somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামায়নের পাতা থেকে কিছু মজার কাহিনী(পর্ব এক):):):):)

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রত্নতত্ত্বের অধ্যয়নকারী হিসেবে আমাদের সিলেবাসের অংশ হিসেবে অনেক কিছুই শিখতে হয়। আমরা যাই পড়ি অন্তত একটি কথা বলতে পারি ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতার দড়ি ছিড়তে গেলে যা করা দরকার তা একরকম জানতে হয়। আমরা একটি বিষয় অন্তত বলতে বলতে পারি প্রত্যেকটি ধর্মই পৃথিবীতে এসেছিল মানবতার বাণী নিয়ে । আপনি যে ধর্মের ই অনুসারী হোন না কেন আপনার কোন সুযোগ নাই অন্য ধর্মকে হেয় করার । আমার নিজ ধর্ম কে অস্বীকার করে একজন কেউকেটা বনে যাওয়ার ও উপায় নাই। . যাহোক পড়াশোনার সহায়ক হিসেবে বেশ কিছু ওয়েব লিংক হতে রামায়ন ও মহাভারতের কাহিনী পড়ে বেশ মজা পেয়েছি আমি চাই এখন তা আমার ব্লগার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে। আশাকরি সবার ই ভাল লাগবে .

:):):)আদিকান্ড: ভারতবর্ষের সরযু নদীর কাছে অযোধ্যা নামের এক নগরে দশরথ নামের এক রাজা ছিলেন। তাঁর কোন সন্তান ছিল না। মনের দুঃখে একদা মন্ত্রীদের বললেন, আমি দেবতাদের তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করব। যজ্ঞের আয়োজন সম্পন্ন করা হলো।
(দশরথের শাসনকালের সময়কালটা আমরা জানতে পাই না। জানতে পারলে ভালো হতো)

:):)প্রথমে করা হলো 'অশ্বমেধ যজ্ঞ'। ঘোড়ার মাংস দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। জটিল এক প্রক্রিয়া, প্রথমে ঘোড়াটা ছেড়ে দেয়া হয়। এই ঘোড়া এক বছর যেখানে খুশী সেখানে ঘুরে বেড়ায় তারপর এটাকে ফিরিয়ে আনা হয়।
(আমাদের দেশে বিভিন্ন পীর সাহেবদের নামে ধামড়া-ধামড়া গরু বছরের পর বছর ধরে ছেড়ে রাখা হয়। এই গরু হতদরিদ্রের কলাটা-মুলোটা, ক্ষেতের ধান খেয়ে সাফ করে ফেলে। এই নিয়ে কারও কিচ্ছু বলার যো নেই। গরুবাবা বলে কথা! এই ভাবনাটা কি 'অশ্বমেধ যজ্ঞ' থেকে ধার করা?)

অশ্বমেধ যজ্ঞের পর ঋষ্যশৃঙ্গ বললেন, 'এরপর পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করিলে মহারাজের ছেলে হইবে'।
যজ্ঞের ফলে অলৌকিক পায়েস আসল। সেই পায়েস রানিদের খেতে দেয়া হলো। দশরথের তিন রানি কৌশল্যা, কৈকয়ী, সুমিত্রা।
কিছুদিন পর তাঁদের ছেলে হলো। কৌশল্যার একটি, নাম রাখা হয় রাম। কৈকয়ীর একটি, নাম ভরত। সুমিত্রার দুই ছেলে লক্ষ্ণণ এবং শত্রুঘ্ন। এরা দিনে দিনে বড়ো হলেন।

মারীচ নামের এক রাক্ষসের উপর বিশ্বামিত্র প্রচন্ড ক্রদ্ধ ছিলেন কারণ যজ্ঞের সময় মারীচ এবং সুবাহু এই দুই রাক্ষস মিলে মাংস ঢেলে যজ্ঞ পন্ড করেছিল। তাড়কা রাক্ষসী হচ্ছে মারীচের মা। মা বেটা মিলে সব খেয়ে দেশটাকে জঙ্গলে পরিণত করেছে। তাড়কা রাক্ষসীর বেজায় জোর, বর্ণনামতে, তার গায়ে হাজার হাতির জোর! তাড়কা নামের রাক্ষসীকে মারার জন্য বিশ্বামিত্র রামকে সাথে নিয়ে গেছেন।
(বাংলা সাহিত্যে ভয়ংকর মহিলা বোঝাতে 'তাড়কা রাক্ষসী' শব্দটা প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। আমি নিজেও লেখায় প্রায়শ ব্যবহার করি। অভিধানে শব্দটা যোগ হয়েছে রামায়ন থেকে।)

বিশ্বামিত্র রামের প্রতি তুষ্ট হয়ে যে অস্ত্রগুলো দিয়েছিলে তার তালিকা অনেক লম্বা। অস্ত্রগুলো হচ্ছে: বলা, অতি-বলা, ধর্মচক্র, কালচক্র, বিষ্ণুচক্র, ইন্দ্রচক্র, ব্রক্ষশির, ঐষিক, ব্রক্ষাস্ত্র, ধর্মপাশ, কালপাশ, বরুণ পাশ, শুষ্ক অশনি, আর্দ্র অশনি, পৈনাক, নারায়ন, শিখর, বায়ব্য হয়শির, ক্রৌঞ্জ, কঙ্কাল, মুষল, কপাল, শক্তি, খড়গ, গদা, শূল, বজ্র, কিঙ্কিণী, নন্দন, মোহন, প্রস্বাপন, প্রশমন, বর্ষণ, শোষণ, সন্তাপন, বিলাপন, মাদন, মানব, তামস, সৌমন, সংবর্ত। আরও অনেক নাম-না-জানা অস্ত্র!
(এমন বিপুল অস্ত্র কারও কাছে থাকলে এ গ্রহে তাঁকে রুখবে এমন সাধ্যি কার! এমন অস্ত্রে সজ্জিত একজনকে মহামানব হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, সাধারণ হলেই চলে। কেবল এক ব্রক্ষ্ণাস্ত্রই নাকি কাফি। এটা একবার ছুঁড়লে ফিরিয়ে নেয়া যায় না। এর সঙ্গে অনেকটা মিল পাওয়া যায় আধুনিক পারমাণবিক অস্ত্রের।)

বিশ্বমিত্র মহারাজ জনককে বললেন, 'মহারাজ, সেই ধনুকখানি রাম-লক্ষ্ণণ দেখিতে চাহেন’।
জনক বলিলেন, 'এই ধনুক আগে ছিল শিবের...। একদিন আমি লাঙ্গল দিয়া যজ্ঞের স্থান চসিতেছিলাম। এমন সময় আমার লাঙ্গলের মুখের কাছে পৃথিবী হইতে এক পরমা সুন্দরী কন্যা উঠল। লাঙ্গলের মুখে উঠিয়াছিল বলিয় আমি তাহার নাম রাখিয়াছি সীতা। আমার প্রতিজ্ঞা এই যে, এই শিবের ধনুকে যে গুণ পরাইতে পারিবে তাহার সঙ্গেই এই,মেয়ের বিবাহ দিব'।
(লাঙ্গলের মুখের আঁচড়ে মাটিতে যে দাগ পড়ে তার নাম সীতা।)

রাম সেই ধনুকে গুণ পরালেন। টান দিলেন এবং ধনুক ভেঙ্গে দু-টুকরা! তখন যে শব্দ হয়েছিল সেই শব্দের কারণে বিশ্বামিত্র, জনক, রাম, লক্ষ্ণণ ব্যতীত অন্য সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।
অতঃপর রাম সীতাকে বিয়ে করলেন। জনক রাজার আরেক মেয়ে এবং ভাইয়ের মেয়েদের বিয়ে করলেন, লক্ষ্ণণ, ভরত, শত্রুঘ্ন।
রাজা দশরথের বয়স হয়েছে। ষাট ছাড়িয়ে গেছেন। তাই তিনি মনস্থির করলেন, রামকে রাজ্যের ভার দিবেন। সভা ডেকে পরামর্শ চাইলে সবাই একবাক্যে বললেন, এর চেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত আর হয় না। স্থির হলো, পরদিন রামকে রাজায় অভিষিক্ত করা হবে। এই সংবাদে অযোধ্যায় হুলস্থূল পড়ে গেল। রামের মাতা কৌশল্যারও আনন্দের শেষ রইল না। সীমাহীন আনন্দে তিনি জনে জনে দান করতে লাগলেন।

রানি কৈকেয়ীর এক দাসি ছিল, মন্থরা। এই দাসিটির পিঠে কুঁজ ছিল বলে সবাই তাকে মন্থরার বদলে কুঁজি বলে ডাকত। এই দাসিটি দেখতে যেমন কদাকার তার মনটাও ততোধিক কুটিল। কিন্তু কেউ মন্থরাকে ঘাটাত না কারণ কৈকেয়ী এই দাসিটিকে তাঁর বাপের বাড়ি থেকে এনেছিলেন।
মন্থরার এই সব দেখে আর সহ্য হলো না। সে কৈকেয়ীর কানের পাশে তোতা পাখির মত অনবরত বকে যেতে লাগল, যেন রামের বদলে কৈকেয়ীর সন্তান ভরতকে রাজা করা হয়। মন্থরা কৈকেয়ীকে বুদ্ধিও শিখিয়ে দিল।

'দন্ডকবন'-এর ভেতরে বৈজয়ন্ত নগরে এক ভয়ংকর সম্বর নামের অসুর ছিল, দেবতাদের সঙ্গে সম্বরের ভয়ানক যুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুদ্ধে দশরথ দেবতাদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন এবং আহত হলে কৈকেয়ী সেবা করে দশরথকে বাঁচিয়েছিলেন। দশরথ খুশি হয়ে কৈকেয়ীকে দুইটা বর দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তখন কৈকেয়ী বলেছিলেন, আচ্ছা, যখন প্রয়োজন হয় তখন চেয়ে নেব।
মন্থরা শিখিয়ে দিলেন, সেই বরটা এখন চাওয়ার জন্য।

:):):):):):):):):)দশরথ অন্দরমহলে এলে মন্থরার শিখিয়ে দেয়া কথায় কৈকেয়ী দশরথকে প্রতিজ্ঞা করার জন্য বললে, দশরথ বলেন, 'এই পৃথিবীতে রামের মত আর কাউকে আমি ভালবাসি না। সেই রামের নামে শপথ করে বলছি, তুমি যা চাইবে তাই দেব'।
কৈকেয়ী ভাল করেই জানেন, রাজা একবার কথা দিলে তা আর ফিরিয়ে নিতে পারবেন না। কৈকেয়ী তখন তার পাওনা বরের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, 'রামকে চৌদ্দ বছরের জন্য সন্ন্যাসী সাজে দন্ডক বনে পাঠাতে হবে এবং ভরতকে রাজা করতে হবে'।
কৈকেয়ীর এই কথা শুনে রাজা দশরথ জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। জ্ঞান ফেরার পর তিনি বিলাপ করতে লাগলেন, 'কৈকেয়ী তোমার পায়ে পড়ি, এই বর আমার কাছে চেয়ো না। রাম তোমার যেমন সেবা করে তেমনটা ভরতও করে না। এটা অন্যায়, ঘোর অন্যায়'।
কৈকেয়ী তার সিদ্ধান্তে অনঢ়। তখন দশরথ কাতর হয়ে বলতে লাগলেন, 'কৈকেয়ী আমার বয়স হয়েছে আর ক-দিনই বা বাঁচব। আমাকে দয়া করো। আমার যার আছে সব নিয়ে যাও কিন্তু আমাকে এই মহা অন্যায় করতে বলো না'।
কৈকেয়ী তার সিদ্ধান্তে অবিচল। দশরথ ক্ষণে ক্ষণে জ্ঞান হারাতে লাগলেন। তিনি এই ঘোর অন্যায় সহ্য করতে পারছিলেন না। কিন্তু কৈকেয়ীর দয়া হলো না। তিনি বললেন, 'মহারাজ, একবার বর দিয়ে আবার কান্নাকাটি করছ; লোকে শুনলে হাসবে। আমি আমার পাওনা বর ছাড়ব না। তুমি রামকে রাজা করলে আমি বিষ খেয়ে মরব'।
অসহায় দশরথ রাতভর বিলাপ করতে লাগলেন কিন্তু কৈকেয়ী তার সিদ্ধান্তে অটল রইলেন।

সকালে দশরথ নিতান্ত বাধ্য হয়ে রামকে ডেকে পাঠালেন। কিন্তু অতি বেদনায় দশরথের মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছিল না। যা বলার কৈকেয়ীই বললেন, 'রাম, মহারাজ আমাকে দুইটা বর দিয়েছিলেন, সেই বর আমি এখন চেয়ে নিয়েছি। একটা বর হলো তুমি মাথায় জটা নিয়ে গাছের ছাল পরে চৌদ্দ বছরের জন্য দন্ডক বনে যাবে, আরেকটা বর হচ্ছে ভরতকে রাজা করা হবে'।
রাম একটুও দুঃখিত না হয়ে বললেন, 'তাই হবে। বাবা যা বলবেন তাই হবে। তাঁর উপর কোন কথা নাই। আমি আজই বনে চলে যাব'।

সব শুনে রামের মাতা কৌশল্যা তীব্র বেদনায় অজ্ঞান হয়ে গেলেন। লক্ষ্ণণও কিছুতেই এই অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছিলেন না। রাম না থামালে তাঁকে কেউ থামাতে পারত না।
রামকে অনেক বেগ পেতে হলো লক্ষ্ণণ এবং কৌশল্যাকে প্রবোধ দিতে। কিন্তু সীতা এবং লক্ষ্ণণকে তাঁর সাথে বনে যাওয়াটা আটকাতে পারলেন না।

রাম তাঁর সব কিছু বিলিয়ে দিলেন। একটা নমুনা এমন: ত্রিজট নামে এক ব্রাক্ষণ ছিলেন। ত্রিজট রামের দানের কথা শুনে এসে হাজির হলেন। রাম তাঁকে দেখে হেসে বললেন, 'ঠাকুর, আপনি এই লাঠিটা যতদূর ছুঁড়ে ফেলতে পারবেন ততদূর পর্যন্ত আমার যত গরু আছে তা সব আপনার।
ত্রিজট বামুনের গায়ে জোরের অভাব ছিল না। তিনি কোমর কষে হেইয়ো বলে লাঠিটা সরযু পার করে দিলেন। এ পর্যন্ত গুণে দেখা গেল রামের এক লক্ষ গরু আছে। রাম সেই এক লক্ষ গরুর সঙ্গে উপরি হিসাবে আরও সম্পদ দিলেন।
সব বিলিয়ে রাম, লক্ষ্ণণ, সীতাকে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন। সবাই বিলাপ করে বলতে লাগল, দশরথ নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছেন নইলে এমন অন্যায় করেন কেমন করে? এই অনাচারের দেশে আমরা থাকব না, রামের সঙ্গে চলে যাব। থাকুক কৈকেয়ী তার ছেলে ভরতকে নিয়ে।
রাম সবাইকে হাতজোড় করে নিষেধ করলেন। কে শোনে কার কথা, সবাই রামের পিছু পিছু হাঁটতে লাগল। রথ চলা শুরু করলে সবাই পাগলের মতো রথের সঙ্গে ছুটতে আরম্ভ করল, বুড়া, যুবা কেউ বাকি রইল না। রথের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যখন আর পারা যাচ্ছিল না তখন তাঁরা রথ-চালক সুমন্ত্রকে বলতে লাগলেন, 'ও সুমন্ত্র, একটু আস্তে যাও না, বাবা। আমরা যে আর পারি না'।

রাম সহ্য করতে পারছিলেন না কারণ রথের পেছন পেছন রাজা দশরথ, রানিরা (কৈকেয়ী ব্যতীত) পর্যন্ত ছুটে আসছেন। রাম অস্থির হয়ে সুমন্ত্রকে বলতে লাগলেন, 'জোরে চালাও, আরও জোরে'।
এদিকে দশরথ কাতর হয়ে বলছেন, 'রথ থামাও'।
সুমন্ত্র যখন দেখলেন রামের প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তখন তিনি রথের গতি বাড়িয়ে দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেলেন। রথ বিকেলে শৃঙ্গব নগরে থামল। সুমন্ত্রকে জোর করে ফিরিয়ে রাম, লক্ষ্ণণ, সীতা গঙ্গা পার হলেন।

রাজা দশরথ তীব্র ঘৃণায় কৈকেয়ীর ওখানে না গিয়ে কৌশল্যার ওখানে গেলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন তিনি আর অধিক কাল বেঁচে থাকবেন না। তাঁর মনে পড়ল, তাঁর যখন বয়স অল্প ছিল তখন একবার অন্ধকার রাতে হাতি মনে করে অন্ধ মুনির ছেলেকে তীর দিয়ে মেরে ফেলেছিলেন। ছেলে শোকে সেই অন্ধ মুনিও মারা যান কিন্তু মারা যাওয়ার পূর্বে তিনি দশরথকে অভিশাপ দিয়ে যান, তুমিও এমন করে পুত্র শোকে মারা যাবে।
রামকে বনে পাঠাবার পর ছয়দিন মাত্র দশরথ বেঁচে ছিলেন।

:|:|যে ভরতের জন্য কৈকেয়ী এমনটা করেছিলেন, সেই ভরত যখন এসে এই কান্ড শুনলেন তখন প্রচন্ড ক্রোধে তাঁর মাকে বললেন, 'তুমি আমার মা না-হলে তোমাকে আমি মেরে ফেলতাম। দাদা, তোমাকে এত মান্য না-করলে আমি তোমাকে এখনই তাড়িয়ে দিতাম। তোমার মত দুষ্ট স্ত্রীলোক এই পৃথিবীতে আর নাই। তুমি আগুনে পুড়ে মরো, নাহয় গলায় দড়ি দিয়ে মরো। ইচ্ছা হলে বনে চলে যাও'।
ভরত সবাইকে ডেকে বললেন, 'দাদার রাজ্য আমি চাই না। আমি তাঁকে ফিরিয়ে আনব'।
ভরত অনেক ক্লেশ স্বীকার করে রামকে খুঁজে বের করলেন। কিন্তু রামকে কোন ভাবেই টলাতে পারলেন না। রামের এক কথা, তাঁর পিতাকে দেয়া কথা থেকে তিনি সরে আসতে পারেন না।

অবশেষে কোন উপায় না দেখে ভরত বললেন, 'দাদা, তাহলে তোমার পায়ের খড়ম দুখানা খুলে দাও। এখন হতে এই খড়মই রাজা। আমরা এর চাকর। তোমার এই খড়ম নিয়ে আমি চৌদ্দ বছর গাছের ছাল পরে, ফলমূল খেয়ে জীবন ধারণ করব এবং তোমার অপেক্ষা করব। চৌদ্দ বছর পর তুমি যদি ফিরে না আসো তাহলে কিন্তু আমি আগুনে ঝাপ দেব'।
হাতির পিঠে করে ভরত খড়ম নিয়ে এলেন। অযোধ্যার কাছে নন্দীগ্রামে খড়মকে সিংহাসনের উপর রেখে নিজে গাছের ছাল পরিধান করে, খড়মের উপর ছাতা ধরে, চামরের বাতাস করে রাজ্য শাসন করতে লাগলেন। কিন্তু কোন কাজ আরম্ভ করার পূর্বে খড়মের কাছে না বলে হাত দিতেন না।

('অযোধ্যাকান্ড'। এই পর্বে রামকে আমরা দেখতে পাই অসাধারণ একটা চরিত্র হিসাবে। রামের তুলনা রাম নিজেই- এ অভূতপূর্ব!
কৈকেয়ী এবং মন্থরার কথা বাদ দিলে আরও অনেক চরিত্রকে আমরা দেখতে পাই অসাধারণ চরিত্র হিসাবে যেখানে একজন অন্যজনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন।)

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :
প্রফেসর ডঃ মোঃ মোজাম্মেল হক (আমার কোর্স শিক্ষক)
আলী মাহমেদ ( একজন ব্লগার যিনি পূর্বে এই বিষয়ে লিখেছেন)
তথ্যসুত্রঃ The RAMAYAN of VALMIKI: Ralph T. H. Griffith
এবং উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী রচিত একটি গল্প..

মোঃ আদনান আরিফ সালিম অর্ণব
স্নাতক সম্মান অধ্যয়নকারী ও অবিনির্মানবাদী লেখক
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ
[email protected]
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:০১
২০টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×