somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এশিয়ান এডভাইজারদের সমস্যা

১৯ শে জুন, ২০০৬ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মনে হয় আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শতকরা ষাট ভাগ প্রফেসরই এশিয়ান। মূলত: এদের দ্্বারাই ইউনিভার্সিটি গুলো চলে। এশীয়া বলতে আমি মূলত ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্থান এবং কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা বুঝাচ্ছি।

একটা তুলনা মূলক চিত্র সমস্যাটা ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে। তাই আগে উদাহরন টেনে বলি আমেরিকান প্রফেসরদের কথা।

আমার স্ত্রী মৌটুসীর প্রফেসর আমেরিকান। এই সামারে তাদের রিসার্চের কিছু কাজ করার কথা ছিল। প্রফেসর ব্যাটা গিয়েছিল ফ্রানসে। তাই এদিকে রিসার্চের অগ্রগতি খুব ইমপ্রেসিভ না। সেই প্রফেসর ফিরে এসে বুঝল অবস্থা। তাই ওদের ডেকে কিছু রিসার্চ সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান করতে বলল। উইকএন্ডে সমাধান করার কথা। হঠাৎ জিজ্ঞেস করল আচ্ছা তোমরা উইকএন্ডে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছো নাতো? মৌটুসী উত্তর দিল যে হ্যাঁ তার সেডোনা যাবার ইচ্ছে ছিল। সেটা শুনে সে ব্যাটা তার কাজ কমিয়ে অর্ধেক করে দিল। এটা হলো অনেক গুলো ভাল ব্যাপারের একটা।

যখন এই ইউনিভার্সিটিতে আপ্লাই করি তখন আমার রোবোটিক্স বা মেকাট্রনিক্স পড়ার ইচ্ছা এমনটা জানিয়ে ছিলাম। এখানকার রোবোটিক্সের প্রফেসর খুব ভাল মানুষ কিন্তু পযর্াপ্ত পরিমান ফান্ড নেই তার। সুতরাং আমাকে অলটারনেট কিছু খুঁজতে হয়। আর তখনই এই পাকিস্থানী প্রফেসরকে চোখে পড়ে। মেইল করে ফোন করে যোগাযোগ করে বুঝতে পারলাম ব্যাটার ছাত্র দরকার। আর আমার বাবা-মা তো আর দশটা বাঙ্গালী বাবা-মার মতো বলেই বসলেন, পাকিস্থানী মুসলমান তো নিশ্চয়ই ভাল হবে। তাই প্রথমদিন এসেই যখন ফান্ডিং পেয়ে গেলাম আমি ব্যাটার উপর যারপরনাই কৃতজ্ঞ হয়ে ছিলাম।

ধীরে ধীরে টের পেতে লাগলাম এই ব্যাটার সমস্যা। ব্যাটা একে তো খুব দেরী করে ছাড়ে ছাত্রদের তদুপরী তার ব্যবহার খারাপ। এক একজন ছাত্রের মাস্টার্স করতে গড় সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর, যেখানে অন্যান্য প্রফেসরের কাছে লাগে দুই থেকে আড়াই বছর। আর পিএইচডি ছয় থেকে সাড়ে ছয় বছর। ব্যাটার ফান্ডিং ভাল, রিসার্চও ভাল বিষয়ের উপর করে, পাবলিশিং ভাল হয়। কিন্তু এতোটা সময়তো দেয়া সম্ভব না - তাইনা? তার উপর ব্যবহার খারাপ, টাকা দেয় তাই এমন ভাব করে যেন পুরো মাথা কিনে ফেলছে।

পুরোনো স্টুডেন্টদের ততদিনে যাবার সময় হয়ে এসেছে। আমাকে উপদেশ দিতে লাগল "পালাও, নিজেকে বাঁচাও"। কি করি আমি? দিশেহারা দিশেহারা লাগে। একদিকে একটা স্টেবল ফান্ডিং এর হাতছানি অন্যদিকে অনিশ্চয়তার ভয়।

তারপরও আমি চেষ্টা করলাম পালিয়ে যাবার। ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সব জায়গায় চেষ্টা করে বুঝলাম না হবে না পালানো আমাকে দিয়ে। এরমধ্যে আরো গোটা চারেক ছেলে এসেছিল। সবাই ইন্ডিয়ান - কিভাবে কিভাবে যেন অন্য প্রফেসরদের ম্যানেজ করে তারাও পালাল।

এর মধ্যে পুরোনোদের গ্রাজু্যয়েশন শেষ। ল্যাবে শুধু আমি একা। ব্যাটা একটা কাজ করতে বলে আমি কিছুতেই বুঝিনা ব্যাটা কি চায়। যারা রিসার্চ করেন তারা হয়ত জানেন - ল্যাবে কো-অপারেশনটা গুরুত্বপূর্ণ। একলা একলা আর কি করা যায়?

এছাড়া আরো কয়েকটা ইন্ডিয়ান, বাঙ্গালী প্রফেসরদের কিচ্ছা শুনেছি। অনেকটা এরকমই তাদের গল্প। বিভিন্ন কোর্সে বিভিন্ন দেশের প্রফেসরদের সাথে ইন্টার্যাকশন হয়েছে - নন-এশিয়ান প্রফেসর অনেক উদার আর ভাল। হয়ত কারন হিসেবে সমাজবিজ্ঞানী শোমোচৌ হযবরলের পোস্টে যা বলেছেন সেটাই সত্যি। হয়ত আরো কিছু ব্যাপার স্যাপার আছে।

এখন মাঝে মাঝে মনে হয়। আমি কি একই জায়গায় গেলে একই রকম আচরন করব? আমি তো একই রকম পরিস্থিতি হয়ে এসেছি। কি জানি? সময়ই বলে দেবে হয়ত...


(হযবরলের পোস্ট 'দেশী এডভাইজর বনাম বিদেশী এডভাইজর' থেকে অনুপ্রানিত হয়ে)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×