somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন তানিশা এবং অনেকের গল্প

১৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল ইবনের।বাসায় ফিরে সে চমকে উঠলো।সারা বাসা ভর্তি পানি দেখে মনে হচ্ছে এটা কোন বাসা নয় বরং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।এতো পানি কি করে সারা বাসায় ছড়িয়ে পড়লো?এই প্রশ্নটা করার আগেই দেখলো ড্রয়িং রুমে,কিচেনের সামনে এখানে সেখানে অনেক কিছু ছড়িয়েছিটিয়ে পড়ে আছে এবং সেই সাথে টুকরো টুকরো হয়ে আছে তানিশার বিজ্ঞানমেলার জন্য বানানো পোষ্টার।বাসার অবস্থা দেখে মনে হলো সারা বাসায় টর্নেডো বয়ে গেছে,সুনামীর এক একটা ঢেউ এসে আছড়ে পড়েছে বাসায়। ফলে পানিতে পুরো বাসাটা মাছ চাষের অবস্থা হয়ে গেছে।কোন মত প্যান্টটা দুই হাতে উচু করে পানি থেকে বাঁচিয়ে সে ড্রয়িং রুমটা পার হতেই তানিশার কান্না শুনতে পেলো।

ইবনের একমাত্র বোন তানিশা এবার ক্লাস সিক্সে পড়ে।বাসার সব থেকে আদুরে মানুষ সে।তাকে ঘিরেই সবার হাসি কান্না।সেই প্রিয় থেকে প্রিয় মানুষটি কাঁদছে মানে নিশ্চই মহাপ্রলয়ের মত কোন কান্ড ঘটেছে।আম্মু বাবা ওকে ঘিরে বসে আছে।ইবন পা টিপে টিপে তানিশার রুমে গিয়ে দেখলো অবাক কান্ড সেখানেও পানি!! এগারতলা একটি অ্যাপার্টমেন্টের রুমে রুমে কি করে এতো পানি এলো তা তার মাথায় ঢুকলোনা।তানিশা সমানে গলাফাটিয়ে কেঁদে যাচ্ছে দেখে ওসব ভাবতে ওর ইচ্ছে হলোনা। বোনটা কেন কাঁদছে সেটাই তখন মূখ্য বিষয়।ওর মনে হলো সারা ঘর জুড়ে যত পানি দেখছে ওগুলো সব বোনের চোখ থেকে ঝরে পড়েছে।এতো ভালবাসা বোনের জন্য যে ওর বিশ্বাস বোন কাঁদতে থাকলে একসমুদ্র পানি বেরিয়ে আসবে ওর চোখ থেকে। সে পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে জানতে চাইলো কি হয়েছে? দেখা গেল তানিশার রাগ যেন আরো বেড়েছে।কাঁধের উপর থেকে ভাইয়ার হাত সরিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলে ইবন আম্মুর কাছে বিষয়টা জানতে চাইলো।

আম্মুর কাছ থেকে জানা গেল সারা বাসাজুড়ে এতো পানির রহস্য।বিকেলে আম্মু বাবা আর তানিশা বেরিয়েছিল মাকের্ট করতে। ফিরতে ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গেল। বাসার দরজা খুলে ভিতরে তাকাতেই সবার চক্ষু ছানাবড়া। সারা ড্রয়িংরুম ভর্তি পানি আর পানি।যেন বাসার মধ্যে বন্যা হয়ে গেছ। পানির উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল ড্রয়িং রুমের সাথে লাগোয়া ডাইনিংএ যে বেসিনটা ছিল সেটির ট্যাপ থেকে অবিরাম ধারায় পানি পড়ছে।তার মানে ওরা যখন বাসা থেকে বেরিয়েছে তখন হয়তো উপরের বড় ট্যাংকিতে পানি ছিলনা এবং ট্যাপটা ছাড়াই ছিল আর সম্ভবত বেসিন সিংকের ছিদ্র কোন কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ফলে যখন ট্যাংকিতে পানি ওঠানো হয়েছে তখন খোলা ট্যাপ দিয়ে বিনা বাঁধায় ইচ্ছেমত পানি পড়ে বেসিন গড়িয়ে সারা ড্রয়িং রুম ভরে গেছে।তাহলে তানিশার রুমে পানি ঢুকলো কেন?সেটাও জানা গেল আম্মুর বর্ননা থেকে।

বিজ্ঞান মেলায় জমা দিবে বলে তানিশা ওর দুই বান্ধবী রাহমা আর নোভাকে নিয়ে একসপ্তাহ ধরে খেটেপিটে একটি পোষ্টার বানিয়েছিল সেটা রেখেছিল ড্রয়িংরুমে।কারণ ওরা তিন বান্ধবী মিলে ড্রয়িংরুমে বসেই কাজ করেছিল।সেদিন বাসায় ফিরে দেখলো বেসিন থেকে গড়িয়ে পড়া পানিতে গোটা ড্রয়িংরুম ভেসে গেছে সেই সাথে ভেসে গেছে তানিশার একসপ্তাহ ধরে খেটেপিটে বানানো পোষ্টারটা। এটা দেখে ওর মাথায় আগুন ধরে গেছে এবং রাগে ক্ষোভে সে আব্বু আম্মুর রুম নিজের রুমও বালতি ভরে পানি ঢেলে বন্যা বানিয়ে দিয়েছে।আব্বু আম্মু কোন ভাবেই তাকে শান্ত করতে পারেনি এবং রাগের চোটে হাতের কাছে যা ছিল তাই সে ছুড়ে মেরেছে যা ইবন বাসায় ঢুকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখেছে। সম্ভবত সেখানে ওরও কিছু জিনিস ছিল।

বোনের এই দুঃখ আর ক্ষোভ দেখে ইবনের মনেও খুব মায়া হলো। সত্যিইতো বোনটা তার কত কষ্ট করে একসপ্তাহ ধরে একটা পোষ্টার বানিয়েছে আর সেটা কিনা এভাবে বানের জলে ভেসে গেল।এই কষ্ট কি সহ্য করা যায়?সে বোনকে শান্তনা দেওয়ার পরিবর্তে রাগটাকে আরো উসকে দিয়ে বললো তুই যা করেছিস ঠিকই করেছিস। দাড়া আমিও একবালতি পানি এনে ঢেলে দিচ্ছি।এবং সত্যি সত্যিই আব্বু আম্মুকে অবাক করে দিয়ে বোনের পক্ষ নিয়ে ইবন এক বালতি পানি এনে মেঝেতে ঢেলে দিল।এতে অবশ্য তানিশা কিছুটা খুশি হলো।সে আরো জোরে কেঁদে ভাইয়ার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কত না বলা অভিযোগ করতে লাগলো যেন ভাইয়াই সব কিছুর বিচার করবে।যদিও বাসার কেউ জানেনা আদতে কে ভুল করে বেসিনের ট্যাপ খোলা রেখেছিল। এমনও হতে পারে তানিশা নিজেই ট্যাপটা আটকাতে ভুলে গিয়েছিল।কিন্তু সেটা বললেতো কুরুক্ষেত্র তৈরি করে ফেলবে তাই ইবন আর কিছু বললো না।

কিন্তু কিভাবে বোনকে শান্ত করবে কিভাবে কি করবে সে আর ভাবতেই পারলোনা ঠিক তখন ইবনের মনে পড়ে গেল তাহমিদের কথা।তাহমিদ ফেসবুকে দিনাজপুরের একটা ঘটনার ভিডিও শেয়ার করেছিল।ইবন সাথে সাথে ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে ফেসবুক অন করে ভিডিওটা তানিশার চোখের সামনে মেলে ধরলো।আব্বু আম্মু কিছুই বুঝতে পারলেন না।কিছুক্ষনের মধ্যেই দেখা গেল তানিশা চোখ মুছতে শুরু করছে।সে বিছানা ছেড়ে উঠে গেল আর বাথরুম থেকে বালতি এনে নিজেই নিজের রুমের পানি সেচতে লাগলো।আব্বু আম্মু অবাক হয়ে জানতে চাইলেন কি এমন ঘটলো যে তানিশার সব রাগ মিটে গেল।ইবন বাবা মাকে সেই ভিডিওট দেখানোর পর বাবা মার চোখে অবিরাম অশ্রু ঝরতে লাগলো।

কি ছিল সেই ভিডিওতে?যার জন্য তানিশার সব ক্ষোভ পানির মত উবে গেল আর বাবা মায়ের চোখে অশ্রুর বন্যা বয়ে গেল?
দিনাজপুরে খুব বন্যা হয়েছে।স্বাভাবিক কোন বন্যা নয় বলা চলে এটি মানব সৃষ্ট বন্যা।অন্য একটা দেশ অপরিকল্পিত ভাবে তাদের বর্ধিত পানি ছেড়ে দিয়েছে ফলে বাংলাদেশের অনেক এলাকায় ভয়াবহ বন্যাপরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতি সব থেকে ভয়াবহ।সেই বন্যার একটি ভিডিও ছিল ওটা। এক ভাই তার দু্ই বছরের বোনকে কাঁধের উপর নিয়ে গলা অব্দি পানিতে হেটে হেটে আশ্রয় খুঁজছে।এর মাঝে প্রচন্ড এক স্রোত এসে তাকে বেসামাল করে দিলে কাঁধ থেকে বোনটা পড়ে গেল এবং ভেসে গেল সেই স্রোতে।ভাই তাল সামলিয়ে উঠতে উঠতে তার একমাত্র বোনটা কতদূরে চলে গেল তা তার জানা নেই।

ভিডিওটি সিএনএন এর সাংবাদিক মাইকেল মূরের ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছিল যিনি একটি উচু গাছের উপর থেকে বন্যাপরিস্থিতির ভিডিও নিচ্ছিলেন।কেউ জানতো না ওরকম একটি দৃশ্য তাঁর ক্যামেরায় ধরা পড়বে।সেই ভিডিওটি দেখার পর তানিশার মন আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল। যেখানে বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এক ভাইয়ের ভালবাসা ভরা কাঁধ থেকে জলজ্যান্ত একটি মানুষ তার আদরের বোনটাই ভেসে চলে যাচ্ছে সেখানে সামান্য একটা পোষ্টার ভেসে যাওয়ার দুঃখে শোকে পাথর হয়ে হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে তানিশা কি না করেছে।এ জন্য তার খুব দুঃখ হয়েছে এবং নিজের ভুল বুঝতে পেরে সে নিজ থেকেই পানি সরাতে চেষ্টা করছে।

রাতে খাবার খাওয়ার পরই তানিশা সাধারণত ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু সেদিন সে বাবা মা ভাইয়ার সাথে ড্রয়িংরুমে বসে টিভির খবর দেখলো। দিনাজপুর সিরাজগঞ্জ,ফরিদপুর সহ অনেক যায়গা ভয়াবহ বন্যা হয়েছে যার মধ্যে দিনাজপুরের অবস্থা খুবই করুন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সেই সব দুঃখী মানুষের পাশে দাড়ানোর মানুষের খুবই অভাব।সে রাতে ওর আর ঘুম এলোনা।সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় ওর একটা মাটির ব্যাংক ছিল সেটি সাথে নিয়ে গেল।তানিশা যে স্কুলে পড়ে সেটি শহরের সব থেকে ভালস্কুলগুলোর একটি।ওখানে অপেক্ষাকৃত ধনীদের ছেলে মেয়েরাই শুধু পড়ে।ক্লাস টিচার আসার পর তিনি যখন পড়াতে শুরু করবেন তখন তানিশা উঠে দাড়িয়ে বললো মিস আমার কিছু কথা আছে।মিস বললেন ক্লাস শেষে বলো তাহলেইতো হবে।তানিশা বললো মিস ক্লাস শেষে নয় এখনি বলতে চাই কারণ ক্লাসের চেয়েও আমি যেটা বলবো সেটা বেশি গুরুত্বপুর্ন।

ছোট্ট একটি বাধ্য মেয়ে এভাবে জোর দিয়ে কোন কথা বলতে পারে তা মিস ভাবতেই পারেন নি।ক্লাসের চেয়েও মেয়েটি যে কথাটা বলতে চায় তা নাকি বেশি গুরুত্বপুর্ন শুনে তিনি সত্যিই অবাক হলেন।তবে খুবই ভাল ছাত্রী হওয়ায় তিনি রাগ না করে বললেন ঠিক আছে তুমি বলো।তানিশা তখন নিজের মত করে গতদিনের ঘটনাটি শোনালো এবং সেই সাথে দিনাজপুরের বন্যাপরিস্থিতির কথাও জানালো।ওর কথা শুনে পুরো ক্লাস তখন নিশ্চুপ যেন একটি সুচ মাটিতে পড়লেও তার শব্দ শোনা যাবে।সবার চোখ ভিজে গেছে।তানিশা তখন বললো মিস এই পরিস্থিতিতে আমাদেরওতো কিছু করা উচিত।

মিস বললেন তা উচিত কিন্তু তোমরাতো খুব ছোট কিভাবে কি করবে?তানিশা তখন ব্যাগ থেকে মাটির ব্যাংকটা বের করে ক্লাসের সামনে গিয়ে মেঝেতে ভেঙ্গে ফেললো।সেখানে অনেক দিন থেকে জমানো বেশ কিছু টাকা ছিল সে সেটা দুই হাতে তুলে মিসের টেবিলের উপর রেখে বললো মিস এটা আমার জমানো টাকা।আমি এটা বন্যার্তদের জন্য দিয়ে দিলাম।এমনকি বাসায় গিয়ে বাবাকে বলে আরো কিছু টাকা দেব।এগুলো আপনার কাছে রাখুন।ঠিক একই ভাবে যদি ক্লাসের বাকি সবাই কিছু কিছু টাকা দেয় তাহলে সেটা কিন্তু কম নয়।

তানিশার কথা শুনে মিস ভীষণ ভাবে মুগ্ধ হলেন। তিনি নিজের পার্স বের করে সেখান থেকে এক হাজার টাকার একটি নোট তানিশার জমানো টাকার সাথে রেখে দিয়ে বললেন তোমার এই উদ্যোগে আমিও শামিল হলাম এবং আমি আরো কিছু দিতে চেষ্টা করবো।পুরো ক্লাস তখন হাত তালি দিয়ে উঠলো এবং দেখা গেল রুনা,যোসেফ,মিলন,মেহনাজ,শাহানা,ফারহানা,প্রমি সবাই তাদের ব্যাগ থেকে কিছু কিছু টাকা বের করে মিসের সামনের টেবিলে রাখলো।এই দৃশ্য দেখে তানিশার মনটা খুশিতে ভরে উঠলো।সে মিসকে বললো মিস এখন গুনে দেখুনতো কতটাকা হলো?

গুনে দেখা গেল তানিশার জমানো টাকা সহ বাকিদের দেওয়া টাকা মিলে প্রায় বার হাজার টাকা হয়েছে।অপেক্ষাকৃত ধনীদের সন্তানেরা পড়ালেখা করে বলে প্রায় সবাই একশো দুইশো টাকা করে দিয়েছে এবং তানিশার জমানো টাকাও ছিল বেশ। মিস এটা দেখে অভিভূত হয়ে গেলেন। তিনি তানিশাকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করতে করতে বললেন সত্যিই ক্লাসের চেয়েও তোমার কথাটি হাজারগুন গুরুত্বপুর্ন ছিল।তোমার মত সবাই যদি এগিয়ে আসতো।তানিশা তখন বললো মিস আমার আরো কিছু কথা আছে।মিস যেন আজ ওর কথা শুনতেই অপেক্ষা করছে।তিনি বললেন তুমি বলো আরো কি কি বলতে চাও।তানিশা তখন সবার সামনে দাড়িয়ে বললো বন্ধুরা তোমরা বাসায় গিয়ে আব্বু আম্মুকে সব খুলে বলবে এবং আব্বু আম্মুর থেকে যতটুকু সম্ভব বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করবে।ক্লাসের সবাই রাজি হলো।তানিশা আরো বললো মিস আমরা আজ ক্লাস করবো না।আমরা ক্লাসে বসে পোষ্টার বানাবো ফেস্টুন বানাবো তার পর প্রতিটি ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে বলবো।এ ব্যাপারে আপনিও আমাদের হেল্প করবেন।

খুবই ভাল একটি উদ্যোগ কিন্তু প্রিন্সিপাল স্যারের অনুমতি ছাড়াতো কিছু করা যাবেনা এটি একটি বেসরকারী স্কুল।তিনি বললেন ঠিক আছে আমি আগে প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলে দেখবো তিনি কি বলেন ততোক্ষনে তোমরা পোষ্টার ফেস্টুন রেডি করো।এটা বলে জমানো টাকাগুলো নিয়ে তিনি প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে চলে গেলেন।গিয়ে তিনি সব খুলে বললেন এবং ক্লাসে জমা হওয়া সব টাকাও তার হাতে দিলেন।

তানিশারা যখন ফেস্টুন,প্লাকার্ড বানাতে ব্যস্ত তখন প্রিন্সিপাল স্যার ছুটে আসলেন ওদের ক্লাসে।মিস ভেবেছিলেন প্রিন্সিপাল স্যার গিয়ে বাচ্চাদের খুব ধমক দেবেন এবং তানিশারাও তাই ভেবেছিল।কিন্তু দেখা গেল প্রিন্সিপাল স্যার এসে তানিশাকে কাছে ডেকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন মা রে তুই যেটা করেছিস সেটা যে কত বড় একটি কাজ তা হয়তো তুই ভাবতেই পারবিনা।আমরা বড়রা যা করতে পারছিনা কিংবা করছিনা তুই এইটুকু মানুষ হয়ে এতো বড় একটি চিন্তা করেছিস।তিনি সাথে সাথে নিজের মানিব্যাগ বের করে সেখানে যে কয়টাকা ছিল দিয়ে দিলেন।তিনি আরো ঘোষণা করলেন স্কুল ফান্ড থেকেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তিনি কিছু না কিছু টাকা দিবেন।এ ছাড়াও নিজে একটি নোটিশ সারা স্কুলে ক্লাসে ক্লাসে জানিয়ে দিলেন এবং তার পর তানিশা এবং তার দল ছোট ক্লাস বড় ক্লাস সবার সামনে গিয়ে ভাষন দেওয়ার মত করে বিষয়টি বুঝিয়ে দিল।

পরদিন স্কুলের প্রতিটি ক্লাসের প্রতিটি ছাত্র ছাত্রী প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে গিয়ে কিছু কিছু টাকা দিতে লাগলেন।তানিশা তখন স্যারের পাশেই বসা।ক্লাস থ্রিতে পড়ুয়া রাকিন ছোট্ট হাতে দুটো পাঁচশো টাকার নোট নিয়ে এসেছে।ওটা ওর বাবাই দিয়েছে ওকে।যেহেতু স্কুলের সবাই অপেক্ষাকৃত ধনী পরিবারের তাই কেউই পাঁচশো হাজার টাকার কম দেয়নি।রাকিন টাকাটা টেবিলের উপরে কিংবা প্রিন্সিপাল স্যারের হাতে না দিয়ে সোজা তানিশার সামনে এসে দাড়াল। তার পর তানিশার হাতে দিয়ে বললো আপু তুমিকি মাদার তেরেসা?কথাটি এমনভাবে বললো যে তানিশার চোখেও তখন পানি চলে আসলো।আধুনিক স্কুল হওয়ায় ক্লাস টুতে ওরা মাদার তেরেসার কথা শুনেছে তাই ছোট্ট রাকিনের মূখে মাদার তেরেসা নামটি শুনে কেউ অবাক হয়নি।তানিশা ওকে বুকে টেনে নিয়ে বললো আমরা সবাইতো এক একজন ভালমানুষ তাই এই বিপদের দিনে আমি যেমন এগিয়ে এসেছি তুমিও এসেছ।আমরা সবাই মাদার তেরেসা।ছোট্ট রাকিন ফিক করে হেসে দিয়ে বললো আপু কি বলো আমিতে ছেলে মানুষ আমি কেন মাদার তেরেসা হবো?তানিশা তখন বললো তাওতো ঠিক।আচ্ছা তুমি তাহলে কি! ওকে ঠিক আছে তুমি তাহলে অন্য কিছু যেটা আমরা পরে ভেবে বের করবো।

দিন শেষে প্রিন্সিপাল স্যারের অফিসে জমা পড়লো পুরো সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা।এটি হয়তো ভয়াবহ বন্যাকবলিত মানুষের জন্য খুবই সামান্য অর্থ কিন্তু এটিওতো বিশাল মহীরুহ হয়ে দাড়িয়েছে।তিনি স্কুল ফান্ড থেকে আরো কিছু টাকা দিয়ে যে পরিমান টাকা হলো তা দিনাজপুরের বন্যার্তদের জন্য দিনাজপুরের ডিসি সাহেবের হাতে তুলে দিলেন।দেওয়ার আগে তিনি তানিশাদের সবার কথা বললেন।ডিসি সাহেবের চোখেও পানি চলে এলো।তিনি শুধু বললেন যে দেশে এমন সোনার ছেলে মেয়েরা আছে সে দেশে বন্যা এসে যত দুঃখ বয়ে নিয়ে এসেছে তা নিমিষেই মুছে যাবে।

পরদিন ঘটনাটি তানিশাদের ছবি সহ ছাপা হলো দেশের অনেক গুলো জাতীয় দৈনিকে।এর পর দেশের আনাচে কানাচে হাজার হাজার স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা তানিশার সেই মহতী উদ্যোগের পাশে এসে দাড়ালো এবং প্রতিদিন জমা পড়তে লাগলো লাখ লাখ টাকা।যে ফান্ডে টাকাগুলো জমা হলো সেটির নাম দেওয়া হলো তানিশা চ্যারিটেবল ফান্ড।

বাবা মা ভাইয়াকে নিয়ে টিভিতে রাতের সংবাদ দেখলো তানিশা।সেখানে তানিশা আর তার বন্ধুদের দেখালো এবং তাদের ভাল কাজের কথা বলা হলো।তানিশার বাবা মা ভাইয়া খুব খুশি হলেও দেখা গেল তানিশার মন খারাপ। আবার কি হলো বুঝতে না পেরে ইবন জানতে চাইলো তোমার মন খারাপ কেন রাজকন্যা মাদার তেরেসা? তানিশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো যে দুঃখ ভেসে এসেছে বন্যার পানিতে এই সামান্য সাহায্যকি সেই দুঃখ ঘুচাতে পারবে?আমাদের চাই আরো আরো সহযোগিতা।ইবন তখন ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া তার একমাত্র বোনকে কি বলে উৎসাহ দিবে তা জানা নেই।বাসার সবাই দেখলো তাদের আদরের ছোট্ট তানিশা একদিনেই অনেক বড় হয়ে গেছে।

তবে আশার কথা হলো পরদিন থেকেই দেশের শিল্পী সাহিত্যিক চাকুরীজীবী সব শ্রেনী পেশার মানুষ যথাসাধ্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বন্যার্তদের পাশে এসে দাড়ালো।বন্যার্তরা তখন একটুখানি আশার আলো দেখতে পেয়ে সাহসী হয়ে উঠলো।যাদের পাশে সারা দেশ ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের যে বাঁচতেই হবে।বেঁচে থাকার সেই লড়াই এখনো চলছে।তানিশাকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলো তুমি কি আর কিছু বলতে চাও আমাদের?ছোট্ট তানিশা চোখ মুছতে মুছতে বললো যতদিন বন্যার্তদের দুঃখ দূর হবেনা ততোদিন আমি কোন আইসক্রিম খাবনা কোন চকলেট খাবনা এবং আমার যত খেলনা আছে সেগুলো বিক্রি করে তা থেকে যে টাকা পাবো তাও দিয়ে দেব।সবাই আপনাদের ভালবাসার হাত আরো একটু প্রশস্থ করুন।আসুন অন্যের জন্য বাঁচি একসাথে বাঁচার নামইতো সুখ।সবাই খুব আশা করে আছি দেশের প্রতিটি মানুষ একসাথে বাঁচার সুখ খুঁজে নেবে।বন্যার্তদের পাশে এসে দাড়াবে।
-------
(এটি একটি গল্প তবে তা বলে এটিকে তুচ্ছ ভেবে এড়িয়ে যাবেন না।সাধ্য মত বন্যার্তদের পাশে দাড়ান) (লেখাটি অনুমতি ছাড়াই যে কেউ ব্যবহার করতে পারবেন,শেয়ার করতে পারবেন)।

(ছবিটি প্রতীকি তবে বন্যার্তদের ছবি।)
------
১৮ আগষ্ট ২০১৭
#জাজাফী
#বন্যার্তদের_পাশে_দাড়ান
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×