২২ তারিখ, মেইলবক্স চেক করতে যেয়ে দেখি একটা ইনভাইটেশন। ইনভাইট পাওয়া নতুন কিছু না, মাঝে মাঝেই পাই, তবে ঐসব ক্ষেত্রে যেসব দেশের ইনভাইটেশন পাই, বাংলার সবুজ পাসপোর্টের কোন মূল্য নাই, সুতরাং মরীচিকার পিছনে শুধুই ছোটা, ফলাফল শূন্য। কিন্তু না, এবারের এটা ব্যাতিক্রম, খোদ বাংলাদেশে, তার চাইতে বড়কথা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে !!!
অনুষ্ঠানের অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথির তালিকা দেখে বুঝলাম না আমার মতো চুনোপুঁটি ক্যাম্নে ইনভাইটেশন লেটার পায়। অ্যাজেন্ডাতে "সোশ্যাল মিডিয়া" শব্দটা কিছুটা হলেও স্বস্তির আশ্বাস দিচ্ছিলো। খবর পাইলাম বিশ্বের ৩০০টি শহরে একযোগে এই কনফারেন্স/মিটিং হচ্ছে ২২ থেকে ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০১২। বাংলাদেশে মাত্র ১টা
যাইহোক আজকের ঘটনাবলি
বাসা থেইকা বাইর হইতেই সিঞ্জি ! কি কপাল, কিছুতেই মনে করতে পারলাম না কার মুখ দেইখা ঘুম থেইকা উঠছি জিগাইলাম , মামা জাইবা?? প্রধানমন্ত্রী অফিস?? কয়, কুনডা?? গণভবন?? কইলাম না , তেজগাঁও..কয়, মামা মিটার থেইকা ২০ টাকা বাড়াইয়া দিয়েন। আমি পুরা ভ্যাবাচাকা খাইয়া গেলাম, ব্যাডা মানুষ না ফেরেশতা !! এইদা কি কইল?? নিজে থেইকা মিটারে যাইতে চায় ! লম্ফ মাইরা সিঞ্জিতে উঠলাম, কাকলী পৌঁছাইতে না পৌঁছাইতে ব্যাপক বৃষ্টি। পুরা বিলাই-কুকুর অবস্থা সিগন্যাল শেষে মহাখালী ফ্লাইওভারে ওঠার টাইমে ৪ পাশে তাকাইয়া দেখি বৃষ্টির লেশমাত্র নাই, পুরা খটখটা রোদ্দুর
যাইহোক, পৌঁছাইতেই গেটে লিস্ট খুইজা নাম বাইর করলাম, মিলাইয়া দেখালাম হুম, নাম ডা আমারই আনুষ্ঠানিকতা আর নিরাপত্তা চেকিং শেষ করে হলরুমে ঢুকতেই দেখি বাংলাদেশের আইটি জগতের সব জায়ান্ট !!! উরিব্বাবা , অনেক খুইজা পথিক ভাই রে বাইর করলাম, কাজের ক্ষেত্র কাছাকাছি হওয়ার সুবাদে আড্ডা জমতে সময় লাগলো না, পথিক ভাই ডেভসটীমে র সুমন ভাই রে ফোন দিয়া জানাইলো, উনার আসতে এক্তু দেরি হবে, উনার লেইগা ছুডু বেলার স্কুলের লাহান একটা জায়গা রাখলাম
৪টায় শুরু হওয়ার কথা, বাঙালি বইলা কথা, যদিও আয়োজক প্রধানমন্ত্রীর অফিস এবং UNDP তবুও ৪:৩০ বেজে গেলো শুরু হতে, আয়োজকরা বারবার এই দেরি'টাকে বৃষ্টির দোহাই দিতেছিলো
প্রথমেই UNDP র কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন চমৎকার একটা বক্তব্য রাখেন। মাল্টিমিডিয়ার প্রেজেন্টেশনের মধ্যে অনেকগুলো কি-পয়েন্ট তুলে ধরেন। পরে কিছুটা উন্মুক্ত আলোচনা, অনেকেই আস্তে আস্তে তাদের বক্তব্য তুলে ধরার মধ্য দিয়ে আইসব্রেকিং আর অনুষ্ঠান জমে ওঠে। অনলাইন মিডিয়ার পক্ষে প্রথমে খোঁজ পড়ে বিডিনিউজের সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদি 'র । উনি একদম প্রথম সারিতেই বসে ছিলো, পরে বেশি ভাব নিতে গিয়ে সামনে পিছনে আসাযাওয়া করতেছিল, ফ্লোর পাইয়া দেখলাম পুরা হতচকিত অবস্থা ! আইপ্যাড থেইকা ঘাইটা ঘাইটা ডাটা বের কইরা কইতেছিল, খুবই বিরক্তিকর অবস্থা, পরে উনার কাছ থেইকা মাইক নেয়া হইলে উনি বুকের বাম পাশ চাইপা ধইরা শেষ সারিতে বইসা পরে
এইবার খোঁজ পড়ে সামুর , সবাই বলাবলি করতেছিল আরিয়েল ভাই কৈ?? তাকাইয়া দেখালাম জানা আপা আস্তে আস্তে সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়াইলো! প্রথমেই বলে নিলেন, আমি বাংলায় বলবো, [এর আগে সব কিছু ইংরেজিতেই চলতেছিল] পরে চমৎকার ভাবে আস্তে আস্তে সামুর প্রতিষ্ঠা, উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন।
পরে অনেকেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্ব্যে তাদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন, এর মধ্যে আমার গ্রাম আমার বাড়ি (নামটা ভুল করলাম নাকি??) তাদের কর্মকাণ্ডে চমৎকৃত হলাম। নওগাঁর প্রতান্ত অঞ্চল থেকে ২ জন কিশোরী তাদের ব্লগিং এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, মুখ থেকে একটা কথাই বের হয়ে আসলো, "ওয়াও"
জাকারিয়া স্বপন স্যার আমার ১/২ হাত সামনেই বসে ছিলো , স্যারকে বেশ চুপচাপ দেখলাম, কিছু নোট করলো, আর অনুষ্ঠান শেষে আমাদের সাথে নির্মল আড্ডায় মেতে উঠলো। একটা জিনিস দেখে বেশ অবাক হলাম , ফাহিম মশিউর ভাই কে ফ্লোর দিতে এতো সময় লাগলো !!! উনি কমপক্ষে ৬/৭ বার হাত তুলে অবশেষে ফ্লোর পেলেন। আয়োজক'রা কি উনারে চিনেন না?? বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির প্রেসিডেন্টের এই অবস্থা দেখতে আসলেই বেশ খারাপ এবং দৃষ্টি কটু লাগলো। অনুষ্ঠান শেষে তাই সবার আগে উনার বের হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে অভিমান'ই মনে হলো।
একজনরে দেখে বেশ চেনা চেনা লাগতেছিল, কিন্তু কিছুতেই চিনতে পারতেছিলাম না , পরে বুঝলাম জাগো'র অই জাগ্রত করভি স্বভাবসুলভ পাকনামিযুক্ত একটা বক্তব্য চামে দিয়া ফালাইলো। ভাবলাম, অনুষ্ঠান শেষে জাইয়া বলি, ভাই, আপ্নেরে নিয়া আমি ২ টা জোস জোস ব্লগ লিখছি সামু তে ব্লগ ১ ব্লগ ২
আমার ক্লাব না আমাদের ক্লাব নামের একটা প্রতিষ্ঠান থেইকা ২ জন আইসা চামে চাইনিজ ট্যাবলেটের প্রচার চালাইয়া গেলো !
আয়োজকদের ভাষ্যমতে ৩৪,০০০ জন অনলাইনে সরাসরি অনুষ্ঠানটি উপভগ করেছে, আমাদের অনুষ্ঠানের সাথে দেশের ৭ বিভাগের ৭ জন বিভাগীয় কমিশনার/ডিসি/মেয়র পুরা অনুষ্ঠানটিতেই ছিলো, এবং ভিডিও কনফারেন্সিংএর মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল এবং মাঝে মাঝে তাঁদের অভিজ্ঞতা এবং বক্তব্য শেয়ার করেছিলেন।
সবশেষে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের বক্তব্যের মধ্যদিয়ে ২ ঘণ্টা ব্যাপী ডিসকাশনটি শেষ হয়। উনি চমৎকার সজ্জন একজন ব্যাক্তি, কথাগুলো হা করেই শুনলাম, মুখে মশা/মাছি ঢুঁকে নাই মজার মজার জোকস আর ছড়া দিয়েই ভরা ছিলো উনার পুরা বক্তব্যটা, একজন মন্ত্রীর কাছে যেটা বেশ অপ্রত্যাশিত !
সবশেষে আপ্যায়ন
(জব্বার কাগুরে না দেইখা মন কাঁদছে ) কম্পিউটারের "ক" তেই তো কাগু !!! আহারে ব্যাপক মিসাইছি উনারে
[বিঃদ্রঃ উপরের সব ঘটনাই কাল্পনিক, কারো কিছুর সাথে মিলে গেলে সেটা কাকতালীয় ছাড়া আর কিছুই না]