ভাইরে,
কি আর কমু দুঃখের কথা!
ভাইগ্না মূত্র বিসর্জন করে এসে বলে মামা আমাদের বাথরুমটা এত উন্নত ক্যান? কত্তো আলাদা!
কইলাম আলাদা মানে?
ভাইগ্না কইলো দরজা খুললে লাইট অটো জইল্যা উঠে আবার দরজা বন্ধ করলে লাইট নিভ্যা যায়!
আমি তো বুঝছি কি কাম সারছে!! এই মদন আবার ফ্রিজে গিয়া মূত্র বিসর্জন করছে!!
এখন কথা হইলো ও বাচ্চা মানুষ! ভুল হবেই। কিন্তু এই দিকে ভার্সিটি পড়ুয়া এক বন্ধু এর থেকে বিরাট বড় ভুল কইরা আসছে! বলবো সে কাহিনী!
মানুষ তো তাকেই বলে যার মান ও হুশ আছে! মান শব্দটার ততটা বিস্তৃতি নাই! তবে হুশ শব্দটার আছে। হুশের ভিতর আছে বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষন, সিদ্ধান্ত গ্রহনীয় পর্যায়সহ আরো অনেক কিছু।
কিন্তু বুদ্ধির জিনিসটা অজানা বিষয়ে কাজ করে না। আমাদের বুদ্ধি কাজ করে আমরা কতটুকু জানি তার উপর ভিত্তি করে।
যেমন, দশ বছর পর আপনি একই সাথে আপনার দুই স্কুল বন্ধুকে দেখলেন। তবে দুইজন দুই দিকে। দুইজনকে দেখা মাত্রই স্কুল জীবনের সকলে কাহিনী এক সেকেন্ডের ও কম সময়ে আপনার ব্রেনে একটা মুভির মতো এসে যায়! আপনার বুুদ্ধি বললো একজন খারাপ! সে স্কুল লাইফে সব সময় আপনাকে বাঁশ দেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিলো! আর আরেকজন ছিলো খুবই উপকারী! আপনি গিয়ে আপনার উপকারী বন্ধুর সাথে হাত মিলিয়ে কোলাকুলি করলেন। - এখানে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো বলেই আপনি খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন।
এইবার আসি মূল কথায়। আমার ভার্সিটি পড়ুয়া এক বন্ধু ফার্মগেটে থাকে! তো আপনারা যারা ঐ দিকে থাকেন জেনে থাকবেন যে ঐখানে হলের সামনে এবং এপেক্স জুতা দোকানের সামনে সন্ধ্যায় একটা জটলা বাঁধে মানুষের। একজন কথা বলে যায় আর ২০ থেকে ২৫ জন মন্ত্র মুগ্ধের মতো শুনে যায়।
কিন্তু কি এমন কথা বলে যে আপনাকে মুন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলে! সম্পূর্ন অভিজ্ঞতাটা আমার ঐ বন্ধু করেছে।
প্রথমেই মূল বক্তা আপনাকে একটা ম্যাজিক দেখাবে। যেটা সম্পূর্নই ভূয়া ম্যাজিক। বলবে যে তার কাছে একটা কাপড়ের খুপরী আছে। আর ঐ খুপরী তে মন্ত্র পাঠে জ্বীন আসে! জ্বীন তো ফেরাউনের মতো লম্বা তো এই ছোট্ট খুপরীতে তো জায়গা হবে না।তো যাতে জায়গা হয় সে জন্য জ্বীন আসবে কবুতর সেজে!
আর এই কবুতার আনার ফাঁকে আপনার ব্রেনকে একটা ধোঁলাই দিবে। বলবে কবুতর আসবে এটা কে কে বিশ্বাস করেন? যারা অবিশ্বাসী তারা চলে যান। তো লোক লজ্জার ভয়ে কেউ যাবে না। দ্বিতীয় ধোঁলাই দিবে আপনাকে যে কবুতরের খাদ্যের জন্য দশটা করে দিতে। সবাই দিবে এ পর্যায়ে! কারন দশটাকা আর এমন কি! দশটাকা দিয়া জ্বীন ও দেখা যাবে। কিন্তু যারা টাকা দেয় তিন মিনিট পর তাদের টাকা ফেরৎ দিয়ে দিয়ে। এটা আপনাকে মুগ্ধ করার একটা কৌশল! টাকা দিয়ে বলবে মসজিদে দান করে দিতে! আহা! কি মহান!!
এই ভাবে আপনার ব্রেনকে কয়েকবার ধোঁলাই দিবে। এক পর্যায়ে আপনি হিপনোটিজম এর পর্যায়ে চলে যাবেন। কথার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন অজানা কথা আপনাকে বলে অবাক করে দিবে!
তারপর আসবে চূড়ান্ত পর্যায়। এখানে আপনাকে ভয় দেখাবে! আমরা সকলেই জানা অজানা অনেক কাজই করি। যার সবকিছু হয়তো ভালো নয়। তো ঐ লোক বলবে যে এ খানে আছে চরম বেয়াদব। বেয়াদপটাকে চিনতে চান? যে মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে! এ পর্যায়ে ও সবার মন হিশপিশ করে উঠবে! কারন মায়ের সাথে একটু বাজে বিহেভ সকলেই করে রেগে গেলে। তারপর ঐ লোক বলবে কিন্তু না চিনতে হবে না! আল্লাহ বলছে অন্যের দোষ ট্রুটি বর্নণ করা থেকে বিরত থাকতে। আপনাদের দিলে হাত রাখেন! আপনাদের কিছু সমস্যার কথা জ্বীন বলবে।
এইখানে আপনার সম্পর্কে কিছু কথা বলবে। যা আপনার সঙ্গে মিলে যাবে। আর যেটা বলবে সেটা খুবই কমন! তবে তেমন জটিল কিছুই বলবে না। জটিল কিছু বলবে অন্যদের। এমন গহীনের কথা বলবে! টপ সিক্রেট বলবে! যাবতীয় সমস্যার কথা বলবে! এবং যাকে বলবে সে এমনভাবে মাথা নাড়াবে এবং চেহারার এমন ভঙ্গি করবে যে আপনি ভাববেন!!! ওরেহ্! শালা!! এ দেখি বিরাট কারবার! দরবেশ বাবার থেকেও কম না!! কিন্তু আসলে এমন কিছুই না! ঐখানে কয়েকজন থাকবে ওদের নিজস্ব লোক। আপনাকে মুগ্ধ করার জন্যই ওদের পোষা হয়!!
তারপর দেখবেন ঐখানে থাকা একজন বলবে " আমার কাজ আছে। আমি চলে যাই ভাই! " তারপর দেখবেন একটা মজার বিষয়! বক্তা বলবে পরে যান! কিন্তু ঐ লোক যেতেই চাবে! তারপর বক্তা বলবে যান ..... কিন্তু ঐ লোক যেতে পারবে না! হের উপ্রে নাকি ঠাডা পড়ছে! তার পা নাকি মাটির সাথে গাইথ্যা গেছে ! এটা দেখে সবাই একটু ভয়ের হাসি দিবে! তারপর ঠাডায় পতিত হওয়া লোক সরি বলবে! ভুল হইয়া গেছে বলবে! কিন্তু ঐ জটলার উপর নজর রাখলে দেখা যায় ঐ হারামি প্রতি সপ্তাহে ঠাডায় পতিত হওয়ার জন্য থাকে! আর বক্তা এই ফাঁকে তার বিভিন্ন ক্ষমতার কথা বলবে! কবে, কখন, কোথায় কি করছে! সব বলবে! আর সবার ভিতরে একটা আতংক ঢুকিয়ে দিবে!
তারপর আসবে জ্বীন আসার পর্ব। জ্বীন কবুতর হয়ে খুপরীর ভিতর থাকবে। এবং পরীক্ষা করতে দিবে অন্যদের আসছে কিনা! কিন্তু যারা পরীক্ষা করবে তারা তাদের লোক। তো আমি বন্ধুকে জিগাইলাম তুই চেক করছ নাই ক্যান? ও বলে ভয়!
ভয়টা হৈল যারা চেক করছে তাদের কবুতর জোরসে ঠোকর মারছে! আর তারা আঙ্গুল চাইপা উফ! উফফ! করছে! এটা দেখে আর কেউ জ্বীনের ঠোকর খাওয়ার সাহস পায় নাই!
এরপর তাদের ব্যবসায়ীক চাল চালা শুরু করবে! এমুন একটা ওষুধ দিবে! যেটা দিয়া আপনার যাবতীয় রোগ সমাধান হইয়া যাবে! আপনার তখন ঐ বক্তার উপর বিশ্বাস লেভেল এতটাই হাই থাকবে যে আপনি সেটা মানবেন ও। এবং আপনার কাছে এর জন্য পাঁচশ টাকা চাইবে। রাস্তায় বাইর হলে টাকা তো থাকবেই! আবার না দিলেও সমস্যা! ম্যানিব্যাগে কত টাকা আছে সব ঐ লোক জানে এমন একটা ধারনা তৈরি করে দিছে।
এরপর যাদের নিকট নাই পুরোপুরি! তাদের টাকা ফেরৎ দিয়া দিবে! কারো খুবই দরকারী টাকা থাকলে ঐটাও ফেরৎ দিয়া দিবে! আহা কি মানবিক মায়া! ধুশশশালা! যাদের টাকা ফেরৎ দিছে ওরা তাদেরই লোক!
এরপর কাহিনী খতম! আপনার আরো কিছু সমস্যা সমাধান করার জন্য তাদের চেম্বারে নিয়ে যাবে!! চেম্বারে নিবে দশজন বাছাই করা রোগী! যাদের থেকে অলরেডী পাঁচশ টাকা নিয়া নিছে! ঐখানে আছে আবার দশজন বড় বড় ভন্ড হেকেমী ডাকদর! ( ডাক্তার) !! আমার বন্ধুকে যে ডাক্তার দেখছে সে আবার লুঙ্গি পড়া!
তো জিগাইলাম! ডাক্তার তোরে কি চিকিৎসা করলো??
ও বলে! বলিস না আর দুঃখের কথা! ও আমারে আমারে জিগায় পীরে বিশ্বাস করি কিনা! আমি কইলাম হ করি! কয় ভ্লা কথা! তারপর কয় হ্যান্ডেলিং করছি কিনা? - আমি কইলাম হ্যান্ডেলিং কি জিনিস?? কয় সত্য কথা বলবি! হাত দ্বারা লিঙ্গ ঘসে বীর্যপাত করছস কিনা!!
"আমি কইলাম! তারপর তুই কি বলছিস?" ও কইলো! তোরে না কইলে ও চলবে! আমি পা বুঝার তা বুঝলাম! কইলাম এরপর কি?
কয় এমুন জায়গায় নিছে আমারে মাইরা ফেললেও কেউ বলতে পারবে না। আমারে কয় তোকে যদি বলি আমি ওমুক পীর বাবার দরবারে কয়েকজন ফকীরকে খাওয়ানোর জন্য তোর কাছে যা টাকা আছে সব দিয়া দিতে! তুই দিবি?
-তারপর কি করলি?
দিয়া দিছি! যা ছিলো।
- মানে?
- আর নয়তো কি করতাম!! নিজের উপর নিয়ন্ত্রন ছিলো না রে।
তারপর কি হইছে?
তারপর বললো তুই তো স্টুডেন্ট! সব টাকা যে দিলি চলবি কি করে? - কইলাম বাসা থেকে আনাইতে হবে! তারপর??
তারপর আর কি! খুশি হইয়া আমার টাকা থেকে আমাকে পাঁচশ টাকা ফেরৎ দিছে! আর কিছু গাছ গাছড়ার ওষুধ দিয়া দিছে! মলম দিছে লিঙ্গ মোটাতাজা করার জন্য! বাল ছাল জিনিস দিয়া আমার টাকা সব নিয়া নিছে।
বাসায় কি বলছস??
বলছি চোর ম্যানিব্যাগ নিয়া গেছে।
এ ছিলো কাহিনী। আপনারা যারা অতি উতসুক জনতা! যেটা কখনো দেখেন নাই ঐটা দেখলে আগ্রহ সহকারে দাঁড়িয়ে যান বাঁশ খাওয়ার জন্য। তারা সাবধান থাকুন! কখনো এসব জায়গায় দাঁড়াবেন না।
এই কাহিনী পড়ে যাচাই করার জন্য এসে একটা বাঁশ খাইয়েন না আবার আমার বন্ধুর মতো।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২২