ছবিঃ কালের কণ্ঠ।
নীল সাদা সবুজ আকাশি রং আজ রাস্তায় নেমেছে, রক্তের লাল রং মুছতে, চেয়ে দেখুন আকাশের রংধনু দেখা লাগবেনা, রাজপথে আজ যে রংধনু নেমেছে শুধু তাকে আপন রঙে থাকতে দিন।
ভাবা যায়না কি করে হচ্ছে সব, আমি ৫২ দেখিনি ৭১ দেখিনি তবে গর্ব হয় আমি ২০১৮ দেখেছি, যে আন্দোলন কোন এক রাজনৈতিক দলের নয়, কোন বিশেষ প্রতিষ্ঠানের নয়, কোন একা ব্যাক্তির নয়। এ আন্দোলন শুধু স্কুল ড্রেস পরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নয়, আপনার আমার সকলের। এক ফোটা রক্তের দাম অনেক বেশি, এর মুল্য দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই।
We want justice , মন্ত্রীর গাড়িও রাস্তা থেকে ঘুরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে, একটা আন্দোলন কতটা শক্তিশালী হলে এমন হয়। আশার কথা এটাই যে এরাই আমাদের আগামী দিন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
এ আন্দোলন শুধু একটু মানবিক অধিকার আদায়ের জন্য, যার সাথে শুধু রক্ত ঝরানো সম্পর্ক নয়, জুড়ে আছে মায়ের মমতা, বাবার শাসনের আড়ালে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে সন্তানের ছায়া হয়ে থাকা, বোনের আদর আর বন্ধুত্বের এক অপরিসীম উত্তাল উন্মাদনা এ শুধু একজনের জন্য ভালবাসা নয়, এ সমগ্র জাতির ভবিষ্যতের জন্য নির্মল সুন্দর এক দেশ উপহার দেয়ার এক সর্বোচ্চ প্রয়াস।
যে সন্তান আজ ঘর থেকে বেরিয়েছে, মা জানেনা সে ফিরে আসবে কিনা, বাবা জানেনা তার ছোট্ট লালিত স্বপ্ন টা ঠিক মত পথ চলতে পারবে কিনা, কতকাল আর এমন শঙ্কা নিয়ে বাঁচবে মানুষ, জোয়ার আসবেই, বেশিদিন থেমে থাকবেনা এই ধীরতা, সময় এসে গেছে, যে হাত সোশ্যাল মিডিয়া, ফেসবুক, চটপটি চানাচুর ফুচকা নিয়ে আড্ডা বাজি, ছোট ছোট খুনসুটি নিয়ে ব্যাস্ত থাকত আজ সেখানে উত্তাল স্রোত এক বন্ধুর জন্য ন্যায় বিচারের, এক ভাইয়ের জন্য ন্যায় বিচারের এক সহপাঠীর জন্য ন্যায় বিচারের, প্রতিটা মানুষের জন্য নিরাপদ একটা রাস্তার।
আমি কতকাল কাঁদিনি, কতকাল আমার রক্তে শিহরণ জাগেনি, আমি জানতামই ই এই রক্তে আগুন লাগার মানে কি, এই শিহরণ কিভাবে হয়, কিন্তু আজ জেনেছি, আমি জানি এই ছাত্ররা আমার ই আপনজন, যারা বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছে তারাও ত কারো সন্তান, তাদের ও ভাই বোন মা বাবা আছে, শুধু এই টুকু মনে নিয়ে রাস্তায় নামলে কি ক্ষতি হয়, কিন্তু তারা জানেনা সম্পর্কের মুল্য কি, সময় এসেছে জানানোর।
আজকের এই নিরাপদ সড়ক চাওয়া শুধু এই ছাত্রছাত্রী দের নয়, এ আমাদের সকলের সার্বজনীন চাওয়া, জাতীয় চাওয়া, বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, বের হচ্ছি ঘর থেকে ফিরে আসব ঠিকমত, পারবেন না, আমরা কেউই পারবনা।
এই ছাত্ররা কারা, তারা কি কোন দিন রাস্তায় নেমেছিল আধিকার আদায়ের স্লোগান নিয়ে, নাকি কখনো রাজনীতি করেছে যার আদর্শ মাথায় নিয়ে রাজপথে নেমেছে, নাকি কোন লাভের আশায়? কিচ্ছু না, জীবনের যে একটা মুল্য আছে শুধু সেই দাবিটাই তাদের চাওয়া, শুধু একটু নিরাপদে পথ চলতে দিন আমাদের, এই নিরাপত্তাই দেশের ভাগ্য বদলে দেবে, ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাওয়ার দরকার নেই কোটি টাকার ক্যাম্পেইন দরকার নেই, একটা নিরাপদ দেশের স্বপ্ন সফল করতে আজকের এই রাজপথের দুরন্ত সৈনিক দের পাশে দাঁড়ান, আপনার আমার আগামী দিনের সোনালি স্বপ্ন এমনিতেই ভেসে আসবে।
এই সব ছাত্ররা কাদের প্ররোচনায় রাস্তায় নেমেছে, ওদের কারো দরকার নেই, নিজেদের ভেতরে মনুষ্যত্ব আর আত্মবিশ্বাস তাদের এইটাই উচ্চতায় বিরাজমান যে সেখানে কোন লোভ অপশক্তি বা প্ররোচনা পৌছাতে পারবেনা। শুধু ন্যায্য অধিকার আদায় হলেই তবে তারা থামবে।
অবাক লাগে ঢাকার রাস্তায় হাজার চেস্টায় ও যে সব রাস্তার শৃঙ্খলা আনতে পারেনি আমাদের নিয়োজিত কর্মীরা সেখানে এই ছাত্ররা কত সহজেই তা করে দেখাচ্ছে, সড়কে মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে লাইসেন্স চেক করছে, অতচ তার নিজের ই লাইসেন্স নেবার বয়স হয়নি, কি তাদের লাভ? বেতন পাবে এর জন্য নাকি অন্য কিছু? কিছুই না তারা শুধু নিজের অধিকার টা চায়। ভাঙ্গা কাঁচ ছড়ানো রাস্তা টা আবার নিজেরাই পরিষ্কার করেছে, কোমল মনে যে স্বচ্ছ একটা আয়না আছে দেশের জন্য, আমরা যেন তার গায়ে কোন দাগ না ফেলি, একদিন নিজেদের ভবিষ্যৎ টাই ঝাপসা হয়ে যাবে তাতে।
কোন রাজনৈতিক দলের কোন আন্দোলন হলে সাধারন মানুষ যারপরনাই বিরক্ত হয়, রাস্তা ঘাটে ঠিক মত চলাফেরা না করতে পারলে, অতচ দেখুন মাইলের পর মাইল মানুষ পায়ে হেঁটে কাজে যাচ্ছে ঘরে ফিরছে, চোখে মুখে এতটুকু ক্ষোভ নেই বিরক্তি নেই, কেন? এটা সব মানুষের চাওয়া, এই পরিবর্তন জন্য কতকাল ধরে অধীর আগ্রহে বসে আছে সবাই, রাস্তাঘাট, বাসা বাড়ি, দোকানপাট আজ সর্বত্র একই আলোচনায় মুখর বদল চাই, নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চাই, পথ চলতে চাই। যে চাকা এই দেশের গতি , যে চাকা জীবনের গতি, যে চাকা আনন্দের গতি আর কোন প্রাণ যেন চাকায় পিষ্ট না হয়। এই হোক আজকের সবার অঙ্গীকার।
প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে যারা আছেন আশা করি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি বিজ্ঞ ও শিক্ষিত মানুষ। আপনাদের হাতেই সব আশা করি আপনারা এর একটা সঠিক সমাধান দেবেন।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেয়াশলাইয়ের মাথার এই বারুদ কিন্তু ভয়াবহ, এদের থামানোর কোন শক্তি নেই লোভ লালসার পথ দিয়ে, শুধু ন্যায় দিয়েই আর এক নিরাপদ দিনের ভরসাই ওদের থামাতে পারে।
আজকের এই আগুন শুধু এদের হাতে নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে তা জ্বেলে দিয়েছে, যায় জন্য পুরো দেশ জ্বলছে। সমগ্র জাতির চাওয়া আজ এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে।
পরিবর্তন আসবেই, সমাজ বদলাবেই, তবে আর কোন প্রাণ নতুন এই দিন দেখার আগে যেন ঝরে না যায়।
ছবিগুলো বিভিন্ন জনের ফেসবুক থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩০