somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. ইউনূসের ‘সামাজিক ব্যবসা’ পাল্টে দেবে পৃথিবী!

২৮ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটি একবিংশ শতাব্দীর সেরা আবিষ্কার। অন্তত এ পর্যন্ত! আপনি কি মিটি মিটি হাসছেন? তাহলে আপনাকে ধন্যবাদ এই হাসির জন্য! কারণ, আপনার এই হাসি ঐতিহাসিক! ইতিহাসে বড় বড় আবিষ্কারের কথা শুনে প্রথম প্রথম এভাবেই হেসেছিল অনেকে।
‘তার’ (ডওজঊ) ছাড়া শত মাইল দূরে বাঙের ভেতর শোনা যাবে গান- এটা শুনে গুনগুনিয়ে বিদ্রূপের গান গেয়েছিল অনেকে। তারপর যখন ঠিকই বাঙে বেজে উঠল গান, ওরাই রেডিওকে বলল- ‘জাদুর বাঙ’! আর জাদুর বাঙে যখন কৌতুক শুনল, হো হো করে হেসে উঠল এই গাধার দলই! বলল, ‘এতো দেখি সত্যি! আজব!’
শুধু হাসি নয়, পৃথিবীর বড় বড় আবিষ্কারের পেছনে কান্নাও আছে! ‘পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে’ বলায় প্রশাসন যন্ত্রের কোপানলে পড়তে হয়েছিল গ্যালিলিওকে। কিন্তু প্রশাসন যন্ত্র থামাতে পারেনি সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর ঘোরাকে। গালিলিওর পক্ষে প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আজও পৃথিবী ঘুরে চলেছে সূর্যকে ঘিরে!
গম্ভীর হবেন না। কারণ, আজ মজার একটি ব্যবসা সম্পর্কে সরল ও তরলভাবে বলবো। মজার লাগবে যদি আপনি মানুষটা ভাল হন। আপনি মানুষ ভাল। না হলে এতটুকুও পড়তেন না। ব্যবসাটিকে বলা হচ্ছে ‘সামাজিক ব্যবসা’। আবিষ্কার করেছেন আমাদের এই অভাগা দেশের এক সূর্য সন্তান! বেচারা ড. ইউনূস! ড. ইউনূস। রহস্যপূর্ণ বিজ্ঞানী। ঘনিষ্ঠ সূত্রমতে ওনাকে নাকি খেতে ও ঘুমুতে দেখা যায় না! অন্য গ্রহের মানুষ সম্পর্কে আমার পড়াশোনা আছে। ওরাও খায় না, ঘুমায় না। আর তারা অতি বুদ্ধিমান! আমার পরিচিত এক হুজুর (মাওলানা)-কে বিষয়টি জানাই। উনি জিভে কামড় দিয়ে বলেন, ‘তওবা করেন, গুনাহ হবে’!
বললাম, ‘কেন’?
বললেন, ‘অন্য গ্রহের মানুষ না, উনি জ্বীন। পা দেখেছেন’?
‘দেখা যায় না, ফটোতে দেখলাম। ট্রাউজার্সে ঢাকা থাকে’।
‘তা তো থাকবেই’, বলেন হুজুর। ‘মানুষরূপী জিনদের পা উল্টা থাকে, তাই ঢেকে রাখে’!
চমকে উঠলাম, ‘বলেন কি’?
‘ঠিকই বলি। কোনদিন সামনাসামনি হলে সালাম করার ভান করে প্যান্ট একটু আলগি দিয়ে দেখবেন পা উল্টা’!
বলে উল্টো দিকে হাঁটা দেন হুজুর!
ওনার কথা থাক।
আমরা যে কথায় ছিলাম সে কথায় আসি। সামাজিক ব্যবসা। ড. ইউনূসের ‘সামাজিক ব্যবসা’ বাইরের দেশগুলো যতটা না ভাল বুঝতে পেরেছে, আমাদের দেশ বিশেষ করে শিক্ষিত ও ধনাঢ্য সমাজ বুঝতে পারেনি। বুঝতে চেষ্টা করেনি। অথবা ভুল বুঝেছে। অনেকে ‘ক্ষুদ্র ঋণের পিতা’ ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ এবং তার নিজ হাতে সৃষ্ট ‘গ্রামীণ ব্যাংকে’র সঙ্গে ‘সামাজিক ব্যবসা’কে এক করে ফেলেন। সংশ্লিষ্টতা থাকলেও ‘সামাজিক ব্যবসা’ একটি নতুন উদ্ভাবনা, আলাদা সত্তায় বিশিষ্ট। সহজ করছি। চলুন একজন ভিক্ষুককে ‘গিনিপিপ’ বানিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি। ধরা যাক, প্রতিদিন আপনি একটি ট্র্যাফিক সিগন্যালে এই ভিক্ষুকটিকে টাকা দেন। ১০ টাকা, কোনদিন ২০ টাকা। এটি আপনি আপনার সামাজিক দায়িত্ব ভেবে করছেন। কিন্তু এতে করে ভিক্ষুকটি ক্রমশ বড় ভিক্ষুকে পরিণত হচ্ছে! উৎসাহিত হয়ে সে তার ১ ছেলে, ১ মেয়ে আর ১ ভাগ্নেকে এ পথে নামিয়ে দিল। তাহলে কি দাঁড়াল? আপনি সমাজকে ভালবেসে সমাজে ১ ইউনিট থেকে ৪ ইউনিট ভিক্ষুক উপহার দিলেন!
এবার বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখি। আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে প্রথম ভিক্ষুকটিকে ৫০০০ টাকা লোন দেবেন। তাকে আপনার শিক্ষা এবং জ্ঞান দিয়ে বৈধ ব্যবসা শিখিয়ে দিলেন এই শর্তে যে প্রতিদিন সে তার লাভ থেকে আপনাকে ৫০ টাকা করে শোধ দেবে। ব্যস। তিন মাসে আপনার লোন শোধ হয়ে যাচ্ছে! এরমধ্যে সেই ১ ছেলে, ১ মেয়ে আর ১ ভাগ্নে এসে আপনাকে বলল- ওরাও ভিক্ষা ছেড়ে এই ব্যবসা করবে! আপনি ওদেরও একইভাবে লোন দিয়ে ব্যবসায়ী বানালেন। শর্ত একটাই- আপনার লোন শোধ হয়ে গেলে আপনি আর টাকা নেবেন না। এবার বিষয়টি কি দাঁড়াল? আপনি ৪ ইউনিট ভিক্ষুককে ৪ ইউনিট স্বাবলম্বী মানুষে পরিণত করলেন! ধরা যাক, আপনি এদের সম্মিলিত ব্যবসা জোটকে একটি কোম্পানিতে রূপান্তরিত করলেন। যেহেতু ট্র্যাফিক সিগন্যালে এদের সঙ্গে পরিচয়, কোম্পানির নাম দেয়া গেল ‘সিগন্যাল কোম্পানি’! এখন এরা এই সিগন্যাল কোম্পানির মালিক। আপনি ভাবছেন, এই কোম্পানির মূল পরিচালক হিসেবে একজন গাইড প্রয়োজন। কারণ, মালিকদের পড়ালেখার ঘাটতি আছে। আপনার একজন ভাগ্নে আছে। সুশিক্ষিত বেকার ট্যালেন্ট। মাস্তানদের সঙ্গে ইদানীং মিশছে আর বাকিতে বেনসন পোড়াচ্ছে। আপনি তাকে ‘সিগন্যাল কোম্পানি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিয়োগ দিলেন এবং নব্য মালিকদের বললেন তাকে মাসে ৪ হাজার টাকা করে বেতন দিতে। তার কাজ হচ্ছে সিগন্যাল কোম্পানির দেখ-ভাল করা। আপনি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলেন মালিকরা যে শুধু রাজি হয়েছে তা-ই নয়, সঙ্গে আরও ৬ জন ভিক্ষুককে নিজেদের কোম্পানিতে শেয়ার হোল্ডার হিসেবে ভিড়িয়েছে! তাহলে এখন কি দাঁড়াল? আপনি সমাজকে ভিক্ষা না দিয়ে ১০ ইউনিট স্বনির্ভর মানুষ এবং ১ ইউনিট লিডার উপহার দিলেন! ১১ ইউনিট থেকে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূর হলো! এটি-ই হচ্ছে খুব সরলভাবে, ছোট্ট করে, প্রতীকী ‘সামাজিক ব্যবসা’র উদাহরণ। সামাজিক ব্যবসা হচ্ছে এর চাইতে অনেক ব্যাপক এবং বিশাল পরিসরের মহৎ ব্যবসা, যা মাল্টি-ডায়মেনশনাল এবং সীমাহীন সুযোগসম্পন্ন। এটি সৃষ্টিশীলতা এবং উদ্ভাবনার ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো! সামাজিক ব্যবসা যে শুধু দারিদ্র্য দূরীকরণেই প্রয়োজন তা নয়, সমাজের যে কোন দুর্যোগ এবং সমস্যা সমাধানে এটি প্রয়োগ করা যায়। সমপ্রতি জাপানের সুনামি বিধ্বস্ত এলাকায় স্যার ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা প্রয়োগ করে সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে জাপানিরা। হাইতিতেও সমস্যা সমাধানে চলছে সামাজিক ব্যবসার সফল প্রয়োগ! বিশ্বের ৫ ডজনের ওপর দেশে চলছে এর সফল প্রয়োগ!
সাধারণ ব্যবসা বলতে আমরা বুঝি ‘অতি লাভজনক ব্যবসা’। এই ব্যবসার সঙ্গে সামাজিক ব্যবসার কোন বিরোধ নেই। আপনি ‘অতি লাভজনক ব্যবসা’ও করতে পারেন, আবার সামাজিক ব্যবসাও করতে পারেন। এমনকি দুটোও একসঙ্গে করতে পারেন।
ড. ইউনূস উদ্ভাবিত সামাজিক ব্যবসা এ শতাব্দীর সেরা আবিষ্কার। এর প্রয়োগ বিশ্ব সমাজকে পাল্টে দেবে। এই থিওরি ‘সৃষ্টিশীলতা’ এবং ‘উদ্ভাবনা’র প্রতিষ্ঠিত। আপনি টাকা খেয়ে ফেলতে পারেন। এমনকি আস্ত ব্যাংকও গিলে ফেলতে পারেন। কিন্তু ‘সামাজিক ব্যবসা’ গিলে খাওয়ার মতো ‘হা’ পৃথিবীতে এখনও তৈরি হয়নি। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাঙর তিমিটির ‘হা’ও পারবে না এই ঐতিহাসিক আবিষ্কারকে গিলে খেতে!
আমি আপনাকে হাজার কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলাম। আপনি চ্যালেঞ্জটি নিতে পারেন। আজকাল তো হাজার কোটি টাকা কোন টাকা না!
(ন্যাশনাল সিভিল রাইটস মিউজিয়াম থেকে ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড ২০১২ প্রাপ্তিতে ড. ইউনূসকে সালাম) View this link
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×