somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নন্দন নন্দিনী তুমি--৮

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড্ড সাদা এই রুমটায়/ সবই সাদা / এত সাদা মাঝে মাঝে বড়ই অসহ্য লাগে/
মাঝে মাঝে মনে হয় বেচেঁ নেই সে /যখন হাত পা একটু নড়াচড়া করে তখন মনে হয় বেচেঁ আছে সে/ এভাবেই সে পড়ে আছে গত কয়েকদিন যাবত /
ডাক্তারদের মতে তার অবস্থা যখন তখন/
কিন্তু শংকর বোস জানেন কথাটা ঠিক না /
ছেলের গায়ের গন্ধ পেলেই উঠে বসবে অলকা/
আর এটাও জানেন এই মুহুর্তে কোথায় আছে অভি/ অভির প্রতি মুহুর্তের নড়াচড়া সম্পর্কে জানেন তিনি/ কিন্তু জানাচ্ছেন না কিছুই অলকাকে /
প্রচন্ড এক জেদী পুরুষ তিনি/ কিছুতেই তিনি অভির এ ব্যাপারটাকে মেনে নিবেন না/ সমস্যা হয়েছে অভিও হয়েছে তার মত একরোখা আর জেদি/ কিন্তু তিনি যে অভির বাবা এ কথা ভুলে কি করে ?অলকার বাড়াবাড়ি রকমের ভালোবাসার কারনেই অভির এই অধঃপতন /
যতটুকু সম্ভব সব প্রিয় আর ভালোলাগা জিনিসগুলো তিনি অভিকে পাইয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন /কিন্তু এ অসম্ভব চাওয়া চাওয়ার সাহস সে পেল কোথায় ? ভালোবাসা মানুষকে এতখানি বোধহীন আর অন্ধ করতে পারে তা তিনি ভাবতেও পারেন নি/
ব্যাপারটা অলকা বেশ হাসি খুশি আর আনন্দের সাথেই মেনে নিয়েছে , যেন ছোট বেলার পুতুল পুতুল খেলা /
অথচ মন্ত্রীর সেই গা জ্বালানো হাসি আর অপমান এখনও দগদগ করছে /নতুন করে আবার মনে করিয়ে দিয়েছে সব কিছু/
বিয়াল্লিশ বছর !
এখনও প্রতিরাতে স্বপ্ন দেখেন তিনি/
সারা দেশের আন্দোলনের জোয়ার তাদের ছোট্ট শহরটাকে সবে মাত্র নাড়া দিতে শুরু করেছে/
সেই রাতগুলিতে শংকর প্রায মাঝরাতে বাবা -মা, জেঠা-জেঠি,দিদা-দাদুর ফিসফিস কথা বলার আওয়াজ পেতেন /রিদিমা দিদির তখন বিয়ের কথা বার্তা চলছিলো/ দাদু বারবার তাগিদ দিতেন বিয়েটা দিয়ে দেয়ার জন্য/দাদু বলতেন, যুদ্ধের বাজারে তাড়াতাড়ি সোমত্ত মেয়ের বিয়ে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ/
তাই হয়তো বিয়ের তোড়জোড় চলছে, এ সব ভাবতে ভাবতে আবার চৌদ্দ বছরের শংকর আবার ঘুমিয়ে পড়তো/
একরাতে সারা বাড়িতে হইচই পড়ে গেল/
ডাকাত !
সবাইকে বেধে ফেললো এক নিমিষে/ ৫০/৬০ জনের একটা দল মানুষ সারারাত তছনছ করে ফেললো সমস্ত বাড়িঘর / সবারই মুখ ঢাকা চাঁদরে/ কিন্তু এদের অনেকেরই গলার আওয়াজ সেদিন চিনেছিলো শংকর/রফিক ভাই, এনামুল চাচা আরও অনেকের/অবাক ব্যথায় নির্বাক হয়ে গিয়েছিলো শংকর/
ভোর হওয়ার আগেই ডাকাত দল চলে গিয়েছিলো/ পুব আকাশের রোদ যখন সবুজ মাঠে একটু একটু করে আলো ছড়াচ্ছিলো তারও অনেক পরে কাজের ঝি আর পুব পাড়ার রাখাল এসে ওদের বাধন মুক্ত করেছিলো/
সারা পাড়ায় সেদিন কবরের নিস্তব্ধতা ছিলো/ কেউ এসে ব্যপার কি এটাও জানতে চায়নি/
দুপুরের অনেক পরে রিদিমা দিদিকে বাড়ির পিছনে শ্যাওলা আর কুচুরিপানায় ভরা পুকুর পাড়ে পাওয়া গিয়েছিলো/
গায়ে শেষ দুপুরের রোদ মেখে শুয়ে ছিলো / বিশাল মেঘহীন আকাশ ছায়া দিচ্ছিলো/ সেই রোদ রাঙ্গা শাড়িতে কেমন যেন অন্যরকম লাগছিলো দিদিকে /শংকর আর সহ্য করতে পারছিলো না – ছুটে যেয়ে নিজের শরীর দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলো রিদিমাকে /
দাদাও নির্বাক হয়ে গেলেন নিমিষে/ আর কেন যেন চোখই খুললেন না/
দুই চিতার আগুন নেবার আগেই বাবা সবাইকে নিয়ে সেই ছোট্ট শহরটি ছাড়লেন /
বিভীষিকা হয়ে রইলো সেই ছোট্ট শহর আর ছবির মত সেই বিশাল বাড়িটি/
তারপর অনেক সংগ্রাম আর কষ্টের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজকের এই অবস্থানে শংকর বোস /
অভির কারনে তার এত দিনের গড়া শক্ত অবস্থান ভেঙ্গে যাওয়ার পথে/তার একটু অঙ্গুলি হেলানে নিমিষেই বড় বড় কাজ হয়/অথচ পুটিঁ মাছ মন্ত্রী ব্যাটা তাকে ধমক দিয়ে কথা বলে, চোখ রাঙ্গায় ??
হাফসাফ লাগে বন্ধ কেবিনে/ ছোট্ট ব্যলকনিতে এসে দাড়ান তিনি/ এখনকার হাসপাতাল
গুলো পাচঁতারা হোটেলের মত/ মাঝে মাঝে হাসপাতালে ভাবতে ইচ্ছে করে না /
ব্যলকনির নাম না জানা ফুলের গন্ধ কিছুক্ষনের জন্য শকংর বোসকে ভুলিয়ে দিল অতীত/
সেলফোন বেজে উঠলো/
অভির কোনো নতুন খবর বোধহয় /
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×