নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঠুনকো জীবন

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১২




মনটা বিক্ষিপ্ত। মাগরিবের আজান হচ্ছে। ওপাশে নতুন ভর্তি হওয়া বৃদ্ধ রোগী অস্বাভাবিক জোড়ে
মা… মা… বলে চিৎকার করে কাতরাচ্ছে।
অসুখে পড়লে বোধহয় সবারই মাথায় প্রথমে মা শব্দটি আসে যে কোন বয়সে,
শ্বশুর বাবা এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো হাসপাতালে ভর্তি।
এই করিডোর, জীবাণুনাশকের গন্ধ, নার্সদের কথাবার্তা রোগীদের অসহায় মুহুর্ত গুলো দেখতে দেখতে নিজেকে অবশ্যই ভাগ্যবান অনুভব হয়।

আমি চোখ বন্ধ করে বসে আছি।
পাশের বেডে জরুরি রোগী, তার চারপাশে নার্স, ডাক্তার, আরও ৭–৮ জন স্টাফ। রোগীর চিৎকারে পুরো ওয়ার্ড কেঁপে উঠছে।মনে হচ্ছে শব্দটা মাথার স্নায়ু চিরে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে আমার।
তারা রোগীকে ক্যানোলা পরাচ্ছে, শান্ত করার চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে ঘুমের ওষুধও দিতে পারে। আমি এসবের মাঝেই চোখ বন্ধ করে ভাবছি, আগে রোগীকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে শান্ত করলে ভালো হতো না!!।


এই ভিড় আর চিৎকারের কারনে শ্বশুর বাবা ভয় পেয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে একটা ছোট বাচ্চার মতন। উনি সুস্থ থাকলে নিশ্চয়ই ছেলের বউ এর হাত ধরার কথা কল্পনাও করতে পারতেন না কোনদিন, তার আঙুলের শক্ত ধরার ভেতরে আতঙ্ক, দুর্বলতা, আর বাঁচার আকুলতা। দুই বার স্ট্রোকের পর বাবা প্যারালাইজড বাকশক্তি হারিয়েছেন।

একজন রোগী অক্সিজেন দিয়ে শ্বাস নিচ্ছেন। তার বুক-পেট ভয়ংকরভাবে উঠানামা করছে, প্রতিটি শ্বাস যেন মৃত্যুর সঙ্গে হাতাহাতি করে টেনে আনা এক ফোঁটা বাতাস।

দৃশ্যটা দেখতে দেখতে মনে হলো বাঁচার আকুতি কাকে বলে, সত্যিকারের মৃত্যু ভয় কেমন হয়, জীবন আর শরীর কতটা নাজুক,আমরা সুস্থ মানুষ কি তা কখনোই ঠিকভাবে বুঝতে পারি?

আমরা তো হাঁটছি, কথা বলছি, নিঃশ্বাস নিচ্ছি, ভাবছি সবটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটা অক্সিজেন মাস্কের নিচে থাকা মানুষ
শুধু একটা শ্বাসের জন্য যে যুদ্ধটা লড়ছে, সেটা আমাদের কল্পনার বাইরে।

কোথায় যেন পড়েছি লেখাটা যে "যখন আপনার মধ্যে অতিরিক্ত অহংকার বা দম্ভ জন্মাবে, তখন হাসপাতালে যান এবং দেখুন কীভাবে সাধারণ মানুষ জীবনের জন্য লড়াই করছে, কত কষ্ট করছে; এটি আপনাকে বিনয়ী হতে সাহায্য করবে এবং বুঝতে শেখাবে যে জীবন কতটা ক্ষণস্থায়ী ও অনিশ্চিত।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪১

সাইফুলসাইফসাই বলেছেন: হাসপাতালে গেলে বুঝা যায় আমি অনেকের চেয়ে কত ভালো আছি- চমৎকার লেখা

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১৩

সামিয়া বলেছেন: আসলেই, ধন্যবাদ

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:২২

আলামিন১০৪ বলেছেন: ডাক্তার আর নার্সরা মৃতুযন্ত্রণাকাতরদের দেখে অভ্যস্ত, কই তাদের তো বোধোদয় হয় না? এদের বোধ হয় মানুষের যন্ত্রণা আর স্পর্শ করে না....
আমার নানী বার্ডেমে মারা যাওয়ার কিছু সময় পর আমরা আত্মীয় স্বজনরা যখন তার লাশকে ঘিরে শোকে বিহবল, তখন সেখানকার অতি অল্প বয়সী এক নারী ডাক্তার আমাদের দেখিয়ে বলছিল, এরা এখনো লাশ নিয়ে যাচ্ছে না কেন?....

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১৫

সামিয়া বলেছেন: ইস শুনে সত্যিই খুব খারাপ লাগলো, আল্লাহ আপনার নানীকে বেহেস্ত নসিব করুক। আসলে এই একটা ব্যাপার আলাদা কিছু কিছু ডাক্তার নার্স অনেক নিষ্ঠুর আচরণ করে।রোগীদের সাথে থাকে থাকতে বা কাজ করতে করতে যেন কঠোর হয়ে যায় ওদের মন।

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: মৃত্যু নিয়ে ভাবা সঠিক কাজ নয়।
মৃত্যু আপনার আনন্দ মাটি করে দিবে।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১৭

সামিয়া বলেছেন: মৃত্যু চিন্তা এসেই পড়ে মাথায় মধ্যে, আজকাল মানুষ কেমন হঠাৎ করে মরে যায় কারো কারো দেখা যায় ফেসবুকে দু'ঘণ্টা আগেও স্ট্যাটাস দিয়েছে পোস্ট শেয়ার করেছে তার কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যুর খবর। জীবন একটা ভ্রান্তি।

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৮

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: হাসপাতালে যাওয়া আসার অনেক অভিজ্ঞতা আছে :( গত জুনেও গিয়েছি অনেকবার, শেষ পর্যন্ত ভাসুর মারা গেলেন। আইসিউ এর সামনে বসে দেখে দেখেছি কান্নার রোল, মানুষের আহাজারি। লাশ বের করছে, আবার কাউকে ঢুকাচ্ছে। কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। আল্লাহ আমাদের সুস্থতার নেয়ামত দান করুন অনন্তকাল।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৪

সামিয়া বলেছেন: এসব অনেক কষ্টের , সামনাসামনি দেখা, মানসিক চাপ অনুভব হয়। আপনি ও সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.