somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষশাসিত নারীমন-২

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পুরুষশাশিত নারীমন-২
অদ্বিতীয়া সিমু


ইপ্সির হাটখোলা চুলের দিকে চেয়ে রয়েছে রিমু। ওর কালো চুলের গোছা অনেক কমে গেছে বলেএকবার ঝেড়েও দিয়েছে ওকে। ওদিকে যেন ইপ্সির কোন ভ্রূক্ষেপও নেই। ও একমনে ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের ‘শাপমোচন’ পড়ে যাচ্ছে । ও যে এটা কবার পড়েছে, কে জানে! শরৎ-এর পরিনীতা-ও ওর অনেকবার পড়া। তবুও দেখা যায় ওটা নিয়ে ও বসে আছে। এবার চোখ গেল ওর খাটের ওপর ‘মেয়েদের জিৎ, মেয়েদের হার’। রিমু টেনে নিল বইটা।সিমোন ব্যভোয়া! রিমু বইটা আবার রেখে দিল। ইপ্সি হাতের বইটা রেখে এবার তাকাল।
- কিরে, নারীবাদী বলে রেখে দিলি! নাকি পড়লে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে!
- না..না..মানে ...তুই বড্ড বেশী নারীবাদী...আসলে তুই বামপন্থী.....তাদেও চেয়েও একচোখা.....
বলতে বলতে ওড়নাটা ঠিক করে পেঁচিয়ে নিল শরীরে।
- আমিতো কোন দল করি না! আমার মত আর পথ ভিন্ন...
রিমুর ছোটখাট শরীরটা পেঁচানো বস্তা মনে হচ্ছে ইপ্সির কাছে। বিয়ের আগের রিমু আর এখনকার রিমুর অনেক তফাৎ। শর্ট কামিজ, জিন্স, গলায় পেঁচানো ওড়না আর কপালে বড়এক রবীন্দ্র টিপের সাথেএলো চুলের পিচ্চি রিমুর সাথেই ইপ্সির প্রথম দেখা। কই দেখা হয়েছিল? হুম্, মনে পড়েছে। ধানমণ্ডীর রবীন্দ্র সরোবরে। রিয়াজ বারবার অনুরোধ করেছিল ওদের অনুষ্ঠানে যেতে। আজ রিমু সেই রিয়াজেই বউ।
সেই অনুষ্ঠানেই রিয়াজের সাথে রিমুরও দেখা। তারপর?
ইপ্সি প্রায়ই মজা করে বলে, “তারপর চোখে-চোখে কথা, তারপর প্রেম, তারপর ঘাড় ভেঙে বিয়ে...।” বিয়েটাও মজার।
ওদের বিয়ে হয়েছে ঈদের দিন।
ঈদের দিন দপুরটা খুব মজা করে ঘুমুবে ভেবেছিল ইপ্সি। গুড়েবালি!

ক্রিং ক্রিং করে ল্যাণ্ডফোনটা বেজে উঠলো। কে? সবাই এতক্ষণে টিভির ভিতর ঢুকে গেছে। ও পাশ থেকে ভেসে এল রিযাজের কণ্ঠ।
- ঈদ মুবারক...ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা....
রিয়াজ সালাম দিতে ভুলে গেছে! স্ট্রেঞ্জ!
- হুম্, ঈদ মুবারক। শেষ?
- না দোস্ত, তোক আমার খুব দরকার...
- কি জন্য?
- বিয়ে করব।
- মানে!!!
- রাগিস্ না। রিমুকে বিয়ে করতে যাচ্ছি...
- আমাকে কি দরকার?
- সাক্ষী... তুই তাড়তাড়ি আয়...
- চেষ্টা করছি।
ফোন রাখলো ইপ্সি। অবাক লাগল। রিয়াজ বলছে? ওতো বলে বেড়ায় গুরুত্বপূর্ণ কাজে মেয়েদের সাক্ষী নেয়া বারণ। ইসলাম ধর্মে নাকি আছে যদি মেয়েদের সাক্ষ্য ছাড়া উপায় না থাকে তবে এক পুরুষের জায়গায় দুই মেয়ের সাক্ষ্য নিতে হবে। অর্থাৎ, “এক পুরুষের সাক্ষ্য=দুই মেয়ের সাক্ষ্য”! কারণ, মেয়েরা নাকি অবিবেচক হয়, মিথ্যে বলে, অবিশ্বস্ত হয়, সহজে ভুল করে...আগাড়া-বাগাড়া..। ও খুব ঝগড়া করেছিল রিয়াজের সাথে।
- তারমানে বলতে চাস্ দুই নারী মিলে এক পুরুষের সমকক্ষ!
রিয়াজ কৌশলে এড়িয়ে গেছে ঝগড়া। ও জানে ইপ্সির সংগে পেরে উঠবে না। কিন্তু ইপ্সি ক্ষোভ পুষে রেখেছে।
“তোমরা পুরুষরা ধর্ম তৈরী করেছ নারীদের শুষতে। নয়ত কেন এ নিয়ম!” এসবের উত্তর ইপ্সির জানা হয়নি। জানে খুঁজেও কোন লাভ নেই।
আজ রিযাজের জন্য করুণা হচ্ছে। পারিয়ে বিয়ে করতে নারীর সাহায্য দরকার পড়ছে! কিন্তু রিয়াজ যে সময়ের মধ্যে বলেছে সে সময়ে হাজির হওয়া অসম্ভব! তবু ইপ্সি তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে নিল। অপু আছে কিনা একবার দেখতে হবে। নিম্মীর ঘরে উঁকি দিল। নিম্মী রেহমান, ইপ্সিতা রেহমানের ছোট, তিন বোনের মেঝ বোন। নিম্মী কাত হযে শুয়ে টিভি দেখছে। ইপ্সি সরে এল। নিম্মী এবার ডাকল,
- আপুনি, কি হয়েছে?
- না বাইরে যাব।
- একা যেতে কি ভয় পাচ্ছ!!
নিম্মীর কণ্ঠে কিছুটা টিট্কারী।
- কেন? ভয়ের কি?
- নারীরা উৎসবের দিন পথে-ঘাটে লাঞ্চিত হয়। তাই মা বলল, একা বের হওয়া বারণ। নারীদের সাবধানে চলতে হবে। থুক্কুডি...নারী নয়। মা বলেছে , মেয়েমানুষ। মানে, মানুষের দ্বিতীয় লিঙ্গ। কাদের হাতে লাঞ্চিত হয় শুনে যাও। লাঞ্চিত হয় মানুষ অর্থাৎ পুরুষের দ্বারা। মেয়েদেরই শুধু ইজ্জত নামক বস্তু আছে...ওনাদের নেই! ওরা কামাই করে নারীদের অন্ন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে। আরও শুনবে?
ইপ্সির হাসি পেল। ক্ষেঁপেছে পাগলী। নিশ্চয়ই, মা ওকে বাইরে যেতে মানা করেছে। আর উল্টাপাল্টা কিছু বলেছে।
- অপু কোথায়?
নিম্মী ইতিমধ্যে লম্বা বক্তৃতা দিয়ে ফেলেছে। ফর্সা মুখে উত্তেজনায় আপেল রঙ ধরেছে।নাকটা তিরতির করে কাঁপছে। ইপ্সির প্রশ্নটায় আরও জ্বলে উঠলো।
- ওহহো, বাড়ির পুরুষের কথা বলছো? উনি নিজ ক্ষমতাগুণে বাইরে বেড়াতে গেছেন। আমরাতো মেয়ে তাই পারি না। জানোনা, আমরা পুরুষের পাজরের হাড় দিয়ে তৈরী। আমরা দুর্বল এবং অক্ষম!
অপু, অর্পণ রেহমান ওদের একমাত্র ভাই, এবার এস,এস,সি দেবে। ইপ্সি বুঝল এখন কথা বাড়ানো উচিৎ নয়। ঠাণ্ডা মাথায় পরে ওর সাথে কথা বলবে। তাড়াতাড়ি নিম্মীর দরজা থেকে সরে এল ইপ্সি। দেখল, নিম্মী দড়াম করে দরজায় লাথি মারল।
বাইরে বের হতেই দেখল ঝিগাতলার রাস্তাগুলো ফাঁকা। দূরে ছেলেদের জটলা দেখা যাচ্ছে। ওর আসলেই ভয় করছে! আজিমপুর যেতেই হবে। একটা ছেলে ওকে দেখে শিস্ বাজাল।



দূরে রিকশা দেখা যাচ্ছে। মনেমনে ও কামনা করল রিকশাটা যেন খালি হয়। যত চায় তত দিয়েই ও যাবে। রিকশা চাইলো ডবল ভাড়া। তবু উঠে হাপ ছাড়লো ইপ্সি। অসভ্য ছোকড়া! বয়স কত? সতের-আঠার। পঁচিশ পড়া তরুণীকে শিস্ দেয়। সব পুরুষ হয়ে উঠেছে। হাসি পেল ইপ্সির। থাপ্পর মারা উচিৎ ছিল। তা না করে ও মায়ের মতই ভাবতে শুরু করেছে। আজ যদি সাথে অপু থাকত! পুরুষ ব্যতীত নারীদের কেউ-ই রক্ষা করতে পারে না! অর্থাৎ, পুরুষ-ই প্রভু!
আজিমপুর মুসলিম এতিমখানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বর-বধূ। রিয়াজ, ফর্সা ছোটখাট দাড়িভর্তি মুখ। ওর পাশে রিমু । শ্যামলা চুলছাড়া মেয়ে। তবে আজ ঘোমটা দেয়া। পাশে কে? ওহ্, সেবিকা রায়! তবে অন্য সাক্ষী! ওর ছোটখাট গোলগাল শ্যামলা মুখে রাগের চিহ্ন। ভাল করে না দেখলে বোঝা যায় না ওর কপালে সিঁদুরের টান আছে।
- ইপ্সি, তুই এত দেরি করলি?
- আমিতো বলেছিই টাইম ক্রস হয়ে যাবে!
- নিজেতো বিয়ে করবি না, অন্যেও বিয়েতে লেট... নে, হয়ে গেছে বিয়ে...
- আর সাক্ষী!
- কাজী ম্যানেজ করেছে।
এরপর কেটে গেছে তিন-চার বছর। আজ রিমুকে চেনা দায়। আপ-টু-ডেট রিমু, এখন কালো বোরকাধারী নারী! কি করে চেঞ্জ হলো!
- রিমু, এ কি রিয়াজের আদেশ?
- না, না, ও পছন্দ করে তাই...
ইপ্সি একদিন ফোন করেছিল। জানাল রিমু চাকরী ছেড়ে দিয়েছে। এখন অখণ্ড অবসর।
- চল, মার্কেটে যাব। রেডী হ।
- দাঁড়া। তুই রিয়াজকে জিজ্ঞেস কর।
রিয়াজ এবার ফোন ধরল।
- শোন, আমি রিমুকে নিয়ে মার্কেটে যাব।
- যা। আমি কি আর না করি...
রিয়াজের গলায় স্পষ্ট না টের পেল ইপ্সি। কিছুক্ষণ পরই রিমু ফোন করে জানাল ওর শরীর খারাপ লাগছে। ও যেতে পারবে না। ইপ্সি জানে রিয়াজ মুখে না করেনি , তবে বুঝিয়ে দিয়েছে ওর না-টা। ওর বিয়ের পর ঠাট্টা করে ইপ্সি বলেছিল, “রিয়াজের ধর্ম গেল।” হয়েছে উল্টো, রিমুকে ধর্মে পেল!
রিমু! রিমু বইটা রেখে দিল! সিমোন ব্যভোয়া বলে!
- রিয়াজ কি না করেছে পড়তে এসব বই?
- না, না, ও কিছুই না করে না...
- তবে পরোক্ষ না-তে রাখে!
- আরে, না, না,...ও খুব হেল্পফুল।
কথা বাড়ায়নি ইপ্সি। “হেল্পফুল” কথাটার মানে খুঁজে পেলোনা ইপ্সি। সিমোনকে করা জনের প্রশ্নটা মনে হলো, “আমি কি পুরুষের মূল্যবোধ ত্যাগ করেছি?”
ইপ্সি চুপ করে সিমোনের কথা ভাবতে লাগলো, “নারীবাদীরাই ফলে প্রকৃত বামপন্থী। প্রকুতপক্ষে প্রথাগতভাবে যাকে এখন আমরা রাজনৈতিক বামপন্থী বলি, নারীর অবস্থান আসলে তারও বাঁ দিকে।”
ইপ্সি বসে আছে, রিমুর দিকে একবার তাকাল। ওর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। হয়ত রিমুর মত ও পাল্টে যাবে, রিয়াজের মতন কোন পুরুষ এলে! কে জানে!

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৫:৪৮
৫৩টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×