নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞানিরা বলেন মানুষ জন্মমাত্রই মানুষ নয়,তাকে যোগ্যতা অর্জন করে তবেই মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হয়।যোগ্যতা আছে কি না জানি না,হয়তো নিতান্তই মূর্খ এক বাঙ্গাল বলেই নিজেকে নির্দ্বিধায় মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফেলি।

কল্পদ্রুম

আমি আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়

কল্পদ্রুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুবাদঃ অরণ্যের সুর || মূলগল্পঃ Piper in the woods, লেখকঃফিলিপ কিন্ড্রেড ডিক

০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১:৩৬

'তো,কর্পোরাল ওয়েস্টার্বার্গ,' ডক্টর হ্যানরি হ্যারিস আন্তরিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন, 'ঠিক কি কারণে আপনার নিজেকে গাছ বলে মনে হয়?'

কথা বলতে বলতে তিনি ডেস্কের উপর রাখা কার্ডের দিকে তাকালেন। এটা স্বয়ং বেজ কমান্ডারের কাছ থেকে আসা।সেখানে লেখা, 'ডক, আপনাকে এই ছেলেটার কথাই বলেছিলাম। ওর সাথে কথা বলে দেখুন এসব অদ্ভুর চিন্তাভাবনা ও পেল কোথায়! ছেলেটি এস্টেরয়েড Y-3 এ স্থাপিত নতুন সেনা ঘাঁটি থেকে এসেছে। আমরা চাইনা ওখানে কোনধরনের ঝামেলা হোক। বিশেষত এরকম হাস্যকর কারণে তো অবশ্যই নয়।'

হ্যারিস কার্ডটা একপাশে সরিয়ে রাখলেন। তারপর আরো একবারের জন্য ডেস্কের অন্যপাশে থাকা ছেলেটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। বয়সে তরুণ ছেলেটিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অসুস্থ এবং আপাতভাবে সে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে হ্যারিসের প্রশ্নের উত্তর না দিতে। ডক্টর হ্যারিস ভ্রু কুঁচকালেন। ওয়েস্টার্বার্গ ছাব্বিশ বছরের সুঠাম দেহের সুদর্শন ছেলে। লম্বায় ছয়ফুটের কাছাকাছি হবে। এক গোছা সোনালি চুল এক চোখের উপর এসে পড়েছে। কার্ডের তথ্যমতে মাত্র দুবছর হলো সে প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। জন্মশহর ডেট্রয়েট। নয় বছর বয়সে হাম হয়েছিলো। জেট ইঞ্জিন,টেনিস এবং মেয়েদের প্রতি আগ্রহী।

ডক্টর ওয়েস্টারবার্গ আবারো জিজ্ঞেস করলেন, ’কর্পোরাল ওয়েস্টারবার্গ। তোমার নিজেকে গাছ মনে করার কারণ কি?'

কর্পোরালকে বিব্রতমুখে তাঁকিয়ে থাকতে দেখা গেলো। একসময় গলা পরিষ্কার করে বললো, 'স্যার, আমি শুধু মনে করি না যে আমি একটা গাছ। আমি আসলেই একটা গাছ। গতকয়েক দিন ধরেই আমি গাছ হয়ে আছি।'

'ও আচ্ছা।' ডক্টর মাথা নাড়লেন। 'তারমানে তুমি এর আগে গাছ ছিলে না?'

'না স্যার। আমি সম্প্রতি গাছ হয়েছি।'

'তাহলে এর আগে কি ছিলে?'

'বেশ,তখন আমি আপনাদের সবার মতই ছিলাম।'

হঠাৎ করেই দুজনের আলাপচারিতায় নিরবতা নেমে এলো। ডক্টর হ্যারিস খসখস করে কিছু লিখলেন। তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না অবশ্য। নিজের স্টিলের ফ্রেমের চশমাটা খুলে রুমাল দিয়ে পরিষ্কার করে পুনরায় চোখে দিলেন। এরপর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বললেন-'সিগারেট চলবে?'

'না স্যার।'

ডক্টর নিজে একটা ধরিয়ে চেয়ারের হাতলে হাত রাখলেন, 'দেখো,এত অল্প সময়ে খুব কম মানুষের পক্ষেই গাছ হওয়া সম্ভব। আর সত্যি বলতে তুমিই প্রথম ব্যক্তি যে কি না এরকম কিছু আমাকে বলেছে।'

'জ্বি স্যার। আমি বুঝতে পারছি এটা অস্বাভাবিক।'

'তাহলে তো তুমি আমার আগ্রহের কারণও বুঝতে পারছো। তুমি যদি গাছ হয়ে থাকো — তার মানে কি? গাছের মত এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকো? তোমার কি ডালপালা আছে?অথবা শিকড় বা এ জাতীয় কিছু?'

'আমি আপনাকে এর বেশি কিছু বলতে পারবো না। আমি দুঃখিত', বিড়বিড় করে ওয়েস্টারবার্গ বলল।

'বেশ,অন্তত এটা বলো তোমার এই পরিবর্তন কিভাবে হলো?'

এ পর্যায়ে কর্পোরাল ওয়েস্টারবার্গকে দ্বিধাগ্রস্ত দেখালো।সে উদ্দেশ্যহীনভাবে কিছুক্ষণ মেঝের দিকে, জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে, তারপর ডেস্কের উপর রাখা কাগজে দিকে তাকিয়ে থাকলো।অবশেষে উঠে দাঁড়িয়ে বলল-'আমার পক্ষে আপনাকে সেটাও বলা সম্ভব নয়।'

'কেন?'

'কারণ আমি না বলার জন্য কথা দিয়েছি।'

আরো একবার ঘরে নিরবতা নেমে এলো। হ্যারিস বিরক্ত হয়ে বললেন-'কর্পোরাল তুমি কাকে কথা দিয়েছো?'

'সেটাও আমি আপনাকে বলতে পারবো না স্যার। আমি দুঃখিত।'

ডক্টর শেষ পর্যন্ত দরজার কাছে গিয়ে নিজেই দরজা খুলে বললেন, 'ঠিক আছে। তুমি এখন আসতে পারো। সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।'

'আমার অসহযোগীতার জন্য আমি দুঃখিত স্যার।'

ওয়েস্টারবার্গ চলে যাবার পরপরই হ্যারিস কমান্ডার কক্সকে ফোন করলেন। কয়েক মুহুর্ত পরেই ত্রিমাত্রিক ছবিতে কমান্ডারের ভরাট মাংসল মুখটা ভেসে উঠতে দেখা গেলো।

'কক্স, হ্যারিস বলছি। ওর সাথে আমার কথা হয়েছে। সে একটা গাছ — এর বাইরে কোন কথা বের করতে পারিনি।আর কিছু কি আছে? আচরণের কোন বিশেষ পরিবর্তন?'

'ইয়ে,সবার প্রথমে ওরা লক্ষ্য করেছিলো যে ছেলেটা কাজ করতে চাচ্ছে না। সেনাঘাঁটির প্রধান বিবৃতি দিয়েছেন যে এই ওয়েস্টারবার্গ ছেলেটি সেনাছাউনি থেকে বাইরে চলে যেত। তারপর সারাদিন বসে থাকতো। কোন কাজ করতো না। শুধু চুপচাপ বসে থেকে দিন পার করতো।'

'সূর্যের নীচে?'

'হুম। সেটাই। আর তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো তুমি কাজ করছো না কেন সে বলল তাকে সূর্যের নীচে বসতেই হতো।আর...'

'আর?'

'আর তার মতে কাজ করা প্রকৃতি বিরুদ্ধ। এগুলো সময় নষ্ট ছাড়া কিছু না। একমাত্র কাজের কাজ হলো বাইরে বসে বসে ধ্যান করা।'

'তারপর কি?'

'তারপর তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো সে এই ধারণা কোথায় পেয়েছে। তখন জানালো সে একটা গাছ হয়ে গেছে।'

'আমার তার সাথে আবার কথা বলতে হবে দেখছি।' ডক্টর বলল, 'সে বাহিনী ছেড়ে দেবার আবেদন করেছে? এর জন্য কি কারণ দেখিয়েছে?'

'সেই একই। যেহেতু সে গাছ। তাই তার আর সৈনিক হবার ইচ্ছা নেই। এখন সে সূর্যের নীচে বসে আলো খাবে। আমার জীবনে এমন গাধা টাইপ কথা কখনো শুনিনি!'

'আচ্ছা ঠিক আছে। আমি বরং রাতের খাবারের পর ওর বাসায় গিয়ে দেখা করবো।'

'দেখো কি করতে পারো।' কমান্ডার কক্স গম্ভীরভাবে বললেন। 'জীবনে কে কোনদিন শুনেছে মানুষ গাছ হয়ে যায়! আমরা এ কথা ওকে বলার পর এমন ভাবে হেসেছে যেন উলটো আমরাই বোকা।'

'আমি কিভাবে কি করছি আপনাকে পরে জানাবো।'ডক্টর লাইন কেটে দিলেন।

♣♣

সন্ধ্যা ছয়টার মত বাজে। হ্যারিস ধীরলয়ে হলওয়ে ধরে হাঁটছে। একটা অস্পষ্ট ধারণা তাঁর মাথায় ঘুরছে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছে না। হলওয়ের শেষ মাথায় ডান দিকে ঘুরেই সে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো।

একটা রোবটের কাছ থেকে কর্পোরালের রুমটা খুঁজে পাওয়া গেল। এস্টেরয়েড Y-3 সম্প্রতিই সেনাঘাটিতে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মহাকাশ থেকে আসা সব যান এখানে পরিক্ষা করে দেখা হয় কোন সংক্রামক রোগজীবাণু কিংবা মহাজাগতিক অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু এর সাথে এসেছে কি না। বর্তমানে মানুষের বসবাসরত নয়টি গ্রহের ভিতর এটিই সবচেয়ে সুন্দরভাবে গাছপালা আর লেক দিয়ে সাজানো।

ওয়েস্টার্বার্গের ঘরে সহজ সরল চেহারার একটি ছেলে ডক্টর হ্যারিসকে অভ্যর্থনা জানালো। ওয়েস্টার্বার্গের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলল, 'উনি ঘুমাচ্ছেন।'
'কিছু মনে না করলে আমি কি ওকে জাগাতে পারি?' ডক্টর হ্যারিস কথা বলতে বলতে ঘরের ভিতর উঁকি দিলেন। চমৎকার গোছালো ঘর। ভেতরে টেবিল, মেঝেতে ম্যাট বিছানো। আর রয়েছে দুটো বাঙ্কার। এরই একটাতে সে ঘুমিয়ে আছে।

বোকা সোকা চেহারার ছেলেটি বলল, 'স্যার, আমার মনে হয় না চাইলেও তাকে জাগাতে পারবেন।'

'কেন?'

'সূর্য ডোবার পর কর্পোরাল ওয়েস্টারবার্গকে জাগানো অসম্ভব।'

'ক্যাটালেপ্টিক?'

'কিন্তু সূর্য ওঠার সাথে সে জেগে ওঠে। তারপর তড়িঘড়ি করে বাইরে গিয়ে সারাদিন রোদের ভিতর কাটায়।'

'ও আচ্ছা।' ডক্টর বললেন, 'আমি যা ভেবেছিলাম বিষয়টা দেখি তার চেয়েও ঘোলাটে। যাই হোক। ধন্যবাদ তোমাকে।' তারপর হ্যারিস নিজ পথে বেরিয়ে পড়লেন।

***

মেঘমুক্ত রোদেলা দিনে চমৎকার বাতাস বইছে খাঁড়ির তীরে সিডার গাছগুলোর উপর দিয়ে। খাড়ির উপরেই একটা ব্রীজের উপর জন কয়েক রোগী দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ভিতর ওয়েস্টারবার্গকে খুঁজে পেতে ডক্টরের খুব বেগ পেতে হলো না। সে অন্যান্যদের থেকে আলাদা। খাঁড়ির তীরে একটা ধূসর পাথরে বসে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা ঈষৎ হা করে আছে, চোখ বন্ধ।হ্যারিস পুরোপুরি কাছে না যাওয়া পর্যন্ত সে তাকে লক্ষই করলো না।

'কি খবর?'

ওয়েস্টার্বার্গ চোখ খুলল। ওনাকে দেখে হাসিমুখে ধীর লয়ে উঠে দাঁড়ালো।' এই তো ডক্টর, 'আপনি এখানে কি কাজে?'

'তেমন কিছু না। ভাবলাম কিছুক্ষণ সূর্যের আলো খেলে কেমন হয়।'

'আমার পাথরটা তাহলে ভাগাভাগি করতে পারি।' সে সরে গিয়ে বসার জন্য জায়গা করে দিলো। সাবধানে সেখানে বসে ডক্টর একটা সিগারেট ধরিয়ে পানির স্রোত দেখতে লাগলেন। আর ওদিকে ওয়েস্টারবার্গ আবার তার অদ্ভুত অবস্থায় ফিরে গেল। পিছনে নিজের হাতে হেলান দেওয়া।চোখ বন্ধ। মুখ উপরের দিকে।

'চমৎকার দিন।'

'হুম।'

'তুমি কি এখানে প্রতিদিনই আসো?'

'জি।'

'ভিতরের থেকে বাইরে থাকতেই তোমার বেশি ভো লাগে?'

'আমি ভেতরে থাকতে পারি না।'

'পারি না মানে ঠিক বুঝাতে চাইছো?'

'বাতাস ছাড়া আপনি নিশ্চয়ই বাঁচবেন না,তাই না?'

'আর সূর্যের আলো ছাড়া তুমি বাঁচবে না?'

ওয়েস্টারবার্গ মাথা নেড়ে সায় জানালো।

'কর্পোরাল তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারি? তোমার জীবনে আর কিছু কি করার ইচ্ছা নেই? সারা জীবন এই পাথরের উপর বসে কাঁটিয়ে দিতে চাও?'

সে আবারো মাথা নাড়লো।

'তোমার চাকরির কি হবে?তুমি সৈনিক হওয়ার জন্য অনেক খেটেছো।তোমাকে ভালো পদ এবং একটা প্রথম শ্রেণীর জীবন দেওয়া হয়েছিলো।এসব কিছুই ছেড়ে দিতে চাও? তুমি নিশ্চয়ই জানো এগুলো চাইলেও আর ফিরে পাওয়া সহজ হবে না?'

'আমি বুঝতে পারছি।'

'তাও তুমি ছেড়ে দিচ্ছো?'

'ঠিক তাই।'

হ্যারিস হঠাৎ চুপ করে গেলেন। সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলে ঘুরে বসলেন, 'ধরা যাক, তুমি চাকরি ছেড়ে সূর্যের আলো খেয়ে বেড়ালে। কিন্তু এরপর কি হবে? তোমার জায়গায় অন্য কেউ কাজ করবে,তাই না? কাজ তো থেমে থাকতে পারে না। তুমি না করলে অন্য কেউ করবে।'

'আমারো তাই মনে হয়।'

'আচ্ছা ওয়েস্টারবার্গ তাহলে মনে করো বাকি সবাই তোমার মতই চিন্তা করতে শুরু করলো? ধরো সবাই কাজ কর্ম বাদ দিয়ে সূর্যের নীচে বসে থাকতে শুরু করলো? তখন কি হবে? কেউ আর মহাকাশ থেকে আসা মহাকাশযানগুলো পরিক্ষা করবে না। ক্ষতিকর সংক্রামক রোগ জীবাণু আমাদের জগতে ঢুকে যাবে। হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হবে। একসময় মহামারী দেখা যাবে। ঠিক বলেছি কি না?'

'যদি সবাই আমার মতো ভাবে তাহলে আর কাউকে মহাকাশে যেতে হবে না।'

'কিন্তু না গেলে চলবে কিভাবে! তাঁদের তো নতুন খাদ্য, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এসব আনতেই হবে।'
'কেন?'

'সমাজকে সচল রাখতে।'

'কেন?'

'বেশ...'হ্যারিস হাত নেড়ে বলল, 'কারণ আমরা সমাজ ছাড়া বাঁচতে পারি না।তাই।'

ডক্টর হ্যারিস তাকিয়ে রইলেন জবাবের আশায়। কিন্তু ওয়েস্টারবার্গ চুপ করে রইলো। 'তোমার কি মনে হয়?'

'হয়তো এসবই স্বাভাবিকতার বিরুদ্ধে। এই যেমন ধরুন, আমি বছরের পর বছর কষ্ট করেছি প্রশিক্ষণ শেষ করার জন্য। আমাকে নিজের খরচ নিজের মেটাতে হয়েছে। এজন্য বাসন মেজেছি। রেস্টুরেন্টে কাজ করেছি। আবার রাতে পড়েছি। দিনের পর দিন এভাবে কাজ করে গেছি।এবং আজ আমি কি ভাবছি জানেন?'

'কি?'

'আমি আরো আগে কেন গাছ হলাম না।'

ডক্টর হ্যারিস দাঁড়িয়ে পড়লেন, 'ওয়েস্টারবার্গ তুমি যখন ভিতরে আসবে তখন আমার অফিসে একবার এসো। তোমাকে কিছু পরিক্ষা করাতে হবে।'

'শক বক্স? আমি অবশ্য জানতাম এরকম কিছু অপেক্ষা করছে। আমার কোন আপত্তি নেই।' ডক্টর কিছু দূর গিয়ে ফিরে তাকালেন, 'তিনটার দিকে কর্পোরাল?'
কর্পোরাল মাথা নাড়লো।

হ্যারিস হাসপাতালের দিকে হাঁটতে লাগলো। বিষয়টা এখন ওর কাছে আরো পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। একটি ছেলে যে কিনা সারা জীবন সংগ্রামের ভিতর কাটিয়েছে। একদিকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাব। অন্যদিকে আদর্শিক আকাঙ্ক্ষা হলো সৈনিক হওয়া। তারপরে সবশেষে যখন ঠিকই লক্ষ্যে পৌছালো, তখন আবিষ্কার করলো কাজটা তার জন্য বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এস্টেরয়েড Y-3 তে নিরপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চারিদিকে কেবল গহীন অরণ্য। সারাদিন ঐ একই দৃশ্য দেখতে হয়। এর বাইরে দেখার কিছু নেই। এই উদ্ভুত পরিস্থিতির এটাই ব্যাখ্যা হবে।

হ্যারিস বিল্ডিং এ প্রবেশের প্রায় সাথে সাথে একজন রোবট তাকে থামালো, 'স্যার,কমান্ডার কক্স ভিডফোনে আপনার সাথে দেখা করতে চান।'

'ধন্যবাদ।' হ্যারিস প্রায় ছুটে গেলেন তার অফিসে।কমান্ডারকে ফোন করার কিছুক্ষণ পর ওনার চেহারা ত্রিমাত্রিক ছবিতে ভেসে উঠলো।

'কক্স,আমি হ্যারিস বলছি। আমি ছেলেটার সাথে কথা বলেছি। আমি এখন সবকিছু ধরতে পারছি। আমি নকশাটা বুঝতে পেরেছি। আসলে দীর্ঘ সময়ের চাপ। তারপর সবশেষে জীবনের স্বপ্ন পূরণ। কিন্তু তার পর পরই কল্পনার সাথে বাস্তবের বিভেদের কারণে স্বপ্নভঙ্গ, এসব কারণে...'

'হ্যারিস। আরে থামো তো। শোনো কি বলছি। Y-3 থেকে রিপোর্ট এসেছে আমার কাছে। তারা এখানে এক্সপ্রেস রকেট পাঠাচ্ছে। সত্যি বলতে এটা ইতোমধ্যে যাত্রা শুরু দিয়েছে।'

'এক্সপ্রেস রকেট?'

'আরো পাঁচটা নতুন কেস। সবাই ওয়েস্টারবার্গের মত দাবি করছে তারা গাছ হয়ে গেছে। সেনাঘাটির প্রধান চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তিনি অবশ্যই এসবের কারণ বের করতে বলেছেন। তা নাহলে সেনাঘাটি টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়বে। তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো? হ্যারিস আমি বলছি তুমি এর কারণ খুঁজে বের করো।'

ডক্টর হ্যারিস বিড় বিড় করে বললেন-'জি স্যার,জি স্যার।'

সপ্তাহান্তে হ্যারিসের হাতে আরো বিশটার মত কেস আসলো। অনিবার্যভাবে সবাই এস্টেরয়েড Y-3 এর।

♣♣

কমান্ডার কক্স এবং ডক্টর হ্যারিস পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। দৃষ্টি নীচে প্রবাহমান খাঁড়ির দিকে। খাঁড়ির তীরেই ১৬ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী সূর্যের আলোতে বসে আছেন। কমান্ডার কক্স এবং ডক্টর হ্যারিস এক ঘন্টা ধরে এখানে আছেন। এ সময়ের ভিতরে এদের একজনও নড়াচড়া করেনি বা কথা বলেনি।

'আমি বুঝতে পারছি না।' মাথা নাড়তে নাড়তে কমান্ডার বললেন, 'কিছুতেই বুঝতে পারছি না। হ্যারিস, এটাই কি শেষের শুরু? এভাবেই কি সবকিছু ভেঙ্গে পড়তে শুরু করবে? এই মানুষগুলোকে দেখে আমার অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।'

'ওই লাল চুলের লোকটি কে?'

'ওটা উরিখ ডাস। সে সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলো। আর এখন দেখো! রোদের ভিতর চোখ বুজে মুখ হা করে ঝিমুচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেই লোকটা স্রেফ উপরে উঠছিলো। সেনাঘাটির প্রধান অবসরে গেলে তারই ক্ষমতা গ্রহণের কথা ছিলো। হয়তো সর্বোচ্চ আর একটা বছর অপেক্ষা করতে হতো। সারা জীবন সে পরিশ্রম করেছে এই অবস্থানে আসতে।'

'আর এখন সে রোদ পোহাচ্ছে।' হ্যারিস কমান্ডারের বক্তব্যের সমাপ্তিটা বলে দিলেন।

'ওই যে ছোটো করে ছাটা কালো চুলের মেয়েটা। খুবই ক্যারিয়ার সচেতন ছিলো। পুরো ঘাটির স্টাফদের প্রধান ছিলো সে। ওর পাশের ছেলেটি তত্ত্ববধানের দায়িত্বে ছিলো। আর ওই যে দেখছেন সুন্দর দেখতে মেয়েটি। সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করতো। মাত্রই স্কুল শেষ করেছে। সব ধরণের মানুষ এখানে জড়ো হয়েছে। আজ আরো তিনজন আসছে বলে খবর পেয়েছি।'

হ্যারিস মাথা নেড়ে বলল, 'সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো — এই মানুষগুলো সবকিছু বুঝে শুনেই করছে। এরা ভিন্ন ভিন্ন কিছু করতে পারতো। কিন্তু তা না করে সবাই একই সাথে একই রকম আচরণ করছে।'

'তাহলে?' কক্স বললেন, 'তুমি কি কিছু বের করতে পারলে? আমরা তোমার উপর নির্ভর করে আছি।'

'আমি সরাসরি ওদের থেকে কিছু বের করতে পারিনি। তবে শক বক্স থেকে কিছু কৌতূহলজনক তথ্য পেয়েছি।চলুন, আপনাকে দেখাই।'

'তাই ভালো। চলো যাওয়া যাক।' কক্স আর হ্যারিস হাসপাতালের উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করলেন।' আপনি যেটাই পেয়ে থাকুন আমাকে জানান। বিষয়টা এখন মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন বুঝতে পারছি তিবেরিয়াসরা কেমন বোধ করেছিলো যখন ক্রিশ্চিয়ানিটি তাদের সামনে এসে হাজির হয়েছিলো।'

হ্যারিস ঘরের আলো নিভিয়ে দিতেই সবকিছু পিচকালো অন্ধকারে ঢেকে গেল। 'আমি প্রথম রিলটা চালু করছি। সাবজেক্ট সেনানিবাসের অন্যতম সেরা জীববিজ্ঞানী।রবার্ট ব্রাড শ। গতকাল সে এখানে এসেছে। তার কাছ থেকে ভালো কিছু তথ্য জানা গেছে।'

রিল চালু হতে দেওয়ালের উপর একটা ত্রিমাত্রিক ছবি দেখা গেল। এতটা বাস্তব মনে হচ্ছে যেন একটা আসল মানুষই বসে আছে সামনে। রবার্ট ব্রাড শ এর বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। ধূসর চুল। চৌকোনা চোয়ালের সাথে ভারি শারীরিক গঠন। চেয়ারের হাতলে হাত রেখে শান্ত ভঙ্গীতে বসে আছে। ঘাড়ে এবং কব্জিতে লাগানো ইলেক্ট্রোড সম্পর্কে সম্পূর্ণই উদাসীন।

'মি: ব্রাড শ। এটা আপনার কোন ক্ষতি করবে না।কিন্ত আমাদের বেশ বড় উপকার করবে।'

শক্ত দেহপেশী আর দৃঢ় চোয়াল ছাড়া তার আর কোন ভাবান্তর দেখা গেল না। হ্যারিসের প্রতিচ্ছায়া তাঁকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলেন।

'আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন মি: ব্রাড শ?' হ্যারিস প্রশ্ন করলেন।

'হ্যাঁ'

'আপনার নাম?'

'রবার্ট সি ব্রাড শ।'

'আপনার পদমর্যাদা?'

'প্রধান জীববিজ্ঞানী,পরিক্ষা কেন্দ্র Y-3।'

'আপনি কি এখন সেখানে আছেন?'

'আমি টেরাতে ফিরে এসেছি।এই মুহুর্তে হাসপাতালে বসে আছি।'

'কেন?'

'কারণ আমি সেনাঘাটির প্রধানকে বলেছিলাম আমি একজন গাছ।'

'এটা কি সত্যি যে আপনি একজন গাছ?'

'অজৈব বিজ্ঞান অর্থে হ্যাঁ।যদিও শারীরিক ভাবে আমি এখনো মানুষ।'

'তাহলে আপনি গাছ বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছেন?'

'আমি বুঝিয়েছি আচরণগত প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে, জীবন দর্শনের দিক দিয়ে আমরা গাছ।'

'বলতে থাকুন।'

'উষ্ণ রক্তের উন্নত প্রাণীদের পক্ষে, কিছু ক্ষেত্রে গাছের শারীরিক গঠন গ্রহণ করা সম্ভব।'

'তাই?'

'আমি এই তত্ত্বে বিশ্বাসী।'

'আর অন্যরা? তাঁদেরও কি একই বক্তব্য?'

'হ্যাঁ।'

'আপনাদের এই গ্রহণ করার ঘটনা কিভাবে শুরু হলো?'

এই পর্যায়ে ব্রাড শ এর প্রতিচ্ছবিকে দ্বিধাগ্রস্থ দেখালো।তার ঠোট কাঁপতে লাগলো।'দেখেছেন?' হ্যারিস কক্সকে বললেন। 'দৃঢ় অন্তরকোন্দল। যদি তার সম্পূর্ণ চেতনা থাকতো তাহলে এভাবে থেমে যেত না।'

'আমি...'

'বলুন।'

'আমাকে গাছ হতে শেখানো হয়েছে।'

হ্যারিসের প্রতিচ্ছবিকে একইসাথে বিস্মিত ও কৌতূহলী হতে দেখা গেল। 'আপনাকে শেখানো হয়েছে বলতে কি বলতে চাইছেন?'
'তারা আমার সমস্যা শুনেছে।তারপর আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে গাছ হওয়া যায়। এখন আমি সমস্যা হতে মুক্ত।'

'কারা? কারা শিখিয়েছে?'

'বাঁশিওয়ালা।'

'কারা বললেন! বাঁশিওয়ালা?এরা আবার কোত্থেকে থেকে এলো?'

তারপর দীর্ঘ অস্বস্তিকর বিরতির পর গুরুগম্ভীর ঠোঁটগুলো নড়ে উঠলো, 'এরা গাছেদের আড়ালে থাকে।'

হ্যারিস প্রজেক্টর বন্ধ করে বাতি জ্বালিয়ে দিলেন। হঠাৎ আলোতে চোখ পিট পিট করতে করতে বললেন, 'এতটুকুই জোগাড় করতে পেরেছি। কিন্তু সত্যি বলতে এইটুকু জানতেই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। ওনারও কিছু বলার কথা ছিলো না। ওদের সবাইকে এমনই প্রতিজ্ঞা করানো হয়েছে যে কেউ যেন বাশিওয়ালাদের কথা না বলে।'

'তুমি এই গাঁজাখুরি গল্প বিশ জনের কাছ থেকেই পেয়েছো?'

'না।' হ্যারিস ব্যাজার মুখে বলল, 'বেশিরভাগই এত সহজে কথা বলতে চায়নি। অনেকের কাছে এত দূর পর্যন্তও আসতে পারিনি।'

কক্স বিষয়টা অনুভব করতে পারলেন। 'ঠিক আছে। তাহলে বাশিওয়ালা...হুম। তো এখন কি করতে বলো?পুরো ঘটনা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাও?'

'না।' হ্যারিস বলল, 'একদমই না। আমি Y-3 তে যাচ্ছি নিজে এই বাশিওয়ালাদের খুঁজে বের করতে।'

♣♣

ছোট পর্যবেক্ষণ মহাকাশযানটা সাবধানতার সাথে মাটিতে অবতরণ করলো। জেট ইঞ্জিনটা শেষ কয়েকবারের জন্য ধুঁকতে ধুঁকতে একসময় নীরব হয়ে গেল। ঢাকনা সরে যেতেই হ্যানরি হ্যারিস তার সামনে রোদে পোড়া ধূসর মাঠ আবিষ্কার করলেন। মাঠের শেষে লম্বা সিগন্যাল টাওয়ার। মাঠের চারিদিকে লম্বা লম্বা ধূসর বাড়ি। সেনাঘাটির নিজস্ব পরিক্ষা কেন্দ্র এগুলো। অদূরে বিশাল দৈত্যসম সবুজ রঙের ভেনুসিয়ান ক্রুজার দাঁড়িয়ে আছে। কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা পরিক্ষা করছে কোন জীবনঘাতি জীবাণু দ্বারা জাহাজের কাঠামো সংক্রমিত কি না।'

'সব ঠিক আছে স্যার।' চালক বলল। হ্যারিস মাথা নেড়ে নিজের দুইটা স্যুটকেস বগলে নিয়ে সাবধানে নেমে পড়লেন। প্রখর সূর্যের তাপে চোখ খোলা দায়। পায়ের নিচে উত্তপ্ত মাটি। জুপিটার সূর্যের আলোকে রীতিমত প্রতিফলিত করে এই গ্রহাণুর উপর ফেলেছে। হ্যারিস মাঠের ভিতর হাটতে শুরু করলেন। একজন সাহায্যকারী ইতোমধ্যে মহাকাশযানের গুদাম ঘর থেকে তার জিনিসপত্র নামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাক্সপেটরাগুলো অপেক্ষমান মালগাড়িতে উঠিয়ে দক্ষতার সাথে সেটা চালিয়ে হ্যারিসের পিছু পিছু আসতে লাগলো। সিগন্যাল টাওয়ারের প্রবেশমুখে পৌছবার পর দরজা খুলে গেলো। একজন বড় এবং বলিষ্ঠ দেহের বৃদ্ধ লোক এগিয়ে এলেন।তার মাথা ভর্তি সাদা চুল, শান্ত চলার গতি।

'কেমন আছেন ডক্টর হ্যারিস?' হাত বাড়িয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন তিনি। 'আমি লরেন্স ওয়াটস, সেনাঘাটির প্রধান।'

তারা দুজনে হাত মেলালেন। ওয়াটসের মুখে আন্তরিক হাসি। এত বড় দেহের একজন বয়স্ক মানুষ হয়েও ভদ্রলোক এখনো সটান এবং কালো ইউনিফর্মে রাজসিক অবস্থায় আছেন। কাঁধে সোনালি সেনাস্বারকগুলো জ্বলজ্বল করছে।

'ভ্রমণ ভালো হয়েছে আশা করি?' ওয়াটস জিজ্ঞেস করলেন। 'চলুন ভিতরে আপনার জন্য পান করার কোন ব্যবস্থা করা যাক। এখানে এখন গরম পড়া শুরু করবে।উপরের অত বড় আয়নার কারণে।'

'জুপিটার গ্রহের কথা বলছেন?'

সিগন্যাল টাওয়ারের ভিতর অন্ধকার ও ঠান্ডা।
আরামদায়ক পরিত্রাণ।

'এখানকার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি টেরার সমান কেন? আমি ভেবেছিলাম ক্যাঙ্গারুর মত লাফিয়ে চলতে হবে। এটা কি কৃত্রিম?'

'না। এখানে কোন ধাতব পদার্থের কেন্দ্র আছে। যার কারণে এতগুলো গ্রহাণুর ভিতর এই গ্রহাণুটাই বেছে নিয়েছি। এতে অবকাঠামোগত সুবিধা হয়েছে। আবার এই কারণেই এখানে প্রাকৃতিকভাবে বাতাস এবং পানি পাওয়া যায়। আপনি কি পাহাড়গুলো দেখেছেন?'

'পাহাড়?'

'টাওয়ারের মাথায় উঠলে বাড়িগুলোর উপর দিয়ে ওদের দেখা যায়। ওদিকে একটা প্রাকৃতিক বন মত আছে। আকারে তেমন বড় নয়। আপনি যা যা চাইতে পারেন তার সবই ওখানে পাবেন।'

'আসুন। এটাই আমার অফিস।' বৃদ্ধ মানুষটি একটা বড় গোছালো ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। 'সুন্দর না?আমার শেষ বছরটা যতটা সম্ভব প্রীতিকরভাবে যেন শেষ হয় সেটাই চেষ্টা করে যাচ্ছি।' তিনি ভ্রু কুঁচকালেন। 'অবশ্যই ডাস চলে যাওয়ার পর হয়তো এখানেই আমাকে সারা জীবন কাটাতে হতে পারে। আহ,বেশ।' তিনি কাঁধ ঝাঁকালেন। 'আপনি বসুন, ডক্টর হ্যারিস।'

ধন্যবাদ জানিয়ে হ্যারিস একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে পা ছড়িয়ে দিলেন। ওয়াটস দরজা বন্ধ করে ফিরে আসতেই জিজ্ঞেস করলেন, 'নতুন কোন কেস চিফ?'

'আজ আরো দুজন, সব মিলিয়ে ত্রিশ জন। সর্বোমোট আমাদের তিন শ জন লোক আছে। এই হারে চলতে থাকলে...'

ওয়াটসের কথার মাঝেই হ্যারিস আচমকা বলে বসলেন, 'চিফ, আপনি একটা বনের কথা বলেছিলেন তখন। আপনার কর্মীদের কি সেখানে স্বেচ্ছায় যেতে অনুমতি দেন?'

♣♣

ওয়াটস চোয়ালে হাত ঘষতে ঘষতে বললেন, 'এখানকার পরিস্থিতি বেশ জটিল। আমাকে মাঝে মধ্যে ছেলেদের বাইরে যেতে দিতেই হয়। তারা বাড়ি থেকেও জঙ্গল দেখতে পায়। কাজের চাপ দূরে করে মনে প্রশান্তি আনার জন্য চমৎকার একটা জায়গা। প্রতি দশ দিন পর পর ছেলেরা সারা দিনের জন্য ছুটি পায়। তখন নিজেদের মত করে বাইরে ঘুরে বেড়ায়।'

'আর তারপরেই এই ঘটনা ঘটে?'

'আমার মনে হয় সেটাই। কিন্তু যত দিন পর্যন্ত বনটা এদের চোখের সামনে আছে এরা সেখানে যাবেই। আমি তাদের বাধা দিতে পারি না।'

'আমি বুঝতে পারছি। আমি এজন্য আপনাকে কোন দোষারোপ করছি না। আচ্ছা আপনার কি মনে হয়?ওখানে গেলে ওদের কি হতে পারে? কেন এরা পরিবর্তিত হয়ে যায়?'

'কি হতে পারে! এরা যখনই অবসর পায়, একটু বাইরের জগতের সাথে মিশে, তারপর আর কাজ করতে চায় না।এটাই হয়। ফালতু কাজে সময় আর অর্থ অপচয় করে জীবন কাটিয়ে দিতে চায়।'

'তাহলে তাদের এই মতিবিভ্রমের পিছনে যুক্তি কি?'

ওয়াটস দিল খোলা হাসিতে ফেটে পড়লেন, 'শুনুন হ্যারিস, আপনিও জানেন এগুলো বানিয়ে বানিয়ে বলা গল্প কথা ছাড়া অন্য কিছু না। কাজ ছাড়ার একটা অজুহাত তৈরি করেছে এই যা। আমরা ক্যাডেট থাকাকালীন মানুষের কাছ থেকে কাজ আদায়ের কিছু কৌশল ছিলো। যদি এদের পিঠের উপর এরকম কিছু দিতে পারতাম সবকটা সোজা হয়ে যেত।'

'তারমানে আপনার মতে এগুলো কেবল লোক দেখানো?'

'আপনার কি তাই মনে হয় না?'

'না।' হ্যারিস বললেন। 'আমি তাদের শক বক্সের ভিতর পাঠিয়েছি। সম্পূর্ন অসাড় অনুভূতিতেও তারা বার বার একই বক্তব্য বলে গেছে। এমনকি আরো বেশি কিছু।'

কমান্ডার ওয়াটস মাথার পিছনে হাত বেধে সামনে পিছনে দুলতে লাগলেন, 'হ্যারিস আপনি একজন ডক্টর। আমার বিশ্বাস আপনার নিশ্চয় নিজের বক্তব্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি বিবেচনা করুন। এটা একটি সেনা ঘাটি এবং পুরো ব্যবস্থার ভিতর সবচেয়ে আধুনিক ও উচু মানের। এখানে বর্তমান বিজ্ঞানের সমস্ত ডিভাইস এবং গ্যাজেট আছে। সমস্ত সেনাঘাটিকে আপনি একটা বিশাল একক যন্ত্রের সাথে তুলনা করতে পারেন। এখানকার প্রতিটা মানুষ এই যন্ত্রের এক একটা যন্ত্রাংশ। সবার নির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে। দেখুন এখানে কাউকে ছাড়া কোন কাজ চলবে না। যদিও মাত্র ত্রিশজন মানুষ অসুস্থ হয়েছে, পুরো সেনাঘাটির দশ ভাগের এক ভাগ। কিন্তু তারপরও এই ত্রিশজনকে ছাড়া আমি কাজ করতে পারবো না। এই সেনাঘাটি এভাবেই তৈরি করা হয়েছে। আর এটা এখানকার সবাই জানে। একবার এখানে যোগ দেওয়ার পর আমরা ইচ্ছা করলে কাজ ফেলে বাইরে রোদ খেতে পারি না। এটা করলে বাকি সবার প্রতি অন্যায় করা হবে।'

হ্যারিস গম্ভীর ভাবে মাথা নাড়লো। 'চিফ, আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি?'

'করুন।'

'এই গ্রহাণুতে কি কোন নিজস্ব বাসিন্দা আছে?'

'নেটিভদের কথা বলছেন?' ওয়াটস কয়েকমুহূর্ত ভাবলেন,'কিছু আদিম বাসিন্দা ছিলো।' তিনি অস্পষ্টভাবে জানালার বাইরের দিকে হাত নেড়ে দেখালেন।

'ওরা দেখতে কেমন?আপনি কখনো দেখেছেন?'

'প্রথমবার আসার পর এক দুবার দেখেছিলাম। ওরা আশেপাশে ঘুর ঘুর করতো। আমাদের দেখতো। পরে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।'

'হারিয়ে গেল বলতে? মরে গেছে না কি চলে গেছে?'

'নাহ! ওই বনে জঙ্গলেই কোথাও আছে হয়তো।'

'ওরা দেখতে কেমন?'

'বেশ, বলা হয়ে থাকে ওরা মূলত মঙ্গল গ্রহ থেকে আগত। কিন্তু দেখতে মঙ্গলিয়ানদের সাথে কোন মিল নেই। তামাটে গায়ের বর্ণ, খুবই সরু দেহ। কিন্তু বেশ ক্ষিপ্র। মূলত মাছ শিকার করে। কোন লিখিত ভাষা নেই। এটুকুই। আমরা ওদের নিয়ে তেমন মাথা ঘামাইনি কখনো।'

'আচ্ছা।' হ্যারিস বললেন। 'চিফ,আপনি কি কখনো 'বাঁশিওয়ালাদের' ব্যাপারে কিছু শুনেছেন?'

'বাঁশিওয়ালা?নাহ — এরা কারা?'

'আমিও জানি না। আমি তো ভেবেছিলাম আপনি জানতে পারেন। আমার প্রথম অনুমান ছিলো এখানকার আদিবাসিরা হবে হয়তো। কিন্তু আপনার বর্ণনা শুনে এখন নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছি না। আদিবাসিরা প্রাচীন বর্বর জাতি। এদের কাউকে শেখানোর মত কিছু নেই। বিশেষত একজন উচ্চ শিক্ষিত জীববিজ্ঞানীকে।'

হ্যারিস ইতস্তত করে বললেন, 'আমি ওই বনে যেতে চাই।অনুমতি পাওয়া যাবে?'

'নিশ্চয়ই। আমি একজন সৈনিককে আপনার সাথে দিয়ে দেবো। সে আপনাকে সবকিছু ঘুরে দেখাবে।'

'আমি একা যেতে চাচ্ছি। কোন বিপদের সম্ভাবনা আছে কি?'

'আমার জানা মতে নেই।যদি না...'

'বাঁশিওয়ালা!' হ্যারিস ওয়াটসের পরের শব্দটা বলে দিলেন।' এটা জানার জন্যই আমি একা যেতে চাই। একবার সুযোগ নিয়েই দেখি কি হয়।'

***
'আপনি নাক বরাবর সোজা হাঁটলে ছয় ঘন্টায় ঘাটিতে পৌছে যাবেন। এটা খুবই ছোট গ্রহাণু। পথে কিছু ঝর্ণা আর লেক পড়তে পারে। ওগুলোতে দেখে চলবেন।'

'কোন বিষাক্ত পোকামাকড় কিংবা সাপ?'

'এরকম কোন রিপোর্ট এখনো পাইনি। প্রথমদিকে আমরা বেশ কয়েকবার টহল দিয়েছি। আমরা কখনো এরকম কিছুর সম্মুখীন হইনি।'

'ধন্যবাদ চিফ। রাতের আগেই আপনার সাথে দেখা হবে।'

'শুভ কামনা রইলো।' করমর্দন শেষে ওয়াটস এবং তার দুজন সশস্ত্র রক্ষী ফিরে গেল। তাদের দিগন্তে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পর্যন্ত হ্যারিস অপেক্ষা করলেন। তারপর তিনিও উলটো দিকে হাটতে শুরু করলেন। একসময় নিজেও হারিয়ে গেলেন ছোট বনটাতে।

চারিদিকে নিস্তব্ধ গাছের সমারোহ। ইউক্যালিপটাসের মত ঘন সবুজ রঙের বিশাল বিশাল গাছগুলো ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। অসংখ্য মরা পাতার দেহাবশেষ জমার কারণে পায়ের নীচের মাটি বেশ নরম।
একসময় ঘন বন পার হয়ে হ্যারিস একটা শুষ্ক খোলা যায়গায় হাজির হলেন। এখানে সূর্যের তাপে ঘাস আর গুল্ম পুড়ে গেছে। শুকনো আগাছার স্তুপ থেকে পোকা উড়ে বেড়াচ্ছে।

জায়গাটার শেষ হয়েছে একটি পাহাড়ের পাদদেশে। হ্যারিস এখন সেটা বেয়েই উপরে উঠছে ওর চোখের সামনে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বুনো সবুজ গোলাপ ছড়িয়ে আছে।

হ্যারিস অবশেষে হামাগুড়ি দিয়ে চূড়ায় পৌছালেন। জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলেন। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর আবার যাত্রা শুরু করলেন।

এবার তিনি পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামছেন। পাহাড়ের এ পাশে সংকীর্ণ গিরিখাদ। গিরিখাদের তলানিতে সুবিশাল ফার্ণ পুরো মাটি ঢেকে রেখেছে। হ্যারিস যেন প্রাগৈতিহাসিক বনে প্রবেশ করছেন। এখানকার বাতাস বনের অন্য অংশের তুলনায় ঠান্ডা। মাটি অনেকটাই সিক্ত।

তিনি একটা সমতল ভূমিতে পৌছালেন। কিছুটা অন্ধকার, ঘন নিশ্চল ফার্ণ এজন্য দায়ী। সামনে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি পথ,একটা পুরাতন ঝর্ণার প্রবাহপথ। একটু অসমতল আর পাথুরে।কিন্তু সহজে অনুসরণযোগ্য। বাতাস ধীরে ধীরে ভারি হয়ে উঠছে।

ফার্ণের জঙ্গল শেষে হ্যারিস পরবর্তী পাহাড় দেখতে পেলেন। এই পাহাড়ের গায়ে সবুজ মাঠ দেখা যাচ্ছে।
ঝর্ণার পথ হ্যারিসকে ধূসরের পাথর ছড়ানো ছোট জলাশয়ে নিয়ে ফেলল। একসময় হয়তো এখানে ঝর্ণার পানি এসে জমা হতো। ওখানে পাথরের উপর বসে হ্যারিস হাঁপাতে লাগলেন।

এখন পর্যন্ত ভাগ্য ওর সহায় হয়নি। গ্রহাণুটা ছোট হতে পারে। কিন্তু এখনো এখানকার আদিবাসিদের কোন চিহ্নও চোখে পড়েনি। আসলে হ্যারিস ওদের কাছ থেকেই এই বাশিওয়ালাদের অস্তিত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চাচ্ছে। কিন্তু হ্যারিসের পরিকল্পনায় এখন পর্যন্ত কোন লাভ হয়নি। এই ছোট গ্রহাণুতে নিশ্চয়ই আদিবাসি ঘর বা এ জাতীয় কিছু থাকা উচিত। হ্যারিস চারিদিকে তাকালো।ধীরে বয়ে চলা ঠান্ডা বাতাস ছাড়া আর কিছু নড়ছে না। আশা করা যায় রাত নামার আগেই কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে।

♣♣

হ্যারিস পাথরগুলো অনুসরণ করে এগিয়ে চললেন। সামনে শুধু সারি সারি ধূসর পাথর। হঠাৎ তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন। দূরে কোথাও পানি পড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে সামনেই কোন সচল পানির উৎস আছে? হ্যারিস দ্রুত চলতে লাগলেন। চারিদিকের নিস্তব্ধতার মাঝে পানির শব্দ ছাড়া আর কিছু ওর কানে ঢুকছে না। পানি উৎস পেলেই নিশ্চয়ই এর ধারে কাছে আদিবাসীদের দেখা পাওয়া যাবে।

বিশাল ধূসর পাথরের খাঁজে পানি জমে আছে। ভাইন আর ফার্ণ ওটাকে ঘিরে রেখেছে। পরিষ্কার টলটলা পানি দূরের প্রান্তে ঝর্ণা হিসেবে নেমে যাচ্ছে। হ্যারিস মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছেন। সম্ভবত গ্রহাণু সৃষ্টির শুরু থেকে এই ঝর্ণার অস্তীত্ব বিরাজ করছে। কিন্তু এখনো অবিকৃত অবস্থায় আছে। তারমানে হ্যারিস সম্ভবত প্রথম মানুষ যে এটা খুঁজে পেয়েছে। হ্যারিস মন্ত্রমুগ্ধের মত পানির দিকে এগিয়ে গেলেন। নিজের কাছেই মনে হচ্ছে এই স্বর্গীয় জলাশয়ের মালিক বলে মনে হচ্ছে। ঠিক তখনই উনি মেয়েটিকে দেখতে পেলেন।

মেয়েটি জলাশয়ের অন্য প্রান্তে বসে ছিলো। ভাঁজ করা এক হাটুতে মুখ রেখে পানির দিকে তাকিয়ে ছিলো। মেয়েটি রূপবতী,খুবই রূপবতী। তার তামাটে গায়ের রঙ,লতার মত দেহ। কাধ বেয়ে নেমে এসেছে লম্বা চুল। নগ্ন শরীরে রৌদ্রের আলো পড়ে যেন সোনার রঙের মত জ্বল জ্বল করছে।

মেয়েটি তাকে লক্ষ করেনি। হ্যারিস একরকম নিশ্বাস চেপে রেখে মেয়েটিকে দেখতে লাগলো।

সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। সত্যি বলতে সময় আসলে ওখানেই আটকে গেছে! এই সময়ের মধ্যে মেয়েটি একবারের জন্যেও নড়েনি। পুরো দৃশ্যপটটা যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি। যেন সেও বনের নিথর নিস্তব্ধতার একটা অংশ।

হঠাৎই মেয়েটি সরাসরি হ্যারিসের দিকে তাকালো। হ্যারিস এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। বুঝতে পারলো ও এখানে অনধিকার প্রবেশ করেছে। তাই ভদ্রতা করে পিছনে সরে গিয়ে বললেন, 'আমি দুঃখিত। আমি সেনাঘাটি থেকে এসেছি। আমি এখানে বিরক্ত করতে আসিনি।'

মেয়েটি কথা না বলে কেবল মাথা ঝাকালো।

'আপনি কিছু মনে করেননি?'

'না।' মেয়েটি উত্তর দিলো।

মেয়েটি তাহলে টেরান ভাষা জানে! এবার হ্যারিস কিছুটা কাছে এগিয়ে এলো, 'আশা করি আমার ব্যবহারে কিছু মনে করবেন না। আমি এই গ্রহাণুতে বেশিক্ষণ থাকবো না। আর এটাই আমার এখানে প্রথমদিন।'

মেয়েটি মৃদু হাসলো।

'আমিবহ্যানরি হ্যারিস, পেশায় ডাক্তার। আপনি নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে আমি এখানে কেন এসেছি।'

হেনরি থামলো। 'আপনি বোধহয় আমাকে সাহায্য করতে পারবেন। করবেন কি?'

মেয়েটি হেসে বলল, 'অবশ্যই।'

'কিছু মনে না করলে বসতে পারি?' আশেপাশে তাকিয়ে একটা সমতল পাথর খুঁজে নিলেন। ধীরে ধীরে বসতে বসতে বললেন, 'সিগারেট?'

'না।'

'বেশ,শুধু আমার জন্যই তবে।' একটা ধরিয়ে লম্বা টান দিয়ে হ্যারিস শুরু করলেন, 'দেখুন, আমাদের ঘাটিতে একটা সমস্যা দেখা গেছে ।সেখানকার লোকেরা কোন একটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং সেটা ছড়িয়ে পড়ছে। এর কারণ খুঁজে বের করতে না পারলে আমাদের পক্ষে ঘাটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।'

হ্যারিস মেয়েটির জবাবের জন্য অপেক্ষা করলো। সে কেবল মৃদু মাথা ঝাঁকালো। তার বাকি দেহ বনের ফার্ণের মতই স্থির!

'আমি তাদের কাছ থেকে কিছু অদ্ভুত তথ্য পেয়েছি। তারা দাবি করছে তাদের এই অবস্থার জন্য বাশিওয়ালা দায়ী।বাশিওয়ালা তাদের শিখিয়েছে...'

হ্যারিস থেমে গেলেন। তিনি মেয়েটির ছোট শ্যামবর্ণ মুখে একটা অদ্ভুত চাউনি ভেসে উঠতে দেখেছেন।'আপনি জানেন কে এই বাশিওয়ালা?'

মেয়েটি সম্মতিসূচক মাথা নোয়ালো।

হ্যারিসের মুখ জুড়ে একটা প্রবল সন্তুষ্টির ছাপ ফুটে উঠলো। 'আমি জানতাম বাশিওয়ালা বলে কিছু থাকলে আদিবাসিরা এ সম্পর্কে জানবেই। তার মানে আপনি বলছেন বাশিওয়ালার অস্তীত্ব আছে?'

'আছে।'

হ্যারিস ভ্রু কুঁচকে বললেন, 'এরা কি এখানে? মানে বনের ভিতর থাকে?'

'হ্যাঁ।'

'তাই,' হ্যারিস অস্থিরভাবে সিগারেটটা মাটিতে ফেলে দিলেন।ব'আপনি কোনভাবে আমাকে ওদের কাছে নিয়ে যেতে পারবেন?'

'নিয়ে যাবো!'

'হ্যাঁ। আমাকে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। দেখুন টেরার বেজ কমান্ডার আমাকে এই বাশিওয়ালাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিয়েছেন। সুতরাং আমার তাদের দেখা পাওয়া জরুরি। আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন?'

মেয়েটি আগের মত একইভাবে মাথা নাড়লো।

'তাহলে আমাকে নিয়ে যাবেন?'

দীর্ঘক্ষণ মেয়েটি নীরবে পানি দেখতে লাগলো। আগের মত এক হাটুতে মুখ রেখে। হ্যারিস সামনে পিছনে পাঁয়চারি করলো। এক পা ছেড়ে অন্য পায়ে ভর দিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলো।

তারপর অধৈর্য্য হয়ে বলল, 'কি হলো?বএটা পুরো সেনাঘাটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি এর বিনিময়ে কিছু দিতে পারি।' হ্যারিস পকেট হাতড়ে লাইটার বের করে বললেন, 'আমার লাইটারটা দিতে পারি।'

মেয়েটি খুবই ধীরে উঠে দাঁড়ালো। এত কমনীয়ভাবে, দৃশ্যত কোন পরিশ্রম ছাড়াই যে রীতিমত হ্যারিসের চোয়াল ঝুলে পড়লো। এতটা নমনীয় কিভাবে হতে পারে! যেন পিছলে গিয়ে একবারে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো!

'নিবেন?'

'আসুন আমার সাথে।' মেয়েটি ফার্ণের দিকে যেতে শুরু করলো।

'বেশ, আমি খুবই উত্তেজিত এই বাশিওয়ালাদের দেখার জন্য। আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আপনাদের গ্রামে? কতদূর এখান থেকে? রাত নামার আগে আমাদের কতক্ষণ সময় আছে?' হ্যারিস দ্রুত পাথরের উপর দিয়ে চলতে চলতে বলল।

মেয়েটি কোন জবাব দিলো। দ্রুত ফার্ণের সারির ভিতর ঢুকে গেল। হ্যারিসকে বেগ পেতে হচ্ছে তাকে দৃষ্টির ভিতর রাখতে। এত সহজে মেয়েটা এত দ্রুত এগোচ্ছে কি করে!

'আমার জন্য একটু অপেক্ষা করুন।'

মেয়েটি থামলো। পিছনে ঘুরে ওর আসার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। সুন্দর ও শান্ত ভঙ্গিতে।হ্যারিস তাড়াতাড়ি ফার্ণের ভিতর ঢুকে গেল।

♣♣


'ওরে বাপরে!' কমান্ডার কক্স বললেন, 'এত তাড়াতাড়ি সমাধান করে ফেললে!' তিনি এক লাফে দুটো ধাপ পার হচ্ছেন। 'আমাকে সাহায্য করতে দাও।'

হ্যারিস ওর স্যুটকেসগুলো টানতে টানতে একটা কাষ্ঠ হাসি দিলো, 'নাহ। দরকার হবে না।' তারপর সেগুলো মাটিতে রেখে একটা স্বস্তির শ্বাস ফেললেন।

'ওকে সাহায্য করো।' কমান্ডারের নির্দেশ পেয়ে একজন সৈনিক হ্যারিসের স্যুটকেসগুলো তুলে নিলো। তারপর তিনজনে হ্যারিসের কোয়ার্টারে প্রবেশ করলো।

'ধন্যবাদ।' অন্য স্যুটকেসটা ওটার পাশে রেখে হ্যারিস বললেন, 'অল্প সময়ের জন্যে হলেও ফিরে এসে ভালো লাগছে?'

'অল্প সময় মানে?'

'আমি এখানকার কাজ শেষ করতে এসেছি। আমাকে Y-3 তে কাল সকালে ফিরতে হবে।'

'তার মানে তুমি সমাধান করতে পারোনি?'

'আমি সমাধান বের করেছি। কিন্তু এখনো প্রতিকার করতে পারিনি। সেজন্যই আমাকে ফিরতে হবে। অনেক কাজ বাকী।'

'কিন্তু তুমি নিশ্চয়ই খুঁজে পেয়েছো এটা কি?'

'তা পেয়েছি। এটা লোকগুলো যা বলেছিলো তাইব— বাশিওয়ালা'
'তার মানে বাঁশিওয়ালার অস্তীত্ব আছে?'
'হ্যাঁ।' হ্যারিস মাথা নাড়ললেন। গায়ের কোটটা খুলে চেয়ারে ঝুলিয়ে রাখলেন। তারপর জানালা খুলে দিলেন। বসন্তের উষ্ণ হাওয়া ভিতরে হুড়মুড়িয়ে ঢুকলো। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে হ্যারিস বললেন, 'বাঁশিওয়ালাদের অস্তিত্ব সেনাঘাটির সকলের মনের ভিতরে। তাদের কাছে বাঁশিওয়ালা বাস্তব। আসলে এটা তাদেরই সৃষ্টি। অনেকটা গণ সম্মোহন বলা যেতে পারে। ওখানকার সবারই অল্প করে হলেও এটা আছে।'

'এটার শুরু হলো কিভাবে?'

'বেশ,Y-3 তে পাঠানো প্রতিটা মানুষ অত্যন্ত দক্ষ এবং ব্যতিক্রমী ক্ষমতাসম্পন্ন। তারা সারা জীবন একটা জটিল ও আধুনিক সমাজব্যবস্থা, নিয়ম নীতির ভিতর দিয়ে বড় হয়েছে। তাদের জীবনের একটা সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য ছিলো। তারা প্রত্যেকে স্বপ্ন দেখতো জীবনে বড় কিছু করতে হবে।'

'কিন্তু হঠাৎ করেই এই মানুষগুলোকে এমন একটা গ্রহাণুতে পাঠানো হলো যেখানকার আদিবাসিরা সৃষ্টির প্রারম্ভিক যুগের মানুষের মত জীবন যাপন করছে। এদের জীবনে চূড়ান্ত লক্ষ্য বলতে কিছু নেই। তারা দিন আনে দিন খায়। নিজেদের খাবার নিজেরাই প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে। তাদের জীবনে কোন জটিলতা নেই। যেন একটা স্বর্গীয় জীবন।'

'আচ্ছা? কিন্তু...'

'সেনাঘাটির প্রতিটি সদস্য আলাদাভাবে এই আদিবাসীদের লক্ষ্য করেছে। তাদের জীবন নিয়ে ভেবেছে। তারপর নিজের শৈশবের সাথে মিলিয়েছে। যখন এইসব আদিবাসীদের মতই তাদেরও কোন চিন্তা ছিলো না। জীবনের জটিলতা তাদের স্পর্শ করতো না। নির্ঝঞ্ঝাট সূর্যের নীচে শুয়ে কাটিয়ে দেয়ার মত জীবন ছিলো।'

'কিন্তু আবার এটা স্বীকার করে নিতেও তাদের আপত্তি ছিলো। তারা স্বীকার করতে চায়নি যে তারা আসলে মনে মনে এই আদিবাসীদের মত জীবন কাটাতে চায়। তারা সারা জীবন গাধার মত পরিশ্রম করে যা অর্জন করেছে তা আসলে অপ্রয়োজনীয়। তাই তারা এই বাঁশিওয়ালা নামের রহস্যময় দলকে তৈরি করলো যারা বনের ভিতর থাকে। যারা তাদেরকে ধরে ধরে এসব চিন্তাভাবনা শিখিয়েছে। এর ফলে এসব সদস্যরা সমস্ত দায়ভার বাঁশিওয়ালাদের উপর দিতে পারবে। এই বাশিওয়ালারাই তাদের গাছ হতে শিখায়।'

'তুমি তাহলে কি করতে চাচ্ছো? সমস্ত বন পুড়িয়ে ফেলবে?'

'না। সেটা কোন সমাধান নয়।' হ্যারিস মাথা নাড়লো, 'এখানে বনের কোন দোষ নেই। সমাধান হলো সদস্যদের সাইকো থেরাপি দিতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে বাশিওয়ালা মূলত তাদের মনের ভিতর। বাস্তবে এর অস্তিত্ব নেই। আর আদিবাসীদেরও কোন দোষ নেই। ওরা একেবারেই আদিম জীবন যাপন করে। ওদের কাউকে কিছু শেখানোর নেই। সে জন্যই আমাকে কাজ শুরু করতে হবে। ওদের বুঝাতে হবে ওদের অবচেতন মনই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করছে।'

ঘরে নীরবতা নেমে এলো।

'তাহলে এটাই।' কক্স উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,'আশা করি তুমি ওদের জন্য কিছু করতে পারবে।'

'আমিও আশা করছি।' হ্যারিস একমত হলো।

'আমার মনে হয় আমি পারবো।এটা তেমন কিছু না।ওদের আত্মসচেতনতা বাড়াতে পারলেই বাঁশিওয়ালা নিমিষেই উধাও হয়ে যাবে।'

কক্স মাথা ঝাকালেন, 'ঠিক আছে। তুমি তাহলে গোছাও। তোমার সাথে রাতে খাবারের সময় দেখা হবে। আর সম্ভবত কাল সকালে যাওয়ার আগে।'

'বেশ।' ডক্টর হ্যারিস বললেন।

♣♣

হ্যারিস দরজা খুলে দিলেন কমান্ডারের জন্য। কক্স চলে গেলে দরজা বন্ধ করে ঘরের অন্য দিকে ফিরে এলেন। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন।হাত পকেটে।

সন্ধ্যা নামছে। বাতাসের শীতলতা বাড়ছে। সূর্য তার চোখের সামনে হাসপাতালের পিছনে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল।

হ্যারিস নিজের স্যুটকেসের দিকে এগিয়ে গেলেন। তিনি প্রচন্ড ক্লান্ত বোধ করছেন। তার জন্য অনেক কাজ অপেক্ষা করে আছে। অনেক কাজ! এত কাজ উনি একা করবেন কিভাবে? আবার তাকে ফিরে যেতে হবে।

তারপর?

বিছানার বসে হ্যারিস জুতা খুলে ফেললেন। তার প্রচন্ড ঘুম আসছে। ঘুমে চোখ বুজে আসছে। জুতা ঘরের এক কোণায় রেখে একটা স্যুটকেসের সামনে গিয়ে বসলেন। স্যুটকেস খুলে একটা মোটাসোটা চটের ব্যাগ বের করলেন। মেঝেতে সেটা উপুড় করতেই নরম মাটির গুড়ো ছড়িয়ে পড়লো। শেষ মুহূর্তে তিনি খুব সাবধানে এগুলো জোগাড় করেছেন।

ছড়ানো মাটির ঠিক মাঝে বসে তিনি হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লেন। তারপর দু হাত বুকের উপর ভাজ করে চোখ বুজলেন। অনেক কাজ বাকি! কিন্তু — অবশ্যই সেটা আগামীকাল।

এই মুহূর্তে মাটি এত উষ্ণ লাগছে!খুব দ্রুতই ডক্টর হ্যারিস গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেন।

এই ব্লগেই কয়েক বছর আগের প্রকাশিত অনুবাদ।রিপোস্ট করা হলো।

মূলগল্প: Philip k dick এর Piper in the woods.(১৯৫৩)

মন্তব্য ৩৬ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (৩৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০২০ সকাল ৭:০৬

কাছের-মানুষ বলেছেন: গল্পটি পড়লাম। প্রথম থেকেই গল্পে আটকে গিয়েছিলাম, দারুণ একটি কনসেপ্টের গল্পটি। আপনার অনুবাদের হাতও ভাল, সাবলীলতা আছে।

বিদেশী লেখকেরা অনেক কল্পনা প্রবন এবং তারা গল্পে সেটা খুব ভালভাবে ফুটিয়ে তুলেন।

০৬ ই জুন, ২০২০ সকাল ৮:৪১

কল্পদ্রুম বলেছেন: ধন্যবাদ।ফিলিপ কে ডিক অত্যন্ত কল্পনা প্রবণ লেখক।আসিমভকে নিয়ে বাংলায় যতটা কাজ হয়েছে।তাকে নিয়ে ততটা হয়েছে কি না আমার জানা নেই।

২| ০৬ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:১৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: প্রথম থেকেই আগ্রহ ধরে রেখেছিলো। বড় কোন টুইস্ট নেই, অনেকটাই অনুমান করা যায় শেষটা, তবে গল্পটা চিন্তার গভীরে ঢুকে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।

০৬ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:৩৯

কল্পদ্রুম বলেছেন: মূলভাবের সাথে আমার ব্লগ নিকের একটা মিল আছে।সেই জন্য গল্পটা আমাকে আকর্ষণ করেছিলো।আপনার মূল্যায়নের জন্য ধন্যবাদ হাসান মাহবুব ভাই।

৩| ০৬ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:৪১

খাঁজা বাবা বলেছেন: এই গল্পটি আগেও পড়েছি
এটা কি রিপোষ্ট?

০৬ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:৪৪

কল্পদ্রুম বলেছেন: জি।শেষে লিখে দিয়েছি।

৪| ০৬ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:৩৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সুদীর্ঘ একটা গল্প শেষ করলাম, অনেকদিন পর এত বড়ো গল্প, এজন্য নিজেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। গল্পে আটকে ছিলাম, একটা রহস্যময়তা ছিল। এর ক্রেডিট মনে হয় আপনারই প্রাপ্য, কারণ, অনুবাদ মনোমুগ্ধকর না হলে গল্পে আটকে থাকা সম্ভব হতো না।

তবে, গল্পের সমাপ্তি মনোমতো হয় নি। মোটিভেশনের পার্টটা কী হবে, সেটা দেখানো গেলে লেখকের ক্রেডিট ও চিন্তাশীলতার গভীরতা পাওয়া যেত, কিন্তু এ সমাপ্তিতে লেখকে চিন্তাশীল মনে হয় নি আমার কাছে।

১৯৫৩ সালের গল্পে বিভিন্ন গ্রহাণুতে মানুষ বা প্রাণীর অস্তিত্ব দেখানো হয়েছে। সৌরজগতে আজও তার আলামত পাওয়া যায় নাই। পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথাও কোনো প্রাণী নাই, থাকলে এই উন্নত প্রযুক্তির যুগে এতদিনে তা পাওয়া যাইত, অথবা অন্য জগতের প্রাণীরাই আমাদের খুঁজে বের করে ছাড়তো :) অন্য জগতের মানুষ পৃথিবীর মানুষের মতোই দুই হাত, দুই পা-ওয়ালা সুন্দরীই হতে হবে, আমাদের কল্পনা এখনো এখানেই সীমাবদ্ধ। ওরা পাহাড়ের মতো, বা গাছ বা গাড়ির মতোও তো হতে পারে।

যাই হোক, আপনার ধৈর্য, অনুবাদ দক্ষতা অসাধারণ, আপনার প্রাপ্য প্রশংসা খুব ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারলাম না, সেটা আমার অদক্ষতা।

শুভেচ্ছা রইল।

০৬ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:০৮

কল্পদ্রুম বলেছেন: সত্যজিৎ রায়ের মত মানুষও ভিনগ্রহের প্রাণীকে মানুষের মত হাত পাওয়ালা কল্পনা করেছেন।আমার ধারণা ষাটের দশকটাতে এই জাতীয় গল্প কেবল পরিচিতি পেতে শুরু করেছিলো।তাই এর চেয়ে জটিল কল্পনায় লেখকরা যেতেন না।
সমালোচনা এবং প্রশংসা দুটোর জন্যই অশেষ ধন্যবাদ।

৫| ০৬ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: ফিলিপ কে ডিক এর লেখা আমি আগেও পড়েছি রহস্য পত্রিকাতে।

আপনি দূর্দান্ত অনুবাদ করেছেন।

০৬ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৫:১৩

কল্পদ্রুম বলেছেন: প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ।আপনার নজরুলকে নিয়ে লেখাগুলো আমি পড়ছি।আরো লিখবেন আশা করি।

৬| ০৬ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: দ্য গান।

০৬ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৫:১৪

কল্পদ্রুম বলেছেন: লিংক দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।পড়ে ফেলেছি।

৭| ০৬ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৪

আমি সাজিদ বলেছেন: বেশ ঝরঝরে ও সাবলীল অনুবাদ। কিছুক্ষনের জন্য চারপাশ ভুলে গিয়েছিলাম। আপনার অনুবাদই গল্পটাকে একটানে পড়ে ফেলার মতো বানিয়েছে বোধহয়।

০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৪৫

কল্পদ্রুম বলেছেন: ধন্যবাদ 'আমি সাজিদ' ভাই।

৮| ০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:৫২

অপু তানভীর বলেছেন: আপনার অনুবাদ চমৎকার । নাম গুলো বাংলাতে হলে হয়তো বুঝা সম্ভবই ছিল না যে এটা অনুবাদ গল্প । সময় থাকলে আরও কিছু অনুবাদ করে পোস্ট করবেন এই অনুরোধ রইলো। রিপোস্ট হলেও এটা এই প্রথমবার পড়লাম ।

গল্পের থিমে টুইস্ট না থাকলেও কনসেপ্টটা চমৎকার । সত্যিই আমরা সারা জীবন ধরে গাধার পরিশ্রম করে যাই জীবনকে সুন্দর করে তোলার জন্য অথচ জীবন সুন্দর করতে সহজ করতে এতো কিছুর দরকার নেই । একটা সময়ে মনে হয় আসলেই কি এতো পরিশ্রমের দরকার ছিল জীবনে!!

০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৫২

কল্পদ্রুম বলেছেন: ধন্যবাদ অপু তানভীর ভাই।ভালো থাকবেন।তবুও তো আমি আমরা 'আরো চাই' এর ঘূর্ণিপাঁক থেকে বের হতে পারি না।

৯| ০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:২২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: কনসেপ্টটা সুন্দর।
অনুবাদ-টাও।

০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:০৪

কল্পদ্রুম বলেছেন: সামুতে যে কজন গল্পকারের গল্পের আমি মুগ্ধ পাঠক তার ভিতরে আপনি একজন।আজও আপনার আইডি খুঁজে নিয়ে আপনার প্রথম দিককার একটি লেখা পড়লাম।'প্রেমিকের দিনলিপি'(যতদূর মনে পড়ছে এই মুহূর্তে )।আমি ভেবেছিলাম আপনি সামুতে এখন আর আসেন না।তাই মন্তব্য না করে চলে আসছি। :)
ভালো থাকবেন ভাই।মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

১০| ০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১১:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: নজরুল কে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাবো। ইচ্ছা আছে। প্রচুর পড়তে হয়। অনেক বই পত্র যোগাড় করতে হবে।

০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১১:১৯

কল্পদ্রুম বলেছেন: বইয়ের রেফারেন্স দেখলেই বোঝা যায় কি পরিমাণ খাটতে হয়।আপনার 'ফটোগ্রাফী' লেখায় একটা মন্তব্য করেছিলাম।ফটোগ্রাফির উপর লেখা আপনার কোন বই আছে কি না?

১১| ০৭ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩৭

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনার এই গল্প আগে একবার পড়েছি। যতোদুর মনে পড়ে, মন্তব্যও করেছিলাম।
যাইহোক, আপনার অনুবাদের হাত চমৎকার। এমনটা আরো আশা করছি। :)

০৭ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:০৭

কল্পদ্রুম বলেছেন: আপনার এই নিকের মন্তব্য নেই।প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ।অবশ্য আপনার কাছে সমালোচনা(উপদেশ) আশা করছিলাম।

১২| ০৭ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:১১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: তাহলে পড়েছি.....মন্তব্য করা হয় নাই। এটা যেহেতু আপনার মৌলিক লেখা না, তাই তেমন কিছু বলার নাই। খুজলে ২/১টা পয়েন্ট যে বলা যাবে না, তা নয়। তারপরেও দরকার নাই। মূল ব্যাপার তো অনুবাদ, সেটা চমৎকার হয়েছে।

ভালো ভালো গল্প নির্বাচন করে আরো অনুবাদ আমাদেরকে উপহার দিবেন নিয়মিত। :)

০৭ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:০৭

কল্পদ্রুম বলেছেন: উৎসাহিত হলাম। :)

১৩| ০৭ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:


সম্মোহিতের মতো পড়লাম। আমি তো প্রায় গাছ হয়েই গিয়েছিলাম! ড. হ্যারিসের মতো বিরোধীতা করে তারপর শিষ্যত্ব বরণ!

সাদামাটা হলেও গল্পের থিমটি চিন্তা করার মতো বটে।
বৌদ্ধদর্শন আমাদেরকে উদ্দেশ্যহীন হতে উৎসাহিত করে। ধ্যান করতে, স্থির হতে, নিঃশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়। তাতে নিজের চিন্তার ওপর দেহের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ আসে। বুদ্ধ, দালাইলামা, ওশো... এঁরা শিখিয়েছেন, জীবনের উদ্দেশ্য বলতে শুধুই জীবন। বিশদভাবে বলতে গেলে, জীবনের উদ্দেশ্য হলো সুখি হওয়া।

অনুবাদের বিষয়ে বলি: ভাষার স্বাভাবিকতাকে ধরে রেখেছেন। সফলভাবেই। এটি কঠিন।

০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:২৮

কল্পদ্রুম বলেছেন: সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু
ধন্যবাদ মাঈনউদ্দিন মইনুল ভাই।

১৪| ০৭ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৯

করুণাধারা বলেছেন: আপনার গল্প নির্বাচন আর অনুবাদ- দুইই অসাধারণ!!

০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:৩০

কল্পদ্রুম বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

১৫| ০৭ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:২৬

পদ্মপুকুর বলেছেন: প্রথম থেকেই আমার মনে হচ্ছিলো যে ডক্টর শেষ পর্যন্ত নিজেই গাছ হয়ে যাবে।

দুই দুয়ারী বলে হুমায়ূন আহমেদ এর একটা বই আছে, যেখানে একটি ছেলে এ রকম গাছ হয়ে যেতে চায়। এ ছাড়া মিসির আলী বিষয়ক একটা বইয়েও গাছ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার একটা কাহিনী আছে.... দেখা যাচ্ছে, গাছ হয়ে যাওয়ার বিষয়টা গল্পকারদের মধ্যে ভালোই বিরাজমান।

০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:৫০

কল্পদ্রুম বলেছেন: সম্ভবত মিসির আলির বইটার নাম 'অন্যভুবন'।দুই দুয়ারির মত হুমায়ুন আহমেদ অনেক লেখাতেই এই উৎকট বুদ্ধি ( :)) দিয়েছেন।

১৬| ০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ১:৫৭

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: অনেক দীর্ঘ গল্প।প্রিয়তে রেখে দিলাম।ধীরে ধীরে পড়বো।যতটুকু পড়েছি চমৎকার লেগেছে।লাইক।

০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ২:০২

কল্পদ্রুম বলেছেন: প্রিয়তে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। :)

১৭| ১০ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৫:১১

শের শায়রী বলেছেন: দারুন একটা অনুবাদ পড়লাম, অনেক আগে হুমায়ুন আহমেদ না জাফর ইকবালের এই টাইপের একটা গল্প পড়ছিলাম, একটা মেয়ে গাছ হয়ে যায়, এখন পরিস্কার বুজতে পারছি তারা এই গল্প থেকেই অনুপ্রানিত হয়েছিল। যদিও পটভুমিকা ভিন্ন ছিল কিন্তু থিম একই।

দারুন একটা গল্প উপহার দেয়ায় ধন্যবাদ জানবেন। আগে অবশ্য এই লেখকের গল্প পড়িনি। আপনার অনুবাদ বেশ সাবলীল। পড়তে কোথাও খেই হারাতে হয় নি। এটা অনুবাদের সব থেকে বড় স্বার্থকতা।

১০ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:৫৮

কল্পদ্রুম বলেছেন: ধন্যবাদ শের শায়রী ভাই।উনি যেহেতু আমেরিকায় নামকরা লেখক ছিলেন।হুমায়ুন আহমেদ,জাফর ইকবালের খুব সম্ভাবনা আছে আমেরিকা থাকাকালীন ওনার লেখা পড়েছেন।

১৮| ১১ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০১

সূরযো বলেছেন: অনবদ্য অনুবাদ।

২২ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৯

কল্পদ্রুম বলেছেন: ধন্যবাদ দিতে দেরী হয়ে গেল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.