ব্লগে ভাগিনি এবং ভগিনিরা মজাদার সব রান্নার রেসিপি নিয়ে হাজির হন। সেগুলো দেখে জিভে জল আসে। ভাগিনা এবং ভ্রাতারা দেখি দাওয়াত পাওয়ার জন্য তাদের দেন দরবার করেন।কিন্তু ভাগিনা/ভ্রাতারা কখন্ও রেসিপি নিয়ে হাজির হন না। তাদের হেন অকর্মণ্যতায় শেষ পর্যন্ত আমার নিজেকেই হাল ধরতে হল। তাই আজ আমি কাকা ফেরদৌস এর রান্নাঘর থেকে ঈদের দিনের সকালের এমনকি প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় রেসিপি ”গরম পানি রান্না” নিয়ে হাজির হয়েছি। ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়তে যা্ওয়ার আগে প্রয়োজন গোসলের, আর সেই গোসলের জন্য অনেকেরই প্রয়োজন হয় গরম পানির। এমনকি সারাদিন খা্ওয়ার জন্য্ও প্রয়োজন ফুটানো পানির।
কাজেই এই রেসিপি অনুযায়ী ফুটানো পানি আপনি গোসলে ব্যবহার করতে পারেন, এমনকি ঠান্ডা করে পান্ও করতে পারেন।
প্রথমেই আসুন দেখে নেই এই রেসিপির জন্য কি কি উপকরণ প্রয়োজন-
উপকরণঃ
১) ওয়াসার পানি ৩/৪ লিটার।
২) পাতিল ও ঢাকনা – ১টি করে
৩) দিয়াশালাই- ১টি
৪) গ্যাসের চুলা- ১টি
৫) রান্নার এ্যপ্রন -১টি
৬) বার্নল বা ডার্মাজিন জাতীয় কোন মলম। (হাত পুড়িয়ে ফেললে লাগানোর জন্য)
প্রাপ্তিস্থানঃ এবার আসুন জেনে নেই এগুলো কোথায় পাওয়া যাবে। কলে পানি থাকলে ওয়াসার পানি হয়তো আপনার বাসায়ই পাবেন। পাতিল আর ঢাকনা পাবেন ক্রোকারিজ এর দোকানে, দিয়াশালই পাবেন মুদি দোকানে, গ্যাসের চুলা আপনার রান্নাঘরে থাকার কথা আর এ্যপ্রনটি কোথায় পাবেন তা আমিও জানিনা (ভাগিনি বা ভগিনিরা খোঁজ দিলে খুশি হতাম)।
মূল্যঃ ওয়াসার পানিতে খরচ খুবই সামান্য আর আপনার পানির মিটার যদি টেম্পার করা থাকে তবে কোন খরচই হবে না। ভাল এলুমিনিয়ামের পাতিল নিতে গেলে ৫০০টাকা কেজি আর ভেজাল্লা নিলে ৩৫০টাকা। একটি দিয়াশালাই ২ টাকা। গ্যাসের চুলা যদি রান্না ঘরে না থাকে তবে গরম পানি রান্নার দরকার নাই আর এ্যপ্রন এর দাম জানা নাই। এ্যপ্রন এর বিকল্প হিসাবে স্ত্রীর ঢিলা ঢালা কোন কামিজ চুরি করে আপাতত চালিয়ে দিতে পারেন।
রান্নাটি খাওয়ার জন্য করলে প্রতি লিটারে যে সব উপাদান পেতে পারেনঃ
১) আর্সেনিক – ১০ গ্রাম
২) আয়রন – ৫০ গ্রাম (মরিচা থেকে)
৩) আমিষ -১০০ গ্রাম (কেঁচো এবং মশার বাচ্চা থেকে)
৪) বিভিন্ন বর্জ্য -১৪০ গ্রাম ( সোয়ারেজ লাইনের)
৫) পানি- ৮০০ গ্রাম
রন্ধন প্রণালীঃ প্রথমে একটি পাতিলে ৩/৪ লিটার ওয়াসার পানি নিন, এরপর গ্যসের চুলার নবটি ঘুরিয়ে সেটি খুলুন।যদি চুলা থেকে শোঁশোঁ শব্দ হয় তবে বুঝবেন আপনি সঠিক কাজটি করতে পেরেছেন। দিয়াশালাই এর কাঠিটি জ্বালান (এ কাজটি আপনি ঠিক মতই পারবেন কারণ বিড়ি ফোকা শিখার সময়ই এ কাজটি ভাল ভাবে রপ্ত করে ফেলছেন)। এবার কাঠিটিকে র্বানারের কাছে আনুন, দেখবেন দপ করে একটা শব্দ হয়ে আগুন জ্বলে উঠেছে। শব্দ শুনে ভয়ে পালালে চলবে না কারণ আপনি পুরুষ মানুষ, আপনি সাহসী, আপনি পারবেন। এরপর চুলার উপর পাতিলটি চাপিয়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। ১৫-২০মিনিট অপেক্ষা করুন, যদি দেখেন পাতিলের ভিতর থেকে সাঁসাঁ করে বাস্প বেরিয়ে আসছে তবে বুঝবেন আপনি সফল হয়েছেন! আপনি পেরেছেন! এবার গোসলের জন্য হলে চুলাটি বন্ধ করে গরম গরম পরিবেশন করুন আর খাওয়ার জন্য হলে চুলাটি কমিয়ে দিয়ে আরও ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর চুলাটি বন্ধ করে ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন।
বিঃদ্রঃ আপনি এখন পুরোপুরি রাধুনি, আর কোন ভাগিনি/ভগিনির দাওয়াতের অপেক্ষায় আপনাকে বসে থাকতে হবে না। স্বাবলম্বি হউন, নিজে রাধুন, নিজে খান।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:০৩