somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভক্তি-শ্রদ্ধা

১৬ ই মার্চ, ২০০৬ রাত ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত সপ্তাহে ব্লগ সাইট খুজে পাওয়ার পর প্রতিদিন 2/1 ঘন্টা ব্যয় করছি লেখা গুলো পড়ার জন্য । অনেকে খুবই ভালো লিখেন, অন্যরাও ক্রমশ উন্নতি করছেন। পুরোনো লেখা পড়া মোটামুটি শেষ পর্যায়ে, লেখা ছাড়া মন্তব্যও বেশ মজার। একটা কমন থীম এখানে ধর্ম সংক্রান্ত আলোচনা, সব পক্ষের কথায়ই কম-বেশী যুক্তি আছে। লেখা পড়তে পড়তে আমার নিজের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল, ভাবলাম এই নিয়েই লিখি না কেন।

নব্বই দশকের প্রায় মাঝামাঝি তখন ঢাকা কলেজে পড়তাম। সে সময় ঢাকা কলেজে ক্লাশ খুব একটা হতো না, ছাত্ররা আমরা নিজের বাসায় বা প্রাইভেট স্যারের কাছেই যা একটু পড়াশোনা করতাম। এরকম একদিন কোন কারণে দুপুরে কলেজে এসেছি, 3টায় লুৎফুজ্জামান স্যারের কাছে পড়া, কলেজের কাজ শেষ করে ভাবলাম বাকীসময়টুকু ফাকা ক্লাশরুমের শেষে একটু ঘুমিয়ে নিই। এমন সময় দেখি 20/25 জন ছাত্র সমেত একজন প্রৌঢ় শিক্ষক বাংলা পড়াতে এসেছেন। আমি তো মহা বিরক্ত। উনি পরিচয় দিলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। কিছুক্ষনেই বুঝলাম উনি আর দশজন শিক্ষকের মতো নন, কবিতা প্রসঙ্গে বলতে বলতে তিনি একটি আপাতঃ জটিল (অন্তত তখন আমার কাছে) বিষয়ে আলোচনা শুরু করলেন। বিষয়টি হলো ভক্তি এবং শ্রদ্ধার পার্থক্য । আমি ততদিন পর্যন্ত দুটোকে মোটামুটি একই ভেবে এসেছি। স্যার ভুল ভাঙ্গালেন এভাবে, ভক্তি হলো নিঃশর্ত বিশ্বাস, আত্মসমর্পন, শ্র দ্ধা অন্যদিকে নিঃশর্তও নয়, সন্দেহের উর্দ্ধেও নয়। শ্রদ্ধায় প্রশ্ন করার অধিকার আছে, ভুল থাকলে শোধরানোর সুযোগ আছে, ভক্তি প্রশ্ন প্রশ্রয় দেয় না, ভক্তির মুলভিত্তি প্রশ্নের বাইরে । যেমন আমরা সচরাচর বিজ্ঞান, বিজ্ঞানীকে শ্র দ্ধা করি, কিন্তু ধর্ম , ধর্ম প্রনেতা, অনেকক্ষেত্রে সংস্কৃতিকে ভক্তি করি। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানী নিউটন বা তার মহাকর্ষ সুত্রকে আমরা ভক্তি করি না কিন্তু শ্রদ্ধা করি। নিউটনের ব্যক্তিগত জীবন বা সুত্র নিয়ে সন্দেহ করতে কোন সমস্যা নেই। এমন আসলে হয়েছিলও, উনিশশতকে তখন ক্লাসিকাল মহাকর্ষ সুেত্রর দোর্দন্ড প্রতাপ, কিন্ত কোন ভাবেই বুধ গ্রহের কক্ষপথ মেলানো যাচ্ছিল না। সমাধান হিসেবে ভালকান নামে অনাবিষ্কৃত গ্রহের প্রস্তাব করা হলো, তাতেও শেষ রক্ষা হচ্ছিল না। শেষমেশ আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রমান করল যে, নিউটনের সুত্রগুলো আসলে আরও সাধারনীকৃত সমীকরণের বিশেষ অবস্থা, অনেকক্ষেত্রে প্রয়োগ করা গেলেও এগুলো সার্বজনীন নয়। নিউটনের সুত্রকে অংশত ভুল প্রমানের জন্য কেউ আইস্টাইনের ওপর আক্রমন করেনি, আর সুত্রগুলোর দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে বলে যে নিউটনের গৌরব কমে গিয়েছে তাও নয়। এখানেই ভক্তির সাথে পার্থক্য, ভক্তি সমালোচনা পছন্দ করে না, ভক্তি ভুল থাকলে তা শোধরাতেও চায় না। ধর্ম ছাড়াও আরও ভক্তির ক্ষেত্র আছে, যেমন অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বঙ্গবন্ধু ভক্তি। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধুর অবদান খাটো করার কোন উপায় নেই, তাই বলে শাসক হিসেবে তার ব্যর্থতার সমালোচনা করা যাবে না এমন তো কোন কথা নেই, সমালোচনা আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুর ভুমিকাকে কোন ভাবেই ছোট করবে না। ধর্ম সংক্রান্ত ভক্তিগুলোর ক্ষেত্রে এগুলো আরও বেশী করে সত্য।

আসলে ভক্তি-শ্রদ্ধা নিয়ে এত সমস্যা হতো না, আপাত দৃষ্টিতে যে যার চরকায় তেল দিলেই তো হয়। সমস্যা হচ্ছে ভক্তির ওপর ভিত্তি করে আমরা ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বসি। অপ্রমানিত সুত্র দিয়ে সমীকরণের সঠিক সমাধান আশা করা যায় না। প্রোগ্রামিং-এর ভাষায় untested code is broken code । অনগ্রসর দেশ গুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়, আপাতদৃষ্টির নিরীহ ভক্তি পরিস্থিতি কতদুর নিয়ে যেতে পারে।

আখতারুজ্জামান স্যার দুঃখজনক ভাবে এর কিছু পরেই ক্যান্সারে মারা যান। আমি পরেও অনেকদিন ওনার ক্লাশের জন্য অপেক্ষা করেছি, তবে ঢাকা কলেজে ঐ বছর আর কেউ বাংলা ক্লাশ করেছে বলে শুনিনি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×