মিলাদুন্নবী পালনের পক্ষে বা বিপক্ষে বেশ বিতর্ক দেখা যায়। মূলত বিতর্কটা মিলাদুন্নবী পালন নিয়ে নয়। বরং পালনের পদ্ধতি নিয়ে।আর এক্ষেত্রে আমার মনে হয় বিতর্ক না করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের অনুসরণ করা উচিত। তারা কিভাবে মিলাদুন্নবী পালন করেছেন সে ব্যাপারে আমাদের দেখা উচিত। আমরা সাহাবীদের থেকে রাসূলুল্লাহ কে বেশি মহব্বত করতে পারব না। সাহাবী গণ ছিলেন শ্রেষ্ঠ জাতি এবং আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। সুতারং ইসলাম ধর্মের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোন যুক্তিতর্ক না খুঁজে বরংচ সাহাবীগণের অনুসরণ করাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।সুতরাং আজ আমরা দেখবো কিভাবে মহানবী ও সাহাবীগণ মিলাদুন্নবী পালন করেছেন!
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। উত্তরে তিনি বলেন
ক। এইদিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমি নবুওয়াত পেয়েছি। (মুসলিম 2/ 819)
খ। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবারে জন্মগ্রহণ করেন সোমবারে নবুওয়াত লাভ করেন সোমবারে ইন্তেকাল করেন সোমবারে মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনার পথে রওনা করেন সোমবারে মদিনা পৌঁছান এবং সোমবারই তিনি হাযরে আসওয়াদ উত্তোলন করেন (মুসনাদে আহমদ/2506)
অর্থাৎ মহানবী সাঃ সোমবার রোজা রাখতেন কারণ তিনি সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি মিলাদুন্নবী সাপ্তাহিক ভাবে উদযাপন করতেন।
প্রিয় ভাই, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুসরণ এই রহমত ও বরকত। তিনি যে ইবাদত যেভাবে পালন করেছেন সেভাবে পালন করা সুন্নত।বিভিন্ন সহীহ হাদীসের আলোকে আমরা দেখেছি যে সুন্নত ভালবাসলে ও সুন্নত জীবিত করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে জান্নাতে অবস্থানের নেয়ামত লাভ করা যাবে।ফিতনার সময় সাহাবীগণের সুন্নত অবিকল অনুসরণ করলে 50 জন সাহাবীর সমপরিমাণ সব পাওয়া যায়। কাজেই আমরা যদিমিলাদুন্নবী এর আনন্দ অবিকল রাসুলুল্লাহ সাঃ সাহাবীগণের পদ্ধতিতে করতে পারি তাহলে আনন্দ প্রকাশের সাথে সাথে এরূপ অফুরন্ত সওয়াব লাভ করতে পারব।তাহলে আমরা কেন সুন্নত পদ্ধতি বাদ দিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত পদ্ধতিতে মিলাদুন্নবী পালন করব?সুন্নত পদ্ধতিতে সওয়াবব কম হয় মনে করে না সুন্নত পদ্ধতি বর্তমানে অচল মনে করে?না সইতে পারে তো সুন্নত অবজ্ঞা করার গুনাহ হয়ে যাবে। মিলাদুন্নবী পালনের সুন্নাত পদ্ধতি হলো প্রতি সোমবার সিয়াম পালনের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানানো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে আমাদের এ পদ্ধতি শিখিয়েছেন। এছাড়া আমরা দেখেছি যে মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও পরবর্তীকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার দিন সিয়াম পালন করেছেন। এ থেকে আমরা বুঝি যে,বড় নেয়ামত ও বিজয় আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ক্ষেত্রে নবীগণের সুন্নত হল সিয়াম পালন।
আর বাৎসরিক মিলাদ পালনের ক্ষেত্রে রাসুল সাঃ এর কোন সুন্নত অথবা সাহাবীগণের কোন সুন্নত খুঁজে পাওয়া যায় না। বরংচ 12 ই রবিউল আউয়ালে যে জন্মদিবস পালন করা হয় তা নিয়ে বিতর্ক আছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন তা নিয়ে সাহাবীদের মধ্যে বিতর্ক ছিল। কেউ বলেছে মহরম মাসে, কেউ বলেছে সফর মাসে, কেউ বলেছে রমাদান মাসে আবার কেউবা বলেছে রবিউল আউয়াল মাসে। সুতারং কত তারিখ তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন সেই বিষয়ে স্পষ্ট বা ঐক্যবদ্ধ কোন মত পাওয়া যায় না।আর তাছাড়া 12 ই রবিউল আউয়াল বা অন্য কোন দিনে মিলাদ উপলক্ষে আনন্দ উৎসব বা সমাবেশ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ এর মধ্যে দেখা যায় না।মিলাদে মোস্তফা আনন্দ প্রকাশের ক্ষেত্রে সাহাবীগণের সুন্নত হল সর্বদা তার সীরাত ও শামাইল আলোচনা করা। সাহাবীগণ সদাসর্বদা সুযোগমতো রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনী জন্ম ও সিরাত সুন্নত আখলাক নির্দেশ এগুলো আলোচনা করতেন। আমাদের উচিত নির্দিষ্ট দিনক্ষণ, বা তারিখ এগুলো ঠিক না করে সময় মত সুযোগ মত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর জীবনী আলোচনা করা।
মিলাদুন্নবীর ইতিহাস, কিভাবে মিলাদুন্নবীর উৎপত্তি হলো, মানুষের মাঝে কিভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করল এ ব্যাপারে একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা রয়েছে লিঙ্কে দেওয়া বইতে। আপনারা চাইলে বিস্তারিত এই বই পড়তে পারেন।
পিডিএফ
মিলাদুন্নবী পালনের সুন্নত পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫১