somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্ডার হাট অভিজ্ঞতা

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রামের বাড়ি একেবারে সীমানা-সংলগ্ন হওয়ায় বেশ কয়েকবার ভারত সীমান্তে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। তবে বর্ডার হাটে যাবার সুযোগ হয়েছিলো ২০১১ সালের জানুয়ারীতে। আব্বার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। ভারত থেকে আত্মীয়স্বজন আসবে। সীমান্তের যে জায়গায় হাট বসে, সেখানে ভারতীয়রা তাদের আইডি জমা দিলে বাংলাদেশে ঢুকতে পারে। তবে শর্ত হলো ২৪ ঘন্টার মধ্যে আবার ফেরত যেতে হবে। আমাদের জন্যে একইভাবে ভারতে প্রবেশ করার সুযোগ নেই অবশ্য। কিন্তু আমার মেজো ভাই যেভাবেই হোক তাদেরকে ৪৮ ঘন্টা বাড়িতে রাখবেন। আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে, এরকম অসম্ভবকে সম্ভব করা জলিল ভাইয়ের পক্ষে সম্ভব না হইলেও, আমার মেজো ভাইয়ের পক্ষে সম্ভব। এই উদ্দেশ্যে উনি দেখলাম দুইদিন আগে থেকেই খোজ-খবর নেয়া শুরু করেছেন।

আমি আরামেই ছিলাম। শীতের মধ্যে উঠানে বসে রোদ পোয়ানো আর রাতের বেলা বড় চাচার ক্যাম্প-ফায়ার মজলিশে হাত-পা সেকে দিনকাল ভালোই কাটছিলো। কিন্তু আমার এ সুখ ওনার সহ্য হলো না। আত্মীয়স্বজন যেদিন আসবে তার আগেরদিন উনি হুংকার ছাড়লেন,
- অ্যাঁই আহাম্মক, এরকম ন্যাড়ত-ভ্যাড়ত করে চললে হবে? কত বড় ঝামেলা সামলাতে হবে কোন খবর আছে?
আমি মিনমিন করে জবাব দিলাম,
- জ্বী, আমিতো কাউকে চিনি না। এসব ব্যাপারতো তুমিই সামলাও সবসময়।
উনি এ কথা শুনে রীতিমতন ধমকে উঠলেন,
- চুপ। কাউকে না চেনা কোন বাহাদুরী না। আজকে আমি বর্ডারে যাবো। তুইও যাবি আমার সাথে। ওখানে আমাদের কন্টাক্ট বকুল সাহেব থাকবে। ঐ এলাকার মোটামুটি প্রভাবশালী সে। তাকে দিয়ে ঐ পারের গ্রাম-পঞ্চায়েতের প্রধানকে ফোন দেয়াবো। সে বিএসএফ এর ইনচার্জকে দিয়ে ৪৮ ঘন্টার অনুমুতির ব্যাপার ম্যানেজ করবে। এছাড়াও হাট এলাকাটাও ভালোমতন রেকি করতে হবে। সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গা দিয়ে তাদেরকে নিয়ে আসতে হবে।
আমি আর কি বলবো? কেউ যখন কোনকিছু বলার অপশন রাখেনা, তখন বলতে হয়,
- জো হুকুম জাহাপনা।

দুপুর দুটোর দিকে খাওয়া-দাওয়া করে বের হলাম মিশন ইমপসিবলে। সাইডকিকের মতন বাইকে সাওয়ার হলাম ইথান হান্ট মেজো ভাইয়ের সাথে। দুপুর হওয়ায় মোটামুটি রোদ ছিলো সেদিন। ফুলবাড়ি থানা থেকে যে রাস্তাটা সোজা চলে গিয়েছে নাগেশ্বরীর দিকে, সেটা বরাবর বাইক চলছিলো। বেশ আগের ঘটনা। তবে যতদুর মনে পড়ে, চোত্তাবাড়ি নামক এক জায়গা থেকে বামে সরু রাস্তায় নেমে গেলো মেজো ভাই। রাস্তায় দেখি অনেক লোক হেঁটে হেঁটে কোথায় জানি যাচ্ছে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই আছে এ দলে। বেশ কিছুদুর যাবার পরে একটা জায়গায় গাছগাছালি আর ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে যাওয়া সরু পিচের রাস্তা শেষ হয়ে গেলো। সে জায়গার একটু পরেই মাটির রাস্তা। মাটির রাস্তা ধরে একটু এগোলেই দেখি এক পাশে বেশ খানিক জায়গা বেড়া দিয়ে ঘিরে পার্কিং এর জায়গা করা হয়েছে। এ জায়গায় ভীড়ও খানিক বেশি। বাইক পার্ক করে আমরা অন্য মানুষজনের মতন হাঁটা ধরলাম। গ্রামের মানুষজনের মধ্যে আমরা দুজন শহুরে পোষাক পরিহিত মানুষ। মনেহয় না বাস্তব স্পাই কাহিনীতে এরকম কাভারে কেউ রেকি করতে আসে। ভেবেছিলাম কথাটা মেজো ভাইকে বলবো। কিন্তু তার দাঁতখিঁচুনি দেয়া ভয়ংকর চেহারার কথা ভেবে আর সাহস করলাম না।

বেশ খানিকটা হাটার পরে দেখলাম যে, আমাদের পাশ দিয়ে একটা সরু খাল বয়ে চলেছে যেটা সামনের একটা বিশাল ময়দানকে আলাদা করে রেখেছে। খাল পার হবার জন্যে দেখলাম একদিকে একটা বাঁশের উঁচু ব্রীজ, আর তার খানিক পরেই আরেকটা বাঁশের ব্রীজ, কিন্তু সেটা একদম পানির ঠিক উপরে বসানো হয়েছে। অনেকটা ভেলার মতন। দুটো ব্রীজেই মানুষের প্রচন্ড ভীড়। আমরা যেটা একদম পানির কাছাকাছি সেটা দিয়েই পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ঠেলাঠেলি করে ব্রীজে ওঠার সময় মেজো ভাই চোখমুখ খিঁচিয়ে বললো,
- তোকে নয় নাম্বার লোকালে ওঠার সময় যে শিক্ষা দিয়েছিলাম তা অ্যাপ্লাই কর।
আমি তৎক্ষণাৎ আমার কনুই দুটো বাগিয়ে ধরে সামনে থাকা পাবলিকদের গুতিয়ে সরানো শুরু করলাম। মেজো ভাইও আমার ঠিক পিছনে থেকে এগোতে থাকলো। এভাবেই মোটামুটি সেই অসম্ভব ভীড়কে ধাক্কিয়ে আমরা ময়দানের অংশে প্রবেশ করতে পারলাম। ব্রীজ পার হবার সাথে সাথেই মেজো ভাই দরাজ গলায় বললো,
- সাবাশ বাবুলু, আমি জানতাম তুই পারবি।
বুঝলাম যে ওনার মুড ভালো হয়ে গিয়েছে। কারণ মুড ভালো হলেই উনি আমাকে বাবু, বাবলু, বাবুলু ইত্যাদি নামে সম্বোধন করেন।
[চলবে]
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×