somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাইকিং - চমকে ভরা পিকাচু পিক (3)

০৯ ই মে, ২০০৬ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা চাতালের মত জায়গাটা থেকে সামনে আগাতে দেখি, গভীর ঢালু একটা জায়গা। আমরা তো আস্তে আস্তে আগাতে থাকলাম। খুব সরু, ভয়াবহ রিস্কি একটা জায়গা। আমাদের অনেকে বসে বসে নামতে লাগল। (ছবি-1)। বড় বড় পাথরের চাঁই পাশ কাটিয়ে আমরা নামতে লাগলাম। এই ভীষন দুর্গম জায়গার ছবি তুলতে গিয়ে দু দুবার আমার ক্যামেরা বাড়ি খেয়েছে। ভাগ্যিস হাতের সাথে বাঁধা ছিল ক্যামেরাটা। নইলে সোজা পৌছাতে দুহাজার ফিট নীচে।

ছবি - 2 এ দেখানো A জায়গাটায় হচ্ছে চাতালের মত অংশটা। আমরা লাল রঙে দেখান পথ ধরে একটু নীচের দিকে এসে আবার উপরের দিকে উঠছিলাম। এর মধ্যে টুসী একটু প্যানিক ফিল করছিল। আমি তাকে সাহস দিতে দিতে আনছিলাম। এতে করে আমরা গ্রুপের থেকে একটু পিছিয়ে পড়ি। ছবি - 3 দেখলেই বুঝবেন টুসী কত কষ্ট করে হাসছে।

ছবি - 2 এ দেখানো B পর্যন্ত পৌছাতে পৌছাতে দেখি, ভয়াবহ খাড়া অংশ পার হতে হচ্ছে। আর একটু সামনে থেকে দেখি, আক্ষরিক অর্থে সম্পূর্ণ পাথরে গাঁথা স্টিলের দড়ি বেয়ে, ভার্টিক্যালি উপরে উঠতে হবে। টুসির পায়ে, সঠিক ধরনের জুতো ছিল না, তদুপরি এ পযর্ায়ে এসে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে ও খুব ভেঙ্গে পড়ে। তাই অপেক্ষারত বন্ধুদের বললাম তোমরা যাও আমরা এখানে অপেক্ষা করছি।

টুসী কে অনেক বোঝানোর পর ও একটু রাজি হল। কিছু দুর যাবার পর দেখি আমরা রাস্তা ভুল করে অন্যদিকে যাচ্ছি। আমাদের বন্ধুদেরও দেখা যাচ্ছেনা। সঙ্গে মোবাইলও আনিনি। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। আমার চেহারা দেখে টুসীর উপর আতঙ্ক ভর করল। এবার সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ল সে। সে ফিরে যাবেই এখান থেকে। এবার আমি আর না করলাম না।

ফিরে যাবার সময় বাধল বিপত্তি। যে রাস্তা ধরে নেমে আসা সহজ ছিল সেটা বেয়ে ওঠা খুবই টাফ লাগছিল। আর আগে গ্রুপের সাথে ছিলাম। এবারে একা, প্রতি মূহর্ুতে মনে হচ্ছিল পথ ভুল করছি কিনা। একবার পথ ভুল করে আরেকটু হলে স্লিপ করছিলাম আরকি। টুসী কোন রকমে টেনে তুলল।

কয়েকটি বাক তো ছিল সিম্পলি ভয়াবহ, নামার সময় বসে নামা গেছে, কিন্তু উঠতে গিয়ে হাঁচড়ে পাঁচড়ে জীবন বেরিয়ে যাবার দশা। টুসির জুতো স্লিপ করছিল। সেতো আতঙ্কে অস্থির হয়ে ফুপাতে লাগল। আমি পেছনে ছিলাম, তাকে কোন রকমে ঠেলতে ঠেলতে উঠতে লাগলাম। অবশেষে বিরাট যুদ্ধ শেষে আবার পৌছলাম A পয়েন্টে (ছবি - 2)।

মনে হচ্ছিল যেন যুদ্ধ জয় করেছি। আমরা দুজনে বেঁচে ফিরবার জন্য আল্লাহর কাছে অসীম দোয়া করলাম। (ছবি - 4, 5)।

তারপর আমরা বাকি রাস্তা নেমে আসলাম (ছবি - 6)। নেমে আসার সময় কতবার যে মনে হয়েছে রাস্তা ভুল করছি কিনা। কতবার মনে হয়েছে ঝুনঝুনির শব্দ শুনলাম নাতো? একবার তো টুসি আমাকে ডেকে থামাল, বলল শোনো কোথা থেকে জেন ঝুনঝুন শব্দ হচ্ছে। আমিও শুনে বললাম বাতাসে গাছ-পাথরে ঘষার শব্দ। তখনও কি জানি, এখানে র্যাটল স্নেকের অবাধ বিচরন?

যাই হোক শেষ অবধি নেমে আসলাম আমরা। আধা ঘন্টা ব্যবধানে আমাদের বন্ধুরাও নেমে আসল। সবাই হাত মুখ ধুয়ে আমাদের ক্যাম্পিং এর জায়গাটায় পৌছলাম। তাবু খাটাতে গিয়ে দেখি একটা তাবুর একটা অংশ মিসিং (ছবি - 7)। সুতরাং একটা তাঁবু কিনতে হবে। সবাই মিলে তুসন শহরটাতে গেলাম। সেখান থেকে খাবার দাবার শেষে, ওয়ালমার্ট গেলাম তাঁবু কিনতে। কিন্তু কপাল খারাব হলে যা হয় আরকি, সস্তার মধ্যে তাঁবু পাওয়া গেলনা। তাই প্ল্যান হল আমরা রাত কিছুক্ষন কাটিয়ে ফিরে যাব টেম্পি।

রাত বাড়তেই ঠান্ডার মধ্যে আমরা ক্যাম্প ফায়ার করে তার চারধারে দাঁড়িয়ে গল্প গুজব করতে লাগলাম (ছবি - 8) । একটা মজার খেলা খেলছিলাম, কোন একটি মুভির নাম অভিনয় করে বোঝাতে হবে অন্যদের। যাইহোক রাত 2 টা নাগাদ সবাই ক্লান্ত এবং ফেরার পালা। অবশেষে ক্লান্তিকর ভ্রমন শেষে ভোর রাতে ফিরলাম বাসায়। সঙ্গে নিয়ে, প্রচন্ড শিহরন জাগানো হাইকিং এর একটা স্মৃতি।

এখন মাঝে মাঝে ভাবি কি হতো যদি আমাদের কেউ একজন ফস্কে পড়ে যেত? এত মায়া বির্সজন দিয়ে বাবা মা আমাদের পড়তে পাঠিয়েছে, তাদের কি হত? চিন্তা করতে চাইনা - কষ্ট বিনা কেষ্ট লাভ হয় কি মহীতে?

ছবি পরিচিতি
1। টুসি গিরিখাত ধরে নামছে
2। ভয়াবহ গিরিপথটার স্কেচ
3। টুসি কষ্ট করে হাসার চেষ্টারত
4। আমরা অবশেষে ভয়াবহ অংশটা পাড়ি দিয়ে এসে
5। চাতালের মত জায়গাটায় একটা ফলক
6। নেমে আসার সময় একটা জায়গা
7। তাঁবু তৈরীর সময়
8। আমরা আগুনকে ঘিরে
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সব দোষ শেখ হাসিনার !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৬


অনেকদিন পর zahid takes এর ডা. জাহেদুর রহমানের এনালাইসিস ভিডিও দেখলাম। জুলাই আন্দোলনের পূর্বে বিশেষত যখন র‍্যাব স্যাংশন খায় তখন থেকেই উনার ভিডিও দেখা আরম্ভ করি। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামাত/ শিবির কারনামা-১✅

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:৪১



জামাত শিবির ২০০১ নির্বাচনের পরে নাজিরহাট বাজারে চল্লিশ জনের নামের তালিকা ঝুলিয়ে দিয়েছিল । যাদের হত‍্যা করবে তাদের নাম। বাবা কথাগুলো বলছিল মাকে, আমি ওখানেই ছিলাম। মা রান্না করছিলো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিঝুম মজুমদার: সত্যের পক্ষে এক নির্ভীক কণ্ঠ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

নিঝুম মজুমদার: সত্যের পক্ষে এক নির্ভীক কণ্ঠ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন যত দ্রুত বদলাচ্ছে, তত দ্রুতই বদলে যাচ্ছে সত্যের রূপ—কেউ লুকিয়ে ফেলতে চায়, কেউ বিকৃত করে, কেউ আবার নিজের স্বার্থে তা ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মাঈনউদ্দিন মইনুলকে ১৩ বছর পুর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭



সামুর সুসময়ের আদর্শ ব্লগারদের মাঝে মাঈনউদ্দিন মইনুল হচ্ছেন একজন খুবই আধুনিক মনের ব্লগার; তিনি এখনো ব্লগে আছেন, পড়েন, কমেন্ট করেন, কম লেখেন। গত সপ্তাহে উনার ব্লগিং;এর ১৩ বছর পুর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়তির খেলায়: ইউনুস ও এনসিপিনামা

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪



২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া আমেরিকান চলচ্চিত্র 'আনব্রোকেন' একটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমেরিকান বোমারু বিমানের কিছু ক্রু একটি মিশন পরিচালনা করার সময় জাপানিজ যুদ্ধ বিমানের আঘাতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×