে, আরো বেশি ধর্ম-কর্মে মনোযোগ দেবার এখনই সময়। তবে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আপনার কাছ থেকে জাতি আরেকটি আত্মত্যাগ আশা করে। সেটি হচ্ছে, আপনি কেবল একটি বার, সকল হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে, ব্যক্তিগত-পারিবারিক ও দলীয় সব স্বার্থ ভুলে অপর নেত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসুন।


আলোচনার সকল পথ যখন বন্ধ, বড় দু’দলের অবস্থা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে যুদ্ধংদেহি, সেই মুহূর্তে আপনিই তো পারেন সবাইকে চমকে দিতে। আপোষহীনতার যোগ্যতা যার আছে, সমঝোতার সামর্থও তারই থাকার কথা। আমি বলব না আপনার কর্মসূচি প্রত্যাহার করুন, বলব না ২৯ তারিখের “মার্চ ফোর ডেমোক্র্যাসি” বাতিল করুন। সেগুলো বহাল থাকুক। কেননা আপনি গণতন্ত্রের বাইরে যাননি। তাই শুধু এতটুকু বলব, আপনি একটি বার, মাত্র একটি বার বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হোন, যাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেই বক্তব্যে আপনি স্বীকৃতি দিয়েছেন। জাতি কতকাল দেখেনি সেই চোখ-জোড়ানো মন-মাতানো দৃশ্য! দু’নেত্রীর একসঙ্গে হাসিমাখা মুখ! সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের একজন অন্যতম মালিক হিসেবে যদিও আমি আপনাকে নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা রাখি, কিন্তু আমি আপনাকে অনুরোধ করব, খুব দ্রুতই আপনি তার সঙ্গে মিলিত হোন। এমনকি ২৯ তারিখের আগেই।

আপনি এবং আপনার দুই ছেলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আপনার দলও প্রতিহিংসার শিকার। কেন্দ্রিয় ও তৃণমূল লাখ লাখ নেতাকর্মী আজ জেলে। অনেকে হত্যা-গুমের নির্মম শিকার; মামলা-মোকাদ্দমা, জেল-জুলুমে নিস্পৃশ্য-নিশ্চিহ্ন। তবে তাদের এই রাজনীতি, এই ত্যাগ-স্বীকার জাতির বৃহত্তম স্বার্থেই তো! তাই জালেমদের ক্ষমা করে দিন না! আল্লাহ আপনাদের ক্ষমা করবেন।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের ক্ষমার আদর্শ শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তার কলিজার টুকরা নাতি হযরত হোসাইন (রাঃ) তৎকালিন মুসলিম জাতির দু’দলের একটি বিশেষ দ্বান্দ্বিক মুহূর্তে এমনকি নিজের রাজনৈতিক স্বাভাবিক অধিকার খলিফাত্ব ত্যাগ করেছিলেন। ফলে বহুদিনের জন্য সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে এসেছিল। আপনার সম্মুখে সেই বিরল মুহূর্ত আজ সমুপস্থিত। আপনি একটি বৃহত্তর সমঝোতার আদর্শ শিক্ষা দিয়ে জাতিকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করুন।

হে আপোষহীন নেত্রী! আপনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। আপনার হাত ধরে বাংলার নারীরা রাজনীতি ও নারীর ক্ষমতায়নের পাঠ নিয়েছে। কিন্তু আর একটি পাঠ বাকি। আপনি সমঝোতার পাঠটাও এ দেশের নারীদের হাতে-কলমে শিখিয়ে দিন। অপরজন কতটুকু সাড়া দিলেন বা কতটুকু সমঝোতায় এলেন কি এলেন না সেটা দেখা আপনার কাজ নয়। আপনি আপনার চেষ্টা করে যান, জাতি আপনাকে ক্ষমার চোখে দেখবে। আল্লাহ আপনাদের দু’নেত্রীর সীমাহীন মঙ্গল করুন। আমীন।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×