somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মীয় মৌলবাদের চাষাবাদ-4

১৮ ই এপ্রিল, ২০০৬ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"মৌলবাদের উত্থানের কারণ: বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের চ্যালেঞ্জ"

ধর্মনিরপেক্ষতার প্রভাবে যখন ধর্মের ক্ষমতা খর্ব হলো তখন শুরু হলো বিশ্বাস-কুসংস্কার থেকে মুক্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার জয়যাত্রা। ধর্ম আর ধর্মের উপর নির্ভরশীল ইমাম-পুরোহিত-পাদ্রী-রাব্বীরা পড়লো নতুন এক বিড়ম্বনায়। আগে তারা স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিতে পারতো। শয়তানী বই পুড়িয়ে দিতে পারতো। বিজ্ঞানের নতুন তত্ত্ব-কথা বললে গ্যালিলিও'র মত বৈজ্ঞানিকদের গলা টিপে ধরতে পারতো। এখন যে সে ক্ষমতা নেই, সেই জনসমর্থনও নেই। ঘোড়া ছুটিয়ে ধেয়ে গিয়ে লাইব্রেরিগুলো জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়া যায় না। কিন্তু ঈশ্বর-বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে আত্মঘাতী তো হওয়া যায়। পৃথিবীব্যাপী মৌলবাদীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য পরোক্ষে তাই বিজ্ঞানের চর্চাও দায়ী।

কিন্তু বিজ্ঞান ও ধর্মের বিরোধ কোথায়? অনেকেই বলবেন, বিজ্ঞান মেনেও তো ধর্ম পালন করা যায়। সামপ্রতিক প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে তাই মনে হবে। আজ ধর্ম ও ধর্মীয় নেতারা যখন ক্ষমতা বলয়ের বাইরে এবং বিজ্ঞানের প্রমাণিত সত্যগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার কিছু নেই তখন মনেই হতে পারে ধর্ম ও বিজ্ঞান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারে। কিন্তু এ দুয়ের বিরোধের সূত্রপাতে এদের শেকড়ে। তাই গভীর ধর্মবিশ্বাসীরা বিজ্ঞানের অক্ষমতা নিয়ে আজো ঠাট্টা-মশকরা করে থাকেন। যেকোনো ওয়াজে গেলে শুনতে পাবেন, "...তারা ছবি আঁকে...যন্ত্র দিয়ে রোবট বানায়....কিন্তু প্রাণ দিতে পারে কি? না বিজ্ঞান প্রাণ দিতে পারবে না...মানুষ তো দূরের কথা...একটা মশা বানানোরও ক্ষমতা বিজ্ঞান রাখে না.."। ইত্যাদি বাক্যবাণে বিজ্ঞানকে আক্রমণ করে তারা তাদের নিজস্ব দূর্বলতাকেই ঢাকতে চেষ্টা করে। কিন্তুধর্ম কেনো বিজ্ঞানকে নিজের শত্রু মনে করে?

বিজ্ঞান পৃথিবী, বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড সম্পর্কে একটি নিজস্ব ব্যাখ্যা দেয়। এই ব্যাখ্যা যুক্তি, কার্যকারণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলের উপর প্রতিষ্ঠিত। সমস্যা হচ্ছে এই বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড সম্বন্ধে ধর্মেরও একটা ব্যাখ্যা আছে। বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের ব্যাখ্যা মেলে না। আরো সমস্যা হচ্ছে জনস্রোত এখন বিজ্ঞানের দিকে। কেনো সুনামি বা হারিকেনে লক্ষ লক্ষ লোক মারা গেছে বা যাচ্ছে (কেনো এই গজব) এর ব্যাখ্যা শুনতে আজ আর কেউ মন্দিরের পুরোহিত বা মসজিদের ইমামের কাছে যায় না। যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞানীর কাছে। অথচ ধর্মগ্রন্থের পাতা উল্টে এই ব্যাখ্যা আগে চার্চের বিশপ, গুরুদুয়ারার গুরুরাই দিত। বিজ্ঞান একটি বিকল্প ব্যাখ্যা নিয়ে আসলো। বিজ্ঞান মানুষকে জানালো এসব ঘটনার পেছনে কিছু প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে। স্বাস্থ্যরক্ষায় ও জীবন বাঁচাতে তখন মানুষ ধর্মগ্রন্থের অক্ষর লেখা তাবিজ, মাদুলির পরিবর্তে চিকিৎসাবিদ্যার ট্যাবলেট আর ইনজেকশনের দিকে ছুটলো। সাধুর জরি-বুটি, পীরের পানি-পড়া, প্রিস্টের ঝাঁড়-ফুঁকে মানুষ বিশ্বাস হারাতে শুরু করলো। শুধু রোগের চিকিৎসা নয়, জীবনের আর সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান চর্চাকারীরা, যারা ধর্মগ্রন্থগুলো কখনও ঠিকমত পাঠই করে নি, মানুষের সমর্থন পেতে থাকলো। এমনকি মুসলমানি করতেও মানুষ আজ ডাক্তারের কাছে ছোটে। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক তাই হয়ে উঠলো ভীষণ সাপে-নেউলে।

বিজ্ঞানের যখন আরেকটু বাড় হলো তখন সে সমাজের বিভিন্ন বিশ্বাস আর কু-সংস্কারের বিরুদ্ধে লাগলো। যুক্তি দিয়ে দেখাতে লাগলো ধর্মীয় নেতারা যেরকম ফলাও করে বলে তাদের ধর্মগ্রন্থ 'নিভর্ুল' বাস্তবে তা নয়। যেমন বিজ্ঞান প্রমাণ দিতে শুরু করলো ইহুদিদের তোরাত বা খ্রিস্টানদের বাইবেলে যত বলা হয়েছে পৃথিবীর বয়স তার চেয়েও বেশি। সেসব পুস্তকের জ্ঞান ঐ সময়ের মানুষের জ্ঞানের মতই সীমাবদ্ধ। বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের বিরোধ আরো কঠিন রূপ নিলো যখন বিজ্ঞান তত্ত্ব দিলো যে, আজ যে আকার ও আকৃতিতে মানুষকে আমরা দেখছি, সৃষ্টির প্রথমেই মানুষ এরকম ছিলো না। অথর্াৎ আদম-মনু-হাওয়া-ইভ যেমন শুরুতেই আধুনিক মানুষের মত কথা বলতো, হাঁটতো বলে ধর্মগুলো যে বয়ান করে তা বিজ্ঞানের চোখে যৌক্তিক নয়। বরং বিজ্ঞান মনে করে মানুষ আর সব প্রাণীর মত ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান রূপ পেয়েছে এবং এই বিবর্তন চলছে। প্রথমেই সে ভাষা আবিষ্কার করেনি, কথা বলেনি, লেখা শুরু করেনি, কাপড় পড়া শুরু করেনি, কৃষিকাজ করেনি, বরং বিবর্তনের ধাপে ধাপে ধীরে ধীরে তার বুদ্ধিমত্তার বিকাশ হয়েছে আর জীবনযাপনের তাগিদে সে নানা আবিষ্কার করেছে ও এখনও করে যাচ্ছে। সৃষ্টি-রহস্য সম্পর্কে বিজ্ঞানের এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে দেয়া ব্যাখ্যা ধর্মের পতাকা_ধারীরা মানতে নারাজ। কিন্তু যদিও ধর্মকে ভিত্তি করে নতুন নতুন কিছু ব্যাখ্যা দিয়ে একে বিজ্ঞানের সমান্তরালে আনার চেষ্টা কিছু ধর্মবেত্তারা করেন তবু ধর্মের মৌল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর স্থিরতা। অন্যদিকে বিজ্ঞান হচ্ছে প্রবহমান। সময়ের সাথে সে এগিয়ে চলে। এই বিরোধে ধর্ম যখন সুবিধা করে উঠতে পারে না তখন ধর্ম-বিশ্বাসীদের হাতিয়ার হয়ে ওঠে মৌলবাদ। মৌলবাদীরা পৃথিবীকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান তাদের কল্পিত স্বর্ণযুগে-যখন তাদের অনুমতি নিয়ে চলতো বিশ্ব-সমাজ।

বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের চ্যালেঞ্জ ধর্ম-বিশ্বাসীদের জন্য কোনো জয়-জয় (win-win) পরিস্থিতির তৈরি করে না। ধর্ম-অনুসারীরা পরাজিত বোধ করেন, তাদের পুরনো বিশ্বাস নিয়ে বিব্রত হন এবং তা রক্ষায় হয়ে ওঠেন মৌলবাদী। পৃথিবীব্যাপী মৌলবাদীদের সংখ্যা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হচ্ছে বিজ্ঞানের এই নিরূপদ্রব, নি:শংক জয়যাত্রা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০০৬ সন্ধ্যা ৭:৩৭
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×