বছর ত্রিশের এক যুবক আলম (ছদ্মনাম) একদিন এসে তার স্ত্রী রহিমার (ছদ্মনাম) বিরুদ্ধে ব্যাভিচারের লিখিত অভিযোগ দিল ( অভিযোগটি প্রথাগত কোন আদালতে করা হয়নি । পারিবারিক সহিংসা নিয়ে কাজ করা একটি অফিসে অভিযোগ করা হয়েছে ।) । লিখিত অভিযোগের সাথে একটি ফটোগ্রাফ দেয়া হয়েছে যাতে একজন স্বল্পবসনা নারীর সাথে একজন পুরুষের অসংলগ্ন মূহুর্তের দৃশ্য । দেখে মনে হয়েছে কোন হোটেলে রাত্রি যাপনের ছবি । নারীটি আর কেউ নয় আলমের স্ত্রী, তবে সঙ্গীয় পুরুষটি অন্য কেউ । আলম তার স্ত্রীর বিচার চায় । স্ত্রীর সাথে কথা বলা হল এবং ফটোগ্রাফ দেখিয়ে আলাদা করে তার কাছে জানতে চাইলে সীমাহীন লজ্জায় নীল মেয়েটিকে উদভ্রান্ত আর এলোমেলো মনে হল । প্রথমে এড়িয়ে গেলেও চোখের সামনে নিজের ছবি দেখে কতক্ষণ আর অস্বীকার করা যায়? নিষিদ্ধ সম্পর্ক এভাবে সামনে চলে আসবে হয়তো কখনও ভাবেনি মেয়েটি । লজ্জায় অপমানে কান্নায় বুক ভাসিয়ে কিছু না বলেও অনেক কথা বলে দিল মেয়েটি । তারপর অনেকক্ষণ ধরে অফিসার ,স্বামী দেবতা আর মেয়েটি কারো মুখেই কোন কথা ছিল না । এক ধরণের অস্বস্থিকর নীরবতা নেমে এলো সমস্ত কক্ষ জুড়ে । জানা গেল ৬ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল । দু’টো মেয়েও রয়েছে তাদের ।স্বামীটি একসময় ইয়াবা/গাঁজায় আসক্ত হয়ে বুঁদ হয়ে থাকত ।স্ত্রী সন্তান কিংবা সংসারের কোন খবর নেয়ার প্রয়োজনই মনে করত না । তারপর কোন একদিন হঠাৎ উদাও হয়ে গেল স্বামীটি । টানা ৩ বছর কোথায় যেন হারিয়ে গেল । এদিকে দু’টো সন্তান নিয়ে জীবনের চরম অনিশ্চয়তায় স্ত্রীটি যখন দিশেহারা এমনি দুর্বল মূহুর্তে দৃশ্যপটে হাজির হলেন প্রতিবেশী সুযোগ সন্ধানী জাহিদ । বিবাহিত এবং ৩ সন্তানের জনক জাহিদ উপর্যপুরি নানা প্রলোভনে রহিমার সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন করে তার লালসা চরিতার্থ করতে সক্ষম হয় এবং অসতর্ক মূহুর্তে মোবাইলে অশ্লীল ছবিগুলো ধারণও করে । ঘটনাচক্রে জাহিদের স্ত্রীর হাতে সেসব ছবি পড়ে একদিন। শুরু হয় দু’টো পরিবারের মধ্যে টানাপোড়েন । হঠাৎ দৃশ্যপটে রহিমার স্বামী হাজির হয় এবং জাহিদের স্ত্রী সব দোষ রহিমার কাঁধে চাপিয়ে ফটোগ্রাফগুলো আলমের নিকট পাঠায় । স্ত্রীর নিশ্চিত ব্যাভিচারের প্রমাণ পেয়ে আলম বীরদর্পে বিচারকের কাছে প্রমাণ সমেত হাজির হয়ে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে । হাতে স্ত্রীর ব্যাভিচারের জলজ্যান্ত প্রমাণ, আর যায় কোথায় । অদ্ভুত ব্যাপার হলো বিচার চাইলেও আলম তার স্ত্রীর সাথে পুনরায় সংসার করতে চায় । পর পুরুষের সাথে স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের নিশ্চিত প্রমাণ পেয়েও সংসার করার অভিপ্রায় অবাক করার মতই ছিল বৈকি ।কারণ হিসেবে দু’টো সন্তানের ভবিষ্যতের কারণ দেখালেও রহস্যটা জানা গেল একটু পরেই । বছর তিনেক ধরে ভারতের একটি শরণার্থী শিবিরে অন্য নারীর পাল্লায় কাটিয়ে অবশেষে চ্যাঁকা খেয়ে রিক্ত হস্তে পুরোনো ডেরায় ফিরতে চাইলেও স্ত্রী বেঁকে বসায় স্ত্রীর অনৈতিকতার প্রমাণ সমেত এই (ন্যায়!) বিচার প্রার্থনায় অবতারণা । বিচারক কি আর বিচার করতে পারতেন ।রহিমা হয়তো অনৈতিক সর্ম্পকে জড়িয়ে অন্যায়ই করেছে । কিন্তু সমাজের দৃষ্টিতে তার অনৈতিকতার অতলে হারিয়ে যাওয়ার পেছনে অনুঘটকের ভূমিকায় কি কাজ করেছে তা ভেবে বিচারক চিরায়ত ন্যায় বিচারের পথে না গিয়ে সীমাহীন লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া অসহায় রহিমাকে নিষ্কৃতিই দিলেন। একজনের সুযোগ সন্ধানী লাম্পট্য, অন্যজনের মাদকের নেশা এবং পারিবারিক জীবনের প্রতি চরম উদাসীনতা দুটো পরিবারের যাপিত জীবনের বিশ্বাসের জায়গাটুকু চিরতরে নষ্ট করে দিয়েছে ।
মাস খানেক পরে রহিমার সাথে দেখা । চেহারায় প্রশান্ত ভাব । স্বামী আলমের কথা জিজ্ঞাসা করতেই বলল তার সাথে দিব্যি সংসার চালিয়ে যাচ্ছে এবং সে আয় রোজগারও করছে। জাহিদের সংসারও চলছে আগের নিয়মেই । যদিও ভাঙ্গা হাড়ি জোড়া লাগেনা বলে মনে করা হয়। জীবনে বেঁচে থাকার তাগিদে , জীবনকে কোনভাবে টেনে নেয়ার জন্য হলেও মানুষকে কম্প্রোমাইজ করতে হয়, বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে ভাঙ্গা হাঁড়িতে জোড়া লাগাতেও হয় কখনো কখনো ।কিন্তু পূর্বের মসৃন ভাব আর থাকেনা । হারিয়ে যায় চিরতরেই । তবু মানুষ হারানো বিশ্বাস খুঁজতে থাকে ভাঁঙ্গা হাড়ির অমসৃন ভাঁজে । হায়রে মানুষ, হায়রে সংসার, প্রচণ্ড ঝড়ের পরও তবু টিকে থাকে, টিকে থাকতে হয় ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১০