somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজসোহানা

১৬ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এর আগে ব্লগের গুরুজিকে নিয়ে "কপাল ফাটা রবিন" লিখসিলাম। এবার রাজসোহান কে নিয়ে রাজসোহা"না"। তবে আগের বারের মতই এটাও পুরাই কাল্পনিক।)


জন্মের পর থেকেই সমস্যা শুরু। জন্মের পর বাচ্চারা সাধারণত কি কথা বলে? আ আ তু তু তু। তার পর সব থেকে মধুর শব্দ মা। তারপর বাবা। রাজ এরও এরকমই অবস্থা। তারপর রাজ এর নানা যখন তার নাতিকে আদর করে আলে তু তু তু আমার বাবুটা আমার নাতিটা করতে লাগল তখন আর রাজ এর মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হইলই না। সবাই বেশ চিন্তায় পরে গেল। রাজ সে মামা, চাচা ফুফা সবই বলতে পারতেসে পারতেসেনা খালি নানা।

বস্তুত তখনই সবার বোঝা উচিত ছিল যে রাজসোহান এর অভিধান এ “না” নামক কোন শব্দই নাই। তিনি কাউকেই “না” বলতে পারেন না। এইত বয়স যখন ৮ তখনকার কথা। রাজসোহান এর দারুন একটা খেলনা পিস্তল ছিল যেটা দিয়ে ৮ রকমের আওয়াজ বের হত। ইয়া ঢা ঢা ঢা, ইয়া ঢিসা ঢিসা ঢিসা। রাজ সোহান এর তখনকার এক বন্ধু গুল্লু তার প্লাস্টিক এর গাড়ি এর সাথে রাজসোহান এর সেই দারুন পিস্তলটা পাল্টাপাল্টি করে নিল। রাজসোহান বেচারা আর কি করবে!! “না” তো আর বলতে পারেনা।

আসতে আসতে রাজসোহান যখন বড় হওয়া শুরু করল তখনও তার এই সমস্যা গেল না!! যেমন রুনা লায়লার “নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর ক্যামনে পৌছাইতাম” এই গানটা তার মুখে মোটেও আসতনা। এত গুলা না সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব না। এই তো মেট্রিক পরীক্ষার কথা। পাশের ছেলেটাকে “না” বলতে পারেনায় সে, তাই নিজের খাতাটাই বিসর্জন দিতে হল।

বস্তুত এরকম হওয়ার অনেক সমস্যা আছে। দুষ্ট লোক নিজেদের ফায়দার কাজ করে নেয়। রাজসোহান এর সাথেও এমন হতে লাগল। কাউকেই সে না বলতে পারেনা। নানা পাটেকর নামে একজন অভিনেতা আসে সেটাই তার জানা হল না। অন্যরা তার মুখের উপর অনেকবার “না” “না” বলে গেলেও সে নিজেও বলতে পারেনা।

রাজসোহান টাইপ মানুষদের আবার লোকজন বেশ পছন্দ করেন। কারনটা খুব সহজ। যে “না” বলতে পারেনা সে আর যাই সিংহ হতে পারেনা। আর হুমায়ুন আজাদ যার নামের সাথে কখনও কোন “না” ছিলনা সে তো বলেই গেছে মানুষ সিংহ কে ভয় পায় কিন্তু রাজসোহান আর এই গল্পের লেখক জিকসোহান টাইপ গাধাদের পছন্দ করে।

তবে রাজসোহান আর জিকসোহান এর মধ্যে গুনগত, পরিমানগত এবং মেয়ে জগতে জনপ্রিয়তাগততে পার্থক্য আছে। রাজসোহান নির্বিচার মানুষ তাকে আবার মেয়েরা পছন্দও করে। সেরকম একটা ব্যাপার একবার কোন এক বছরের জানুয়ারী মাসে ঘটল।

প্রথমটা জানুয়ারী মাসের ১০ তারিখের ঘটনা। রাজসোহান আমসত্ত্ব কিনতে নিউমার্কেট যাবে। এক রিকশা দেখে ডাক দিল আই রিকশা যাবে? ঠিক তখনই ঐ পাশ দিয়ে এক রুপবতি তরুনিও ডাক দিল। কিছু কিছু মেয়ে থাকেনা যাদের দেখলে বাতাস বেড়ে যায়, মেয়ের ওড়নাটা একটু উড়তে থাকে। মেয়েটাও এসে রিকশা ওয়ালাকে বলল আই যাবেন নিউমার্কেট?? এরকম ক্ষেত্রে জিকসোহান বা অন্য কোন সাধারন ছেলে (যেমন কপাল ফাটা গুরুজী/রবিন ওরফে কফারবিন) হলে মেয়েটা রিকশা নিয়ে চলে যেত। কিন্তু ঐ মুহুর্তে ঐ রুপবতি তরুনির আবির্ভাব যে রাজসোহান এর জন্যই। মেয়ে রাজসোহান কে বলল চলুন না আমরা একসাথেই যাই। এই জায়গায় কোন ছেলেই “না” বলবেনা। আর রাজসোহান এর তো না বলা স্বভাবেই নাই। পরিচয় হতে গিয়ে আবার সমস্যা হল। মেয়ের নাম নাদিয়া। যেহেতু “না” দিয়ে উচ্চারিন করা সম্ভব না তাই রাজসোহান কোনোরকমে দিয়া বলে চালায় দিল।

জানুয়ারী এর ২০ তারিখের দিকে রাজসোহান যখন তার বাসার ছাদে উঠে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছিল। ঠিক যখনই সে মুক্ত হাওয়া দেখে একটা বড় শ্বাস নিতে গেল কোথেকে একটা গামছা তার মুখে আসল। বাড়ির কোন এক মেয়ে বাসিন্দা দৌড়ে আসল। গামছা নিল আর হাসি দিয়ে রাজসোহান কে সরি বলল। যাওয়ার সময় পরিচয় হল। মেয়ের নাম নাতাশা। এইবার আরো ঝামেলা। একে যে তাশা বলতে হবে।

জানুয়ারী মাসের ৩০ তারিখের দিকে রাজসোহান যখন এক বিয়ে বাড়িতে গেল। সেখানে ছোটখাট একটা অঘটন ঘটল। বোরহানি খেতে গিয়ে মানহানি হোয়ার মত ব্যাপার। এক মেয়ের ধাক্কায় বোরহানি গড়িয়ে রাজসোহান এর প্যান্ট এ পড়ল একেবারে অসুবিধাজনক জায়গায়। লোকজন সন্দেহের চোখে তাকাবে এমন জায়গায়। রাজসোহান খুবই বিব্রত বোধ করল। এবারের মেয়ের নাম নাইমা। একে তো তাইলে সংক্ষেপে ইমা ডাকতে হবে।

ঠিক ফেব্রুয়ারী ১৪ তারিখে মানে ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে যখন সারাদিন রাজসোহান এর একাই কাটল ঠিক রাত ১১ টা ১০ মিনিটে নাদিয়া ফোন দিয়ে বলল তার রাজসোহান কে পছন্দ। রাজসোহান যেহেতু “না” বলতে পারেনা তাই হ্যা বলে দিল। কিন্তু সমস্যা হল ঠিক ১১ টা ২০ যে আবার নাতাশা ফোন করেও একই কথা বলল। এইবার উপায়। “না” এইবার ও বলা হলনা। ঠিক ১১ টা ৩০ মিনিটে যখন নাইমা ফোন দিল রাজসোহান তখনও “না” বলতে পারল না।

এই “না” বলতে না পারার চক্করে ঐ তিন “না” দিয়ে শুরু হওয়ার মেয়ের সাথে যে কি হল তা ঠিক জানা হল না। কিন্তু তার ঠিক এক বছর পরের ভ্যালেন্টাইন ডে তেও রাজসসোহান এর ফেসবুক রিলেশন স্ট্যাটাস সিঙ্গেল থাকল।

তার ঠিক ১ বছর পর রাজসোহান এর বিয়ে ঠিক হল। রাজসোহান বিয়ে করতে যাবে। মেয়ের নাম এর সাথে এবারে আর “না” নাই। মেয়ের নাম সাথি। সোহান-সাথি শুভবিবাহ তে সবাই আমন্ত্রিত। হামা ভাই সেইরম একখান পাঞ্জাবি পড়ল। রাজি, গুরুজী, সুপ্তি, শাকির, স্বপ্নকথক, পাপতাড়ুয়া সব হাজির। বিয়ে হবে ঢাকার বাইরে। রাজসোহান একটা গাড়িতে করে রওনা হল। ঠিক পথে মধ্যে গাড়ি এক্সিডেন্ট করল। না রাজসোহান এর গাড়ি না। সামনের একটা গাড়ি। একটা বাচ্চা বেশ আহত হল। রাজসোহান দৌড় দিয়ে তাকে হসপিটাল এ নিয়ে গেল। যাওয়ার পথে নিজের মোবাইলটা হারিয়ে ফেলল হয়ত বা পকেট থেকে পড়ে গেল। হটাৎ রাজসোহান এর মনে পড়ল!! আজ তার বিয়ে। সোহান-সাথি এর বিয়ে। সে উঠতে যাবে বাচ্চার মা এসে হাজির। বাবা তুমি যাইওনা তুমে গেলে আমার পোলা বাঁচবেনা। রাজসোহান ডাক্তার না। ছেলে বাঁচার হইলে ডাক্তার বাঁচাবে। কিন্তু রাজসোহান যে “না” বলতে পারেনা। ঐদিকে বিয়ে বাড়িতে টেনশন। দুপুর পার হয়ে বিকাল। সবাই ওখানে অপেক্ষা করছে। রাজসোহান কখন আসবে!! রাজসোহান হসপিটাল এ। অপেরেশন থিয়েটার এ বাচ্চাটা। “না” বলতে না পারার কারনে নিজের বিয়েটাও দেরি হয়ে যাচ্ছে। “না” বলতে শিখরে ভাই রাজসোহান!! বিয়ের খাওয়া ঠান্ডা হয়ে যাইতেসে।


গল্প এখানেই শেষ। তবে যদি কেউ শেষাংশ চায় তার জন্য। তবে শেষাংশ হুমায়ুন আহমেদের বহুব্রীহি থেকে নেওয়া।

শেষাংশ

বিয়ে বাড়িতে অস্থির অবস্থা। কনেপক্ষে তে অস্থিরতা। অবশেষে রাজসোহান এল। সাথি এসে বলল কেউ যাবেনা আমি কথা বলব।

সাথিঃ কি সমস্যা তোমার?

রাজসোহানঃ একটু আঁটকা পড়ে গেছিলাম।

সাথিঃ তাহলে এখন আবার আসছ ক্যান?

রাজসোহানঃ স্যরি বলতে আসছি।

সাথিঃ বিয়ের চিন্তা মাথায় থাকলে বাদ দাও। আর স্যরি কি বলা শেষ?

রাজসোহান চুপ করে থাকল।

সাথিঃ শুন। "না" বলাটা খুব কাজের একটা জিনিষ। এটা বলা শিখ।

রাজসোহানঃ না। (জীবনে প্রথম রাজসোহান "না" বলল। এইটা একটা সিগনাল। সাথি ছাড়া এইটা হইত না)

সাথিঃ কি না?

রাজসোহানঃ "না" বলা শিখবনা।

সাথিঃ "না" বলা শিখবানা মানে? (এইটা বলে সাথি হামা ভাই রে ডাক দিল)। হামা ভাই যেইখান থেকে পারেন কাজি ডাইকা নিয়ে আসেন। দেখি সে ক্যামনে "না" বলে। বিয়ে এখনই হবে। ওরে "না" বলা আমি শিখাব।

রাজসোহান এর বিয়ে হইলেও পোলাও কোরমা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। সেটা খাইতে সবার বেশ কষ্ট হইল। রাজসোহান আরো আগে "না" বলা শিখলে এই অবস্থা হইত না।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১১ রাত ১০:৩০
৯৫টি মন্তব্য ৯২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×