somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহবুবুল আজাদ
কেমন জানি খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী,ভালবাসি বই পড়তে,তার চেয়েও বেশি ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে,আর কবিতা সে তো টানে আমায় অদৃশ্য সূতোয়।ঘুরেছি পৃথিবীর বহু দেশ, তবুও মন ভরেনি, আবার ও বের হব কোন একদিন পৃথিবীর পথে প্রান্তরে, আর হব আমার লেখা লেখির ফেরিওয়ালা।

বাবা তুমি কি দেখ আমার চোখের জল, আমি জানি তুমি টের পাও

২৬ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



৮ ই মে বিকেল ৩টা, ২৫ বছর হয়ে গেল তুমি চলে যাবার, কেমন আছো বাবা, অনেক বছর পর তোমায় লিখছি, তোমার শুন্যতাটুকু মা কখনো বুঝতে দেয়নি, আজ সেও নেই চলে গেল তোমার কাছে। মেঘ ছাতা হয়ে ছিলে মাথার উপর ছায়া দিয়ে। কিন্তু সব কিছুই একদিন শেষ হয়ে যায়, ফুরিয়ে যাবার পথের পাশে বসে দেখতে হয়েছে তোমাদের চলে যাওয়া, এ চেয়ে থাকা যে কতটা কষ্টের তুমি কি জানো তা। তোমরা চলে গেলে আমাদের দুই ভাই কে শূন্য আকাশের নিচে রেখে। এই শূন্যতাটা অনেক বিশাল যার দিক পাশ নেই। অদ্ভুত এ শূন্যতা থেকে মুক্তির কোন পথ আমার জানা নেই, খুঁজে চলেছি অবিরাম এ এক মরীচিকা।

দিন গুলো অনেক কঠিন ছিল বাবা, ছোট্ট সে আমি স্কুল ব্যাগ টাও অনেক ভারী মনে হত, কেউ কোনদিন সে ব্যাগটা কাঁধে তুলে দেয়নি। আমার একলা চলার পথ অনেক কষ্টের ছিল। স্কুলে সবার নানান রঙের নতুন ব্যাগ ছিল, শুধু আমারটাই পুরনো মলিন, আমার খুব ইচ্ছে হত একটা নতুন ব্যাগের। দোকান গুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে নতুন নতুন ব্যাগগুলো দেখতাম আর কল্পনায় সব কাঁধে নিয়ে বাসায় ফিরতাম। কল্পনার ব্যাগে আমার স্বপ্নগুলো জমা হত, কিন্তু কেউ কোনদিন তা খুলে দেখেনি। জানেও নি কেউ কোন দিন ছোট ছোট সে আদরে পোষা আমার স্বপ্ন শুধু আমার স্বপ্ন।

অসহায় পথচলার সময় কত হাত ধরতে চেয়েছি আমার ছোট হাত সেই উচু মানুষদের হাতের নাগাল পায়নি কখনো। মেনে নিয়েছিলাম সব , জীবন এমন ই। অবহেলা অনাদর জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত জুড়ে ছিল। মায়ের একটা আঁচল দিয়ে কতটুকু আগলে রাখা যায়, তোমায় অনেক দরকার ছিল বাবা।
একলা রাতে ঘুমাতে অনেক ভয় লাগত, মনের অজান্তে তোমার হাত খুঁজে বেড়াতাম, খাটের শক্ত কাঠ ধরে আবার ঘুমিয়ে যেতাম মনে হত তুমি আছ। স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছি, আমি জানি কোন কিছুই আমার জন্য নয়। একটা নতুন জামার স্বপ্ন, এক জোড়া নতুন জুতোর স্বপ্ন, একটা পড়ার টেবিলের স্বপ্ন, একটা সাইকেলের স্বপ্ন, কোন কিছুই আমার জীবনে ছিলোনা, তুমি চলে যাবার সাথে সাথে সব শেষ। হুট করে একটা পর্দা পড়ে গেল তোমার আর আমার মাঝে, কোনদিন আর তা সরেনি।

প্রতিটা ঈদে অনেক কষ্ট হয় বাবা, আমারতো ইচ্ছে হত একটা নতুন পাঞ্জাবীর কিন্তু আমার স্বপ্ন দেখা মানা, এটা মানতে অনেক কষ্ট হত। কেউ কোনদিন পরম মমতায় বলেনি নে বাবা তোর জন্য এই নতুন কাপড়। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আমায় শিখতে হয়েছে কিভাবে একলা চলতে হয়, অনেক কষ্ট হত, খোলা জানালার বাইরের জগৎ টা অনেক বেশি স্বার্থপর, অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছে কিন্তু বাবা তোমার হাতের নির্ভরতা তোমার মত মায়া আর সাহসের হাত কারো কাছে ছিলনা, সে তুমি আমার কল্পনাতেই ছিলে।

মনে আছে বাবা তখন বাজারের পলিথিন ছিল গোলাপি সাদা আর নীল সাদা স্ট্রাইপের, মাঝে মাঝে বাজার গুলো অনেক ভারী হয়ে যেত, আমার হাত সে বোঝা বইবার মত সবল ছিলনা, রাস্তায় থেমে থেমে বাসায় আসতাম, তখন খুব দরকার ছিল তোমায় বাবা।
মিষ্টি আমার ভীষণ প্রিয়, একদম ছোট বেলায় যখন খেতে পারতাম না তখন ঘর ভর্তি মিষ্টি থাকত, বাবা মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়ে যাবার সময় আমার খুব ইচ্ছে হত নিজের পছন্দ মত মিষ্টি খাব, চকচকে চোখে দেখতাম রসে ডোবানো মিষ্টি গুলো, ছোট্ট সেই আমার তখন অজান্তে ঢোক গেলা ছাড়া আর কিছু করার ছিলনা। অপেক্ষায় থাকতাম আশে পাশে মামা নানু দের বাসায় কখন মেহমান আসবে, কারণ অনেক মিষ্টি আসত তখন, আমার প্রত্যাশিত স্বপ্ন পূরণের দিন। বাবা তখন তোমায় আমার খুব দরকার ছিল।

প্রতিটা মুহূর্তেই সন্তানের জন্য বাবার শক্ত হাতটা দরকার। কিন্তু সবার কপালে তা হয়না। কোন স্বপ্নই অধরা থাকেনা বাবা, আমার কোন কিছুর অভাব নেই আজ সব স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে, কিছু স্বপ্ন অবহেলায় নিভে গেছে যার আর দরকার নেই, শুধু তোমার অভাবটাই কুঁড়ে কুঁড়ে খায় আমায়, আমৃত্যু যা কোন দিন ও পূরণ হবার নয়।

তোমার প্রতি টান আর ভালবাসা এক বিন্দুও কমেনি এই পঁচিশটা বছরে, আজও তোমার কবরের পাশে দাঁড়ালে আমার ঢুকরে কান্না আসে, আমি দোয়া করি কিন্তু কোন শব্দ বের হয়না আমার মুখ দিয়ে, শুধু ফুপিয়ে কান্না আসে, বুকের ভেতরটা ফেটে যায় এমনই গহীনে কেউ বোঝে না, আমি সেই ছোট্ট আমি হয়ে যাই, যে লাফিয়ে তোমার কোলে উঠতাম, কত কিছুর বায়না ধরতাম। বাবা তুমি কি দেখ আমার চোখের জল, আমি জানি তুমি টের পাও, মনে মনে বল নিশ্চই বোকা ছেলে এসব কেন করিস, একদিন তো আমার কাছে আসবি। হ্যা বাবা আসব, সে পর্যন্ত ভাল থেকো।


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:৩২
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×