somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড়োগল্পঃ সাভার অথবা স্বদেশ ধ্বসের প্রকল্প

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।

এই গল্পের শরীর বা অশরীরি বিষয়-আশয় গড়ে উঠেছিল আমাদের যাত্রাপথ ও গন্তব্যের বিবিধ অনুসংগে। আমরা; মানে কতিপয় কর্পোরেট হোয়াইট-কলার, বিভাগীয় প্রধানের মাতৃ-বিয়োগে ব্যাথিত হয়ে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অফিস ভেহিকেলে চেপে বসলে আমাদের যাত্রা শুরু হয়, গন্তব্য শহরের বিলাসবহুল নিরাময়কেন্দ্র। যখন আপনি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ির ভেতরে তখন হীম কাঁচের ওপাশে ঢাকা শহরটাকে মনে হবে প্রগৈতিহাসিক আর নৃসংশ। অসুখি মানুষের গলিত প্রবাহ, হুলিগান অটো-রিকশা আর অমোঘ স্থবিরতার ট্রাফিক পেরিয়ে সেই নিরাময়কেন্দ্রে কখন পৌছাতে পারব এই নিয়ে শংকায় পড়ে যায়। প্রকৃতিগত ভাবে আমরা প্রত্যেকে আলাদা, এই তত্ত মাফিক আমাদের শংকার প্রকাশভংগিও বৈচিত্রপুর্ন হয়ে ওঠে। এই বৈচিত্রতা ছাপিয়ে আমাদের শংকা একসময় এককেন্দ্রে প্রথিত হয়, যখন আমরা সবাই অনুভব করি বিভাগিয় প্রধানের মৃত মায়ের পান্ডুর মুখ দর্শন ও বিভাগিয় প্রধানের সাথে হৃদ্যতার মধ্যে একটি চিরায়ত কর্পোরেট মোটিভ রয়েছে।
মঈন, অর্গানাইজেশনের একটি গুরুত্তপুর্ন শাখার উপপ্রধান, যে সাম্প্রতিক লিবিডহীনতায় ভুগে বিমর্ষ, সন্তর্পনে স্মার্টফোনের ব্রাউজারে গতোরাতের বুকমার্কড পর্ন সাইটগুলো চেক করছে। জামিল, যিনি বিভাগিয় প্রধানের বেশ নির্ভরতার লোক, তিনি অনুযোগ করলেন এই বলে যে, আমরা সবাই তার শাহবাগ নিয়ে সর্বশেষ ফেসবুকিয় স্ট্যাটাসে লাইক দিতে কার্পন্যতা প্রদর্শন করেছি। তবে জামিলের উস্মা কিছুটা প্রশমিত হয় যখন তালুকদার জানান যে লাস্ট প্রো পিকে মাথায় ফাঁসির দাবি সম্বলিত কাপড়টি চেতনা উস্কে দেয়ার মতো উদ্দিপক ছিল।
বিভাগীয় প্রধানের মাতৃবিয়োগের শোকের সাথে আধাবেলা অফিসের সস্তি যোগ হলে আমাদের কারো কারো ভেতর অপরাধবোধের ঢেকুর ওঠে। জুনিয়র আরিফ, তার মোবাইলে সাবস্ক্রাইবড ব্রেকিং নিউজের এসএমএসের তরজমা করে;
"বস, সাভারে একটা নয়তলা বিল্ডিং ধ্বসে পড়সে!"
সাভার তো সর্বংসহা, এইরকম ধ্বসের পীড়ন সাভারের জন্য নতুন নয়, আমাদের স্মৃতির অনতলে স্পেকট্রাম নামটি অস্পস্ট ঘাই দেয় আবার।
"বহু হতাহতের আশংকা।" আরিফের তর্জমা অব্যাহত থাকে।
"স্যার, বিল্ডিংটা কি রানা প্লাজা?" অফিস ভেহিকেলের ড্রাইভার প্রশ্ন করে।
এরপর আমাদের অফিস ভেহিকেলের ভেতর ফিনিক্স-স্পেক্ট্রামের চাপাপড়া আর তাজরীনের আগুনে পোড়া মানুষগুলো জোটপাকিয়ে বিভাগীয় প্রধানের মাতৃবিয়োগের শোক ফিকে করার ফিকির করে। ফলে আমাদের আলোচনায় ঢুকে পড়ে দেশের বাইরে আমাদের চাপা-পড়া এবং দগ্ধ ভাবমূর্তি, এই শিল্পের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত পক্ষের অন্তর্ঘাত, শ্রমিকদের একদিনের কর্মবিরতিতে বটম লাইন রেজাল্টের অবনমন ইত্যাদি ইত্যাদি।

জামিল বলেন "বুঝছেন গনজাগরনের মন্চ বলেন আর হেফাজতিদের মন্চই বলেন, কর্পোরেটগুলা কিন্ত দুইটারেই ভালো ব্র্যান্ডিং করসে। মার্কেট কি আর আমলিগ-বিম্পি-জামাত বুঝে? আমার এক্স কলিগ কইলো সেদিন; ওরা শাহবাগ, মতিঝিল দুই জায়গায় ভিজিবিলিটি রাখসিলো, মিডিয়াতো সবটিরেই কাভার করে।"
নিয়মিত বিরতিতে আমাদের গ্রাস করছে ট্রাফিক, টানা হরতালের পেষন থেকে সাময়িক স্বাধীনতা পেয়ে সবাই খুব ত্রস্ত। আমরা দেখি, বিলবোর্ড তরুনীর বিপুলা স্তনের ছায়ায় জিরুচ্ছে অন্ধ ফকির, কানের হেডফোনে পিংফ্লয়েড প্রবাহিত যুবক, স্থিরচিত্রের মতো একদল কলেজপড়ুয়া তরুন-তরুনী-আমাদের এসব দৃশ্যশিকারের মধ্যে ড্রাইভার আবার "রানা প্লাজা" সংক্রান্ত প্রশ্নটি ছুঁড়ে দিলে আমরা বিরক্ত হয়ে তাকে বলি নিরাময়কেন্দ্রে যেতে আর কতক্ষন লাগতে পারে।


অবশেষে শহরের বিলাসবহুল নিরাময়কেন্দ্রের নিকটবর্তি হলে আমাদের মধ্যে সাভার অস্পস্ট হয়ে বিভাগীয় প্রধানের মৃত মায়ের পান্ডুর মুখখানি প্রান ফিরে পেতে থাকে। আমরা শোক প্রকাশের সম্ভাব্য তরিকা নিজেদের মধ্যে ঝালাই কোরে নিই। সেখানে পৌঁছালে ড্রাইভার জানতে চায় আমাদের কতক্ষন লাগতে পারে। আমরা বিরক্ত হই এবং নিরুত্তর থাকি। নিরাময়কেন্দ্রের উত্তেজক সার্ভিস অ্যাটেনডেন্টের ভ্রভংগিমা অনুসরন করে আমরা পৌঁছে যায় মরচ্যুয়ারিতে। বিলাসবহুল নিরাময় কেন্দ্রের উপরিভাগের তুলনায় আন্ডার গ্রাউন্ড মরচ্যুয়ারি দৃশ্যত অনুজ্জল এবং সেটাই সাভাবিক কিন্ত এই সাভাবিকতা আমাদের মেনে নিতে কিছুটা কস্ট হয়। সুবেশি আত্তিয়-স্বজন বেস্টিত বিভাগীয় প্রধান চোখে পরিমিত শোক নিয়ে আমাদের দেখেন। আমরা তাকে মৃদু হাগ করি, তার মৃত মায়ের আত্তার মাগফেরাত কামনা করি এবং তার বেহেস্তগমনে আমাদের দৃড় বিশ্বাষ ব্যক্ত করি। এর মাঝে জুনিয়র আরিফ বেরসিকের মতো সাভারের ধ্বসে পড়া বহুতল পোষাক কারখানার স্তুপ থেকে ৫০টি লাশ উদ্ধারের খবরটি নিস্চিৎ করলে আমরা অস্বস্তিতে পড়ে যায় এবং এই সংবাদের প্রেক্ষিতে আমাদের জীভ ও টাকরার দুরহ যোগসাজশে ৎচু ৎচু জাতীয় শব্দ উৎপাদন করি যেন বিভাগীয় প্রধানের মাতৃবিয়োগের শোক ঐ ৫০ টি লাশ কোন ভাবে ছাড়িয়ে যেতে না পারে। বিভাগীয় প্রধানের মৃত মাতৃ দর্শনে আমাদের হাজিরা যে স্বস্তির জন্ম দিয়েছিল তা ধ্বসে পড়া রানা প্লাজার পরতে পরতে জমে থাকা বস্ত্রশিল্পিদের কম দামি মৃতদেহের প্ররোচনায় হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে দেখে আমরা সতর্ক হই। মরচ্যুয়ারিতে পড়ে থাকা গুরুত্তপুর্ন বৃদ্ধার জন্য শোক জিইয়ে রাখতে আমরা আমাদের মৃত-জীবিত মায়েদের প্রায় ভুলতে বসা মুখ স্মরন করার চেস্টা করি। এর মাঝে জুনিয়র আরিফ আবার বেরসিকের মতো বলে
"বস, আমাদের ড্রাইভার কল করসিল, কইল ওর ছোট ভাই নাকি ছিল রানা প্লাজায়। ঘটনার পর থেকে মোবাইল বন্ধ। আমাদের রিকোয়েস্ট করসে, একটু আগে ওকে ছেড়ে দিতে।"

২।

আমরা এবার কয়েকজন তরুনের কথা বলবো, তাদের মধ্যে একজন; ফেসবুকে স্বল্পদৈর্ঘের স্ট্যাটাস দিয়েছিল একটি "পলেস্তারায় ফুটন্ত নাকফুলের জন্য এলিজি"। বালকবেলায় শেষ দুধ দাঁতটি হারানোর শোকে ছেলেটি কেঁদেছিল, এরপর তার আর কান্নার প্রয়োজন হয়নি। কিছুক্ষন আগে, স্বল্পদৈর্ঘের স্ট্যাটাসটির একেকটি শব্দ অভ্রতে লিখতে গিয়ে সে শৈশবের প্রায় ভুলতে বসা কান্নাকে পুনর্জন্মের সুযোগ দিল। তার ল্যাপটপটি এই মুহুর্তে পরিনত হয়েছে আয়নায়, যেখানে প্রতিফলিত হচ্ছে আলিংগনাবদ্ধ নরনারীর যুগল লাশ, অক্সিজেন আর চার্জার লাইটের আবেদন সম্বলিত হাতে লেখা পোস্টার, কয়েক হাজার ব্যাগ রক্ত, খুনির কপালে জনপ্রতিনিধীর চুম্বন, সাহায্যের জন্য বিকাশের নাম্বার, বিজিএমই'র বিবৃতি, লালমনিরহাটের এক বৃদ্ধ নিখোঁজ মেয়ের পাসপোর্ট সাইজ ফটোগ্রাফ সেঁটে দিচ্ছেন বোর্ডে, আল্লাহর গজব নিয়ে হেফাজতের আলখেল্লা ইত্যাদি ইত্যাদি। একজন কমেন্টে লিখলো, "ভাই জরুরী ভিক্তিতে নিচের জিনিসগুলো লাগবে, প্লিজ সবাই শেয়ার দেন:

১। ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার
২। হ্যাক্সো ব্লেড
৩। খাবার স্যালাইন
৪। ব্যাথানাশক ইনজেকশন
৫। ড্রিল মেশিন
৬। এয়ার ফ্রেশনার

ছেলেটি এই আয়নার প্রতিফলনে দেখতে পায়, পলেস্তরায় ফুটে ওঠা নাকফুলটি বড় হতে হতে ধ্বসে পড়া রানা প্লাজা ফুঁড়ে উঠে যাচ্ছে ওপরে। ক্ষুধার্ত টিভি ক্যামেরা, অপেক্ষমান বুলড্রোজার, উদ্যত ক্রেন ছাপিয়ে উঠে যাচ্ছে ফুলটি। অতিকায় নাকফুল সাত আসমান পেরিয়ে খোদার আরশ অব্দি পৌঁছে আলগোছে ভেসে বেড়ায়.....অভিযোগহীন। এরপর এই নাকফুলের অনুগামি হয় লাল-নীল-হলুদ ফিতা, বুনোফুলের নির্যাস নিয়ে একটি ওড়না, মুখ খোলা টেফিন ক্যারিয়ার, সস্তা লিপস্টিক, কয়েক জোড়া চপ্পল, চায়না সেলফোনের হেডফোন, আগুন-রংগা চুঁড়ির টুকরো, একটি বিচ্ছিন্ন পা, একটি বিচ্ছিন্ন মেহেদি রাংগা হাত এমনকি রিবোন সুদ্ধ কিছু আইডি কার্ড ঘুড়ি হয়ে উড়ে যাচ্ছে।

একজন ইনবক্স করলো, তারা কয়েকজনের গ্রুপ যাচ্ছে এনাম মেডিকেলে, প্রয়োজনীয় কিছু ঔষধ নিয়ে। একান্ন হাজার টাকা উঠেছে গতো দুই দিনে। অধরচন্দ্র স্কুলে অপেক্ষমান মানুষগুলোর কয়েকগ্রাস খাবার হবে হয়ত এতে। দেশ-বিদেশের অনেকেই চাইছে টাকা পাঠাতে, সবাইকে বিশ্বাস করা যায়? না। টাকা-পয়সা খুব খারাপ জিনিষ রে ভাই।

রাজিব, ছেলেটির বন্ধু। শখের ছবিয়াল, ক্যামেরা ঘাড়ে চলে গেছে সাভার সেই প্রথম দিন, ইচ্ছে ডকুমেন্টরি বানাবে। ছেলেটির সেলফোনে সেই পাঠিয়েছিল পলেস্তরায় ফুটে ওঠা নাকফুলের এমএমএস। কোন হতভাগির নিটোল নাকের শুকতারা হয়ে জ্বলত রুপোর ফুলটি? রাজিবের বান্ধবী, কি যেন নাম মেয়েটির, প্যারামেডিকের দলে নাম লিখিয়ে দিনরাত কংক্রিটের সমুদ্রে ডুব দিয়ে তুলে আনছে জীবিত-মৃত-অর্ধমৃত-আধখানা-সম্পুর্ন মানুষ; সে খুঁজে পেয়েছিল নাকফুলটি। রাজিব ফোন করেছিল আজ, বলল " জানিস, আজকে সুড়ংয়ে ঢুকেছিলাম একটা রেসকিউ টিম এর সাথে। ছেলেগুলো কেউ এসছে জামালপুর, ময়মনসিংহ, টংগি অথবা পাশের গ্রাম থেকে। কেউ এসছে হারানো ভাই বা বোন বা বন্ধুর খোঁজে, কেউবা এমনিই এসছিল। এই ভয়াবহতা দেখে আর থাকতে পারেনি, নেমে গেছে কাজে। কী নিস্ঠার সাথে কংক্রিট ফুটো করে নেমে যাচ্ছে নিচে, প্রতিটা ইট-রড-ভেংগে পড়া বিম-চ্যাপটানো মেশিনের ফাঁক-ফোকর তন্ন করে খুঁজছে মানুষ। একজনকে জীবিত পাওয়া গেল, একটা পা আটকে আছে দেয়ালের নিচে। মেয়েটাকে বের করতে হলো পা কেটে। করাত দিয়ে। ভাবতে পারিস? ক্যামেরাটা ছুঁড়ে ফেলে এসছি ঐখানে। পৃথিবীর কোন ক্যামেরা আছে, এই ভয়াবহতাকে ধরতে পারে?" সেলফোনের ওপাশে রাজিবের মগজে ছেলেটি স্পস্ট শুনতে পায় করাতের শব্দ, হাড়-মাংশ-চর্বি চিরে সেই শব্দের খানিটা হয়ত আমাদের কানেও পৌঁছে যায়।

মা ডাকছে। টেবিলে অপেক্ষমান রাতের খাবার, রিটায়ার্ড বাবা, অফিস ফেরত ক্লান্ত বড় বোন আর পোষা বেড়াল। ধরো তোমার বড় বোনটি কোন ধ্বসে পড়া ভবনের অনেক গভিরে ১/২ ফিট প্রস্থের প্রকোস্ঠে অবরুদ্ধ ৩ দিন। শেষ অক্সিজেনটুকু জারিত হচ্ছে পচা লাশের ভারি গন্ধে, নিজের হাত কামড়ে রক্ত চুষে ভাবছে জমজমের পবিত্র ত্রাতা পানি অথবা ন'তলা রানাভবনের সবটুকু কংক্রিট-রড বুকের খাঁচায় পুরে নিয়ে অপেক্ষা করছে কখন আসবে ডাক। প্রথমদিন শুধু একবার সেলফোনে তোমাকে বলতে পেরেছে' "ভাইরে আমাকে বাঁচা......" ঐ একবারই, তারপর ফোনটি বন্ধ পেয়েছ তুমি। এই হানাদার ভাবনারা, মায়ের আদরের ডাক, মাথার উপর নিশ্চত-নিরাপদ ছাদ, অপেক্ষমান শুভ্র ভাত; ছেলেটিকে অপরাধি করে দেয়। সে তার এক ফেসবুক বন্ধু, একটি ছোটকাগজের হবু সম্পাদক, তাকে এই অপরাধবোধের কথা চ্যাটে জানায়। ফেসবুক বন্ধু ফিরতি চ্যাটে তাকে এই কথাগুলি বলে," এই অনির্বচনীয় কস্ট আসলে আমাগো মতো মধ্যবিক্তের পক্ষে ধারন করা প্রায় অসম্ভব। আমাগো তো আর আগুনে পুইড়া কয়লা হওন লাগে না, আমাগো তো আর চাপা পইড়া থ্যাতলাইয়া দম বন্ধ হইয়া মরতে হয়না। আর এই যে সাভার ট্র্যাজেডী-সাভার ট্র্যাজেডী বইলা মুখে ফ্যানা তুইলা ফালাইতেছি এইটাও আসলে আমাগো ঐ মধ্যবিক্তসুলভ প্রতিক্রিয়া। গতোকাইল শাহবাগ, আইজকা সাভার, কাইলকা হেফাজত, পরশু নতুন কিছু লইয়া আমরা ফেবু গরম কইরা ফাডায়া ফেলব, দেইখো। হ্যা, তয় এইটা ঠিক এই ঘটনার ব্যপাকতা এতো বেশি যে এই মধ্যবিক্তই আবার ঝাঁকি খায়া দাঁড়ায়ে গেছে।"

ছেলেটি ফেসবুক থেকে সাইন অফ করে বোকাবাক্সের টকশোতে পাপেটগুলোকে নগ্ন হতে দেখে। সাভারের ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোষাক শিল্পের সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং ফলস্বরুপ দেশের ইকোনমিতে তার প্রভাব নিয়ে পাপেটগুলো গলায় রক্ত তুলে ফেলে। কেউ স্বরাস্ট্রমন্ত্রির ঝাঁকুনি-তত্তের রসালো বিশ্লেষন করে, কেউ রাস্ট্রযন্ত্রে ব্যর্থতার কথা বলে। ছেলেটি বোকা বাক্সের স্ক্রলে ধাবমান লাশের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার পেছনে গার্মেন্টস মালিকদের গ্রেফতারের খবর খোঁজে।


৩।


আমরা নিজামের কথা শুনেছিলাম অধরচন্দ্রের সর্বংসহা মাঠে। গলিত লাশের গন্ধ আর সস্তার এয়ারফ্রেশনার ফুসফুসে পুরে আমরা নিজামের কথা শুনছিলাম। জহির আমাদের বলেছিল নিজামের কথা। ও ছিল অধরচন্দ্রের অসংখ্য সেচ্ছাসেবকদের একজন, হয়ত লাশের সংখ্যা টুকে রাখছে বোর্ডে, মাথায় পানি ঢেলে সংগা ফিরিয়ে আনছে ছেলে-মেয়ে-বৌ-স্বামী-বোন হারানো মানুষগুলোর বা কাউকে সাহায্য করছে থ্যাতলানো লাশের অবয়বের পুনর্নিমানে।
"চাচি, তাড়াতাড়ি হাত চালান, ১৩০ টা লাশ আছে এইহানে। মাত্র তো ১৩টা দেখলেন।"

"আমার মাইয়ার চুলতো অনেক লম্বা আছিল বাবা। গন্ধ ত্যাল মাথায় মাখনের কতো শখ আছিল। এইটা আমার মাইয়া না বাবা, এর চুলতো ছোট।"

"আমার মাইয়ার ডাইন কানের লতি একটু কাটা আছিল বাবা, কান ফুড়াইতে যায়া খাম কইরা দিছিল অর দাদিতে !"

এই ধরনের কথোপকথনের ও কার্যক্রমের মাঝে জহিরের পক্ষে খুব সহজ ছিল না নিজাম সংক্রান্ত বয়ান জারি রাখা। তাছাড়া নিখোঁজের ছবি আর সংবাদ চাওয়া পোস্টারের ভিড়ে ও বারবার খেই হারিয়ে ফেললে নিজামও ফেরার হয়ে যায় খানিক পরপর।

"তো জহির, আপনি বলছেন নিজাম জানতো রানা প্লাজা ধ্বসে পড়বে?"

"নিজাম পাগলা জানে না এমন কিছু আছে নাকি দুনিয়াই? শুধু রানা প্লাজা না হেই স্পেকট্রামের খবরও জানতো আগে থাইকা।"

"নিজাম তাহলে পাগল ছিল?"

"পাগল ছাড়া এইরকম কথা কেউ কয়? আর আল্লায় তো আগল-পাগল মাইনষেরে কিছু না কিছু ক্ষমতা তো দিয়া পাঠাই।"

দেশের অধিকাংশ জায়গার মতো সাভারেও একজন পাগল থাকবে এটি বিচিত্র কিছু নয়। সাভারের রাস্তায় কুকুরগুলো তাদের জীবন চক্রের পুরোটা সময় নিজামের সংগে কাটিয়েছে। ওলান ছেড়ে ডাস্টবিন ঘাঁটতে শেখা, একপা তুলে ল্যাম্পপোস্টে পেশাব করতে শেখা, ভাদ্র মাসে রমন শেষে পশ্চাৎদ্দেশে সংগি-সংগিনীর সাময়িক বন্ধনে অপ্রস্তত হওয়া বা পৌরসভার খুনে কুকুর শিকারী সবকিছুর সাথে নিজাম পাগলা কোন না কোন ভাবে জড়িয়ে আছে। নিজাম ওদের লোম খুটে পরজীবি বেছে দেয়, ওরা নিজামের নাক-মুখ চেটে দেয়, ফেলে দেওয়া পচা রুটি ভাগ করে খায় এমনকি শীতের রাতে পরস্পরের ওম পর্যন্ত ভাগাভাগি করে নেয়। সাভারের লোকজন বিশ্বাস করত ঐ নেড়ি কুকুরের দল কৃতঞ্গতা বশত নিজামের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছিল তাদের সহজাত প্রবৃত্তি। ফলে স্পেকট্রাম বা রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ার আগাম খবর, সেই প্রবৃত্তির অনুরননে নিজামের মস্তিস্ক ছড়িয়ে বাজখায় গলায় চিৎকার হয়ে রটে গিয়েছিল অনেকদুর পর্যন্ত। নিজাম ও তার নেড়ি কুকুরের কাফেলা ধ্বসে পড়ার আগাম বার্তা নিয়ে যখন রানা প্লাজার সামনে পৌঁছায় তখন স্রোতের মতো মানুষ তাদের উজিয়ে ঢুকে পড়ছে রানা প্লাজায়। বেতন কেটে নেয়ার বা চাকরী ছাটায়ের হুমকির সাথে ফ্লোর সুপারভাইজারদের কুঁচকে ওঠা ভ্রু যোগ হলে নিজাম পাগলকে এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোন গতি থাকে না। কিন্ত এড়াতে পারে না নিজাম পাগলের নিম্নক্ত কথাগুলো:

"যাইস না বোইন, আসমান ভাইংগা পড়বো তোগো মাথার উপরে। তুই মইরা গেলে তর পোলারে খাওয়াইবো কেডা? বাপ-মারে খাওয়াইবো কেডা? নিজাম পাগলারে একটা-দুইটা টেকা দিব কেডা? ও ভাই, একটা বিড়ি খিলাইবি? এই বিল্ডিং এ ঢুকিস না আইজকা।"

তারা নিজাম পাগলের ছেড়া প্যান্ট ভেদ করে বেরিয়ে আসা লোমশ শিশ্ন, ডাস্টবিনের উচ্ছিস্টের অলংকারে মোড়া জটা মাথা, ক্যানেস্তারার মালা, নেড়ি কুকুরগুলোর ঘেউঘেউ এড়াতে পারলেও পারে না অকস্মাৎ ছাদ সমেত সবকিছু ধ্বসে পড়ার আশংকা। তাদের সবার চোখের দখল নিয়ে নেয় দেয়াল ও পিলারের ক্রমবর্ধমান ফাটল, ফলে তাদের অনেকের মনোসংযোগে ঘাটতি দেখা দেয় এবং তারা সেলাই মেশিন চালাতে কিছু ভুলও করে। তাদের কারো কারো চোখে কিছু দিন আগের স্পেকট্রাম ভবনের ধ্বসে পড়ার দৃশ্যের পুনর্জন্ম হয় এবং তারা আবারো ভুল করে সুপারভাইজারে খিস্তির মুখোমুখি হয়। নিজাম পাগল একটা লাল কাপড় জোগাড় করে সবেগে নাড়াতে নাড়াতে ধ্বসে পড়ার আগাম খবর প্রচার করতে থাকলে রানা প্লাজার গার্ডরা তাকে তাড়া করে। ফলে নিজাম পাগল এবং তার নেড়ি কুকুরের দল রানা প্লাজার আসে পাশের দোকান-খাবার হোটেল-পথচারি-পার্ক করা গাড়ি-সিএনজি বা রিকশাওয়ালাদের কাছে এই ধ্বসের আগাম খবর বিলি করতে থাকে। যাদের স্মৃতিতে তখনো স্পেকট্রাম নড়বড়ে হয়ে টিকে আছে কোনভাবে তারা নিজাম পাগলকে এক আধটা বনরুটি সাধে ও তার এই ভবিষ্যত বাণীর সুত্র জানতে চায়।

এই পর্যায়ে আমরাও জহিরের কাছে নিজাম পাগলের সেই ভবিষ্যত বাণীর সুত্র জানতে চাই। আমরা এও জানতে চাই, রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ার পর নিজামের আর কোন খোঁজ পাওয়া গেছে কিনা। আমাদের মধ্যে একজন, বহুল প্রচারিত একটি দৈনিকের স্থানীয় প্রদায়ক, সে নিজাম পাগলা কে নিয়ে একটি ফিচার করার আগ্রহ প্রকাশ করে। এই সময় অধরচন্দ্রে লাশবাহি এ্যাম্বুলেন্স তিব্র ঢুকে পড়লে জহিরের সাথে আমাদের কথোপকথন অসমাপ্তই থেকে যায়। আমরা অধরচন্দ্র থেকে বেরিয়ে কর্ডন করা "রানা প্লাজার" আশে পাশে নিজাম পাগলের খোঁজ করি। "এখানে বিনামুল্যে ফোন করা যায়" এমন ব্যানার লেখা অস্থায়ি দোকানে, শুকনো খাবার-পানি-মোমবাতি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা সাহায্য প্রদানার্থি মানুষ, পা হীন ভিখিরী সবার কাছেই নিজাম পাগলের ও তার নেড়ি কুকুরের দলের খোঁজ করি আমরা। কিন্ত নিজাম পাগল অধরায় থেকে যায়। কেউ বলে সে হয়ত রানা প্লাজার হতভাগা মানুষগুলোকে সতর্ক করার জন্য নেড়ি কুকুরের দলটি সমেত ভবনটি ধ্বসে পড়ার ঠিক আগ মুহুর্তে ঢুকে পড়েছিল সেখানে। আমরা সাভারের স্থানীয় বয়স্ক কিছু মানুষের কাছে নিজাম পাগলের জন্ম বা সাভারে তার বেড়ে ওঠার কথা জানতে চাই। প্রায় সবার স্মৃতিতে নিজাম পাগল তার বর্তমান অবয়ব নিয়েই আছে, তার জন্ম বা বেড়ে ওঠার কোন ছাপ সাভারের ছেলে-বুড়ো কারো মগজে পাওয়া যায় না, এবং এই আবিস্কারে সবাই বিহ্বল হয়ে পড়ে। যে বুড়ো তার জীবনের বেশিরভাগ সময় সাভারের কোলে-পিঠে কাটিয়ে দিল তারও স্মৃতিতে নেড়ি কুকুর বেস্টিত নিজাম পাগল একই রকম থেকে গেছে; ছেঁড়া প্যান্ট ভেদ করে বেরিয়ে আসা লোমশ শিশ্ন, ডাস্টবিনের উচ্ছিস্টের মুকুট মোড়া জটা মাথা, গলায় ঝোলানো ক্যানেস্তারর মালা নিয়ে নিজাম পাগল অপরিবর্তিই থেকে গেছে। আমরা সাভারের ছেলে-বুড়োদের নিজাম সংক্রান্ত ধ্বন্দে রেখে চলে আসি কারন এই ধন্দ থেকে তাদের আর বের হয়ে আসার সম্ভাবনা চাপা পড়ে গেছে রানা প্লাজার নিচে।



৪।

"এই ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষমতা অনেকেরই নেয়। এই ধ্বংশ পরবর্তি সময়ে যারাই জড়িয়ে পড়েছে এর সাথে, হোক সে আটকে পড়া আহত মানুষ, উদ্ধারকর্মি, নিহতের স্বজন বা সংবাদকর্মি সবারই মনোজগতে বড়ো ধরনের পরিবর্তন ঘটে গেছে। এদের প্রোপার কাওন্সেলিং দরকার, শরীরের ক্ষত সময়ের সাথে সয়ে যাবে কিন্ত সবার মনোজগতের যে ওলটপালট ঘটে গেছে, সেটা ভুক্তভোগিদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে অনেকদিন।"
আজ রাতে তৃতীয়বার শাওয়ার নেয়ার পর মেয়েটি এককাপ উত্তপ্ত এবং ফেনিল কফি হাতে টিভিতে নিজের রেকর্ডেড নিউজ-প্রেজেন্টশন দেখছিল। আমরা ধরে নিই তার নাম রুপা। নামটি সহজবোধ্য ও পাঠকের জন্য আয়াসসাধ্য নয় কনেক্টেড হওয়ার জন্য। কেউ কেউ নামের সাথে মানুষটির শ্রেনী-সামাজিক অবস্থান ইত্যাদির একটি অনুমানে আসতে সাচ্ছন্দ বোধ করেন এবং প্রায়শই তাদের এই অনুমানের সাথে তাদের প্রত্যক্ষনের সামন্জস্যতা দেখা যায়। রুপা উত্তপ্ত কফির পেয়েলায় কাঁপা-কাঁপা ঠোট ছোয়ানোর কথা বিস্মৃত হয় টিভির খবরে নিজের পুনঃপ্রচারিত চেহারা দেখে। সে রানাপ্লাজার কংকালের সামনে যে রুপাকে দেখে, তাকে তার অপরিচিত মনে হয়। তার কথা বলার ভংগি, খানিক পর পর থুতনি চুলকানোর মুদ্রাদোষ, নাকের ঢালে পতনেচ্ছু ঘাম সবকিছুই মনে হয় অন্য কারো, তার নিজের নয়। সেদিন শাহিনাকে পাওয়া গেল দীর্ঘ সড়ুং খুঁড়ে রানাপ্লাজার তলপেটে। আর সব সংবাদকর্মির মতো রুপার কাছেও শাহিনা অনেক আকাংখিত ছিল। উদ্ধারকর্মির সাথে শাহিনার কী কথা হয়েছে, সে কি তার দেড় বছর বয়সি ছেলেটাকে দুধ খাওয়াতে চেয়েছিল, শাহিনার আশে পাশে আর কারো সাড়া কি পাওয়া গেছে, শাহিনাকে উদ্ধার করতে কী রকম সময় লাগবে, উদ্ধার প্রক্রিয়ায় সমন্বয়হীনতার অভিযোগ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কিছু বলার আছে কিনা ইত্যাদি প্রশ্ন-মন্তব্য-বিশ্লেষন সংবাদকর্মিদের চৌকষ উপস্থাপনায় পৌঁছে অপেক্ষমান মানুষের বসার ঘরে, সরাসরি। রুপা জানে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ তখন তাদের আংগুল ক্রশ করে রেখেছিল। সবার প্রার্থনায় ছিল শাহিনা। রুপা তিলতিল করে খোদিত অন্ধ টানেলে নেমে গিয়েছিল ক্যামেরা হাতে। টানেলের শেষ প্রান্তে একটুকরো আলো হয়ে তখনো মিটিমিটি জ্বলছিল শাহিনা। কোনমতে একজন গলে নামতে পারে, কখনো বুকে হেঁটে-মাথা ঘাড় হাঁটুতে গুঁজে, প্রতি মুহুর্তে ধ্বসে পড়ার আশংকা মাথায় নিয়ে রুপার পক্ষে টানেলে নামা সহজ ছিল না। গলিত লাশেরা অভিযোগ নিয়ে হুঠহাঠ ঢুকে পড়ছিল ফুসফুসে, নরকের তপ্ততা চামড়া ফুড়ে ছেয়ে ফেলছিল মাংশের গভিরতা।

"সাবধানে বইন" ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মি, যে রুপাকে হাত ধরে নামাচ্ছিল, সে শাহিনার অলৌকিক প্রানশক্তির কথা বলছিল তাকে। বাবা মরা দেড় বছরের ছেলেটিকে দুধ খাওয়ানোর আকুলতা তাকে এই মৃত্যুকূপে জীইয়ে রেখেছিল। লোকটি রুপাকে আরো জানায়, এই খানিক আগে সে শাহিনাকে এক বোতল জুস আর কিছউ শুকনো বিস্কুট দিয়ে এসছে, সে ভালো আছে। অনন্তকাল পরে রুপা যখন টানেলের শেষ প্রান্তে নামতে পারলো, সে দেখলো কংক্রিট আর রডের ফাঁদে একজোড়া অজেয় চোখ।

"আপা আমার নাম শাহিনা, বাড়ি কুস্টিয়া। আমারে এইখান থেকে বাইর করেন।"

রুপা শাহিনাকে ছুঁয়ে দেখেছিল, শাহিনা তাকে দেড় বছরের ছেলেটির কথা বলেছিল। সারাটা দিন কতো চেস্টা, কর্ডোনের ওপারে অপেক্ষামান মানুষ, শাহিনা তুই ফিরে আয়, আমার বোনের লাশ পাই নাই কিন্তু তোরে যেন জীবিত পাই। রুপা পুরোটা সময় ছিল রানাপ্লাজার সামনে, ঐ ঘাতক আগুনের ফুলকি কী ভুলের জঠরে জ্বলে উঠেছিল নাকি মৃতের মিছিলে শেষ আশাটিকে গলাটিপে ধরা কোন ট্র্যাজেডির স্ফুলিংগ; এর মীমাংশা ও করতে পারেনি । রুপার বিহ্বল চোখের সামনে টানেল উপচে পড়ছিল কালো ধোঁয়া আর আগুনে। বোকাবাক্সের সামনে প্রার্থনায় ক্রশ করা আংগুলগুলো বিবশ হয়ে পড়েছিল আর সবাই আক্ষরিক অর্থেই বোকা হয়ে গিয়েছিল। রুপার এক সহকর্মি বন্ধু বলেছিল,
"শাহিনা আসলে এই হতভাগা দেশেরই আরেক নাম। দ্যাখনা, যখন সবাই আশায় বুক বেঁধে শাহিনার জন্য অপেক্ষা করছে, এই এক্ষুনি মেয়েটা বের হয়ে আসবে, বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরবে, চুমু খাবে। অথচ দ্যাখ, কিভাবে দমবন্ধ হয়ে পুড়ে মরলো। ইস, এতো কাছ থেকে কেউ এমন করে হারিয়ে যায়?!"

রুপা বারবার নিজের হাত শোঁকে, নাছোড়বান্দা লাশের গন্ধ নাকের সুড়ং এ সেই যে থিতু হয়েছে আর যাওয়ার নাম নেয়। গতো কয়েকটা দিন পচা-গলা লাশের ভিড় সামলে, আকন্ঠ অবর্ননিয় গন্ধে ডুবে থেকে খবর শিকারে রুপা খুব ক্লান্ত। খবর শিকারই বটে, ছোট্ট একটা নিঃশ্বাষ ফেলে রুপা ভাবে। কতো চ্যানেল এখন, কতো প্রতিযোগিতা! সবার আগে স্পটে পৌঁছানো চায়, বেস্ট আ্যাংগেল থেকে স্টোরি কাভার করতে হবে। বিভৎসতার প্রদর্শন কতোটা শৈল্পিক হলো তার উপর ডিপেন্ড করছে অডিয়েন্স তোমার চ্যানেলে স্থির থাকবে কী না। ধ্বসে পড়া ছাদের নিচে নিম্নাংগ চাপা পড়া মানুষটির থ্যাঁতলানো অবয়বে ফোকাস করে আবার প্রশ্ন করো "আপনার অনুভুতি কি?"

জার্নালিজম ইথিকস আর কর্পোরেট মোটিভ এর রমন প্রক্রিয়ায় নিজের শ্লীতাহানি দেখে রুপার কফির তৃষ্না মিটে যায়। এবং চতুর্থ বারের মতো তাকে শাওয়ার নিতে হয়। বাথরুমে নগ্নভেজার মাঝে নিজেকে ওলটপালট করে শোঁকে রুপা, শাওয়ারজেল বা সুগন্ধি সাবানের যোগসাজশে বিন্দু মাত্র ফিকে হয় না রানাপ্লাজার পচা-গলা লাশের গন্ধ। রানাপ্লাজা থেকে ফেরার পর, প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তার গৃহপরিচারীকার সিলিংয়ে ঝোলানো লাশের সচল ছবি ও বর্ননা শিকার করে ফেরার পথে গুলশান ১ এর আ্যামেরিকান বার্গার এর বিফ চিজ বার্গারে কামড় দেয়ার সময় রুপা প্রথম গন্ধটি পায়। সে বার কয়েক বার্গারটি শুঁকেছিল এবং প্রতিবারই রানাপ্লাজার পচা-গলা মানুষগুলো তার নাসারন্ধে হানাদারের মতো দখল নিয়ে নিচ্ছিল। প্রায় অক্ষত বার্গার ফেলে সে বেরিয়ে এসে পথের ধারে একটি বুটিক হাউজে চলতি ফ্যাশনের শালওয়ার কামিজ খুঁটিয়ে দেখার অজুহাতে নাকের সামনে হাত ধরলে গন্ধটি তাকে ধাক্কা দেয়। রুপা পরে ওর ছেলেবন্ধুকে বিষয়টি জানালে, ছেলেবন্ধুটি তার সুন্দর আংগুলগুলো মুঠো পাকিয়ে ঠোঁট ও নাকের সংযোগস্থলে আলতো ধরে রুপাকে জানিয়েছিল, সে ২১ টি দুর্লভ গোলাপের গন্ধ পাচ্ছে। কিন্তু রুপা আশ্বস্ত হতে পারে না। বরং গন্ধটি ক্রমশ প্রকটতর হয়ে তার হাত ছাড়িয়ে শরীরের রন্ধে রন্ধে ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু রুপা আর কাউকে সে কথা জানায়নি।





আমরা আবার ফিরে যেতে পারি সেই তরুনের কাছে, যে ফেসবুকে জনৈকা সাভার ভিকটিমের নাকফুল নিয়ে একটি স্বল্পদৈর্ঘের স্ট্যাটাস দিয়েছিল। তরুনটি অনলাইনে সাভার ভিকটিমদের নিয়ে পেজ খোলে "সাভার ট্র্যাজেডী নয়; ঠান্ডা মাথায় হত্যাকান্ড" নামে। সে এই পেজে দেশের সব গার্মেন্টস হত্যাকান্ডের (সে এমনটাই লিখেছে) ধারাবাহিক দলিল পোস্ট করতে থাকে, সাথে শ্রমিকদের মজুরী, মালিকদের মুনাফা আর গ্লোবাল ক্রেতাদের আচরন সম্পর্কিত তথ্যাদি মজুত করতে থাকে। তার ফ্রেন্ডলিস্টের অনেকে এই পোস্ট গুলোতে লাইক দেয় কেউ কেউ শেয়ার করে তাদের ওয়ালে। একজন বামপন্থি উঠতি কলাম লেখক এক গার্মেন্টস শ্রমিক নেতার গুম ও পরবর্তিতে খুনের বিষয়টি কমেন্ট আকারে পোস্ট করে এবং রাস্ট্রিয় সন্ত্রাসের তুলনামুলক উদাহরন দেয়। কিছুক্ষনের মধ্যে সেই কমেন্ট ও প্রতি-কমেন্ট এর শাখা-প্রশাখা আলোচনাটিকে আওয়ামী-বিএনপির চিরায়ত দ্বন্দের দিকে নিয়ে গেলে, তরুনটি হতাশ হয়। সে দেখে, এই আজন্ম অমীমাংশিত দ্বন্দের জাঁতাকলে পড়ে আলোচনা থেকে ভবন ও কারখানা মালিকদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টি গৌণ হয়ে যাচ্ছে। সে ফেসবুক থেকে সাইনঅফ করবে বলে ভাবছে এমন সময় তার পুরনো এক বন্ধু চ্যাটে নক করে।

"মাম্মা, তোমার এই পেইজ কিন্ত ভালো হিট হইতাছে, চলো এই সুজগে কিছু কামায়া লই।"

"কী কস ব্যাটা?!"

"হ, চল সাভার ভিকটিমগো পুনর্বাসনের লাইগা একটা ফান্ড রেইজ করি এই পেইজ থিকা। দ্যাশ-বিদেশের লোকজন সবাই কুনো না কুনো ভাবে হেল্প করবার চাইতেছে, পরিস্থিতি সফট থাকতে থাকতে ফান্ড কালেক্ট কইরা ফেলতে হইবো। আর কয়দিন বাদে মাইনষের ইমোশন যাইবো কইমা তখন কিন্ত কিছু পাইবা না কইলাম!"

তরুনটি তার বন্ধুটিকে ব্লক করে দিয়ে মনিটরের অনির্নেয় পিক্সেলের সাথে নিজেকে লীন হতে দেখে। একজন কমেন্ট এ জানালো, তারা আহতদের একটি লিস্ট করছে সব হসপিটাল ঘুরে ঘুরে, পরবর্তিতে কেউ পুনর্বাসনে সহায়তা করতে চাইলে কাজে লাগবে। মনিটরে মাথায় সাদা কাপড় বাঁধা একজন দেবদূতের পাখাহীন অবয়ব অংকিত হয় সমবেত প্রচেস্টায়। সবাই একমত হয়, একমাত্র দেবদুতের পক্ষেই সম্ভব টানা ৭ দিন ৭ রাত ধ্বসে পড়া বিপুল কংক্রিট-পলেস্তারার প্রতিটি কোষ তছনছ করে জীবিত-মৃত মানুষ উদ্ধার করা। কেউ কেউ বলে মাথায় সাদা কাপড় বাঁধা এই ফেরেস্তা কয়েকশ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে আর লাশের সংখ্যার তো কোন ইয়ত্তা নেয়। লাশবাহি অ্যাম্বুলেন্স তিব্র আশংকা অথবা আশা ছড়িয়ে অধরচন্দে ঢুকে পড়লে তাকে দেখা যেত সবার আগে। পচা-গলা মানুষ বা তার ভগ্নাংশ পরম মমতায় শুইয়ে দিত বারান্দায়, লাশের অপেক্ষায় মানুষগুলোকে তার অদৃশ্য পাখার ছায়ায় জিরোবার সুযোগ দিত। রংপুর না গাইবান্ধার এক প্রায়ান্ধ বৃদ্ধ নিখোঁজ মেয়ের লাশের আশায় হাতড়ে ফিরত অধরচন্দ্রের মাঠে আর বলত, "হামার বেটিডাক ঢুঁড়্যা এ্যানা দ্যাও তোমরা বাহে, হামি চক্ষে দেখি না। হামার বেটির মুখোত বসন্তের দাগ আছে বাহে। অর মাক হামি ক্যামনে মুখ দেখামু বাহে, বেটির লাশখান যুদি না নিবার পারি"
সবাই বলে, এই প্রায়ান্ধ বৃদ্ধের এবং গাইবান্ধা বা রংপুরে তার অপেক্ষমান স্ত্রীর অমিত দুঃখের লাঘব করেছিল সেই ফেরেস্তা, তাদের মুখে পক্সের দাগওয়ালা একমাত্র মেয়ের গলিত লাশ উদ্ধার করে। এরপর অনেকেই একে একে আরো অসংখ্য ফেরেস্তার পাখাহীন উড্ডীন এর খবর দিতে থাকে। পরীক্ষা ফেলে ছুটে আসা ১৫ বছরের মনোয়ার, করাত-বাটালি ফেলে এক দৌড়ে ছুটে আসা কাঠমিস্ত্রী রফিক, বোনের লাশের খোঁজে ছুটে আসা আজগর, প্রকৌশলী কায়কোবাদ, অনলাইন এ্যাকটিভিস্ট বাঁধন, এনাম মেডিক্যাল কলেজের সব ছাত্র-শিক্ষক এরকম অনেক মানুষের অদৃশ্য পাখার গজিয়ে ওঠা চাক্ষুষ করেছিল সবাই রানাপ্লাজার ধ্বংশস্তুপের সামনে এবং তারা একই সাথে অনুভব করেছিল এমন দাঁতাল সংকটের কালে মাথায় সাদা কাপড় বাঁধা ফেরেস্তা যেমন থাকে তেমনই থাকে ঝোড়ো শকুন। লাশগুমের গুজব ও লাশের সংখ্যা নিয়ে বাতাস ঘোলা করে কার্যত তারা সেই অভাগা লাশের উর্বরতায় ফুলে-ফেঁপে উঠবে, কমেন্ট এ এমন কথা বললে কমেন্টাকারির ওপর কেউ কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রয়াশ পায়, তারা বলে লাশের সংখ্যা কমিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা আর অপকর্ম ঢাকার এই প্রচেস্টা রাস্ট্রযন্ত্রের জন্য নতুন কিছু নয়। ওয়ালমার্ট সহো অন্যান্য নামী ব্র্যান্ড এর আউটলেটের সামনে ভিনদেশী মানুষগুলোর প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষভের ছবি আপলোড করে কেউ, সাভার ভিকটিমদের প্রতি ফোঁটা রক্তের পেছনে তাদের প্রতিযোগীতামুলক দামে পন্য প্রাপ্তিকে দায়ি করে অনেকে প্রতীকি লাশ হয়ে শুয়ে আছে ইউরোপ-আমেরিকার রাস্তায়; এমন ছবিও ট্যাগ করে দেয় একজন।

"লাখ লাখ মানুষ এই শিল্পের সাথে জড়িত। বায়াররা যদি সাভার ঘটনার পর বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে এই শিল্পের সাথে জড়িত এই বিপুল সংখ্যক মানুষের ভরন-পোষনের দায় কি সরকার নেবে, বা নিতে পারবে? মিডিয়াতে যেভাবে সাভার নিয়ে কাভারেজ হচ্ছে এতে করে বায়ারদের উপর প্রেসার পড়বে এবং তারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে এই বিশাল মার্কেট কার দখলে যাবে বুঝতে পারছেন আপনারা?"

"আপনি কী বুঝতেছেন না, আপনার ঐ বায়ারদের অতি মুনাফা লোভের বলি হচ্ছে ঐ হতভাগ্য শ্রমিকরা? তারা লোয়েস্ট প্রাইজে প্রোডাক্ট নিবে আর গারমেন্টস মালিকরা তাদের অতি লাভের ছোট অংশ ছাইড়া দিবে বলে আপনি মনে করেন? আলটিমেটলি বায়ার আর মালিকদের জাঁতাকলে চিড়েচ্যাপটা হচ্ছে কে? লাখ লাখ লোকের ভরনপোষনের জন্য হাজার হাজার মানুষ ঠান্ডা মাথায় খুন কী জায়েয হয়ে গেল?!"

তরুনটি মাইক্রো-ম্যাক্রো ইকনোমিক্সের বিবিধ উপাদানের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থানের উন্নয়ন-অবনমনের স্থিতিস্থাপক গ্রাফের ওঠানামার সাথে প্রান্তিক মানুষের চাপা পড়ে বা আগুনে পুড়ে বা আতংকে পদদলিত হয়ে কৌতুককর মৃত্যর দিকে ছুটে যাওয়া দেখতে পায়। সোশ্যাল মিডিয়ার আয়নায় সে দেখে রানাপ্লাজার সাথে সাথে ধ্বসে পড়ার কিউয়ে দাঁড়িয়ে আছে পুরো দেশ।

খাবার টেবিলে তরুনটির রিটায়ার্ড বাবা তার কাছে রানার গ্রেফতার পরবর্তি আপডেট জানতে চান এবং মাথা নেড়ে বলেন
"কিচ্ছু হইব না বুঝলি, কয়দিন ফাল পাড়বো রানারে নিয়া, তারপর পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হইলে জামিনে বারায়ে আসবো। তাজরিনের মালিকের কিছু হইছে?"
তিনি তার অভিগ্গ বৃদ্ধাংগুলি টেবিলে বসা সবার চোখের সামনে নাচিয়ে রাস্ট্রযন্ত্রের কার্যক্রমে তার অনস্থার কথা জনিয়ে দেন।

"রানাপ্লাজা নাহয় ধ্বইসা পড়সে, নয়তলা বিল্ডিং হাজার হাজার মানুষ নিয়া ধ্বইসা পড়লে সবাই দেখবার পায়। কিন্ত সবার দেখার বাইরে কতো কিছু ভাইংগা পড়তেছে, সে খবর কী আমরা রাখি? ঐ বিল্ডিং এর নকশার অনুমতি দিছে যে লোক, যেই ইন্জিনিয়ার আর লেবার ইন্সপেক্টর কারখানা পরিদর্শন কইরা নিরাপদ বইলা অনুমতি দিছে, তাগো দেখলেই তো বুঝা যায় পুরা দেশটা ভাইংগা পড়ার অপেক্ষায় আছে। অগো কথা রাখ, আমার পেনশনের টাকা পাওনের লাইগা ঘুষ দিতে হইলো না?। ৩ বছরের মাইয়ারে নিয়া বাবা-মা বেড়াইতে গেল কক্সবাজার, ছিনতাইকারির গুলিতে বাবার হাতের মইধ্যে মাইয়াটা মারা গেল। র‌্যাবের গুলিতে পা হারাইলো লিমন। সাদা পোষাকের লোক মানুষ গুম কইরা দেয়, লাশ পাওয়া যায়আরো কতো উদাহরন আছে, কোনটা ছাইড়া কোনটা কমু?"

বাবার আংগুলের ফাঁকে ফাঁকে শুভ্র ভাত, ডাল-আলুর মাখামাখিতে লজ্জিত হয়, বাবার লোকমার মধ্যে তারা জড়োসড়ো হয়ে থাকে। তরুনটির মা লজ্জিত ভাতের পক্ষ নিয়ে বাবা-ছেলেকে দেশ উদ্ধারের দায়িত্ত থেকে সাময়িক অব্যহতি নিতে তাড়া দেন, কিন্ত রিটায়র্ড বাবার কথা বলা জারি থাকে,

"এই দেশে চান্দে রাজাকারের চেহারা দেখায়া তারে পয়গম্বর বানানোর ফিকির করা হয় আর এই ফিকিরে কতোগুলা লোক মরে! আমার এক্স-কলিগ, ঐযে এ্যাকাউন্টস এর মনসুর সাহেব; রাইত ৩ টার সময় ফোন দিয়া কয় কি, ভাই ওজু কইরা চান্দের দিকে তাকান, সাইদি সাহেবরে দেখা যাইতেছে। বুঝো অবস্থা।




"১৭ দিন পরে বিল্ডিং এর তলা থাইকা বাইর হইল এক মাইয়া, চকচকা জামা কাপড় পইরা, পাবলিকরে চোদনা পাইসে? সরকারের তালটিবালটি পাবলিক বুঝে না?"এ

"ঐ মিয়া, তুমি বাল জানো? পাকিস্তানে এক মহিলা ৪১ দিন আটকা আছিল ভুমিকম্পে ভাইংগা চাপা পড়া এক বিল্ডিং এ। পায়খানার লাইনের পানি খায়া বাঁচছে। তাইলে রেশমা পারবো না ক্যান?"

আমরা শহরের ব্যাস্ততম ও উজ্জলতম দুটি রাস্তার জড়াজড়ির ফাঁদে আটকে থাকা একটি ভ্রাম্যমান চা-শালায় দুই জন কাস্টমারের বাহাস দেখছি। হাজার ছুঁই-ছুঁই লাশের মধ্যে ফিনিক্স পাখির উজ্জলতা নিয়ে রেশমা বেরিয়ে আসে এবং সমবেত উদ্ধারকর্মীদের আল্লাহুআকবার ধ্বনির সাথে টিভি চ্যানলেগুলোর মুহুর্মুহ "অলৌকিক" শব্দটি দর্শকদের চোখে-কানে ছুঁড়ে দিলে দর্শকদের মাথা সৃস্টিকর্তার প্রতি আনত হয়। কেউ কেউ আবার এর সাথে সরকারী দলের সুক্ষ্ রাজনৈতিক চালের অস্তিত্ত আবিস্কার করে। মাটির সাথে প্রায় মিশে যাওয়া রানাপ্লাজার নিচ থেকে রেশমার জীবিত উদ্ধারের ঘটনা অনেক মানবিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। কেউ কেউ এইসব ক্রমবর্ধমান ধ্বংস ও বিরুদ্ধ সময়ের বিপরিতে রেশমাকে প্রত্যাশাপুর্ন সুন্দর আগামি হিসাবে দেখে, কেউ কেউ তাদের নিহত-নিখোঁজ আত্তিয়-স্বজন রেশমার মতো সৌভাগ্যের দেখা কেন পেল না এই নিয়ে আক্ষেপে জর্জরিত হতে থাকে আবার কেউ কেউ উদ্ধার পরবর্তি রেশমার আগাম সুসময় কল্পনা করে কিছুটা ঈর্ষার জ্বলনে দগ্ধ হয়। ভ্রাম্যমান চা-শালার দুই কাস্টমারের বাহাস অনুসরন করে আমরা দেখতে পাই বিবিধ কর্পোরেট হাউজগুলো তাদের সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির আওতায় রেশমাকে নিয়ে এসে তাদের ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ছে। কেউ নিয়ে আসছে রেশমার জন্য মোটা অংকের টাকার চাকরি, কেউ নিয়ে আসছে দীর্ঘমেয়াদি সাহায্যের আশ্বাষ, কোম্পানির লোগো সম্বলিত গিফট প্যাকেট ইত্যাদি ইত্যাদি। রেশমার কল্যানে দিনাজপুরের সেই অনগ্রসর ও দারিদ্রপীড়িত অন্চলটির মানুষগুলো যুগপৎ আনন্দ ও ঈর্ষার শিকার হয়। তারা রেশমাদের জীর্ন ভিটের সামনে ভিড় করে, ভিড়ের মধ্যে কেউ কেউ তাদের মা-বৌ-বোনদের রেশমার মতো রানাপ্লাজার ধ্বসে পড়া তলানিতে কল্পনা করে এবং ১৭ দিন অন্ধকারে যুদ্ধ করার কথা ভেবে শিউরে ওঠা, এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার রেশমার এই অপ্রত্যাশিত সৌভাগ্যে উদ্বেলিত হয়ে তাদের মা-বোন-বৌদের দ্বিধাহীন রানাপ্লাজার অন্ধ খোঁড়লে নিক্ষেপ করে তাদের জীর্ন ভিটায় কংকালসার শরীরে সাচ্ছন্দের মেদ-মাংশের প্রলেপের কল্পনা করে।

"আর আমাগো মিডিয়ার অবস্থা দেখ, মাইয়াটারে এতোদিন পরে জীবিত উদ্ধার করলো আর সাম্বাদিক আয়া কয় কি ১৭ দিন চাপা পইড়া থাকার পরেও আপনার কাপড় এতো পরিস্কার থাকলো ক্যামনে? এই ১৭ দিন আপনি কী খায়া ছিলেন?"

"আমি কি কই হুনো, ঐ সাম্বাদিক বেটিরে ১৭দিন রানাপ্লাজার ঐ ঘরে আটকায়া রাইখা জিগাইতে হইবো আপনের ক্যামন লাগতেছে? কী খায়া ছিলেন?"

ভ্রাম্যমান চা-শালায় যে গল্প-প্রতিগল্প চায়ের বলকের সাথে ফেনিয়ে উঠছে তা অলস মানুষের নিছক সময় কাটানোর উপলক্ষ হয়ে থাকে না বরং সেগুলো রাস্ট্র-সমাজের ঘেয়ো প্রতিফলনের প্রকাশও হয়ে ওঠে।




একটি বেসরকারী গবেষনা সংস্থার ক'জন উচ্ছল মাঠকর্মি দাতাদের সাহায্যপুস্ট গাড়িতে সাভার এবং ঢাকার হসপিটাল-ক্লিনিকগুলো চষে বেড়ায়। উদ্ধারকৃত আহত শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থা এবং সাভার ঘটনায় তাদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির পরিবর্তন- এই টপিকস এর উপর প্রশ্নপত্রের জেরক্স কপি আচমকা শেষ হয়ে গেলে তারা শহরে নতুন গজিয়ে ওঠা কফিশপে কফি খায় খুনসুটি সহযোগে। এনাম মেডিক্যালে আহত সবারই সাক্ষাৎকার নেয়া গেছে শুধু একজন কোমায় অতল ঘুমে ঢুবে থাকায় তার ভাগের প্রশ্নপত্রটি অসংখ্য প্রেসক্রিপশন, মেডিক্যাল ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট এর সাথে রেখে আসতে হয়েছে। তারা কফি খাওয়ার অবকাশে প্রশ্নপত্রের আরো কিছু কপি করে ফেলে এবং তারা সেল ফোনে অনলাইন নিউজপোর্টাল থেকে রানাপ্লাজার লাশের সর্বশেষ সংখ্যা টুকে নেয়। আজকের দিনটিকে কাট-অফ ডেট ধরে তারা রিপোর্ট তৈরী করবে ফলে ৯৭৮ সংখ্যাটিকে তাদের আকর্ষনীয় মনে হয় না। ৪ অংকের সংখ্যা হলে রিপোর্টটিতে ভয়াবহতার অংকন আরেকটু রোমহর্ষক হতো। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ আশা প্রকাশ করে, দিন শেষে আরো ২৮ টি লাশ যোগ হয়ে সংখ্যাটিকে কাম্য অবস্থায় নিয়ে যাবে। মাঠকর্মিরা এবার শ্যামলী শিশুমেলার কংক্রিটের ডাইনোসর, ফুটপাথের জুতো-স্যান্ডেল আর বারোয়ারী অস্থায়ি দোকান এড়িয়ে পংগু হাসপাতালের আবছায়া ল্যাবিরিন্থে ঢুকে পড়ে। প্রতিটি আহত মানুষের কস্ট এবং সংকটের প্রকৃতি এতোটাই বৈচিত্রপুর্ন যে মাঠকর্মিরা তাদের সাধারনীকৃত প্রশ্নপত্র পুরন করতে যেয়ে বিব্রত বোধ করে। বাম পা হারানো শেফালি জানালো, বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত সাহায্যের ৫ লাখ টাকা নিয়ে তার স্বামী লাপাত্তা হয়ে গেছে ক'দিন আগে। দুই মাসের বিবাহীত রুবিনা মেহেদীরাংগা হাতদুটো হারিয়ে খুব বিব্রত, শুভ্র ব্যান্ডেজ মোড়া বাহুমুলে দুমাস আগের মেহেদীর ছাপচিত্র খুঁজলে পাওয়া যাবে হয়ত- এমন প্রত্যাশা নিয়ে সে কাটা হাতের ভয়াবহতা ভুলে থাকতে চাইছে। মাঠকর্মির দলে উচ্ছল মেয়েটি রুবিনার কাটাপড়া মেহেদীরাংগা হাত এবং নিজের সচল হাতদুটির কথা ভেবে কড়ে আংগুল থেকে বাহুমুল পর্যন্ত অসাড়তার প্রবাহন অনুভব করে। সৈয়দপুরের আজগর জানালো, হাসপাতালের সাধারন দর্শনার্থিদের দান করা হাজার তিনেক টাকা ছাড়া সে আর কোন সাহায্য পায়নি, মেরুদন্ডের ভাংগা হাড়ের কস্ট ছাপিয়ে সরকারী-বেসরকারী সাহায্যকারীদের বৈষম্যমুলক আচরন মুখ্য হয়ে ওঠে। আজগর মাঠকর্মিদের মাধ্যমে সেই সব পক্ষকে তার অভিযোগের কথা পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করে। হাসপাতালের একজন সার্ভিস এ্যাটেনডেন্ট মাঠকর্মিদের জানালো, এই ওয়ার্ডের শেষ প্রান্তে দুই পা কাটা যে মেয়েটা, তার স্বামীকে সে সেলফোনে বলতে শুনেছে, দু'পা হারানো বৌ নিয়ে সে কী করবে, ল্যাংড়া-লুলা কাউরে তো কেউ কাজে নিবে না, শেষ-মেষ কিছু না হলে ঢাকা শহরেই ভিক্ষার ব্যবস্থা করে দেবে; গ্রামে আর ফিরিয়ে নিয়ে যাবে না। মাঠকর্মিদের সাথে একজন বিধবা বৃদ্ধার কথা হয় যিনি একবেলা হাত-পা ভাংগা অচেতন মেয়ের পাশে থাকেন আর একবেলা রানাপ্লাজার সামনে আরেক মেয়ের লাশের অপেক্ষায়।

এই সব স্নায়ুধ্বংশি ঘটনার বিবরন লিপিবদ্ধ করতে করতে মাঠকর্মিরা ক্লান্ত হয়ে পড়লে তারা লক্ষ্যমাত্রার কিছুটা আগেই তথ্য-শিকার স্থগিত করে।





৮।


রুপা এখন সাভারের গলিত লাশের দমবন্ধ গন্ধের সাথে বসবাস শিখে গেছে, শুধু এবাবদ তাকে হারাতে হয়েছে রাতের ঘুম। লাশের গন্ধ দুহাতের আংগুল ছড়িয়ে বিস্তৃত হয়েছে সবখানে। ঘুমাতে গেলেই পৃথিবীর সব অক্সিজেন লোপাট হয়ে যায় রানাপ্লাজার লাশগুলোর হাড়-মাংশের অবশিস্টে। রুপার অক্ষত ফুসফুস এই ভার নিতে অক্ষম, তাই রাতের ঘুমটুকু ছেঁটে ফেলেছে ও। মধ্যরাতে ঘরভর্তি লাশের গন্ধ নিয়ে রুপা আমাদের জন্য তৈরী করছে বাবুর মৃত্যরহস্যের চিত্রনাট্য। রানাপ্লাজার উদ্ধারকর্মি বাবুর ঢাকা মেডিক্যাল থেকে বাবুর অন্তর্ধান এবং মেডিক্যালের ভেতরেই তার মৃত্য টিভির নিউজের জন্য যথাযথ করে উপস্থাপনের জন্য রুপাকে চিত্রনাট্যের খসড়ায় কাটাছেঁড়া করতে হয়। যেমন বাবুর বউকে রুপা একই প্রশ্ন করেছিল ৪ বার;
"বাবু মানষিক ভারসাম্য হারানোর আগে কী কোন রকম দুর্গন্ধ পেত?"

জাতীয় মানষিক হাসপাতালে রুপা আরো কয়েকজনের সাভার সেচ্ছাসেবকের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল যারা বিভিন্ন মেয়াদে ভর্তি আছে এখানে। রকিব, সাভারে তার একটা ছোট ব্যবসা আছে, সাভার ট্রাজেডির পর আরো অনেকের মতো সেও ঝাঁপিয়ে পড়েছিল উদ্ধার কাজে। ওদের দলে ছিল ২৫ জনের মতো সেচ্ছাসেবক, তাদের একজন মনির। উদ্ধার কাজে অংশ নেয়ায় হারাতে হয়েছে কাঠের দোকানের কাজটি। কিছুদিন আগে মনির অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়ে। বিছানা-বালিশ, খাটের নিচে সব জায়গায় শুধু লাশের খোঁজ করতে থাকে। শেষে মনিরের বাড়ির লোকজন রকিবকে খবর দিয়ে নিয়ে আসছে এখানে। রকিব রুপাকে আরো জানায় ওদের টিমের আরেকজন, নাম রাইহান; কিছুদিন আগে আত্মহননের চেস্টা করেছে দু'বার, এখন হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। রকিব নিজে ইন্সমেনিয়াক হয়ে পড়েছে। রাতে ঘুমালেই স্বপ্ন দেখে ভেংগে পড়ছে পৃথিবী। রুপা জানতে চায়, ওদের মধ্যে এমন কেউ আছে যে এখনো লাশের গন্ধ পায়? রকিবের তা জানা নেয়। রকিব বলে;

"জানেন, রাইহান আমাকে বলেছিল, রকিব ভাই আমি কী পাগল হয়ে গেছি? চারদিকে শুধু লাশ দেখি, লাশেরা আমারে ডাকে, বলে; ভাইরে আমারে আমার বাবা-মার কাছে পৌঁছায় দে! আমি ওকে বলছি, আপনিই সুস্থ, এইজন্যই ওদের দেখতে পান। শেষবার রাইহান হ্যাক্সব্লেড দিয়ে নিজের হাত কাটার চেস্টা করছিল।"

রুপা আমাদের জন্য বাবুর মৃত্য রহস্য নিয়ে যে ফিচারটি তৈরী করছে, তার চিত্রনাট্যে কয়েকজন মনোবিদ ও মানষিক চিকিৎসকের বক্তব্য জুড়ে দেয়। এইসব বক্তব্য ধারনের কালে রুপা তাদেরকে কয়েকবার লাশের গন্ধ অনুভব ও মনোবিকলনের সাথে এর সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চেয়েছে কয়েকবার।

মধ্যরাতে তৃতীয় বারের মতো শাওয়ার নেয়ার সময় নিজেকে তন্নতন্ন করে শুঁকে, গলা-পচা লাশের গন্ধে পিস্ট হতে হতে রুপা বাবুর মৃত্য রহস্যের প্রথম ভাগের টেলিকাস্ট নিয়ে ভাবতে থাকে।







আমরা কতিপয় কর্পোরেট হোয়াইট কলার, বছরের প্রথম অংশের ব্যবসার উচ্চ-মুনাফা উজ্জাপন ও বছরের পরবর্তি অংশের মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারনের জন্য একটি টিম বিল্ডিং সেশনের আয়োজন করি শহরের বাইরে। শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অফিস ভেহিকেলে বিবিধ কর্পোরেট জোকস ও খুনসুটি সহযোগে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। বিভাগীয় প্রধান তার মাতৃবিয়োগের শোক কাটিয়ে আবার প্রগলভ হয়ে উঠেছেন। গতো বছরের রেভিনিউ এর সাথে তুলনা করে এই বছরের স্যালারি ইনক্রিমেন্ট এর হার নিয়ে আমরা কেউ কেউ উস্মা প্রকাশ করি। মুল্যস্ফিতি ও দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আমরা হতাশ হই এবং এই হতাশা প্রশমনে, টিম বিল্ডিং সেশনের শেষে রাতে মদ্যপানের সম্ভাবনার কথা ভেবে উজ্জিবিত বোধ করি। আমাদের মধ্যে একজন বলে,

"বস শুনছেন নাকি, এ্যামেরিকা জিএসপি বাতিল করে দিল?"

"বাতিল না কইরা উপায় আছেরে ভাই? যা শুরু করসে এরা!"

"সরকার লবি করতে পারে না ঠিক মতো আবার বিরোধী দলের নেত্রী কলাম ল্যাখে ডেইলি মিররে, তাইলে আর কী হবে?"

"বাংলাদেশের পোষাকশিল্পের এই সংকট আসলে এতো সরল না"

"ডঃ ইউনুসের পেছনে লাগবেন আর এ্যামেরিকা আপনারে ছেড়ে দিবে, এইটা ভাবলেন কিভাবে?"

এইসব টুকরোটাকরা কথাবার্তা আমাদের যাত্রাপথকে সংকুচিত করে শহরের বাইরে নিয়ে আসে। আমরা দেখি, কয়েকশো পোষাক-শ্রমিক রাস্তার ধারে জটলা করছে তালাবন্ধ কারখানার সামনে। গাড়িগুলো সম্ভাব্য ভাংচুরের ঝুঁকি এড়াতে থেমে গেছে আগেই, ফলে অপ্রত্যাশিত ট্রাফিকে পড়ে আমাদের যাত্রাপথের দুরুত্ত বেড়ে যেতে পারে এমন আশংকা দেখা দেয়। আমরা দেখি আশে পাশের বিভিন্ন কারখানা থেকে স্রোতের মতো মানুষ যোগ দিচ্ছে সেই জটলায়। তাদের চর্বিহীন ত্বকে ঠিকরে ওঠা সুর্য আমাদের বিভ্রান্ত করে দেয়, তাদের অপুস্ট ও অনুজ্বল শরীরে হঠাৎ করে এমন আলোর বিচ্ছুরন আমাদের যুগোপৎ বিরক্ত ও আতংকিত করে তোলে।

বকেয়া বেতন ও পাওনা ওভারটাইমের দাবি হাজার কন্ঠে গর্জন হয়ে আমাদের শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অফিস ভেহিকেলে ঢুকে পড়ে বিস্ফরনের অপেক্ষায় ফুঁসতে থাকলে আমরা কুঁকড়ে যায়। সাভারের ধ্বস বিস্তৃত হয়ে ঐ হাজার কন্ঠের ক্ষোভের সাথে আঁতাত করে আমাদের দিকে ধেয়ে আসে, আমরা দমবন্ধ করে তার অপেক্ষা করি।







১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×