যে দেশের পরিসংখ্যান বুরোর ৫ বছর ওয়ারি সার্ভে থেকে বের হওয়া গড় আয় থেকে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রি ডবল গড় আয় উল্লেখ করেন(২০১১ বাজেট বক্তৃতা) আর দেশে বিদেশে সেই টা নিয়ে অর্থনীতিবিদেরা হাসাহাসি করে, সেই দেশের জি ডি পি সরকার যা ইচ্ছা বলতে পারে, তাতে কিছু যায় আসেনা।
কিছু দিন আগে, চীন এর প্রধানমন্ত্রীর একটা সাক্ষাতকার পড়েছিলাম। তিনি নিজেই বলছিলেন, আমি জি ডি পি এর দিকে তাকাই না, অর্থনীতির রীয়েল ইন্ডিকেটর হিসেবে আমি দেখি পোর্ট এর গুডস পরিবহন আরো উঠানামা, ইলেক্ট্রিসিটি কঞ্জাম্পশন আর বাঙ্ক লোণ এর প্রব্রিধি।
এই তিন টা দিক থেকেই বাংলাদেশ একটা ভয়াবহ অবস্থানে আছে।
স্বাধীনতার পর, এই প্রথম বারের মত চিটাগাং পোর্ট এর প্রব্রিধি ছিল নেগেটিভে।
২০১১ সালে জুলাই থেকে অক্টোবর কোয়ার্টারে, চিটাগাং পোর্ট এর কন্টেইনার হেন্দলিইং হয়েছে ৪২৮,৫৯৫ টি। ২০১২ তে হয়েছে ৪৭৪,৯৩৩ টি। চোখ বুজে ১০% ডাউন । পুরো ২০১২ তে এই নিম্ন মুখি ট্রেন্ড টা বিরাজমান ছিল।
অনেক জেটি এখন বসে আছে, ফীডার ভেসেল বসে আছে।
Click This Link
কারো তেমন মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হচ্ছেনা।
রীয়াল এস্টেট সেক্টর মুখ থুবড়ে মাটিতে পরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
আজকে থেকে দুই বছর আগে, স্টক যখন বুমিং ছিল তখন রিয়াল এস্টেট সেক্টর আকাশে উড়ছিল। হাজার হাজার নতুন কম্পানি, হাজার হাজার নতুন বিল্ডিং। স্টক এর থেকে টাকা বের করে, অনেকেই ফ্লাট বুকিং দিয়েছিলেন।
আপনার পাড়ার আসে পাশে তাকিয়ে দেখেন। গত এক বছরে হার্ডলি কোন নতুন বিল্ডিং হইছে। রিয়াল এস্টেট সেক্টর কিন্তু টেম্পোরারি লেবার এর বড় জোগান দাতা । এই সেক্টর ধসে পড়াতে লেবার মার্কেটে কি প্রভাব পারছে তা যাচাই করার মত কোন ইন্ডিকেটার এই দেশে নাই।
সরকার বলেছে... ভাই, আনন্দের আর সিমা নাই।
গত দের বছরে ফ্লাট এর দাম বাড়ে নাই।
এখন টাকা আছে যার, ফ্ল্যাট কেনার তার শ্রেষ্ঠ সময়, উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু বয়ে যায়। cellbazaar, clickbd তে দেখেন, উত্তরাতে এখন ফ্লাট এর এভারেজ প্রাইস যাচ্ছে ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা স্কয়ার ফিট। এমনকি ৩০০০ থেকে ৪০০০ এর মধ্যে ছোট ফ্লাট পেয়ে যেতে পারেন । আজ থেকে দুই বছর আগে, এভারেজ প্রাইস ছিল ৬০০০ থেকে ৭০০০ টাকা। ৩০০০-৪০০০ টাকা স্কয়ার ফিট আপনি চিন্তাও করতে পারতেন না।
সব চেয়ে অবাক হয়ে জানলাম । জমির দাম কমছে।
মোরশেদ ভাই এর সম্পাদনায়, বাংলাদেশ ফাস্ট পেপার এর খুব চমৎকার একটা প্রতিবেদন শেয়ার করি,
Click This Link
মানুষের হাতে টাকা নাই। নতুন ইনিভেস্টমেন্ট হচ্ছেনা। টাকা না থাকলে মানুষ জমি কিনবে কেমনে?
থার্ড এ আসি ব্যাংক লোন।
বাঙ্ক লোন এর ইন্টারেস্ট এখন ১৯%। এইটা স্বাধীনতার পর সরবোচ্চ রেট(ধারনা। কিন্তু গত ১০ বছরে এইটা দেখি নাই। )। বাঙ্ক গুলো বলছে, তাদের কাছে টাকা নাই। আমার মনে হয়, কথা টা ভুল। ব্যাঙ্ক এর টাকা আছে, ব্যাঙ্ক এখন ইনভেস্টমেন্ট করছেনা । সিকিউরড লোণ দিতেও ভয় পাচ্ছে। এইটা বোঝা যায়। ডিসেম্বর এর কল মানি রেট দেখলে। ডিসেম্বারে কল মানির রেট ছিল ৭.৫% ।
বাঙ্ক এর টাকা না থাকলে, তারা এগ্রেসিভ হয়ে টাকা কেনে। ২০১১ জুড়ে এই রেট বাংলাদেশে ১৭%-১৮% এর উপরে ছিল।কল মানির রেট বলে দেয়, ব্যাংকের কাছে টাকার চাহিদা নাই। তারা টাকা থাকা সত্ত্বেও লোণ দিচ্ছেনা।
কল মনি রেটে এই জানুয়ারি তে হঠাত একটা স্পাইক আছে।
এইটা মুলত বাংলাদেশ বাঙ্ক এর কাছে রাখা প্রতিটি ব্যাংক এর বাধ্যতামূলক ক্যাশ রিজার্ভ হোলডিং লিমিট ৫.৫% থেকে ৬% এর বাড়িয়ে দেয়ার কারনে। আমার অবাক লাগে, এই সময় যখন বিবি র আরো উচিত ছিল, এই রেট টা কমিয়ে বাঙ্ক গুলোকে ক্যাশ ফ্লো বাড়িয়ে অরথনিতিতে গতি সঞ্ছার করার আর বাংলাদেশ ব্যাংক করলো ঠিক উলটা। ইন্ডিয়ান সেন্ট্রাল বাঙ্ক গত জানুয়ারি মাসে তাদের বাধ্যতামূলক ক্যাশ রিজার্ভ লিমিট ৪.২৫% থেকে ৪% এ নিয়ে আসছে, যাতে ইকনমিতে শেষ ফ্লো বারে। আমরা এমন একটা খারাপ অবস্থার মধ্যে এইটা বাড়ালাম। এরা কোন গুদামের চাল খায় আল্লা জানে।
বাস্তবতা হচ্ছে,বাঙ্ক গুলোতে এখন ব্যাপক ডিফলট হচ্ছে। প্রিমিয়ার বাঙ্ক আর কর্পোরেটে এর হেড কে, ইকবাল সাহেব বেন্ধে রেখেছিল, হেড অফিসে, এমনে এমনে না। টাকা রিকভার করার জন্যে।
সোনালী বাঙ্কের কথা বাদ দিলাম। সরকার বাঙ্ক আর আর দুর্নীতি নিয়ে এই গরুর রচনা না।
কিন্তু বাঙ্ক গুলো অনেক দেখে লোন দিচ্ছে । ছোট হতে বড় সব ধরনের বেবসা থমকে আছে। কথা হল , ১৯% আর উপর ইন্টারেস্ট দিয়া, একটা বিজনেস প্রফিট করবে কেমনে ? চোরা কারবারি আর এক চেটিয়া সিন্ডিকেট ভিত্তিক বেবসায়ি বাদে কারো পক্ষে এই ১৯% ইন্তেরেস্ট রেটে লোণ নিয়ে বেবসায় প্রফিট করতে পারা অসম্ভব বেপার। অনেক এস এম ই প্রতিষ্ঠান পথে বসে গেছে, শুধু বড় প্রতিষ্ঠান গুলো মুনাফা করছে, তাদের ইকনমি অফ স্কেল এর এডভান্টেজ এর কারনে।
এই ইন্টারেস্ট রেটটা কিন্তু আল্টমেটলি সব পন্যের মুল্যস্ফিতি করবে। এবং আমাদের খাদ্য পণ্যের দাম এর উপরেও আঘাত করবে।
মুল প্রব্লেমটা শুরু হয়েছে
শেয়ার মার্কেট ধ্বস আর ডেস্টিনি সহ অন্যন্য এম এল এম দের হাত ধরে মধ্যবিত্তের সঞ্চয় বের হয়ে যাওয়ার পর। সাথে আর অনেক ফেক্টর আছে। কিন্তু এইটা ছিল শুর। এই টাকা টা মানুশের হাতে থাকলে, মানুষ ছোট খাটো ইনভেসত্মেন্ট করতো, ফ্ল্যাট কিনতো , পোলট্রি করতো বা বন্ধু কে লোণ দিত, বা খরচ করত, বা ঈদে পালা পার্বণে খরচ করতো বা ব্যাঙ্ক এ রাখতো, যেটা থেকে ব্যাঙ্ক শিল্পে বা বেবসাতে লোণ দিত।
কিন্তু, এই টাকা টা চলে গেছে অল্প কিছু দুর্নিতীবাজ রাজনিতিবিদ আর শিল্পপতি দের হাতে যারা সরকার আর লাস্ট ইয়ার বলে, হাত গুটিয়ে বসে আছে আর গন টাকা পাচার করতেছে কানাডা আর মালেয়সিয়া তে। এই সব বিদেশি দুরনিতির টাকা ধরার জন্যে এই সব দেশে খুব লুক্রেটিভ ইনভেসটমেন্ট ওয়েলকাম প্রোগ্রাম আছে। স্পেসিয়ালী মালেয়সিয়া সেকেন্ড হোমহমে নামের একটা প্রোগ্রামে মালেয়সিয়াতে প্রচুর এপ্লিকেশান পরেছে বাংলাদেশ থেকে। সরি, আবার গরু রচনা হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কিন্তু ২০০৮-২০১০ এর ওয়ারল্ড রিসেসানের মুখে ভাল প্রব্রিদ্ধি করে প্রিথিবী কে চমকে দিয়েছিল।কিন্তু ২০১২ তে এসে আমরা নিজেদের কারনে নিজেরা ভয়াবহ অরথনইতিক দুরাবস্থার অবস্থায় পড়েছি।
এই টা এখন ক্লিয়ার। কোন বেবসাতেও সেল নাই এবং চকরাকারে সবাই পড়ছে মন্দার মুখে আছে । গত ইদে, কোরবানি গরুর দাম ছিল অসাভাবিক কম। অনেক গরুর বেপারি শেষ দিনে, ১৪/১৫ হাজার টাকায় ৩০ হাজার টাকার গরু বেচে দিছে। অবিশ্বাস্য ভাবে, ছাগলের দামে গরু বেচা হইছে।
ঠিক একই কারনে, চালের দামেও মন্দা এসেছে। এবং এই মন্দার কারনে, গ্রামএর অরথিনিতিতে ভয়াবহ অবস্থা। গ্রামের বাজারে , প্রান্তিক শ্রমে , খুদ্র ইন্ডাস্ট্রিতে ভয়াবহ মন্দা যাচ্ছে। আমাদের দেশে একটা চালের দামের পলিটিক্স আছে।কিন্তু সব কিছুর দাম বারছে, কিন্তু বছরের পর বছর চালের দাম যদি ১০ টাকায় রয়ে যায়, ঐ কৃষক কি খাবে ? তার বাড়তি আয় কি হবে ? তার ছেলে মেয়ের শিক্ষা, বা তার চিকিতশা কেম্নে হবে ? এনি ওয়ে এইটা অন্য আলোচনা।
পত্রিকায় এসেছে, টেলিকম সেক্টরে গ্রামিন, বাংলালিঙ্ক, রবি সবার গত প্রান্তিকে কাস্টমার কমেছে। প্রতিষ্ঠার পর টেলকো দের জীবনে, এই প্রথম কাস্টমার কমলো। ফলে তারা এড বাজেট কমিয়ে দিয়েছে এবং মেডিয়া সেক্টরে চলছে কর্মীদের উপর ছুরি কাটাকাটি।
যে কোন বিযনেস এর সাথে আমি কথা বলি, বড় ছোট, এস এম এ কর্পোরেটে, মুদির দোকান, হাই স্ট্রীট সবার অবস্থা খারাপ। সবাই চাকুরী ছাঁটাই করছে। চাকুরী ছাঁটাই না করলেও, নতুন হায়ারিং বন্ধ। শুধু মাত্র অন্ধ লিগার, আর বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ইন্টলেকচুয়াল না হলে যে কেও এই সত্য দেখতে পাবে।
নতুন গ্রাজুয়েট দের এভারেজ সেলারি কমেছে
নতুন চাকরি প্রার্থী দের মধ্যে ৪ লাখ টাকা দিয়ে বি বি এ করে, নতুন গ্রাজুয়েট দের এভারেজ সেলারি এখন ১০,০০০ থেকে ১৪,০০০।(আই বি এ, আর নর্থ সাউথ এর কথা বলছিনা। )। এর আগে এই সেলারি টা ঊর্ধ্ব মুখি ছিল।
একটা গুড সাইন হচ্ছে, ফরেইন রিজারভের এর অবস্থা ভাল।
তাই ডলার এর দাম কমে এসেছে, ৮৪ টাকা থেকে এখন ৭৯ এ। এইটা প্রতি মাসেই নামছে।
ফলে ইম্পোরট সস্তা হবে। কিন্তু ঐ টা আবার একসপোরটার এর প্রফিট কমিয়ে দিবে। আমাদের মুল একপরটার গার্মেন্টস ওয়ালারা। এদের প্রফিট বাড়লে জি ডি পি বাড়ে, কিন্তু দেশের তেমন খুব বেশি লাভ হয়না। কারন প্রফিট বাড়লে এরা শ্রমিকের বেতন বাড়ায় না। ২০১১ তে, ৭৬ টাকার ডলার ৬ মাসে ৮৪ টাকায় যাওয়াতে তাদের প্রফিট প্রায় ১০% বাড়ছিল কিন্তু এরা চুপে মজা নিয়ে গেছে।
মোটের উপর বলা যায়, দেশের অর্থনীতি নব্বই দশকের পর সব চেয়ে খারাপ অবস্থা পার করছে।
আমি জানি না কেন এই সত্য গুলো কেও বলছেনা । মানুষ খুব কষ্টে আছে। বিশেষত মধ্যবিত্ত। বিশেষত যারা মাত্র গ্রাজুয়াসান শেষ করলো। বিশেষত যারা ছোট বেবসা করে। বিশেষত গ্রামের কৃষক বা প্রান্তিক মজুরেরা। ক্লিয়ারলি, আমরা রিসেসানের মধ্যে পরেছি। কিন্ত সরকার এর বি বি এস, ইচ্ছা মত ডাটা দিয়ে বলছে, আমরা ইউরোপ, আমেরিকার থেকে ভাল আছি। চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে আমাদের বাস্তব ইন্দিকেটার গুলো একটা ভয়াবহ দুরবস্থা নিরদেশ করছে। কেন এই গুলো নিয়ে মিডিয়া,সরকার কারো মাথা ব্যাথা নাই, কেন এই নিয়ে আরো এনালিসিস হচ্ছে না সেই টা একটা এক কোটি টাকার প্রশ্ন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




