somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি তোর নামটাও ভুলে গেছি!!

২৩ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক'দিন আগে যেতে হয়েছিল রংপুর। ছিমছাম শহরটার নাগাল পেতে তখনো আধা ঘন্টার মতো বাকি। রাস্তার দু'ধারে এলায়িত সবুজ, আশ্চর্য আলস্যে চোখ মুঁদে আছে। একটা টং চা-শালা দেখে থামি, ইচ্ছে হাত-পায়ের খিল ছাড়াতে ছাড়াতে চুমুক দেব চায়ে। চা-শালার মহাজন পিচ্চিটা মহা চালু, ঝটপট চা বানিয়ে আমার হাতে তুলে দিয়ে হাসে, দেখি ওর সামনের পাটির একটা দাঁত নেই, ফোকলা। কাপে চুমুক দিতে দিতে চারপাশটা দেখি। আমার আশ-পাশে চা প্রত্যাশি জটলার দিকে তাকাতেই দেখি ঘন জোড়া ভ্রুর নিচে দুটো ঝকঝকে চোখে উপচানো হাসি, দু'হাতের মুঠোর কসরতে সিগারেট জ্বলে উঠবে বলে চেহারার পুরোটা দেখতে পারছি না। কিন্তু ঝকেঝকে চোখ উপচানো হাসিই বলে দেয়, একে আমি চিনি। একগাল ধোঁয়া উড়িয়ে সে আসে, বলে, "কি বে শালা, এইটা তুই? কত্তোদিন পরে দেখা!" এবার দেখি কোঁকড়া চুল কামড়ানো মাথা, গালের টোলে জমে থাকা হাসি....আর থুতনির ঢাল ঘেঁসে একটা কাটা দাগ, এগুলোর সমস্টি আমাকে হুট করে নিয়ে যায় অ-নে-ক আগের, প্রায় ভুলতে বসা স্কুলের হাফ প্যান্ট পরা দিনগুলোতে!

"তুই তো শালা এখনো কানায় থেকে গেছিস!" অনেক ছোট থেকে আমার নাকের উপর বসত গেড়ে বসা চশমা ভোল পালটিয়ে বুড়ো হয়েছে আরো। আমার মনে পড়ে যায় ঐ চশমার জন্যই স্কুলে আমার নাম হয়েছিল কানা! আমি হাসি, বলি, " তুই কি ব্যাটা আগের মতো বান্দরই আছিস?"
পুরো স্কুল খুঁজলেও ওর মতো ডানপিটে ছেলে পাওয়া যেত কিনা সন্দেহ! মাস্টাররা বলতেন ল্যাজ কাটা বান্দর!
এ্যাতো দিন পর দুজনের দেখা, কৈশরের সেই সব মায়াবী বিভ্রান্তির রং দুজনের চোখে-মুখে ছড়িয়ে পড়লে রাস্তার দুধারের এলায়িত সবুজ আন্দোলিত হয়; আমরা দুচোখ ভরে দেখি। একে একে সব জ্যান্ত হয়ে ওঠে; লাস্ট বেন্চে খোদায় করা ছবি-ছড়া, কারো পকেটে লুকানো ছুরি, কারো ন্যাড়া মাথায় থুতু দিয়ে চাটি মারা, স্কুল পালিয়ে উপহারে দুপুরের শোয়ে ছবি দেখা, তিন গোয়েন্দা নিয়ে কাড়াকাড়ি, আট আনার আমড়া......সব কিছু আমাদের আরেক বার আচ্ছন্ন করে। শুধু আমি, কুন্ঠার সাথে দেখি, ওর নামটা কিছুতেই মনে পড়ছে না! কতো জনকে নিয়ে কথা হয়, হাবলা কাওসার, মাথামোটা মতিন, ট্যারা মাসুদ, তিন বোনের এক ভাই মানিক..সব...সবার নাম মনে পড়ে, আমরা দুজনা এগুলো নিয়ে জাবর কাটি, শুধু ওর নামটাই মনে পড়ছে না!

ও বলে, " কিরে তোকে যা সাইকেল চালানো শিখিয়েছিলাম, লাস্ট কবে সাইকেলে চেপেছিস?" ওর বড় ভাইয়ের সাইকেলে হাফ প্যাডেলে প্রথম হাতে খড়ি আমার। মেডিক্যাল কলেজের বিস্তৃত মাঠে আমাদের চাইতে উঁচু বেয়াড়া সাইকেলটাকে আমার দু'পায়ের মাঝে বশ মানিয়েছিল ও। আমি ডান দিকে কাত হয়ে পড়ে যেতে চাইতাম, ও ধমক-ধামক দিয়ে ধরে রাখতো। তারপর যেদিন আমি ওর সাহায্য ছাড়াই মেডিক্যাল কলেজ মাঠের বুক চিরে ছুটে গেলাম, বেয়াড়া সাইকেলটাও আমার কথায় দৌড়ালো, থামল; সেদিন কি খুশিই না হয়েছিল ও। এরপর নয় ক্লাশের সিঁড়িতে পা রাখতে না রাখতেই বাক্স-পেটরা বেঁধে ওর বাবার সরকারী চাকুরীর পিছু পিছু ও চলে গেল।

স্কুল পালিয়ে পদ্মায় সাঁতরানো, চরের বালিতে কুস্তি আর শিশুবনে দরগাপাড়ার বখাটে ছেলেদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় বুঁদ হতে হতে আমি ওকে বলি হঠাৎ, "তোর নামটা আমার মনে নাই, ভুলে গেছি!"
ওর জোড়া ভ্রুর নিচে চকচকে চোখে হাসির ঢল নামে, ও আনমনে থুতনির ঢালে কাটা দাগটায় আংগুল ছোঁয়ায়। অনেক আগে, ক্রিকেট খেলায় আগে ব্যাট ধরার ঝগড়াতে আমার ব্যাট ওর থুতনির ঢালে যে ক্ষতের জন্ম দিয়েছিল, সেটা অভিযোগ নিয়ে তাকিয়ে থাকে যেন আমার দিকে।

"ভুলতেই পারিস, কতো দিন আগের কথা।" ও বলে। আবার হাসে কিন্তু নামটা বলে না।

"দেখি ব্যাটা, তুই মনে করতে পারিস কিনা!"

আমাকে এমন বিপন্নতার মাঝে ফেলে ও চলে যায়, শুধু ওর থুতনির ঢালে কাটা দাগটা জ্বলতে থাকে!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৩:৩১
৭৯টি মন্তব্য ৭৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×