somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হ্যালুসিনেশন

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাইকোলজি বিশেষজ্ঞ বিষু চাকলাদার

দশ বাই দশ কক্ষের আসবাব বলতে একটা টেবিল, গদিওয়ালা একটা চেয়ার, কাঠের চেয়ার দুটি আর একটা বইয়ের তাক। তাক'টা আপাতত ধূলোর দখলে।

দুটি কাঠের চেয়ারের একটা আমি দখল করে বসে আছি, ড.চাকলাদার এর মুখোমুখি। সমস্ত ডক্টর রোগী পেলে খুশি হন, চোখের পলক দ্রুত ফেলে বিনয়ের বহর সাজায়। কিন্তু ড.চাকলাদার বোধহয় খুশি হতে পারলেন না। এমনকি আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না।

একটা A4 পেজ থেকে চোখ তুলে তাকালেন আমার দিকে। আমি বিনয়ের হাসি দিয়ে বললাম
"ডাক্তার সাব কি ব্যস্ত?"
ভ্রু কুঁচকে বললেন
"ডাক্তার সাব বলার প্রয়োজন নেই। সমস্যা বলুন।"
"একই তথ্য দুবার জিজ্ঞেস করে উকিলেরা। আপনি তো উকিল না, আর আমি মক্কেলও না।"
"কথা না পেচিয়ে সোজাসাপ্টা উত্তর দেবেন।"
"জ্বি আচ্ছা"
"আপনি বলছেন আপনার পেছনে কেউ হাঁটে, বুট ঠুকিয়ে?"
"জ্বি"
"আপনি হাঁটা থামালেই শব্দ থেমে যায়?"
"জ্বি"
"এতো জ্বি জ্বি করছেন কেন? আমি কি আপনার ম্যাথ টিচার নাকি? ভয়ে ভয়ে জ্বি জ্বি করছেন।"
আচ্ছা এতো টিচার থাকতে ম্যাথ টিচারের শুধু দোষ হবে কেন? বাংলা টিচার'কে কেউ ভয় পায় না নাকি? আমাদের একটা বাংলা টিচার ছিলেন 'নাজির স্যার' কথায় কথায় অপদস্থ করতেন। তাই তাকে আমরা সবাই ভয় আর অপছন্দ করতাম।
ভ্রু কিঞ্চিত বাঁকিয়ে বললাম-
"কথা প্যাচাতে একটু আগেই না করেছেন। আমি বেশি কথা বললেই লোকে বলে পেচিয়ে কথা বলি।"
"আচ্ছা বুঝেছি। এটা আপনার বিশেষ কোন রোগ না। হ্যালুসিনেশন মাত্র। বুঝেছেন?"
"বুঝিয়েছেন?"
ড.চকলাদার'কে আহত হতে দেখলাম, নড়েচড়ে বসে বললেন
"এটা এক ধরনের মস্তিষ্ক বিভ্রম। মনে হবে কেউ আপনাকে ডাকছে কিন্তু আসলে এমনা হচ্ছে না। হ্যালুসিনেশন অনেক ধরনের হতে পারে। এই যেমন ত্বকের, শোনার, ঘ্রাণের হ্যালুসিনেশন। আপনার শোনার হ্যালুসিনেশন হয়েছিল। এবার বুঝেছেন?"
"আমি মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরায় কাউকে দেখলাম না কেন?"
"না দেখাই স্বাভাবিক। ফাংশনাল হ্যালুসিনেশন, রিফ্লেক্স হ্যালুসিনেশন, অটোসকোপিক হ্যালোসিনেশন নামেও আরেক ধরনের হ্যালুসিনেশন আছে। যেমম ধরুন ফাংশনাল হ্যালুসিনেশন।
ফাংশনাল হ্যালুসিনেশন এটি আরেক ধরনের মজার শ্রবণেন্দ্রিয় হ্যালুসিনেশন। কেউ হয়তোবা বাথরুমে গিয়ে পানির ট্যাপ ছাড়ল আর সাথে সাথে কানে গায়েবি আওয়াজ আসতে শুরু করে দিল। মজার ব্যাপার হলো যখনই পানির ট্যাপ বন্ধ করে দেয়া হয় তখন সাথে সাথেই কানের শ্রবণেন্দ্রিয় হ্যালুসিনেশন বন্ধ হয়ে যায়। আপনার ব্যাপারটা অনেকটা এমন। যতক্ষণ হাঁটছেন বুটের শব্দ পাচ্ছেন, হাঁটা থামালেই শব্দ থেমে যাচ্ছে।"
"সবই বুঝলাম। কিন্তু আমার হ্যালুসিনেশন হবে কেন?"
"হ্যালুসিনেশন হওয়াটা খুব সাধারণ বা খুব মারাত্মক কিছু থেকেই শুরু হয়। এই ধরেন আপনি হঠাৎ একা থাকা শুরু করে দিলেন। বিষণ্ণবদনে হাসি ফুটে না। এখান থেকেই হ্যালুসিনেশন শুরু হতে পারে। হঠাৎ হঠাৎ আপনি কারো হাসির শব্দ শুনতে পারেন। তারপর ধীরে ধীরে কথাও হতে পারে।"
"মারাত্মক ব্যাপারটা কি?"
"হঠাৎ কোন এক্সিডেন্ট হলো আপনার সামনে বা আপনারই এক্সিডেন্ট হল। তখন থেকেই শুরু হতে পারে।"
"প্রতিকার কি?"
"এর যথার্থ কোন চিকিৎসা নেই। হ্যালুসিনেশন চিকিৎসা সাধারণত এন্টিসাইকোটিক ঔষুধ নির্ভর হয়ে থাকে। আপনার সমস্যা তেমন গুরুতর হয়ে উঠে নি। তাই মাস খানিকের মাঝেই সেরে উঠতে পারবেন।"
"শুরু করবেন কবে থেকে?"
"কাল সন্ধ্যা ছয়টায় আসবেন।"
আমি চেম্বার থেকে খুশি মনে বেড়িয়ে পরলাম। হাতে ড.চকলাদারের ভিজিটিং কার্ড। বড় বড় করে লেখা
শ্রী শ্রী ড. বিষু চকলাদার।

(চলবে)

পরবর্তী পর্ব: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোর কথা তুই লিখে সত‍্যতা প্রমান কর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪১



ব্লগ মনে হয় কারো কারো বাপ দাদার জমিদারি হয়ে গেছে। সব পোস্ট দালাল , রাজাকার, জঙ্গিদের অথবা লালবদরদের স্বপক্ষে হোতে হবে। সত‍্যের আগমনে মিথ্যা বিস্মৃতির অবসান হয় ।আদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

গুমের শিকার ব্যক্তিদের অতি ক্ষুদ্র কক্ষের ছবিটি বিবিসি ডটকম থেকে নেওয়া।

পরিচিতি

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি'র লাখ লাখ কর্মী অপেক্ষা করছে, সর্দারের ১ম নতুন ডাকাতীর খবরের জন্য।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩১



আওয়ামী লীগের সময়, যারা ১৭ বছর ডাকাতী করে যা জমায়েছিলো, বিএনপি'র কয়েক লাখ লোজজন তাদের থেকে একটা বড় অংশ ছিনিয়ে নিয়েছে; সেই প্রসেস এখনো চলছে। তবে, বস... ...বাকিটুকু পড়ুন

=জোর যার, ক্ষমতা তার=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৪



কনুইয়ের গুতাতে কার, জায়গাটা দখলে
কে সে, জানো তো সকলে!
ক্ষমতার লড়াইয়ে, বল চাই-
দেহে বাপু জোর চাই
জোর যার, ক্ষমতা তার,
রাজনীতির ছল চাই।

ক্ষমতাটা নিতে চাও, জোর চাই
দেহ মাঝে বল চাই,
ধাক্কায় নির্বল, ফেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×