রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিবি
কার্যালয়ের পাশে এক যুবককে
উদভ্রান্ত অবস্থায় কাঁধে ব্যাগ নিয়ে
হাঁটতে দেখা যাচ্ছে।
তার চোখে করুণ দৃষ্টি। পা চলছে
এলোমেলো। মাঝে মাঝে রাস্তার
পাশে বসে কি যেন ভাবে। তাকে
দেখে মনে হয় ভাবনাটা বড় বেশি
গভীর।
একজন ডিবি অফিসার অনেকক্ষণ ধরে এই
যুবককে ফলো করছেন। মিন্টু রোডে কোন
সুস্থ মানুষ এভাবে হাঁটার সাহস করবে
না। যে এরকম করবে হয় সে পাগল নয়তো
নিশ্চিতভাবে টেরোরিস্ট।
এ রকম একজন সুন্দর চেহারার
সন্দেহভাজনকে পাগল ভেবে ছেড়ে
দেয়া একজন ডিবি অফিসারের পক্ষে
সম্ভব না। তিনি মোটামুটি নিশ্চিত
হয়ে গেলেন "ডাল ম্যায় কুচ কালা
হ্যায়।"
এই ভয়ানক সময়ে এই চিজ যে ভয়ানক
কিছু একটা হতে পারে সেটা অনেকটা
শিওর।
খুব দ্রুত এন্টি বোম্ব ইউনিট ডেকে
পাঠালেন। যুবকের কাঁধে ব্যাগ। সে
যদি টেরোরিস্ট হয় তবে তার ব্যাগে
অবশ্যই বোম বা একে-৪৭ জাতীয় কিছু
আছে। আইএসের কালো পতাকা থাকাও
অসম্ভব না। কাছে যাওয়া মাত্র বোম
চার্জ করতে পারে। রাইফেল বের করে
গুলি করে বসতে পারে।
সুতরাং কোন ঝুঁকি নেয়া যাবে না।
এন্টি বোম্ব ইউনিটসহ কয়েকজন চৌকস
অফিসারকে সাথে নিয়ে যুবককে
গ্রেফতার করতে গেলেন।
যুবকের কাছে পৌছার পর তাঁকে
খানিকটা হতাশ হতে হলো।
কারণ যুবক কোন প্রকার প্রতিরোধের
চিন্তাও করল না।
তার ব্যাগ সার্চ করে বিপজ্জনক কিছুই
পাওয়া গেল না।
তিনি বললেন, আমি ডিবি অফিসার।
আপনাকে সন্দেহভাজন হিসেবে
আমাদের অফিসে নিয়ে যাচ্ছি। কিছু
কথা বলব। তারপর আপনার জবাব
সন্তোষজনক মনে হলে সসম্মানে ছেড়ে
দেয়া হবে।
ডিবি অফিসারকে অবাক করে দিয়ে
যুবক তাঁর পায়ে পড়ে কাঁদতে লাগল।
চোখ মুছে বলল, স্যার! আপনাদের
কাউকেই আমি খুঁজছি। কিভাবে
আপনাদের অফিসে যাব বুঝতে
পারছিলাম না। আমার কিছু কথা বলার
আছে স্যার!
অফিসার আরো সতর্ক হয়ে গেলেন।
সমস্যা কি?
সে কি কোন ইনফর্মেশন দেবে? ভয়ানক
ইনফর্মেশন। নাকি সে তার কোন
আত্মীয় স্বজন হত্যার বিচার দাবী
করতে এসেছে?
নাকি আইওয়াশ করার চেষ্টা করছে?
সাথে গোপন আত্মঘাতী বোমা আছে।
কিংবা কোন গোপন ক্যামেরা?
পরের স্টেপে সার্চ করেও কিছুই পাওয়া
গেল না।
অফিসার সাবধানে যুবককে ডিবি
অফিসে নিয়ে গেলেন।
তারা দুইজন মুখোমুখি বসা। কিছুটা
অন্ধকার রুম। অফিসার ইচ্ছে করেই এরকম
রুমে নিয়ে এসেছেন। তাঁর প্রবল সন্দেহ
এর ভেতর "মাল" আছে। ডিবির
কার্যালয়ে মাল ছাড়া কেউ আসে না।
মাল বের করতে তেড়িবেড়ি করলে
সিস্টেমে যেতে হবে। প্রথম থেকেই
ভয়ের একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
অফিসার ভাববাচ্যে শুরু করে বললেন,
কি সমস্যা?
যুবক বলল, স্যার আমার মনে হচ্ছে আমার
কি যেন একটা রোগ হয়েছে!
প্রথম চান্সেই অফিসারের ইচ্ছে হলো
কষাইয়া চড় মারেন।
ইচ্ছে সামলে বললেন,রোগ হলে
ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। ডিবিতে
কেন? এটাকে হাসপাতাল মনে হয়?
আমরা ডাক্তার?
যুবক কিছুটা ভয় পেল মনে হয়।
একটু গলা নামিয়ে বলল, না স্যার ঐ
রোগ না। আমার একটা কাহিনী আছে।
কাহিনী বলব?
- হু।
- স্যার আমার জন্মের সময় আমার মা
মারা যান। আমি আমার মায়ের কাছে
কোন আদর পাই নি। মায়ের মুখটাও
আমি দেখি নি। স্যার আমার ব্যাগের
মাঝে মায়ের ডেথ সার্টিফিকেট
আছে। বিশ্বাস না হলে দেখুন।
যুবক কাঁদছে। তার ব্যাগ চেক করে সত্যি
সত্যিই তার জন্ম সার্টিফিকেট আর
তার মায়ের ডেট সার্টিফিকেট পাওয়া
গেল।
অফিসার বিরক্ত হচ্ছেন। পারিবারিক
কাহিনী এখানে ফাঁদছে কেন?
এখন নিশ্চয়ই বলবে তার মা কে হত্যার
দায়ে ক্লিনিক মালিককে ধরা হোক।
অফিসার তুমিতে নেমে বললেন, তুমি
কি বলতে চাও তোমার মা কে হত্যা
করা হয়েছে?
- না স্যার। আমার মায়ের মৃত্যু
স্বাভাবিক।
- তুমি কি কোন ব্যাপারে কারো উপর
কমপ্লেইন করতে চাও?
- না স্যার। আমার কোন কমপ্লেইন
নেই।
- কোন ইনফর্মেশন? কিংবা নিজের
কোন অপরাধ স্বীকার?
- না স্যার। আমার কাছে কোন
ইনফর্মেশন নেই। আর আমি কখনো কোন
ক্রাইম করি নি।
অফিসার এবার রাগে ফেঁটে পড়ে
জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে ডিবি
অফিসে এসেছিস কেন? ফাইজলামি
করতে?
যুবক এবার অনেকটাই ভয় পেয়ে গেল।
খানিকটা কাঁপতে কাঁপতে বলল, না
মানে স্যার! আমি একটা জিনিস
জানার জন্য এসেছি। অভয় দিলে বলি?
- বল।
যুবক করুণ গলায় বলল, আমার মা তো
আমার জন্মের সময়ই মারা যান। আমি
আমার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার কোন
সুযোগ পাই নি। বড় হইছি গুঁড়ো দুধ
খেয়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেছেন বুকের
দুধ না খেলে সন্তান জঙ্গী হয়ে যাবে।
আমি জঙ্গী কিনা জানতে এসেছি।
তিন দিন ধরে ঘুমাতে পারছি না
টেনশনে। উনি মন্ত্রী মানুষ। মাথায়
বড়সড় টাক। নিশ্চয়ই অনেক বুদ্ধি। উনি
ভুল বলার কথা না।
যদি জঙ্গী হই এখানে এরেস্ট করুন।
দোহাই লাগে গুলি করবেন না। আমি খুব
ভয় পাই।
যুবক এবার স্বশব্দে কাঁদতে লাগল।
ডিবি অফিসার মিনিটখানেক চুপ
থাকলেন। তারপর হুহু করে শব্দ করে
হাঁসতে লাগলেন।
যুবকের কানের কাছে মুখ এনে বললেন,
তুমি একটা বিরল প্রকৃতির পাগল মানুষ।
তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখাও। নইলে
জনগণ জোর করে তোমারে যে কোন
একটা মন্ত্রী বানাই ছাড়বে।
বুঝছো?
- না স্যার, বুঝি নি।
- বোঝার দরকার নাই। ব্যাগ নিয়া
বিদেয় হও। বহু ত্যক্ত করছো।
অফিসারের মেজাজ চূড়ান্ত খারাপ
হলো। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি
গালি খায় পুলিশ। অথচ সবচেয়ে বেশি
যন্ত্রণা যে পুলিশের এটা কেউ দেখে
না। উপরে সরকার, নিচে চোর ছেচ্চড়,
খুনী, জঙ্গী।
মাঝখানে সাংবাদিক।
শান্তি কোথাও নাই।
অফিসার কয়েকটা কঠিন গালি দিলেন।
কাকে কি বলে গালি দিলেন যুবক সেটা
বুঝতে পারল না।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৩৭