তিনজন ড্রাইভার ছিল আমাদের সাথে। আমি তখনও ইউএসএর ড্রাইভিং লাইসেনস পাইনি। ওরা তিনজন পালা করে গাড়ী চালাচ্ছিল। যারা গাড়ি চালাচ্ছিল না তাদের মধ্যে থেকে একজন করে ড্রাইভারের সাথে কথা বলছিল ডিরেকশন দিচ্ছিল, যাতে সে ঘুমিয়ে না পড়ে বা বোর না হয়ে যায়।
রাত দুইটা নাগাদ আমরা লাস ভেগাসের কাছাকাছি এসে পড়ি। আলো ঝলমল রঙীন শহরটাকে দেখে বুঝলাম আমার সন্দেহ নিতান্তই অমূলক ছিল। দুর পাহাড়ের উপর থেকে ভীষন সুন্দর লাগছিল শহরটাকে। আমি ক্যামেরা বন্দী করেছিলাম দৃশ্যগুলো, কিন্তু ফ্ল্যাশ কার্ডটা হারিয়ে ফেলি এই যাত্রার পরের দিকে।
রাত তিনটা নাগাদ আমরা লাস ভেগাস শহরে পৌছে যাই। দেখে মনে হচ্ছিল সবে সন্ধ্যা হয়েছে। ছোটখাট কাপড় পড়া মেয়ে, দামী দামী পোশাকে ছেলেরা আর আলো ঝলমল চোখ ধাধানো বিলিডং গুলো দেখতে দেখতে আমরা গাড়ী পার্ক শেষে ডিনার খেয়ে নিলাম এক রেস্টুরেন্ট থেকে।
রাস্তায় বিভিন্ন দালালের অশ্লীল আহবান জানিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়া কার্ড গুলোকে পাশ কাটিয়ে আমরা ঘুরতে লাগলাম শহরের আনাচ কানাচ। টের পেলাম সব কিছু খোলা হলেও বিভিন্ন ক্যাসিনো এবং হোটেলের আকর্ষনীয় শো গুলো কিন্তু ইতিমধ্যে শেষ। সুতরাং ঘুরে ঘুরে দেখা ছাড়া তেমন কিছু করার নেই।
লাস ভেগাসের আসল আকর্ষন হলো ক্যাসিনো গুলো। হরেক রকম জুয়া খেলার উপকরন ছড়ানো ছিটানো। সেই সঙ্গে সেখানে প্রায় প্রতি রাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, যেমন গান বাজনা, নাচ, সাকার্স ইত্যাদি হয়ে থাকে। সেই সাথে আছে মদ, নারী ইত্যাদি। আর আছে বিরাট বিরাট 5 তারা, 7 তারা হোটেল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লিকুইড ক্যাশের খেলা চলে এইখানে। সত্যিকারের মজা পেতে হলে নেশা থাকতে হবে এইসব বিষয়ে।
খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার লক্ষ্য করলাম, মনে করুন আপনি 100 মিলিয়ন ডলার জিতে ফেললেন, সেটা আপনি সেইফলি, কোন ঝঞ্ঝাট ছাড়াই বাড়িতে নিতে পারবেন। সিকিউরিটির কোন অভাব নেই। অবশ্য ভিতরের কথা আর কতটুকুই বা জানি।
আমরা এই ক্যাসিনো, সেই হোটেল ঘুরে বেড়াতে লাগলাম আর মাতাল লোকদের পাগলামী দেখতে লাগলাম। দেখি এক মাতাল তার মাতাল র্গালফ্রেন্ডকে কিস করতে গিয়ে দুজনে মিলে ধরাম করে পড়ে গেল। মেয়েটার গেল দম বন্ধ হয়ে, তারপরেও হাসছে। পুলিশ এসে আবার দাঁড় করিয়ে দিল তাদের। কিছু ক্যাসিনোতে কিছু স্লট মেশিনে জুয়াও খেললাম। একবার 2 ডলারের মতো জিতেছি, কিন্তু খেলার নেশায় পেয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত হারতে হলো। সবচে বেশী জিতল গাগান, 25 সেন্টের মেশিনে খেলে পেয়েছে 31.25 ডলার। (ছবি - 5)
এক হোটেলের এক বলরুমে পার্টি হচ্ছিল আমরা ঢুকতে চাইলাম বলল সরি স্যার ইউ আর নট ইন প্রপার ড্রেস। কি আর করব ব্যাথিত হৃদয়ে চলে এলাম।
এভাবে ঘুরতে ঘুরতে সকাল সাতটা বেজে গেল। আর এক ঘন্টা লেগে গেল গাড়ী কোথায় রেখেছিলাম সেটা খুঁজে বের করতে। ভীষন টায়র্াড লাগছিল, হাত পা মনে হয় ভেঙ্গে আসছিল। আটটা নাগাদ আমরা রওনা দিলাম ইয়েসোমিটির উদ্দেশ্যে। ঘন্টা আটেকের রাস্তা। আমাদের কারওরই কিন্তু গত রাতে ঘুম হয়নি। ঝিমাতে লাগলাম আমরা। তখনও খেয়াল করিনি যে যারা গাড়ি চালাবে তারাতো গতরাতে গাড়ি চালিয়েছেই আবার এক ফোটাও ঘুমায়নি। সামনে যে বিপদ পড়ে আছে তার ব্যাপারে তো কিছু জানতামই না। জানলে তো উলটো রওনা দিতাম ঘরের দিকে।
ছবি পরিচিতি
1। রাস্তায় তোলা কোন একটি শো এর বিজ্ঞাপন
2। আমি আর গাগান, বালাজিও ক্যাসিনোতে
3। আমি কোন একটি হোটেলের-কাম-ক্যাসিনোর অভ্যন্তরে
4। গাগান আর শিভা 31.25 ডলার যেতার কুপন হাতে
5। আমরা মাদাম তুসোর জাদুঘরের সামনে, বন্ধ দেখে হতাশ
6। 'এই বুট পলিশ'...
7। হোটেল বালাজিও, সকাল 7 টায়
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০০৬ রাত ৯:৫৬