somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার পাথুরে চোখে আলফ্রেড সরেন ঃ ঃ জন্ম জন্মান্তরের এক বীর

২৮ শে জুন, ২০০৬ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাঁচের দেয়াল নাে একটা ছবি আছে। আমাদের যুদ্ধোত্তর পরিবেশ একটা পরিবারের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেই ছবিতে।একটা ফ্রেইস আছে গ্লাস সিলিং। দুটোর আক্ষরিক এবং ঐতিহ্যগত মানে এক।

মানুষ ক্রমাগত চিৎকার করেছে অধিকার আদায়ের, অন্নের অধিকার , বস্ত্রের অধিকার , সম যোগ্যতার অধিকার, ভূমির অধিকার। প্যালেস্টাইনিদের ভূমির অধিকার আদায়ে আমাদের এই ভূখন্ড থেকে গেছে হাজার যোদ্ধা , প্রান দিয়ে দিয়েছে অকাতরে। আফগানিস্তানিদের মায়ের ভূমি উদ্ধারে আমরা ছুটে গিয়েছি কি ভীষণ প্রণোদনা নিয়ে। দেশ মাতৃকার আঁচল যেখানেই লুণ্ঠিত হয়েছে সেখানেই এই সবুজ বাংলার দামাল সন্তানেরা ছুটে গিয়েছে সমব্যথীর কাঁধ নিয়ে। আজো আমি র্গবিত হই সেই চওড়া সিনার বাংলাদেশী সন্তানের জন্য।

আমরা আমাদের কাঁচের দেওয়াল ভেঙ্গেছি। সারা পৃথিবীর আনাচ কানাচে যেখানেই দেখেছি কাঁচের দেওয়াল আমরা ছুটে গেছি আমাদের ঐতিহ্যের ধারায়।

ক.

আমার বন্ধুর বাবা কমলেশ বড়ুয়া, পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন একনিষ্ঠ র্কমী। দীর্ঘ আঠার বছর তিনি একা যুদ্ধ করে গেছেন, একটি পাতলা কাঁচের দেওয়ালের সাথে। আমাদের চৌদ্দ কোটি চওড়া সিনার একটিও পাননি কমলেশ বড়ুয়া তার এই যুদ্ধে। একসময় সময়ের কটাক্ষ আর এই যোদ্ধার তীব্র আত্মসম্মানের ভারে ভেঙ্গে পড়েছে সেই দেয়াল।

খ.

আমার এক ভাই এবং বন্ধু চৌধুরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের অক্লান্ত র্কমী। প্রতিনিয়ত এক অসম লড়াই করে যাচ্ছেন । এই কাঁচ রঙ্গিন, চকমকে। র্বণ, ভাষা আর র্ধমের মণি মুক্তা আঁটা এই দেয়ালের বিরুদ্ধে, এই যুদ্ধ একার যুদ্ধ।

গ.

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আদিবাসী জনগোষ্ঠি সাঁওতালরা দিনাজপুর,রাজশাহী, সিলেট, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ , জামালপুরে বাস করছে কয়েকশো বছর ধরে। আজ তারা শস্যায়নের নামে হয়ে যাচ্ছে উদ্বাস্তু। নিজ ভূমে তারা আজ পরবাসী। প্যালেস্টাইন এর শিশুর কষ্ট আমাদের কাঁদায়। কিন্তু আমাদের শ বছরের সাথি জ্ঞান সরেন এর চোখের জল আমরা দেখিনা। বুচার অফ শাতিলা'র প্রতিটি পদক্ষেপে আমাদের হৃদয়ে আগুনের তুফান উঠে। ভীমপুরের কসাই, আমজাদ হোসেন তারা ' রা থেকে যায় চোখের আড়ালে। আলফ্রেড সরেন এর পোড়া লাশ আমাদের নাকে হয়ে যায় কচি ভেড়ার নধর মাংস। আলফ্রেড সরেন একটা কাঁচের দেয়ালের সাথে যুদ্ধ করছিলেন। যার একপাশে ছিল দেড় লক্ষ সাঁওতাল অন্যপাশে চৌদ্দ কোটি সিনা টান বাংলাভাষী বাংলাদেশী। কি এক অসম যুদ্ধে আগুনে পুড়ে মেরে ফেলা হল আলফ্রেড সরেনকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সবচেয়ে বড় অপরাধী কেও আমরা এত বড় কঠিন শাস্তি দিই নি।

কি অসম । কি অশ্লিল । কি পাথুরে নিষ্ঠুর আচরণ। সংখ্যা লঘু হওয়ার কি র্নিমম শাস্তি।

ইসরাইলিদের সংখ্যা কত? এক কোটি ও নয়। আমরা চৌদ্দ কোটি মানুষ এক আলফ্রেড সরেন এর বিরুদ্ধে।
এই শতাব্দীর সেরা যোদ্ধা, মতিউর এর ভাইটি ঘুমিয়ে আছে নিজের ভূমিতে গাদ্দার হয়ে।


আলফ্রেড সরেন আপনার প্রতিটি রক্তকণা
মহাদেব পুরের শিকড়ে শিকড়ে
সব বৃক্ষের পাতায় আজ তোমার নাম
=======================================

18'ই আগস্ট 2000 সালে আলফ্রেড সরেন এর গ্রাম মহাদেবপুরের সাঁওতাল পাড়া ঘিরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খুঁজে এনে হত্যা করা হয় আলফ্রেড সরেনকে।

এই লিখাটি লিখার ইচ্ছা ছিল 18ই আগস্ট , আগে লিখলাম যাতে আমরা একবার আমাদের কাঁচের চোখে নিজের প্রতিবিম্ব দেখার সময় পাই।


=======================================

28 শে জুন, 2006
রাত 11:02
কলাম্বিয়া।






২৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×