আমার ভাবনায় যদি আমার আত্মার অনুভুতিকে ব্যবহার করি, নিরপেক্ষ থাকতে পারি না। ভয়াবহ এক কষ্ট দানা বাধে বুকের মাঝে। দানবীয় শক্তি নিয়ে মুসলিম বিশ্বকে চেপে ধরেছে ইসরাইল। তার পেছনে মদদ রয়েছে আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোর। মুসলিমের প্রতি রয়েছে তাদের সচরাচরের উন্নাসিকতা। তার সাথে রয়েছে তাদের অর্থনৈতিক লোভ, অস্ত্র বিক্রির প্রতিযোগিতা। প্রতিটি যুদ্ধ, প্রতিটি মৃত্যু তাদেরকে আরো বেশী সম্পদশালী করে তোলে। সেখানে নেই কোন নীতির বালাই, কোন আন্তর্জাতিক নীতির বাঁধন। জাতিসংঘ সেখানে নীরব দর্শক।
পশ্চিমা দেশগুলো পরস্পর পরস্পরের ভাল বন্ধু। তাদের নিজেদের মাঝে সরাসরি কোন যুদ্ধ বিগ্রহ নেই বললেই চলে। কিন্তু অস্ত্র বিক্রির অর্থনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট যুদ্ধ রয়েছে। কিন্তু সে যুদ্ধ নিজেদের সীমানায় চলে না। সে যুদ্ধ অতি পরিকল্পিত ভাবে সরিয়ে দেয়া হয় মধ্যপ্রাচ্যে, এশিয়া ও আফ্রিকার গরীব দেশগুলোতে ও পৃথিবীর সাধারণ মানুষের মাঝে। রুয়ান্ডার হিতু ও টুটসীদের যুদ্ধ ছিল ফ্রান্স আর বেলজিয়ামের যুদ্ধ। কঙ্গেতে বিভিন্ন উপজাতীয় দলের যুদ্ধ আসলে পশ্চিমা সভ্য দেশগুলোর যুদ্ধ। মধ্যপ্রাচ্যও তাই, ভারত পকিস্তানের যুদ্ধেরও একই চেহারা। উন্নত পশ্চিমা দেশগুলো তাদের যুদ্ধের কৌশল পাল্টেছে অনেক আগেই। তাদের যুদ্ধে তাদের নিজেদের সৈন্যের দরকার পড়েনা, তাদের নিজেদের রক্ত ঝরানোর কোন প্রয়োজন পড়েনা। সে রক্ত ঝরে গরীব দেশগুলোতে, আর নিজেদের সম্পদের ভান্ডার আরো বিশাল হয়।
কিন্তু এর জন্যে আমাদের মুসলিমদের উপরও যথেষ্ট দায়ভার বর্তায়। মুসলিমদের ভেতরে ধর্মে নিয়ে যে গোয়ার্তুমি, তা সম্বল করে এই পরিবর্তিত বিশ্বে সফল পদচারণা অসম্ভব। নিজস্ব সীমানা ছাড়িয়ে দিগস্তকে চেনার প্রশ্ন আসে, তখন তাদের কুপমুন্ডকতা তাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। নিজেদের মাঝে হানাহানি শুরু হয়, অন্যের কাছে মার খেতে হয় অহরহ। এরা প্রত্যেকেই একজন নিধিরাম সর্দার অথচ চলনে বলনে ভয়ংকর যুদ্ধংদেহী। তাছাড়া অনেক বছর ইউরোপে থেকে দেখেছি মুসলমানদের চরিত্রহীনতার স্বরুপ, এদের দ্বৈত মানসিকতার নির্লজ্জ প্রকাশ। একটা বিয়ার কাউকে খেতে দেখলে হই হই করে ওঠে, অথচ সুযোগ পেলে যে কোন মেয়েকে নিয়ে বিছানায় ঝাপাতে তাদের সামান্য দ্বিধাও থাকেনা। অথচ যদি ধর্মের কথা আসে, তাহলে জেনা করা বিয়ার পান করার চেয়েচ বড় পাপ। কিন্তু এ নিয়ে এরা ভাবে না। নিজের কাছে জবাবদিহি করতে হলে হয়তো ভাবতো। কারন সেখানে ফাঁকি চলে না। কিন্তু ওরা জাবাবদিহি করে অন্যের কাছে, সেখানে ফাঁকি চলে, নিজের আত্মার দিকে তো ফাঁকি চলেনা।
দ্বৈত মানসিকতা একটা মানুষকে নষ্ট করে ও পরিনামে নষ্ট করে তার সমাজকে। তারপর তার প্রভাব আরো বেশী বড় হতে থাকে। সেজন্যেই মুসলিম বিশ্ব আজ এতটা মেরুদন্ডহীন, এতটা দুর্বল। ইওরোপীয়ান সাধারন: মানুষদের স্বার্থপর মনে হয়। তবে এ স্বার্থপরতার ভেতরে কোন অসুস্থতা নেই, কোন দ্বৈত মানসিকতার প্রভাব নেই। এরা কারো অনিষ্ট করে নিজের স্বার্থপরতার প্রকাশ ঘটায় না। এরা যা করে, নিজ দ্বায়িত্বে করে, নিজের কর্মে প্রতি পুর্ন সমর্থন নিয়ে করে। এরা বলের লাইনে গিয়েই ছক্কা মারায় প্রয়াসী হয়ে, আমাদের মতো একজায়গায় দাঁড়িয়েই মারতে গিয়ে আউট হয়না।
লেখাটা যে দিকে টানতে চেয়েছিলাম সে দিকে না গিয়ে আত্মার অনুভুতির প্রভাবে অন্য দিকে মোড় নিল কিছুটা। এবার চেষ্টা করছি আমার শিক্ষা ও বিবেক যে দিকে টানে, তার কথা। আমার শিাক্ষ ও বিবেক আমাকে শুধুমাত্র মুসলিম বিশ্বের অত্যাচারিতদের দিকেই টানে না, টানে সমস্ত বিশ্বের অত্যাচারিতদের দিকে। আমার কাছে অত্যাচারিতের কোন ধর্ম নেই, কোন জাতি নেই, কোন দেশ নেই। সেকারনেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীদের উপর অত্যাচারেও আমার প্রান কাঁদে, বুকের ভেতরে কষ্ট অনুভব করি। একই কষ্ট এখন লেবাননে বোমাবর্ষনেও পাই। বুশ হারামজাদার ইরাক আক্রমনেও একই কষ্ট পেয়েছিলাম। এক একটি বোমার আওয়াজ বুকের ভেতরে একই ভয়ংকর গর্জন। এক একটি শিশুর মৃত্যু নিজের আত্মারই কোন এক অংশের বিনাশ। এই ধ্বংস আর চাই না, চাই শান্তি। ইতিহাস ঘেটে রক্তক্ষয় আর তার প্রমান ঘেটে আরো বেশী রক্তক্ষয় চাইনা। থাকুক না ইসরাইল রাস্ট্র হিসেবে টিকে, তাদের সে অধিকার দিয়ে যদি শান্তির দ্বার উন্মুক্ত হয়, তাহলে সে শান্তিই কাম্য। আর চাইনা শিশুমৃত্যুর বিনিময়ে অস্ত্রবিত্রয়কারী দেশ তাদের লাভের পাহাড় গড়ে তুলুক। চাই না সাধারণ মানুষের রক্তে রক্তলোলুপ আন্তর্জাতিক রাজনীতি। একটা বিষয় টের পেয়েছি। তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির চেহারা আমরা আমাদের চিন্তাশক্তি দিয়ে যতোটা খারাপ জানি, তারচেয়েও অনেক অনেক বেশী নোংরা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০