somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চার ধাক্কা

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করার জন্য যখন আসলাম, প্রথম কয়েক দিনে কয়েকটা ধাক্কা খেলাম।

১) প্রথম সন্ধ্যা। শিকাগো ও'হেয়ার এয়ারপোর্টের আন্তর্জাতিক টার্মিনালে নেমেছি। ইমিগ্রেশনে যথারীতি হেনস্থা, সব শেষে বেরুলাম সন্ধ্যা ৯টার দিকে। দেশে থাকতে ইন্টারনেটে সার্চ করে জেনেছিলাম, এটা আমেরিকার দ্বিতীয় ব্যস্ততম এয়ারপোর্ট (সারা বিশ্বের প্রথম ১০টি ব্যস্ততম এয়ারপোর্টের মধ্যে আছে)। তাই ভাবলাম রমরমা হবে, খাওয়া দাওয়া জোগাড়ে সমস্যা হবে না।

বিধি বাম। বেরুতে বেরুতে দেখি, দারোয়ানও পর্যন্ত নাই, দোকান খোলা তো দুরের কথা। রাত ১০টা নাগাদ ওখানে ভুতের টিকিটাও দেখা গেলো না। জীবনে আমার প্রথম বিমান যাত্রা, আর যেতে হবে আরো দেড়শো মাইল। রাতে বাস নাই, পরের দিন সকালে আছে। মনে পড়লো, ঢাকা এয়ারপোর্টে গভীর রাতেও মানুষে মানুষে গমগম করা অবস্থা। আর বিশ্বের ব্যস্ততম এয়ারপোর্টের একটাতে কিনা সব কিছু বন্ধ।

পরে দেখেছি, এখানে অনেক কিছুই খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। যেমন দোকানপাট, অফিস ইত্যাদি। দেশে মানুষ ডাক্তার দেখায় সন্ধ্যা বেলা। এখানে ডাক্তারের চেম্বার-টেম্বার থাকলে সন্ধ্যাতেই বন্ধ। আমার এখানকার ডেন্টিস্ট বিকাল পাঁচটায় অফিস বন্ধ করে, আর শুক্রবারে দুপুর ১টাতেই। শুড়িখানা ছাড়া অন্য অনেক কিছুই এখানে বন্ধ হয়ে যায় তাড়াতাড়ি।

২) ক্যাম্পাসে পৌছালাম। ভুট্টাক্ষেতের এলাকা, নদী নালা কিছুই নাই, পাহাড় টিলাও নাই, পুরা চ্যাপ্টা এলাকা। তাই আগস্ট মাসে প্রচন্ড গরম, ঢাকার মতো ৩০-৩৫ডিগ্রি। দেশ থেকে বিদেশ যাত্রার সময় ব্লেজার ও ফরমাল প্যান্ট পরতে হবেই, এরকম আদেশ উপদেশ দেয়া হয়েছিলো। ক্যাম্পাসে নেমে নিজেকে আবুল মনে হলো। পুরা শহরে আমি বাদে আর কেউ ব্লেজার পরা নাই। (পরের বছর আমিও মজা করে দেখলাম, সামারে যেসব নতুন চীনারা আসে, তারাও শুরুতে স্যুট,টাই পরে আসে।)

ডিপার্টমেন্টে গিয়ে রিপোর্ট করলাম। এক প্রফেসর আমাকে নিতে চায় রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে, গেলাম তাঁর সাথে দেখা করতে। প্রচন্ড বিখ্যাত লোক, সুপার কম্পিউটারের গুরু, !@@!455574 (যেখানে প্রথম ব্রাউজার বানানো হয়, আর অনেক সুপার কম্পিউটার আছে), এর ডাইরেক্টর, ডিপার্টমেন্টের হেড ছিলো আগে। রুমে ঢুকে আশা করছিলাম রাশভারী স্যুট পরা কেউ হবে। দেখি গরিলার মতো দাঁড়ি ওয়ালা এক লোক টি-শার্ট, আর শর্টস পরে স্যান্ডেল পায়ে টেবিলে পা তুলে রেখেছে। এটাই সেই বিখ্যাত প্রফেসর! মনে পড়লো দেশের সব প্রফেসরদের কথা, ঢাকার গরমেও স্যুট ছাড়া অনেকে চলতেননা।

৩) এই প্রফেসরের গ্রুপে যোগ দিলাম। আমরা নতুন ৩ জন ছাত্র ঢুকেছি। যোগ দেয়ার এক সপ্তাহ পরে আমাদের গ্রুপের কো-অর্ডিনেটর বললো, তোমরা নতুন তিন জন ঢুকেছো, তোমাদের সম্মানে আমরা লাঞ্চ করবো, অমুক দিন দুপুরে। আগেই শুনেছিলাম, আমেরিকানদের "দাওয়াত" মানে পয়সা নিজেরই খসবে। তবুও "তোমাদের সম্মানার্থে" শুনে ও ইমেইল পেয়ে আশা পেয়েছিলাম।

কিন্তু যথারীতি লাঞ্চে গিয়ে দেখলাম, প্রত্যেকে নিজে অর্ডার দিয়ে নিজের পয়সা নিজেই দিচ্ছে। পরে জানলাম এটাকে বলে ডাচ ট্রিট।

৪> আমার সহকর্মী এক মার্কিনী ছেলে। একদিন আমাকে বললো, এক পোস্টার সেশনে ওর পোস্টারটা আমাকেই প্রেজেন্ট করতে। জিজ্ঞেস করলাম, কেনো? বললো, ঐদিন ঐসময় নাকি ওর কুকুরের ওবিডিয়েন্স ক্লাস আছে। (মানে কুকুরকে সিট বললে বসবে, আদেশ মানবে এরকম শিক্ষা)। তাই কুকুরকে নিয়ে ওকে কুকুরের স্কুলে যেতে হবে। এজন্য আর সে থাকতে পারছেনা!!!!

যাহোক, আগের পোস্টেই বলেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো উল্টোরথের দেশ। কাজেই এখন আর অতটা অবাক হইনা, যাই দেখি না কেনো।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×