- হারুন ইয়াহিয়া
প্রার্থনাকালেই আল্লাহর সঙ্গে বান্দার নৈকট্য সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করা যায়। আল্লাহর নৈকট্য ও তাঁর বান্দা হিসেবে তাঁর করুণা মানুষের কত প্রয়োজন তাও এই সময়েই গভীরভাবে অনুভূত হয়। তার কারণ প্রার্থনাকালেই মানুষ উপলব্ধি করে আল্লাহর কাছে সে কত দুর্বল ও কত ক্ষুদ্র এবং বুঝতে পারে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ তাকে সাহায্য করতে পারবে না। প্রার্থনায় আন্তরিকতা ও অকপটতা নির্ভর করে প্রার্থনাকারী কতটা অসহায় বা দুর্দশাগ্রস্থ অবস্থায় নিপতিত তার উপর। দৃষ্টান্তস্বরূপ, সকলেই প্রার্থনা করে শান্তির জন্যে। কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে দিশেহারা লোকের শান্তির জন্যে প্রার্থনা হবে বহুগুণ বেশি আন্তরিক ও ঐকান্তিক। অনুরূপভাবে, ঝোড়ো হাওয়ায় নদীবক্ষে নৌকাযাত্রী বা বিপদগ্রস্থ উড্ডীন বিমানযাত্রী আল্লাহর করুণা প্রার্থনা করবে সর্বান্তকরণে; পরম অকপট, বিনয়ী ও বশ্য হবে কৃপা ভিক্ষায়। এ বিষয়ে একটি আয়াতে আল্লাহ বলছেন,
"তুমি (তাদের) বলো, যখন তোমরা স্থলভূমে ও সমুদ্রের অন্ধকারে (বিপদে) পড়ো, (যখন) তোমরা কাতর কণ্ঠে এবং নীরবে তাঁকে ডাকতে থাকো, তখন (কে) তোমাদের (সেসব থেকে) উদ্ধার করে? (কাকে তোমরা তখন) বলো (হে মালিক), আমাদের যদি তুমি বাঁচিয়ে দাও, তাহলে আমরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দাদের দলে শামিল হয়ে যাবো।"
(সূরা আল আনয়ামঃ আয়াত ৬৩)
কুরআন শরীফে আল্লাহ মানুষকে আদেশ করছেন বিনয়ানমিত ভংগীতে প্রার্থনা করতে,
"(অতএব) তোমরা (একান্ত) বিনয়ের সাথে ও চুপিসারে শুধু তোমাদের মালিক (আল্লাহ তায়ালা)-কেই ডাকো; অবশ্যই তিনি (তাঁর রাজত্বে) যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের পছন্দ করেন না।"
(সূরা আল আ'রাফঃ আয়াত ৫৫)
আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, বিপন্ন ও নির্যাতিতদের ডাকে সাড়া দেন তিনি,
"অথবা তিনিই (শ্রেষ্ঠ) - যিনি কোনো বিপদগ্রস্থ ব্যক্তির ডাকে সাড়া দেন, যখন (নিরুপায় হয়ে) সে তাঁকেই ডাকতে থাকে, তখন তার বিপদ আপদ তিনি দূরীভূত করে দেন এবং তিনি তোমাদের ও যমীনে তাঁর প্রতিনিধি বানান; (এসব কাজে) আল্লাহ তায়ালার সাথে আর কোনো মাবুদ কি আছে? (আসলে) তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো;"
(সূরা আন নামলঃ আয়াত ৬২)
সন্দেহ নেই, আল্লাহর কাছে প্রার্থনার জন্যে তথা প্রয়োজনে তাঁর কৃপাভিক্ষার জন্যে মৃত্যুর মুখোমুখি অবস্থার মতো বিপন্ন হবার দরকার নেই। এই দৃষ্টান্তগুলি দেবার উদ্দেশ্য হলো আন্তরিক প্রার্থনার আকারটুকু ধরিয়ে দেবার জন্যে, আর শেষের সেই ভয়ঙ্কর সময়ের কথা স্মরণ করার জন্য যখন মৃত্যুর মূহুর্ত সমুপস্থিত - সেই অন্তিম লগ্নের কথা ভাবার জন্যে যখন কেউ আর অন্যমনস্ক থাকতে পারে না, বরং সুনিশ্চিতভাবেই সর্বান্তকরণে আল্লাহর দিকে মুখ ফেরায়। পক্ষান্তরে, আল্লাহতে সমর্পিত লোকেরা নিজেদের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন থেকে ও অন্তরের আকুতি অনুভব করে সব সময়ই আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় নিয়োজিত হন, কোনরূপ জীবন-মৃত্যু সঙ্কটের জন্য অপেক্ষা করেন না। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যটিই অবিশ্বাসী ও অন্ধবিশ্বাসীদের থেকে তাঁদের পার্থক্য নির্দেশ করে।
***অনুবাদ করেছেনঃ আবুল বাশার***