গতকাল আমরা যখন তারাবি নামাযের প্রস্তুতি নিচ্চি, তখন বিশ্বের বেশ কয়েকটা দেশের মুসলমানরা প্রথম রোজা'র বেশ কয়েক ঘন্টা পার করে দিয়েছেন।
রাতে খুব কাছের একজনের সাথে কথা হচ্চিল। আমেরিকার ভার্জিনিয়ায় থাকে সে। তাদের পাশের ফ্লাটে থাকেন একটি বাংলাদেশি মুসলিম পরিবার। তাদের আলাদা আলাদা জায়গায় কাজ আছে; কাজের তাগিদে বেরিয়ে পড়তে হয় উপবাস নিয়েও। ইফতারি বানানোর সময়টুকুও যেন নেই তাদের। আমার ওই পরিচিত মানুষটি তাদের বাসায় ইফতারি পৌছে দিয়ে এসেছে। তারা হৃষ্টতার হাসি হেসেছেন, এমন দূর পরবাসে অন্যের জন্যে এতটুকুই বা কে করে? আমি শুনে খুশি হলাম।
চিন্তা করলাম আমার দেশের কথা। আমি আজ ইফতারিতে যেখানে ৮-১০ আইটেমের জিনিস খাচ্চি, আমার শহরের অনেক মানুষই সেখানে শুধু পানি দিয়ে ইফতার করছে! কে যেন বলেছিলো, ' শহরের একপাশের মানুষ যেখানে পৈশাচিক আনন্দে মত্ত, অন্যপাশটার মানুষ তখন যুদ্ধ করছে নিজের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখার জন্যে। বরাবরের মতো এই রমযানেও যেসব নির্মম সত্য আমাদের মাঝে ঘটতে চলেছে তা দুচোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকি আমি।
পাশের ফ্লাটে গরম পিয়াজু অথবা হালিমের গন্ধ পেয়ে হয়তো কোন এক শিশু তার মাকে জিজ্ঞাস করবে মা আমাদের ইফতার কই ? মায়ের কাছে কোন উত্তর নেই, হয়তো কিছু শুকনো মুড়ি মাখাতে মাখাতে মা বলবেন গরীবের ইফতার আসমানে থাকে বাবা।
হয়তো আপনার ফেলে দেওয়া উত্ছিষ্ট কিছু ইফতার কুড়িয়ে নেওয়ার আশায় দরজার ওপাশে হাত পেতে দাড়িয়ে থাকবে কোন শিশু অথবা মা।
হয়তো গত রমযানে এক টেবিলে খেতে বসা প্রিয় বাবাটি আর কখনো পাশে এসে বসবেনা। মাথা নিচু করে চোখের জ্বল লুকিয়ে আড় চোখে পাশের চেয়ারে তাকিয়ে থাকবে অবুঝ মেয়েটি।
হয়তো এই রমজানে কারো বাসার ইফতার কেনা হবে বাইরে থেকে, প্রিয় মা যে আর নেই, ইফতার বানাবে কে? হয়ত ছেলেটা আনমনে শুনবে, এইত মা বলছে - বাজার থেকে আধা কেজি জিলিপি নিয়ে আয় তো বাবা..
হয়তো অসুস্থ মাকে যন্ত্রনায় কাতরাতে দেখে অসহায় হাতে ইফতার তুলে নিবে কোন হতভাগা ছেলে।
এই রমজানে খুলে দেওয়া হয় বেহেস্তের দ্বার। মুক্তি পায় দোযখি রা । আমরা কি এইটুকু পারবনা ইফতার মুখে দেওয়ার আগে একবার নিজের প্রতিবেশীর খোজটা নিতে ?
নিজের ইফতার টুকু অসহায়ের মুখে তুলে দিয়ে, দিন শেষে ইবাদতে বসে আয়নায় নয় দুহাতের তালুতে তাকিয়ে নিজেকে দেখতে পেয়ে যে অনুভুতিটা আপনি পাবেন তা কোনোদিন আপনার অনুভবেও ছিল না।।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:৫১