নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তব এবং সাধারন মানুষ আমার লিখার জীবন। এখানে রানা নামের একজন অতি সাধারন ব্যক্তির দৈনিক জীবন এবং তার দৃষ্টিতে সমাজের বর্তমান অবস্থা এবং এর প্রভাব তার নিজের ভাষায় প্রকাশ করা হবে।

আমি রানা

আমি বিশেষ কেউ বা কিছু না। যা মনে আসে যেভাবে মনে আসে তাই লিখি।

আমি রানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৮৬/বি শিরিয়া মন্জিল, ছোটবেলার ডায়রি।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:১৫

৫ ( মানসুরার প্রেম )



তখন টিনের ঘর ভেঙ্গে পাকা দেয়াল দিয়ে আগের মতই তিনটে ঘর করেছে জমিদার খালাম্মা। কোণের তিন নম্বর ঘরটাতে এসেছে ভান্ডারী খালা ( মাইজভান্ডার শরীফের কঠিন ভক্ত বলে তাকে ভান্ডারী ডাকা হতো )। আমি কখনো খালাকে গোমরা মুখে দেখিনি। অতিরিক্ত পান খাবার ফলে ঠোঁট লাল হয়ে থাকতো, আর এ রাঙ্গা ঠোঁটে খালার মুখ ভর্তি মায়া ভরা হাসি মন ভালো করে দিতে পারতো। স্বামী আর চার জন ছেলে মেয়ে নিয়ে খালার সুখের সংসার। খালার স্বামীর ওয়াসার মোড়ে একটা ভ্যান আছে তাতে তিনি চা বিক্রি করে।খালার প্রথমে বড় দুই মেয়ে, বড় মেয়ে মানসুরা আর ছোট মেয়ে নুরজাহান তারা গার্মেন্টসে চাকরী করে। তারপর দুই ছেলে বড়টা একটা টেইলার্সে সেলাই শিখছে এর ছোটটা সবে মাত্র ফাইভ পাস করে লেখাপড়ার ইতি ঘটিয়েছে।খালা একসময় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো, মেয়েরা চাকরী নেওয়ার পর এখন আর করে না।
আমার মায়ের সাথে খালার খুব ভাব, আমাকেও খালা যতেষ্ঠ আদর করেন, আর আমিও তাকে অনেক পছন্দ করি। কারন তার মাঝে কোন প্রকার জটিলতা কিংবা কুটিলতা নাই। খুব সহজ সরল বিশ্বাস তার সহজ সরল জীবন। তবে আজ আমাদের গল্পের নায়িকা মানসুরা ।
মানসুরা ডাক নাম মানছু। বয়স কুড়িঁ খেকে বাইশ হবে।চেহারা তেমন সুন্দর না। তেমন বলতে আসলেই সুন্দর না। তবে নুরজাহান অনেক সুন্দর। দু বোন একসাথে অফিসে আসা-যাওয়া করে। তাদের সাথে আমার একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, আমি সরাসরি কথা বলতাম না তাদের সাথে, তবে দুষ্টমি করতাম।যেমন তারা যদি কখনো পানির টেংক এর কাছে আসতো পানি নেওয়ার জন্য( আমার জানালার পাশে ) আমি চিৎকার করে বলতাম- “ কি সুন্দর চেহারা”, আপর দিক থেকে মানছু আথবা নুরজাহান বলে উঠতো-“ নাম রাখছে পেয়ারা”। এমন করেই নানা রকমের দুষ্টমি করতাম তাদের সাথে।
মানছু অতটা চালাক চতুর না। কিন্তু নুরজাহান তুলনা মূলক অনেক বুদ্ধিমান। তাই তারা সবসময় একসাথে খাকেন যাতে বড় বোন বিপদে পড়লেও ছোট বোন তাকে সাপোর্ট দিতে পারে। ভালোই চলছে খালার সংসার, স্বামী আর দুই মেয়ের আয় দিয়ে ডাল ভাতে দিন কেটে যাচ্ছে তাদের।
তারা শিরিয়া মঞ্জিলে আসার ঠিক পাঁচ মাস পর তাদের পাশের ঘরটা ভাড়া নিয়েছে বাদশা মিয়া। বাদশা মিয়া এলাকার নাইট গার্ড। সুঠাম দেহ, ডাকাতের মত চেহারা আর এখনো বাঘের মতো গর্জন তার। তার ছোট ছেলে বশির। তাগড়া জোয়ান ছেলে। খুবি শক্ত শরীর তার দেখে মনে হবে, প্রতিদিন ছয় ঘন্টা ব্যয়ামাগারে কঠোর পরিশ্রম করে। বড় বড় বডি বিল্ডার তার কাছে ফেইল হবে। বশির একটা স্টিল ওয়ার্কসপে কাজ করে।
সেদিন রাত থেকেই অঝড়ে বৃষ্টি ঝড়ছে, এলাকায় তখন হাটুঁ পানি। আবার সরকারী ছুটি হওয়ায় অফিস বন্ধ। তাই সকলেই কোন না কোন ভাবে ব্যস্ত যেমন- অফিসের অফিসারেরা আরাম করে ঘুমোতে ব্যস্ত, তাদের গিন্নিরা খিচুরি আর গরুর গোস্ত রান্নায় ব্যস্ত। তেমনি রিক্সাওয়ালা কাকাও তার গিন্নিকে নিয়ে ঘরে পানি ঢোকা থামাতে আর কাথা বালিশ শুকনো রাখায় ব্যস্ত। আর এদিকে আমার মতো দিবা স্বপ্নচারীরা বৃষ্টি দেখায় ব্যস্ত। সেদিন আমি জানালার পাশে বসে পর্দ্দার ফাক দিয়ে বৃষ্টি দেখছি, হঠাৎ দেখি মানছু বৃষ্টিতে ভিজে গেইটের সামনে গিয়ে দাড়াঁলো। সে প্রায়ই এমন করে বৃষ্টিতে ভিজে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু অবাক হলাম এর একমিনিট পর, বশিরও তার পিছে পিছে গিয়ে গেইটের সামনে দাড়াঁলো। তারা কয়েক সেকেন্ড পাশাপাশি গেইটের সামনে দাড়িঁয়ে ছিল। তারপর মানছু পিছন ফিরে বাড়ীর ভিতর ঢুকে পড়লো। বশির সাথে সাথে গেইট বন্ধ করে মানছু’র কাছাকাছি এসে বাংলা সিনেমার মতো পিছন থেকে তার ডান হাতটা টান দিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। মানছু ত লজ্জায় লাল, বশির তার দুগালে চুমু দিয়ে আরো কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রেখে ছেড়ে দিল। মানছু ছোট একটা দৌড় দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল, তারপর তারা আবার স্বাভাবিক। আমার বুঝতে আর বাকী রইলো না। এই বৃষ্টিতে ছোট ছোট প্রাণীগুলো যেমন পানিতে হাবুঢুবু খাচ্ছে তেমনি মানছু আর বশির নতুন প্রেমে হাবুঢুবু খাচ্ছে।
দুই পরিবার তাদের সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছে। সুতরাং এখন তাদের শেষ পরিণতির পালা। সব নিয়ম মেনে বাদশা মিয়া প্রস্তাব পাঠালো মানছুর বাবার কাছে, মানছু’র বাবাও রাজি। কিন্তু ঝামেলা হয়ে গেল অন্য জায়গাই। বাদশা মিয়া পনের হাজার টাকা যৌতুক চেয়ে বসলো , কিন্তু মানছু’র বাবার এক কথা-“ এডা প্রেমের বিয়া, আমি একটাকা ও দিমুনা”। বাদশা মিয়াও পনের হাজারের এক পয়সা কমে ছেলেকে বিয়ে দিবেনা। আবার মানছু’র বাবা একপয়সা দিয়েও বইস্যার ( বশিরের ) কাছে মেয়ে দিবে না। দুজনেই তাদের জায়গায় শক্ত হয়ে দাড়িঁয়ে আছে। তিন দিন মৌন যুদ্ধ চলার পর বিয়ে ভেঙ্গে গেল।
বাদশা মিয়াত রেগে আগুন হয়ে আছে, ছেলেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে অন্য জায়গায় বিয়ে করাবে কিন্তু মানছু’র বাপ একলাখ টাকা দিলেও ছেলেকে এখানে বিয়ে করাবে না। তেমনি মানছু’র বাপের এক কথা, “ দরকার হলে কর্য করে মেয়েকে বিয়ে দিবে তারপরও বইশ্যার কাছে না। যেহেতু দুই পরিবারের মধ্যে দূরত্ব শুধুই একটি দেয়াল সুতরাং কিছু বলতে হলে একটু উচুঁ স্বরে বললেই হয়। আর তাদের যুদ্ধও চলে এমন করে।
এদিকে মানছু’র মন অনেক খারাপ, আফিসে গিয়েও সে মন বসাতে পারছে না। তাই টয়লেটে যাওয়ার নাম করে দুজনে পানির টেংকের সামনে দেখা করলো। মানছু কাদঁতে কাদঁতে বশিরের হাতে পায়ে ধরে বলল,“ আপনে আমারে নিয়া চলেন। আমার আর এসব ভালো লাগতাছেনা। চলেন আমরা পলায়া বিয়ে কইরা ফেলি, চলেন আমরা এখনি পলা্ই যায়।বশির উত্তরে বললো, “ আমি আমার আব্বার কথার বাইরে যাইতে পারমু না”। মানছু আর কিছুই না বলে ঘরে চলে গেল।
তারপর দিন থেকে সব স্বাভাবিক। মানছু অফিসে যাচ্ছে, গল্প করছে , পরিবারকে সময় দিচ্ছে। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় তার পুরনো কাপড় নিয়ে গিয়ে তার গরিব বান্ধবীদের দিয়ে দিচ্ছে। সবকিছু আবার আগের মত স্বাভাবিক। এর মাঝে বশিরের বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। মেয়ের বাবা ষাট হাজার টাকা দিবে। পচিঁশ হাজার বশিরের বাকীটা তার বাবার। বিয়ের দিন তারিখ সব ফাইনাল। সেদিন রাতে পানির টেংকের পাশে বশির মানছুর সামনে দাড়িঁয়ে বললো “ আমাকে মাফ করে দিয়ো” মানছু কিছু না বলে ঘরে চলে গেল। তার ঠিক এক ঘন্টা পরে টেংকের পাশে অনেক গোলমালের শব্দ শোনা গেল। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি মানছু সমানে বমি করার চেষ্টা করছে আর অস্থির করছে। মানছু বিষ খেয়েছে….. দ্রুত তাকে মেডিকেল নেওয়া হলো । পরদিন বিকেলে বাড়ী ফিরলো মানছু’র লাশ। মানছু আত্মহত্যা করেছে, মহা পাপ করেছে। তাই তার জানাজাতে মানুষ আসেনি। আমিও যায়নি। তার জন্য আজ আমি মানছু’র কাছে ক্ষমা প্রার্থি।
মানছু আত্মহত্যা করেছে কিন্তু কেন করেছে? প্রেমে ব্যর্থতার জন্য ? নাকি পানের হাজার টাকার জন্য ? নাকি দুজন মানুষের ইগোর জন্য ? নাকি ভালোবাসার নামে মিথ্যে আশা থেকে হতাশ হওয়ার জন্য???
এর কিছুদিনপর বশির বিয়ে করলো । নুরজাহান যে ছেলেকে ভালোবাসতো তাকে বিয়ে করে তাদের ঘর জামাই করে নিয়ে আসলো। সবই হলো কিন্তু মানছু’র কি দোষ ছিল ?
এরপর থেকে খালাকে আর হাসতে দেখিনি।

পর্ব ১ Click This Link
পর্ব ২ Click This Link
পর্ব ৩ Click This Link
পর্ব ৪ Click This Link


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: ্মানসু আর বশির এখন কেমন আছে? তাদের সাথে যোগাযোগ আছে?

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:১৬

আমি রানা বলেছেন: মানছু ত আর নেই। বশিরের বিয়ে আমি খেয়েছি। শেষ বার তার একটা ছেলে হতে দেখেছি।

২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:০২

শেরজা তপন বলেছেন: ভালই হচ্ছে - মানছুর জন্য মন খারাপ হল।
(তুচ্ছ কিছু ভুল-ভাল আছে ঠিক করে দিলে সাবলীলভাবে পড়া যায়।)

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:০৩

আমি রানা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। জ্বী মানছুদের জন্য মন খারাপ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমাদের।
( ভুল- ভালের জন্য আমি আন্তরিক দুঃখিত। )

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৫৫

অধীতি বলেছেন: মানছুরারা এভাবেই কষ্ট পেয়ে সহ্য ক্ষমতার বাইরে যায়। আপনার এই সিরিজটা মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। আশাকরি আরো লিখবেন।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:০৬

আমি রানা বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। মুগ্ধ করার মত লেখক কিংবা লেখনি আমার এখনো হয়নি। তবে চেষ্টা করছি । পাশে থাকবেন।

৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:১২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বোকা মেয়েগুলো এমন কষ্টই পায় :(

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৫৫

আমি রানা বলেছেন: ঠিক বলেছেন। তাই বলে আত্মহত্যা ?!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.