এক যুবক বেশ কিছুক্ষন যাবত দাড়িয়ে আছে। তার হাতে কয়েকটা মিষ্টির প্যাকেট। রাস্তা পার হওয়া দরকার। কিন্তু গারিগুলো যে স্পীডে আসছে, দেখতেই ভয় লাগে। হাতে বেশি সময়ও নেই। দু দিক থেকে আর কোনও বাস আসছে না দেখে সে আস্তে আস্তে রাস্তা পার হতে লাগল।
কিন্তু রাস্তার মাঝখানে যেতেই ঘটলো বিপত্তি। এক পায়ের জুতোর ফিতে অন্য পায়ের নিচে পড়ল। পা টান দিতেই ছেলেটি হোঁচট খেল। খারাপভাবে কপাল ঠুকে গেল রাস্তায়। রক্ত ঝরতে লাগল। জ্ঞান হারাল ছেলেটি। আশে পাশে লোকজন কেউ নেই। এমন একটা ঘটনা কারো চোখে পরল না।
হঠাৎ একটা বাস উদয় হল রাস্তায়। বাসভর্তি যাত্রী। যাচ্ছে অনেক দূর। ফুল স্পীডে চলছে বাস। ড্রাইভার অনেকটা রিল্যাক্স মুডে আছে। থাকবেনা কেন? সে তো জানেনা যে একটু সামনেই এক যুবক রাস্তার মাঝখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে!
আকাশে মেঘ ডাকছে। চারিদিক অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে, প্রচণ্ড বৃষ্টি!
***
এদেশের কোনও কিছু নিয়ম মেনে চলেনা। সব খানেই অনিয়ম। বাস সার্ভিসগুলার তো যাচ্ছে তাই অবস্থা! বাস ছাড়ার কথা সকাল ৯ টায়, এখন বাজে সাড়ে ৯ টা। বাস এখনো আসেই নি!
তিথির খুব বিরক্ত লাগছে। বাসের ওয়েটিং রুমের ভেতর ভ্যাঁপসা একটা গরম গরম ভাব। এসি আছে নামে, চলেনা। আর আশে পাশের অপেক্ষারত যাত্রীদের কথা-বার্তা, চিৎকার-চেঁচামেচিতে মাথা ধরছে। কাছেই কয়েকটা ছ্যাঁচড়া টাইপের ছেলে কুৎসিত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে কিছু একটা বলছে আর খুব হাসছে। নিশ্চয়ই ভাল কিছু বলছে না! একটা বুড়ো মত লোক চোখে কাল চশমা পড়ে বসে আছে। ভাব দেখাচ্ছে ঘুমাচ্ছে, কিন্তু তিথি না দেখেও বুঝতে পারছে লোকটার চোখদুটো চশমার আড়াল থেকে তাকেই গিলছে! এই বয়সি একটা লোক এমন হয় কি করে? অপোজিটে একজন মাঝবয়সী মহিলা তার স্বামীর সাথে বসে আছে। দুজন ফিস ফিস করে কিছু বলছে আর তিথির দিকে তাকাচ্ছে। কি বলছে ওরা কে জানে?
পাশের সিটে তাকাল তিথি। নাহিদ একটা ম্যাগাজিনের ভেতর ডুবে গেছে। এমনভাবে পড়ছে যেন জীবনে কখনো ম্যাগাজিনই দেখেনি! তিথির রাগ হল।
“অ্যাই নাহিদ!”
নাহিদ শুনলনা।
তিথি এবার একটু ধাক্কা দিল। “অ্যাই নাহিদ!”
“বলো, শুনছি তো!”
“দেখনা আধাঘণ্টা ওভার হয়ে গেছে এখনো বাস আসছে না। তুমি একটু কাউণ্টারের লোকগুলোর সাথে কথা বলনা!”
“২ ঘণ্টা লেট হোক। কি আসে যায়? আমার খুলনা যাওয়া নিয়ে কথা!”
“প্লিজ একটু জিজ্ঞেস করনা আর কতক্ষন লাগবে! আমার আর বসে থাকতে ভাল লাগছেনা!”
“বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য দেখছি তর সইছে না!”
“আমার তর সইছে না? তুমিই তো বললে অফিস থেকে ছুটি পেয়েছি, অনেকদিন তো শ্বশুরবাড়ি যাইনা, চল খুলনা থেকে বেড়িয়ে আসি!”
“হ্যাঁ…… এখন আমার ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে! হাসল নাহিদ। কতদিন আব্বুকে দেখিনা......আম্মুর শরীরটা শুনেছি ভাল না……. ভাইয়ার প্রেশার টা বোধহয় বেড়েছে……. এসব আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কে বলত?”
তিথির ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল, হাতের মুঠি পাকাল কিল দেয়ার জন্য। নাহিদও ঠেকানোর জন্য প্রস্তুত! নাহিদকে বাঁচিয়ে দিল কাউণ্টার থেকে ঘোষণা, “খুলনার বাস চলে এসেছে, সকাল ৯ টার বাস! যাত্রীরা সবাই উঠে পড়ুন”।
৯ টার বাস এসেছে ৯টা ৪০ এ!
***
আরিচা ফেরিঘাটের কাছাকাছি চলে এসেছে বাস।
একটা ফিলিং স্টেশনের সামনে থামল। গ্যাস নিতে হবে। বাসের কন্টাক্টর বলল, “গ্যাস নিতে হবে। ১০ মিনিট বিরতি। আপনারা চাইলে নামতে পারেন, তবে বেশি দূরে যাবেন না”।
“নামবে নাকি?” নাহিদের প্রশ্ন।
“নাহ, বাসে বসে থাকতেই ভাল লাগছে!”
“ভাল তো লাগবেই। বুঝতে হবেনা কার পাশে বসে আছো!” নাহিদ ভাব দেখাল। “আমার পাশে বসার জন্য অনেকেই পাগল। তুমি ভাগ্যবতি, সেই সুযোগ পেয়েছ!”
তিথি হাসল।
“প্লিজ হাসবেনা! ওই হাসি দেখলে মাথা ঠিক থাকে না! পাবলিক প্লেসে কি করে বসি ঠিক নাই!”
“ধ্যাত!” কপট রাগে ভ্রু কুচকাল তিথি। “তুমি খুব খারাপ”।
“সবই তোমার দোষ! তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগে আমি ছিলাম এক হাবাগোবা টাইপের ছেলে!”
তিথি দেখল আশে পাশের সিট থেকে লোকরা ওদের দেখছে। সে প্রসঙ্গ পাল্টাল। “শোননা, আমার না একটা জিনিস খেতে ইচ্ছে করছে”।
“কি? ওইটা?”
“রাখতো । ফাজলামো করোনা। মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে খুব! অনেক দিন খাইনা!”
“ভাল জিনিস মনে করেছ তো!”
“কি?”
“এতদিন পর শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি, ৪-৫ কেজি মিষ্টি তো নিয়ে যাওয়া দরকার!”
“বাস খুলনায় পৌঁছালে কেনা যাবে”।
“তুমি বস। আমি দেখি আসে পাশে মিষ্টির দোকান আছে কিনা!”
“কি দরকার? পরে নেয়া যাবে!”
“পরে নিলে লাভ কি হবে? তোমার না খেতে ইচ্ছে করছে? এখন নিলে যেতে যেতে খেতেও পারবে!”
“তাহলে আমিও তোমার সাথে আসি?”
“না, তুমি বসে থাক। আমি দেখছি”।
“বেশিদূর যেওনা কিন্তু!”
“না, যাবনা। তারাতারি চলে আসব”।
***
“ম্যাডাম, আমাদের গাড়ি তো ছাড়ার টাইম হয়ে গেছে। সার এখনো আসছেন না কেন?”
“বুঝতে পারছি না ভাই। ও মিষ্টি কেনার জন্য নেমেছে। বোধহয় দোকান খুঁজে পেতে দেরি হচ্ছে”।
“একটা ফোন দিন না!”
“এটাই তো সমস্যা! ওর মোবাইলটাও ফেলে গেছে আমার কাছে!”
“সমস্যা হয়ে গেল!”
“একটু অপেক্ষা করেন ভাই!” তিথির গলায় আকুতি। “এখনই এসে পরবে”।
কন্টাক্টর মাথা ঝাঁকাল। “ঠিক আছে”।
বখাটে টাইপের ছেলেগুলো কাছাকাছি সিটেই বসে ছিল। কুৎসিত ভঙ্গিতে হাসছে। শুনিয়ে শুনিয়ে বাজে কথা বলছে। “নাগরটা মনে হয় ভাগছে রে……………” অন্য একজন বলে উঠল, “ভাগলে সমস্যা কি? আমরা আছিনা”?
তিথির প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। এমন অসহায় অবস্থায় সে কখনো পরেনি। নাহিদের কি কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই?
হঠাৎ একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটল! কাল চশমা পরা বুড়োলোকটা এসে তিথির পাশে বসে পড়ল। তিথি ভয় পেয়ে গেল। বুড়ো লোকটা অভয় দেয়ার ভঙ্গিতে হাসল। “ভয় পেওনা মা, কি হয়েছে? ছেলেটা নেমে গেল কেন?”
তিথি রাগ চেপে রাখার আপ্রান চেষ্টা করছে। “একটা জিনিশ কিনতে নেমেছে”।
“কি জিনিশ?”
“মিষ্টি”।
বুড়ো লোকটা তিথির গা ঘেঁষে আসল। “হঠাৎ মিষ্টি কেন?”
তিথি একটু সরে যাওয়ার চেষ্টা করল।
“তোমার নাম কি মেয়ে?” লোকটা কনুই দিয়ে তিথির কোমরে হালকা গুঁতো দিল।
তিথির পক্ষে আর রাগ সামলে রাখা সম্ভব হলনা। নিচু গলায় বলল, “শোন বেজন্মার বাচ্চা, তুই এই মুহূর্তে আমার পাশ থেকে উঠে না গেলে আমি তোকে চড় মারব”।
লোকটা তিথির কাছে এতটা আশা করেনি। সে ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল।
তিথি বলছে, “বদমাশের বাচ্চা, আমার নাহিদ কে তো চিনিস না! নাহিদ থাকলে তোকে আর চেহারা দেখে চিনার উপায় থাকত না!”
লোকটা বিরস মুখে বিনা বাক্য ব্যায়ে উঠে গেল।
বাসের যাত্রীরা সব বিরক্ত হয়ে উঠেছে। দুই একজন কন্টাক্টর কে গাড়ি ছাড়ার জন্য বকা-ঝকা করা শুরু করেছে। তিথি কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। এর মধ্যে আবার সেই মাঝবয়সী মহিলাটা উঠে এসে তিথির পাশে বসে পড়ল।
“মা, একটা কথা বলি?”
“আপনি আবার কি বলবেন?” তিথি বিরক্ত হচ্ছে।
“আমার মনে হয় ছেলেটি আর ফিরবে না”।
দাঁতে দাঁত চাপল তিথি। “কেন মনে হচ্ছে?”
“এসব ছেলেরা ভাল হয়না। মেয়ে পটিয়ে বাড়ি থেকে পালাতে উৎসাহী করে। কিন্তু একফাকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে মেয়েটাকে ফেলে পালায়……….”
তিথির রাগও লাগছে, হাসিও পাচ্ছে!
“তুমি লক্ষ্মী মেয়ের মত বাবার বাড়ি ফিরে যাও”।
“দেখুন, আমি আমার বাবার বাড়িই যাচ্ছি। আর ছেলেটির সাথে আমি পালাচ্ছিনা। সে আমার হাজব্যান্ড!”
“ওহ! সরি মা”। মহিলার চেহারা দেখে দুঃখিত মনে হলনা। “ভুল হয়ে গেছে আমার। আসলে আমার এক ভাগ্নি একবার এক ছেলের হাত ধরে............”
মহিলার প্যাঁচাল শুনতে আর ভাল লাগছে না। আকাশে মেঘ ডাকছে। চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হবে আজ। এই সময় নাহিদ কোথায় আছে? ওর কিছু হয়নি তো? ভীষণ কান্না পাচ্ছে তিথির!
***
“ম্যাডাম, আমরা তো আর দেরি করতে পারছিনা। যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে”।
তিথি বহুকষ্টে কান্না থামিয়ে রেখেছে। আর বোধহয় রাখা যাবেনা।
“আমরা তাহলে গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছি............”
লোকটার কথা শেষ হওয়ার আগেই বাসের গেটে নাহদের মুখ উদয় হল। হাতে একটা মিষ্টির প্যাকেট। খুশিতে তিথির চোখে পানি চলে এলো। কিন্তু নাহিদের কপালে ব্যান্ডেজ কেন? নাহিদের পেছন পেছন একটা লোক উঠল বাসে। তার গায়ে একটা কাল চাদর।
“দুঃখিত কন্টাক্টর সাহেব”। নাহিদ বলল। “আসলে আমার একটা সমস্যা হয়েছিল”।
“ওকে স্যার। সমস্যা নেই। চলেই তো এসেছেন। আপনার সাথে উনি যে?”
“উনি আমার এক চাচা। হঠাৎ দেখা হল। উনিও খুলনায় যাবেন। বাসের পিছনে তো কয়েকটা সিট খালি আছে। ওনাকে নিয়ে নেন । আমি ভাড়া দিয়ে দেব”।
“ঠিক আছে। আপনি পিছনে গিয়ে বসেন”।
“কাল চাদর জড়ানো লোকটা পিছনে গিয়ে বসল। তিথি আগে কখনও এই লোককে দেখেনি। লোকটার চোখে মুখে কি যেন একটা আছে। দেখলে ভয় লাগে”।
নাহিদ পাশে এসে বসল। বাস ছেড়ে দিল ড্রাইভার।
তিথি ভেবেছিল নাহিদ ফিরে এলে কথা বলবে না, অভিমান দেখাবে। কিন্তু নাহিদ পাশে বসতেই সব ভুলে গেল।
“তোমার কপালে কি হয়েছে, নাহিদ?”
“তেমন কিছু না। রাস্তায় পরে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি। এই জন্যই দেরি হয়ে গেল”।
“ওই লোকটা কে?”
“আমার এক দুঃসম্পর্কের চাচা। বহুদিন দেখা হয়না। আমি ব্যাথা পাওয়ার পর উনিই আমাকে উঠিয়ে এনেছেন”।
“লোকটাকে দেখলেই কেমন যেন ভয় লাগে!”
“উনি একটু পাগলাটে টাইপের মানুষ! আজ এখানে তো কাল ওখানে থাকেন। খুলনায় ওনার এক মেয়ে থাকেন। আমি যাচ্ছি শুনে উনিও যেতে চাইল। তাই সাথে নিয়ে নিলাম”।
“তোমাকে একা যেতে দেওয়াটাই ভুল হয়েছে আমার”। তিথি দু হাতে নাহিদের একটা বাহু জড়িয়ে ধরল। “আর তোমাকে কাছ ছাড়া করছিনা”।
নাহিদ মিষ্টির প্যাকেট গুলো দেখিয়ে বলল, “মিষ্টি খাবেনা?”
“না! এই মিষ্টি আনতে গিয়ে তুমি ব্যাথা পেয়েছ, আমি এই মিষ্টি খাবনা”।
নাহিদ মৃদু হাসল। তিথি নাহিদের কাঁধে মাথা রাখল। নাহিদ তার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। নিশ্চিন্তে চোখ বুঝল তিথি। এখন একদম নিরাপদ লাগছে নিজেকে, তার নাহিদ চলে এসেছে।
***
খুলনা পৌঁছেছে বাস। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
“তিথি তুমি একটা রিকশা নিয়ে বাড়ি চলে যাও”।
বাস থেকে নেমেছে তিথিও নাহিদ।
“কেন? তুমি?” তিথি অবাক হল।
“আমি চাচাকে ওনার মেয়ের বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি”।
“ওনার মেয়ের বাড়ি কত দূর?”
“বেশ খানিকটা দূর। উনি নিজে চিনে যেতে পারবেনা। আমি দিয়ে আসছি”।
“প্রায় রাত হয়ে গেছে। এখন তুমি গেলে আর ফিরবে কখন?”
“রাতে মনে হয়না আর ফিরতে পারব। কাল সকালে চলে আসব”।
“না, আমি তোমাকে যেতে দেবনা”। তিথি নাছোড়বান্দার মত বলল।
“পাগলামি করোনা তিথি! তুমি যাও। আমি তো সকালেই চলে আসছি। বয়স্ক মানুষটা একা একা কিভাবে যাবে বল?”
“সকালেই চলে আসবে তো?”
“হ্যাঁ... সকালেই চলে আসব”।
“কথা দিচ্ছ?”
“কথা দিচ্ছি তিথি! আমি সকাল সকাল ফিরে আসব”।
তিথি অনেক অনিচ্ছা সত্ত্বেও সুটকেসগুলো আর মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে একটা রিকশায় উঠে পরল। রিকশাটা দৃষ্টির আড়াল হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকিয়ে থাকল নাহিদ।
***
তিথিদের বাড়ির আশে পাশে অনেক গাছ-গাছালী। ভোর হতে না হতেই পাখিদের কিচির মিচির শুরু হয়ে যায়। ঘুমিয়ে থাকার উপায় নেই।
আর মোড়া ভেঙে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল তিথি। বাথরুম গিয়ে দাঁত ব্রাশ করল, হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হল। নাহিদ কতক্ষনে আসবে কে জানে? শয়তানটার কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই। বাসের মধ্যে কি এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছিল!
নিজ রুম থেকে বেড়িয়ে ড্রয়িংরুমে আসল তিথি। বাবা গালে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছেন। মাও বাবার পাশে বসে আছেন। তার চোখ মুখ কেমন যেন লাগছে। ভাইয়া আর ভাবিও এখানে! ঘটনা কি?
“কি ব্যাপার? সবাই সকাল সকাল উঠে পড়েছ দেখছি! কি নিয়ে মিটিং চলছে?”
কেউ কিছু বলল না।
“কি হয়েছে? কেউ কোনও কথা বলছনা কেন?”
তিথির ভাইয়া কাছে এগিয়ে এলেন। তিথির মাথায় একটা হাত রাখলেন। তিথি, “তুই খুলনায় একা এসেছিস তাইনা?”
তিথি অবাক হল, “একা আসব কেন? নাহিদ ছিল!”
“কেন মিথ্যে বলছিস বোন? কি লাভ মিথ্যে বলে?”
“মিথ্যে বলব কেন? আমিতো রাতেই বললাম! আমাকে নাহিদ বাসস্ট্যান্ড থেকে রিক্সায় উঠিয়ে দিয়েছে। ওর চাচাকে মেয়ের বাসায় পৌঁছে দিয়ে সকাল বেলাই চলে আসবে বলেছে!”
“কেন বলছিস এসব? নাহিদ তোর সাথে খুলনায় আসেনি”।
“কি বলছ ভাইয়া? নাহিদ আমার পাশেই ছিল! এখনই চলে আসবে আমাদের বাসায়!”
ভাবির হাতে একটা পত্রিকা ধরা ছিল। সেটা নিয়ে তিথির হাতে ধরিয়ে দিলেন ভাইয়া। “এটা আজকের পেপার। নিচের দিকের খবর টা পড়!”
তিথি খবরের হেড লাইনটা পড়ল,
“না….এটা হতেই পারেনা ভাইয়া! আমি বিশ্বাস করিনা! নাহিদ আমার পাশেই ছিল। তোমরা দেখবে ও এখনই চলে আসবে! আমি মিথ্যা বলছিনা…………”
হঠাৎ চোখের সামনে পৃথিবীটা কেমন যেন কেমন যেন অন্ধকার হয়ে এলো। হাঁটু ভাজ হয়ে আসছে। পরে যাচ্ছে তিথি……..
***
বিশাল মরুভুমির মাঝে দাড়িয়ে আছে নাহিদ। যত দূর দৃষ্টি যায় শুধুই অসীম শূন্যতা। এ মরুপথ কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে কে জানে?
কাঁধে কেউ একজন হাত রাখল। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল নাহিদ। সেই লোকটা! গায়ে একটা কাল চাঁদর জড়ানো। তার মুখে একটা নির্লিপ্ত অভিব্যাক্তি। একটা লোক এতটা নির্লিপ্ত হয় কি করে? এই লোকটা কি কখনো হাসেনা?
“চলুন নাহিদ। এবার আমাদের যেতে হবে”।
“আর একটু সময় দেয়া যায়না?” নাহিদের কণ্ঠে আকুতি।
“না, আমার পক্ষে যতটুকু সময় দেয়া সম্ভব ছিল আমি দিয়েছি”। নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল লোকটা। “আর সম্ভব নয়। আমার যে অনেক কাজ!”
“কিন্তু আমি যে তিথির কাছে কথা দিয়ে এলাম আমি ফিরে যাব! আমিযে ওকে অনেক ভালবাসি!”
“ভালবাসা কখনো নিঃশেষ হয়না নাহিদ। আপনি হয়ত আর তিথির জীবনে ফিরে যেতে পারবেন না। কিন্তু আপনার ভালবাসা তার জীবনে ঠিকই ফিরে আসবে। হয়ত অন্য কোনও মাধ্যমে, অন্য কোনও রুপে, অন্য কারো হাত ধরে। কিন্তু আসবেই”।
“সত্যি বলছেন?”
“হ্যাঁ...চলুন, এবার যাওয়া যাক”।
অজানার উদ্দেশ্যে রওনা দিল নাহিদ। প্রতি পদক্ষেপে চলে যাচ্ছে দূরে, যোজন যোজন দূরে। মরুপথে রয়ে যাচ্ছে পায়ের ছাপ। খুব বেশিক্ষন থাকবেনা এই পদচিহ্ন। বাতাস আসবে, ঝড় উঠবে। একসময় সব মুছে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১০:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




