| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুব্রত দত্ত
পরিশ্রমকে সঙ্গী করে কত মানুষ উর্ধ্বে গেলো, আকাশের ঐ তারার দলে/ চিরদিনই অলস আমি, আছি পড়ে অনন্তকাল এই ধরনীর গাছের তলে।
শিক্ষকতা করছি প্রায় ১১ বছর। বর্তমানে কর্মরত আছি International Baccalaureate কারিকুলামে যেটাকে সংক্ষেপে IB (আইবি) বলা হয়। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক এই কারিকুলামটি বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় কারিকুলামগুলোর মধ্যে অগ্রগণ্য। ব্যয়বহুল কারিকুলাম হওয়ায় বাংলাদেশে এটি হাতেগোনা কয়েকটি স্কুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে এখনও। ২০২৩ থেকে এই কারিকুলামে আমার কাজ শুরু। সৌভাগ্যবশত গত বছর থেকে আইবি ডিপ্লোমা প্রোগ্রামে পড়াচ্ছি যেটা আমাদের দেশের উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়। এতসব কথা বলা কিংবা এত ভণিতা করার কারণ হলো আজকে যা নিয়ে লিখবো, তার সঙ্গে আমার প্রাসঙ্গিকতা পাঠককে জানিয়ে রাখা। আজকাল খুব কম লেখি। এই কম লেখার একটি বড় কারণ হলো ‘কেন লিখব?’ তার যথার্থ উত্তর খুঁজে না পাওয়া। তবে এই লেখার কারণ আছে, খুব কারণ আছে। প্রিয় পাঠক একটু সময় নিয়ে ভাবুন।
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অন্তত আরো কয়েক বছর এমনটা থাকবে বলেই মনে হচ্ছে তবু যে আশা, যে স্বপ্ন এবং যে উদ্যম নিয়ে পরিবর্তনের ডাক এসেছিল সেটিকে বাস্তবায়নে প্রথমত সংস্কার করতে হবে শিক্ষা-ব্যবস্থাকে। আর এই সংস্কার সম্ভব হবে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে। জানি পথ দুর্গম তবু খানিকটা প্রত্যাশা এখনও রয়েছে। সে যাহোক, মূলকথায় আসি।
যদি প্রশ্ন করা হয় মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ-মাধ্যমিকে পদার্থবিজ্ঞান কিংবা হিসাববিজ্ঞান কেন পড়ানো হয়? এই প্রশ্নটি কিন্তু খুব সহজ এবং দ্বিধাহীনভাবে দেওয়া সম্ভব। আবার এই বিষয় ছাড়াও যদি বলা হয় গণিত, উচ্চতর গণিত কিংবা ইংরেজি বা কেন পড়ানো হয়? তবুও উত্তরটা জটিল হবে না। কিন্তু প্রশ্নটা যদি হয় বাংলা কেন পড়ানো হয়? তার উত্তর দিতে একটু হিমশিম খেতে হবে যদি আপনি প্রশ্নটির জটিলতা ধরতে পারেন তাহলে। যেকোনো প্রশ্নের উত্তর তৈরি হয় সম্ভাব্য কতগুলো ফ্যাক্টকে বিবেচনায় রেখে। ফ্যাক্টগুলো স্বচ্ছ হলে উত্তরে জটিলতা থাকে না। যেমন- একজন শিক্ষার্থী হিসাববিজ্ঞান, ব্যাংকিং ও ফিন্যান্স পড়ে- ব্যস্, তার পরিকল্পনা কিংবা সম্ভাব্য কারণগুলো সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে ভালো লাগা আবার কারো কারো জীববিজ্ঞানে আগ্রহ- সহজেই বুঝিয়ে দেয় এগুলো সে মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে কেন পড়ছে। ইংরেজি পড়ার কারণটাও একেবারে পানির মতো পরিষ্কার। ঝামেলাটা কেবল বাংলায়। এই বাংলায় ঝামেলার কারণ ফ্যাক্টগুলো সুচিহ্নিত না। মাধ্যমিক বা উচ্চ-মাধ্যমিকে বাংলা কেন পড়ানো হয় তার উত্তর অনেক রকম। কেউ বলবে বাংলা মাতৃভাষা- এটা তো শুদ্ধভাবে বলতে, লিখতে, পড়তে ও শুনতে পারতে হবে। তাই বাংলাকে একাডেমিকভাবে গুরুত্বের সাথে পড়ানো হয়। কেউ বলবে কর্মক্ষেত্রে যোগাযোগ দক্ষতা জরুরি আর যেহেতু এই অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা বাংলা সেহেতু এটা ভালোভাবে আয়ত্ত করাটা ক্যারিয়ারের জন্য দরকার। আরেকটু এগিয়ে কেউ বলবে মানুষের চিন্তন-প্রক্রিয়া গড়ে ওঠে মাতৃভাষায়, সমাজ-রাষ্ট্র-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক জীবন ব্যবস্থাকে ভালোভাবে পাঠ, তার সঙ্গে অভিযোজন ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন- এসব বোঝার জন্য মাতৃভাষায় দক্ষতা প্রয়োজন, তাই বাংলা পড়ানো। কেউ একেবারে ভিন্নভাবে বলবে বাংলা ভালো করে শিখে কেউ লেখক, কবি, সাহিত্যিক, আবৃত্তি শিল্পী, বাচিক শিল্পীও হতে পারে। সুতরাং এই বিষয় কর্মক্ষেত্রও তো তৈরি করে। আমার কথা হলো- এত এত কথা কেন বাংলা নিয়ে? অন্যান্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এত জাস্টিফিকেশন লাগে না। বাংলার লাগে কেন? আদৌ কি বাংলা বিষয়টা অতটা জরুরি? অতটা তাৎপর্য রাখে? নাকি বিষয়টা চাপাচাপির পর্যায়ে। কেন লাগে তা শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে জোর করে পড়িয়ে যাওয়া মাত্র! আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কিন্তু নিঃসন্দেহে সন্দেহ তৈরি করে।
আচ্ছা আমি যে এতসব কথা বলছি কেউ আবারে ক্ষেপে যাবেন না। কেউ হয়তো হেসে বলবেন আগে জাতীয় শিক্ষানীতি পড়ে আসুন, বাংলা কেন পড়ানো হয় সেটা খুব সুন্দরভাবে লেখা আছে। তাদের প্রতি বিনয়ের সাথেই বলছি সেসব আমার পড়া আছে। বাংলা বিষয়টিকে যে দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাধীনতা-উত্তর সময় থেকে পড়ানো হচ্ছে সেটা কেবল ভুলই নয়, অযৌক্তিকও। ঠিক এখন বাংলা বিষয় নিয়ে কী ভাবনা-চিন্তা চলছে তা আমার জানা নেই। কিন্তু ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলা বিষয়টি ছিল প্রথমত ভাষা শিক্ষা হিসেবে এবং সাহিত্য অংশটি ছিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন চর্চা- ইত্যাদি শেখানোর মাধ্যম। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা বাংলা পড়বে একজন আদর্শ নাগরিক হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য এবং পাশাপাশি ধ্বনি, শব্দ, বাক্য, বানান ইত্যাদি ব্যাকরিণক সূত্রগুলো শেখার জন্য। আর শিক্ষানীতি প্রত্যাশা করতো এর মাধ্যমে অবচেতনভাবেই শিক্ষার্থীদের ভাষাতাত্ত্বিক বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটবে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে, বিনয়ের সাথেই বলছি- এগুলো তাৎপর্যহীন।
এবার আবার একটু ভিন্ন কথায় আসি। আইবি কারিকুলামে মাধ্যমিক পর্যায়কে বলে MYP যেখানে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে। ওদের মূলত ৩টি ভাষা শেখার প্রতি উৎসাহী করা হয়। স্বাভাবিকভাবে প্রথমত ইংরেজি এবং তারপর ২য় কোনো আন্তর্জাতিক ভাষা এবং মাতৃভাষা। আইবি কারিকুলামে বাংলার অবস্থান এখনও পাকাপোক্ত না হলেও বাংলাদেশে প্রতিটি আইবি স্কুলই বাংলাকে গুরুত্বের সাথে শেখাচ্ছে। সেক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট কারিকুলাম বাংলার জন্য তৈরি করার প্রয়াসও পরিলক্ষিত। যেকোনো ভাষার জন্য MYP যে পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সেখানে মূলত ভাষাকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, পাশাপাশি সাহিত্যকে তুলে ধরা হয় ক্রিয়েটিভ ও ক্রিটিক্যাল এ্যানালাইসিস দক্ষতা তৈরি করার জন্য। MYP-র পর আসে DP, DP হলো উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় যেখানে শিক্ষার্থীদের দুটি ভাষা এবং তার ক্যারিয়ার অনুসারে প্রাসঙ্গিক ৪টি বিষয় নির্বাচন করতে হয়। এর পাশাপাশি তাকে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে নিতে হয় TOK, EE & CAS কে। TOK হলো Theory of Knowledge- বিষয়টা কিছুটা দর্শনের পরিসরে অর্থাৎ জ্ঞান কীভাবে উৎপন্ন হয় ও তা বিভিন্ন বিষয়ে কীভাবে অঙ্গীভূত হয় তা নিয়ে আলোচনা। EE হলো Extended Essay- এখানে শিক্ষার্থীকে ৪০০০ শব্দে একটি গবেষণাপত্র লিখতে হয়। শিক্ষার্থী তার পছন্দের কোনো বিষয়ের কোনো একটি টপিক নিয়ে প্রবন্ধটি লেখে শিক্ষকের সহায়তায়। আর CAS হলো Creativity, Activity & Service এটা ঠিক সরাসরি পড়া নয়। এখানে শিক্ষার্থীকে কিছু সৃজনশীল কাজ, দক্ষতামূলক ও সমাজসেবামূলক কাজ শিখতে হয়, চর্চা করতে হয় এবং সেগুলোর যথাযথ প্রতিফলন ও তথ্য-প্রমাণ আইবিকে জমা দিতে হয়। পড়াশুনার পাশাপাশি এইসব মিলিয়ে ১৮ মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। শিক্ষার্থীর সার্বিক প্রোফাইল ও চূড়ান্ত ফল একসাথে করে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করা হয়।
DP-তে বাংলা বিষয়টি পুরোপুরি সাহিত্য। এখানে বাংলা ভাষায় রচিত গল্প, কবিতা, উপন্যাস পড়ানো হয় পাশাপাশি অনূদিত সাহিত্য থেকেও কিছু সাহিত্যকর্ম পড়ানো হয় নির্দিষ্ট চাহিদা অনুসারে। এখানে ২টি পেপার থাকে যার প্রথমটিতে একটি অদেখা, অজানা সাহিত্যকর্মকে বিশ্লেষণ করতে হয় এবং ২য় পেপারটিতে শিক্ষার্থীকে তার পঠিত দুটি সাহিত্যকর্মের একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়। পুরো সিলেবাসের মূল লক্ষ্য থাকে ক্রিটিক্যাল এনালাইসিসের উপর এবং মৌখিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীকে তার পঠিত একটি বাংলায় রচিত ও অন্যটি অনূদিত সাহিত্যের প্রাসঙ্গিক একটি বিশ্লেষণ উপস্থাপন করতে হয়। পড়াতে গেলে দেখা যায় এখানে মূল বিষয় বাংলা ব্যাকরণ, বানান, শব্দ নয় এমনকি গল্পে বা কাহিনিতে কে কী করলো সেটা মুখস্ত করাও নয়- বরং লেখক ঐ লেখাটিকে কেন লিখেছেন, সেটার প্রাসঙ্গিকতা কোথায় ও পাঠক তাতে কী রকম প্রতিক্রিয়া করছে সেটাকে গভীরভাবে খেয়াল করা। এই বিষয়টিতে নম্বর প্রাপ্তি ও নম্বরের হিসেব-নিকেশও অনেক জরুরি কোনো বিষয় নয় বরং আইবি পরামর্শ দেয় এই বিষয়টি যেন এমনভাবে পড়ানো হয় যাতে শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো, অভিবাসন, বর্ণবাদ ইত্যাদি বিষয়গুলো বুঝতে পারে এবং সাহিত্যিক কৌশল শিখতে পারে।
এখন বলুন তো আমাদের কারিকুলাম আর আইবি কারিকুলামের মধ্যকার ফারাকটা কোথায়? ধরুন কলেজে একজন শিক্ষক ’লালসালু’ উপন্যাসটি পড়াচ্ছেন- লালসালু কেন লেখা হয়েছে? সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ কী বার্তা প্রকাশ করেছেন? সে বার্তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? এগুলো তিনি ক্লাসে আলোচনা করবেন, পড়াবেন এবং গুরুত্বের সাথে চরিত্র ও ঘটনা বিশ্লেষণ করবেন। কিন্তু তিনি কি ‘লালসালু’ উপন্যাসটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারবেন? সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ যে বার্তা দিয়েছেন সেটা কি চূড়ান্ত সত্য? তাঁকে কি প্রশ্ন করা যেতে পারে? পাঠকের কি ভিন্ন ভাবনা থাকতে পারে? এতদূর কিন্তু তিনি যেতে পারবেন না, আইবি শিক্ষক পারবেন, খুব পারবেন। লালসালু পড়া শেষে শিক্ষার্থীরা দ্বারস্থ হবে গাইড বইয়ের। সেখানে সৃজনশীল প্রশ্ন নামে পরিচিত গাইডেড প্রশ্নের উপর ভিত্তি করে কিছু প্রশ্ন-উত্তর অনুশীলন করবে, যা উপন্যাসটিকে একেবারে একটি ছোট্ট গণ্ডিতে নিয়ে যাবে। আইবি শিক্ষার্থী লালসালু উপন্যাসটি পড়ার পর লক্ষ করবে এই উপন্যাসটি তার পঠিত হাজার চুরাশির মা, এ টেল অব টু সিটিজ, মুখরা রমণী বশীকরণ কিংবা রক্তকরবী নাটকের সাথে কোনোভাবে প্রাসঙ্গিক হয় কিনা।
বুঝতেই পারছেন সাহিত্যকে প্রসারিত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কারিকুলাম কেবল বাধাই দেয় না বরং সেটাকে সৃজনশীল প্রশ্নের ফাঁদে সংকুচিত করে। অন্যদিকে আইবি সাহিত্যকে এমন একটি বৃহৎ পরিসরে ছুঁড়ে ফেলে যেখান থেকে শিক্ষার্থীকে একটি পরিসীমা তৈরি করতে হয় তার চিন্তন ও সৃজনী শক্তি দিয়ে।
আমি মনে করি আমাদের কারিকুলামে প্রথমত বাংলা বিষয়টির সংস্কার প্রয়োজন। বাংলা শেখার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ভাষা শিক্ষা এবং সাহিত্যকে বোঝা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই সাহিত্য কী, কেন এবং তার প্রয়োজনীয়তার দিকগুলো সুনির্দিষ্ট করা। শিখনফল সুনির্দিষ্ট না করে, সৃজনশীল প্রশ্ন বলে হুটহাট ৪/৫ লাইনের উদ্দীপক না দিয়ে বরং তুলনামূলক সাহিত্য অধ্যয়নের সুযোগ তৈরি করা, মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মুখস্ত জ্ঞানকে প্রাধান্য না দিয়ে চিন্তন প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দেয়া।
আমার প্রস্তাবনা নিরর্থক হয়তো। তবু দিচ্ছি। মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলায় ২টি পেপার রাখাই ভালো। বাংলা প্রথম পত্র হোক সাহিত্য যেখানে অনেক অনেক গল্প, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, উপন্যাস না পড়িয়ে ভেবে-চিন্তে কয়েকটি অধ্যায় নেয়া হোক এবং সৃজনশীল প্রশ্ন বাতিল করে ওপেন-এ্যান্ডেড প্রশ্ন রাখা হোক। দ্বিতীয় পত্র হোক ভাষা ও যোগাযোগ শিক্ষা। সেখানে ব্যাকরণের সেটুকুই পড়ানো হোক যতটুকু না হলেই নয়, পড়ানো হোক চিঠি-পত্র, অনুচ্ছেদ, রচনা লেখা।
বর্তমান বিশ্বে অনেক অনেক কারিকুলাম জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আমাদের দেশের শিক্ষাবিদদের উচিত সেগুলো নিয়ে পড়াশুনা করা, সেখানে ভাষা ও সাহিত্য বিষয়গুলোকে কীভাবে পড়ানো হচ্ছে, মূল্যায়ন করা হচ্ছে তা দেখা। আমার লেখার ইতি আমি এখানেই টানছি এই প্রত্যাশা রেখে যে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের কারিকুলামে বাংলা বিষয়টি আরো সুনির্দিষ্ট কাঠামোতে উপস্থাপিত হবে, শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে এই বিষয়টি অধ্যয়ন করবে। ধন্যবাদ।
লেখক
সুব্রত দত্ত
বাংলা শিক্ষক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩০
সুব্রত দত্ত বলেছেন: আমি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল এবং কলেজ দুটো শাখাতেই পড়াচ্ছি।
‘আমাদের অত্যধিক বাংলাপ্রীতি’ কথাটা কতিপয় শিক্ষাবিদদের জন্য প্রযোজ্য, মানে যারা শিক্ষাক্রমে কাজ করেন তাদের মধ্যে হয়তো কয়েকজন। এমনিতে আপামর জনতা বাংলাকে ভালোবাসে না। শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি হওয়াটা ভালো হতে পারে কিন্তু তার অবকাঠামোগত সামর্থ্য আমাদের কতটুকু আছে সেটাও দেখার বিষয়।
২|
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
বেশ গুরুত্ব পুর্ণ একটি লেখা ।
ঠিকই বলেছেন ,আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষাক্রম International Baccalaureate (IB) এর লক্ষ্য শিক্ষার্থীর
সমন্বিত বৌদ্ধিক, নৈতিক ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সক্ষমতা গঠন। যার মুল ভিত্তি হলInquiry-based learning,
critical thinking, এবং global-mindedness। PYP, MYP ও DP পর্যায়জুড়ে জ্ঞানকে আন্তঃবিষয়ক
তথা interdisciplinary দৃষ্টিতে দেখা, গবেষণামুখিতা এবং বিশ্লেষণী দক্ষতা বিকাশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব
আরোপ করা হয়। এর মুল লক্ষ্ং জ্ঞানকে গুচ্ছবদ্ধ নয়, বরং আন্তঃসংযুক্ত রূপে উপস্থাপন করা।গবেষণাধর্মী এবং
বিশ্লেষণমূলক শিক্ষণপদ্ধতি প্রয়োগ করা সেই সাথে আন্তর্জাতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের ওপর জোর সাথে
সামগ্রিক চিন্তা ও মূল্যায়নধর্মী দক্ষতার বিকাশ ঘটায় ।
তবে এই কারিকুলামের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে যথা মূল্যায়ন কাঠামোর জটিলতা এবং অতিরিক্ত
শিক্ষার্থী-চাপ, উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা ও তাঁদের প্রাপ্যতার ঘাটতি।ব্যয়বহুল কাঠামো,
যা বহু পরিবারের নাগালের বাইরে এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সাথে পাঠক্রমের সংযোগ
তুলনামূলক দুর্বল।
এবার IB কারিকুলামে বাংলা বিষয় থাকা সম্পর্কে যতদুর জানা গেল তাতে দেখা যায় বাংলা বিষয়টি
IB-এর Language A বা Language B ট্র্যাকে অধ্যয়ন করা যায়। এর পাঠক্রম সাহিত্যকে বৈশ্বিক
প্রেক্ষাপটে দেখতে উৎসাহিত করে এবং পাঠ ব্যাখ্যা, ভাষাবিশ্লেষণ ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিতের সমন্বিত
বিশ্লেষণকে উৎসাহিত করে।বাংলা সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যের তুলনামূলক পাঠ, যা বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃত
ব্যাখ্যাগত পরিসর উন্মোচন করে। পাঠ্যবস্তুর বিশ্লেষণ বিন্যাস, ভাষিক কৌশল, থিম, সাংস্কৃতিক কনটেক্সট
এসবকে পদ্ধতিগতভাবে মূল্যায়ন করে সেসাথে মাল্টিমোডাল টেক্সট (বিজ্ঞাপন, সংবাদ, প্রবন্ধ ইত্যাদি)
বিশ্লেষণের সুযোগ সুযোগ থাকে। Internal Assessment-এ শিক্ষার্থীর গবেষণাকেন্দ্রিক স্বতঃপ্রকাশের
দিকটিকেও বেশ গুরুত্ব দেয় হয় ।
তবে এর বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে যথা স্কুলভেদে টেক্সট নির্বাচনে স্থানীয় সাহিত্য, ইতিহাস ও সমাজ
প্রেক্ষাপটের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্বের অভাব,IB-ভিত্তিক বিশ্লেষণশৈলী শেখাতে দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতি এবং
সীমিত পাঠ্যসূচি বাংলা সাহিত্যের ব্যাপ্তিকে পুরোপুরি প্রতিফলিত করতে পারে না।
সর্বোপরি মূল্যায়ন কাঠামোর চাপ অনেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ।
আপনি বলেছেন কারিকুলামটি ঢাকার মাত্র গুটি কয়েক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু আছে । অনুগ্রহ করে বলুন
এই কারিকুলামটি ঢাকার কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু আছে এবং বিভিন্ন শিক্ষাস্তরে শিক্ষার্থীদেরকে
গড়ে কি পরিমান বাৎসরিক টিউশন ফি দিতে হয় । এটাকে কি সাধারন মধ্যবিত্ত বা নিস্ম বিত্ত পরিবারের
শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যপক ভাবে চালু করা যাবে । বাংলাদেশের শিক্ষানীতিতে কি বড় ধরনের কোন পরিবর্তন
ও বিশেষ বাজেট বরাদ্ধের প্রয়োজন হবে ।
সর্বোপরি কিভাবে প্রবল জনমত তৈরী করা যাবে দেশের রাস্ট্রিয় শিক্ষাব্যবস্থায় IB-ভিত্তিক কারিকুলাম
দিয়ে সম্পুর্ণ বাংলা মাধ্যমে শিক্ষা দান কর্মসুচী চালু করার জন্য । আমার মতে ইংরেজী শিখার জন্য স্কুল
ও কলেজ লেভেলে একটি ২০০ নম্বরের ইংরেজী প্রথম পত্র ও দ্ধিতীয় পত্র আর যারা ইঙরেজীতে আরো
বেশী দক্ষতা অর্জন করতে চায় তাদের জন্য আরো ১০০ নম্বরের উচ্চতর ইংরেজি পত্র কারিকুলামে
অন্তর্ভুক্ত করা যায় ।
শুভেচ্ছা রইল
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৪
সুব্রত দত্ত বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। সত্যি বলতে আইবি কারিকুলাম এতটাই ব্যয়বহুল যেটা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমি মনে করি আইবি কারিকুলামকেই নেয়ার দরকার নেই, বরং আমাদের দেশীয় কারিকুলামে পৃথিবীর বিখ্যাত কারিকুলামগুলো থেকে নেয়ার মতো অংশগুলোকে নিয়ে ঢেলে সাজানো ভালো হতে পারে। আইবি স্কুল সম্পর্কিত তথ্যগুলো এখানে এ্যাড করলাম না, আপনি চাইলে গুগল থেকে কিংবা এআইকে প্রশ্ন করে জেনে নিতে পারবেন। আবারও ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
৩|
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩২
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: অনেক দিন পর সুন্দর একটি গবেষনা ধর্মী লেখা পড়লাম।
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৪
সুব্রত দত্ত বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। একটা অনলাইন নিউজ পোর্টালকে দিয়েছিলাম, তারা ছাপালো না :-)....
৪|
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো ।
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৫
সুব্রত দত্ত বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইলো।
৫|
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:২৬
কলাবাগান১ বলেছেন: আপনি হিন্দু এই মৌলবাদীর দেশে???? এই সমস্ত জ্ঞানের কথা লিখে লাভ নাই.....
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৬
সুব্রত দত্ত বলেছেন: তা এক অর্থে ঠিকই বলেছেন। তবে এই দেশে যে-ই জ্ঞানের কথা লিখুক না কেন, সেটা সত্যিকারের কাজের হলে কেউ নিবে না।
৬|
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লেখাটি মন দিয়ে পড়লাম।
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৯
সুব্রত দত্ত বলেছেন: ভাই, ব্লগে যেদিন থেকে লিখছি, সেদিন থেকে আপনাকে চিনি। এই চেনা মানে ঠিক চেনা নয়- মানে রাজীব নুর এই আইডিটাকে চিনি। আপনি আমার লেখা পড়েন, কমেন্ট করেন এটা আনন্দের। শিক্ষকতায় যখন ঢুকেছিলাম তখন থেকে এখানে। জীবনের অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আজকের পর্যায়ে। কোনো লেখা কোথায় দিলে কেউ যদি পড়ে এবং মন্তব্য করে তবে ভালো লাগে। আর আপনি তো ‘মন দিয়ে’ পড়েন- সেটা আমার উপরি-পাওনা। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা। ভালো থাকবেন ভাই। :-)
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫২
আলামিন১০৪ বলেছেন: ভাই কি কলেজের নাকি স্কুলের শিক্ষক?
বিদেশে চাকুরী কিংবা পড়াশুনার ক্ষেত্রে ভারতীয়দের সাথে আমাদের প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ার মূল কারন ইংরেজীতে পারদর্শীতার অভাব। আমার মনে হয়, আমাদের অত্যধিক বাংলাপ্রীতি আমাদের এই সর্বনাশ ডেকে এনেছে। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে সকল কারিগরী বিষয়ে ইংরেজী মাধ্যম চালু করলে আমরা হয়ত বা এই দূরবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারব। আর শ্রমবাজারের চাহিদার কথা মাথায় রেখে গতানুহতিক পরীক্ষার পাশাপাশি আমাদের প্রেজেন্টেশন ও গবেষণামূলক পরীক্ষা পদ্ধতি েপ্রচলন করতে হবে যেমনটা আপনি বলেছেন। ইন্টারনেট থেকে ছাত্রদের প্রচুর রেফারেন্স মেপেরিয়াল দিতে হবে। তাদের সৃষ্টিশীল হতে শিখাতে হবে। আর একটি বিষয়, মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় নিয়ে আসার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা না করলে এ সব চিন্তা করা দূরাশা মাত্র।