নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তব এবং সাধারন মানুষ আমার লিখার জীবন। এখানে রানা নামের একজন অতি সাধারন ব্যক্তির দৈনিক জীবন এবং তার দৃষ্টিতে সমাজের বর্তমান অবস্থা এবং এর প্রভাব তার নিজের ভাষায় প্রকাশ করা হবে।

আমি রানা

আমি বিশেষ কেউ বা কিছু না। যা মনে আসে যেভাবে মনে আসে তাই লিখি।

আমি রানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৮৬/বি শিরিয়া মন্জিল, ছোটবেলার ডায়রি।

১০ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:০৭

৪ (হাসুনির গল্প)


শিরিয়া মঞ্জিলের ডোবা অংশটা ভরিয়ে ফেলার পর, তা নিজের দক্ষলে রাখার জন্য জমিদার খালাম্মা সেখানে একটি দুরুমের বেড়ার ঘর তুলে দেন। খুবই ছোট্ট সে ঘর পাখির বাসার মতই ছোট। ঘর ভাড়াও হয়ে গেল, প্রথমে সেখানে আসলো চিনু খালা আর তার ছেলে সুমন। তারা শুধু মাত্র একটি রুম ভাড়া নিলো অপরটি খালিই পড়ে রইলো নাকি অন্য কোন ভাড়াটিয়া ছিল তা আমার মনে নেই। চিনু খালা গার্মেন্টসে চাকরি করে আর সুমন টুকটাক যখন যা পায় তাই করে। চিনু খালার স্বামী মারা গিয়েছে, কিন্তু আসল কথা হলো সুমন ভায়ের জন্মের সময়ই নাকি তিনি খালাকে হাসপাতালে ফেলে চলে গিয়েছে। আর কোনদিন ফেরেনি। দুবছর খালা তার জন্য অপেক্ষা করেছে, সেই সময়টা নানা আত্মিয়ের বাসায় থেকেছে। তার পর রাগে অভিমানে স্বামীকে সবার কাছে সে মৃত বলেই পরিচয় দেয়। তখন থেকে খালা একাই নিজেকে আর সুমন ভাইকে চালিয়ে যাচ্ছে। চিনু খালা সুমন ভাইকে এসএসসি পর্যন্ত পড়িয়েছে। এখন সুমন ভাই একটা চাকরী যোগার করতে পারলেই খালা নিজের চাকরী থেকে অবসর নিবে।
হঠাৎ একদিন খালা মায়ের কাছে এসে বলল, “ আফা সুমনের পিয়নের চাকরি হয়ইছে, ফেনীতে। আর আফা তার জন্য একটা মেয়েও ঠিক করছি আমার চাচত ভাইঝি। আফা ১ তারিখ আমি ঘর ছাইড়া দিমু”।ঐ ১ তারিখের পর আর চিনু খালার খোঁজ জানি না।
এবার আসল কথায় আসি……………
চিনু খালা ঘর ছাড়ার পর, সেখানে উঠলো এক বৃদ্ধ আর তার এক মেয়ে। বৃদ্ধের নাম জানিনা, পরবর্তীতে আমরা তাকে বুড়া বলেই ডাকতাম। আর বুড়ার মেয়ের নাম হাসুনি। তার আর কোন ভালো নাম আছে কিনা আমি জানি না। তখন হাসুনির বয়স ২০-২২ বছর হবে। মোটা শরীর , ধূসর লালচে চুল। আর মাথায় উকুঁন নামের প্রানীদের রাজত্য। শুনেছি তার বিয়ে হয়েছে। কিন্তু স্বামীর কোন খোঁজ খবর নাই।
নতুন বাসা নেওয়ার কদিন পরই হাসুানি আবার বিয়ে করে। বিয়ের দিন নীল একটা শাড়ী পরেছিল সে। ঠোঁটে দিয়েছে কড়া লাল লিপিস্টিক মাথায় তেল হাতে চুড়ি আর গালে পাউডার। বর্তমান স্বামী রিক্সা চালায়। আগেরও এক সংসার আছে তার, সেখানে ছেলে মেয়ে আছে তিনজন ( যদিও এই তথ্য পরে জানা গিয়েছে)। বিয়েটাকে ভালোবাসার বিয়েও বলা যায় কারন হাসুনি নিজেই তাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। বিয়ের পর, দিন পনের সে তার স্বামীর ঘরে ছিল তার পর থেকে সেতার বাবার সাথেই থাকে। তার স্বামী প্রতিদিন দুপুরের পর একবার করে আসে, কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে যায়। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখি হাসুনি তার স্বামীর সাথে ঝগড়া করছে, আসলে ঝগড়া বললে ভুল হবে, মারামারি করছে। প্রচন্ড মারামারি , তার স্বামী তাকে সমানে লাথি আর ঘুষি দিয়ে যাচ্ছে। আর হাসুনি একহাতে তার স্বামীর চুল ধরে অন্য হাতে থাপ্পর আর খামঁচি দিচ্ছে আর দুজনেই অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছে। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বাসায় চলে আসি, এর এক ঘন্টা পর হাসুনি বাসায় আসে। তখনো সে বিষাক্ত ফনা তোলা সাপের মত ফোঁস ফোঁস করছিল। এরপর থেকে আর কোনদিন তার স্বামী আর তার ঘরে আসেনি তারপর হাসুনি বেশকদিন- বড় আম গাছটার নিচে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতো।
কিছুদিনের মধ্যে হাসুনির গর্ভে সন্তান এলো । যতই দিন যায় ততই তার পেট বড় হতে থাকে। তার গর্ভাবস্থায় আমার মা প্রতিদিন তাকে তিনবেলা নিয়ম করে খাবার দিত। আমার মনে নেই কে তার দেখাশুনা করতো, অবশ্য দেখার মত কেউ ছিলও না। তার সন্তান হবে প্রথম সন্তান। হাসুনির মনে আনন্দের সীমা ছিল না। কত স্বপ্ন তার সন্তান হলে কি করবে? কি নাম রাখবে? কেমন করে বড় করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এ আনন্দ হাসুনি ছাড়া আর কাউর হচ্ছে না। প্রকৃতির যেন হাসুনির অনাগত সন্তান নিয়ে কোন আগ্রহই নেই। শিরিয়া মঞ্জিলের কোণে যে, হাসুনি পেটে সন্তান নিয়ে বসে আছে প্রকৃতি তা দেখেও সভ্য সমাজের মত না দেখার ভান করে রয়েছে।
একদিন স্কুল থেকে ফেরার পর মা বলল, “ হাসুনির ছেলে হয়েছে। যা দেখে আয়।” আমিও দেখতে গেলাম। তাদের ঘরের দড়জার বাহির থেকে একনজর দেখে চলে আসলাম। তখন সে বিছানায় বসে তার সন্তানকে দুধ খাওয়াচ্ছিল। সেদিন মোটা কুৎসিত হাসুনিকেও বর্ষার ভরা মৌসুমের নদীর মত লাগছিল। অনন্ত যৌবনা।
হাসুনির ছেলের নাম দিয়েছে জাহিদুল ইসলাম নয়ন। কারন ছেলে তার নয়নের মণি। এই ছোট ছেলেটা আমার চোখের সামনেই বড় হলো। ছেলের জম্মের বেশ কিছুদিন পর হাসুনি ব্যবসা শুরু করল , কত ধরনের যে ব্যবসা। একবার দেখলাম মায়ের কাছে শাড়ি বিক্রি করতে আসে, কদিনপর বেডশিট, আবার ছায়া-ব্লাউজ কদিন পর লেইস ফিতা। ব্যবসার মাঝেই একলোকের সাথে পরিচয় হয় তার । সে লোক রীতিমত আসা যাওয়া করতো তার ঘরে। কিন্তু কিছুদিন পর হাসুনির ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেল সাথে সাথে তার পেটে আরেকটা বাচ্চাও আসলো। এর মাঝে একদিন বুড়া (হাসুনির বাবা) এক মধ্য বয়স্কা মহিলাকে বিয়ে করে নিয়ে আসলো সাথে সাত বছরের একটা ছেলে। ছয় ফুট বাই ছয় ফুটের একটা ঘরেই বুড়া তার নতুন বউ, সে বউ এর ছেলে, হাসুনি , হাসুনির অনাগত দ্বিতীয় সন্তান আর তার প্রথম সন্তান নয়ন থাকত। একদিন পিতার পরিচয় ছাড়াই জন্ম নিল তার দ্বিতীয় সন্তান। ছেলের নাম সে দিয়েছে অন্তর। অন্তর জন্মের পর একবছর হাসুনি শিরিয়া মঞ্জিলে ছিল। তারপর একদিন বুড়ার সাথে ঝগড়া করে চিরতরে সে শিরিয়া মঞ্জিল ছাড়ে।
আমাদের সমাজে এমন অনেক হাসুনি আছে যারা তাদের জীবণের শুরুটা জানে না আবার তার শেষটা কি হবে তাও জানেনা। শুরুটা হয়তবা নয়ন আর অন্তরের মতন আর শেষটা জোনাকীর মায়ের মতন ( জোনাকীর মা শিরিয়া মঞ্জিলের আরেকটা চরিত্র)। যাদেরকে গরিব বল্লে ভুল হবে তারা গরিব থেকেও গরিব। তারা সমাজের নষ্ট মানুষ নয়, সমাজেরই অংশ। তাদের না আছে ঘর না আছে বিশেষ কোন পরিচয়। তাদের পরিচয় শুধুই তাদের নাম। একটি এলাকায় যে কজন মানুষ তাদের নাম জানে আর চেহারা চিনে, সে এলাকায় তাদের পরিচয় ততটুকুই। তারা বিয়ে করে সন্তানও হয়। তারপর একদিন কি ভেবে যে তারা হঠাৎ নিরুদ্দ্যেশ হয়ে যায়। সাথে সাথে তাদের পরিচয়ও মুছে যায়। যতদিন তার আপন কেউ বেচেঁ থাকে ততদিন তাদের নামটা থাকে। যেমন চিনু খালার বা হাসুনির স্বামী। তারপর সব শেষ। তাদের সন্তানরাও তাদেরই মত হয়। যদিও বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে যায় আর খুবই অল্প কিছু ব্যবসা কিংবা চাকরী করে নিজেদের একটা পরিচয় গড়ে তোলে।
আমি তাদের জীবনের একটা অংশ দেখেছি মাত্র। যার শুরু দেখিনি কিংবা শেষ কোথায় তা জানি না। আমি শুধু তাদের টিকে থাকার সংগ্রাম আর জীবন ধারা দেখেছি। কিন্তু তারা সমাজের কী? বা কারা? এসমাজ তাদের কি দেয় অথবা তারা সমাজকে কি দেয়? তাদের কাছে এ জীবনের মানে কি? আমার কাছে এর কোন উত্তর নাই।
পর্ব ১ Click This Link
পর্ব ২ Click This Link
পর্ব ৩ Click This Link
পর্ব ৫ Click This Link

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: ১৮৬/বি শিরিয়া মঞ্জিল আমি চিনি। এখন অবশ্য এই বাড়ির নাম হয়েছে আমেনা মঞ্জিল।

১১ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৩৯

আমি রানা বলেছেন: বর্তমান মালিক কি নাম দিয়েছেন জানিনা। তবে আপনার কাছথেকে জেনে অনেক ভাল লাগছে।

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:৩০

মা.হাসান বলেছেন: আর পর্ব আসবে কি?
বেশ ভালো লেগেছে।

১১ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৪২

আমি রানা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। এর আগেও তিনটি পর্ব আছে, আপনাকে পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। পরবর্তীতে আরও পর্ব আসবে।

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৪৪

অধীতি বলেছেন: অন্তর বড় হয়ে কি হবে? রাস্তায় ঘুমাবে, ছিচকে চোর হবে। মায়ের নামে যে বাজে কথা বলবে হয়ত তাকে ছুরি মেরে পালিয়ে যাবে।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৫:১৮

আমি রানা বলেছেন: আমার কাছে মনে হচ্ছে, অন্তর তার আলাদা একটা নাম পরিচয় তৈরি করতে পারবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.