অভিজিৎ রায় খুন এবং নাস্তিকতা.......
(স্ট্যাটাসটা বেশিরভাগ মানুষের বিপক্ষে যাবে।অগ্রীম দুঃখ প্রকাশ করছি।)
.....মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্টাতা অভিজিৎ রায় "মুক্ত" খোলামেলা স্থানে খুন হয়েছেন।যেই খুন করুক না কেন দোষটা অবধারিতভাবে চলে যাচ্ছে দাঁড়ি টুপিওলাদের উপর।ফেসবুকের একাংশের মাঝে আহাজারি এবং একাংশের মাঝে উল্লাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
প্রথম কথা হচ্ছে অভিজিৎ রায় কি এমন যে তার মৃত্যুতে এত আলোড়ন হবে?
যারা আহাজারি করছেন তাদের যুক্তি হচ্ছে সে যুক্তি দিয়ে কথা বলত।তার যুক্তি খন্ডানোর জন্য পাল্টা যুক্তি দিন।কলমের জবাব অস্ত্রে কেন?
এখন কথা হচ্ছে তার যুক্তি কেমন ছিলো?
বাংলাদেশে আ**ফাক,ম**উন্মাদ,পি**লাম নামক জঘন্য শব্দগুলোর উদ্ভাবক সে।এই শব্দগুলো কোন যুক্তির কাতারে পড়ে?
আপনাকে একজন বেশ্যার বাচ্চা বলে গালি দিয়ে বলল এবার যুক্তি খন্ডন করুন।আপনি এখান থেকে কি যুক্তি খন্ডন করবেন?
বাংলাদেশে কোন কালেই নাস্তিক কম ছিল না।নাস্তিক হত্যার মতো ব্যাপারগুলো আগে আসেনি।কারণ নাস্তিকরা তাদের মতো করে ছিল।যুক্তি দেখিয়েছে,গালি দেয়নি।
হুমায়ূন আজাদকে হত্যা করা হয়েছিল।এই ব্যক্তি ধর্ম নিয়ে কি নোংরা ভাষা ব্যবহার করেছে সেটা তার "পাক সার জমিন সাদ বাদ" পড়লেই বোঝা যায়।
নাস্তিকতা এক জিনিস আর ধর্ম বিদ্বেষ আরেক জিনিস।যুক্তি এক জিনিস আর গালি আরেক জিনিস।অবিশ্বাস আর বিদ্বেষ কখনোই এক না।
.....আরো কিছু সুশীল রাস্তায় বিচার বহির্ভূত এই হত্যা নিয়ে চোখের পানি নাকের পানি এক করছেন।
খুবই ভালো কথা।রাস্তায় কোন হত্যাকান্ডই সমর্থনযোগ্য না।রাস্তায় কোন মানুষকে কুপানো হচ্ছে এটা কোন মানবিক দৃশ্য না।
যারা এসব বলছেন তারা গত চারদিন আগে যখন তিনজনকে ৫৪ টা গুলি করে হত্যা করা হলো তখন কই ছিলেন?
রাস্তায় বোমা মেরে মানুষ মারা হলে তখন কই থাকেন?
বিশ্বজিৎকে কুপানোর সময় কই ছিলেন?
এদের সবাইকে বাদ দিয়ে অভিজিতের জন্য আপনাদের দরদ উথলে উঠল কেন?
দরদের জায়গাটা জানি।অভিজিৎ ইসলাম ধর্মকে একা গালি দেয়নি,সাথে সবাইকে সুযোগ করে দিয়েছিল।
যারা অভিজিৎকে বিরাট লেখক বলছেন তাদের কাছে প্রশ্ন সমকামিতাসহ ৯টা বই লিখলেই কেউ বিরাট লেখক হয়ে যায়?
.....যেসব মুসলিম তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছেন তাদের প্রতি সমবেদনা।আপনার বাবা মা কে গালি দেয়া কাউকে আপনি ক্ষমতা করতে পারবেন?আর এ তো আল্লাহ,রাসূলকে গালি দিয়েছে।
কোন ইসলামী স্কলার মারা গেলে কোন নাস্তিক শোক প্রকাশ করবে?বিশ্বাস হয়?
আর এ তো নাস্তিক না,ইসলাম বিরোধী।
তার মৃত্যুতে আপনি শোক প্রকাশ করবেন কেন?
শোক প্রকাশ করবে নাস্তিকরা।যদি সাহস থাকে বলুন আমি নাস্তিক তাই শোক প্রকাশ করছি।
মুখোশধারী হয়ে বসে থাকবেন না।
একজন দেখলাম একটা জায়গায় বলেছে-আমি সব নাস্তিকদের লেখা পড়ি।কই আমার তো ঈমান এক বিন্দু কমেনি!তারা তাদের মতো লিখবে।আমার কি আসে যায়?
মনে হলো তার কাছে একটা "ঈমান মিটার" আছে
সেটাতে সে দেখতে পাচ্ছে।
ব্যাপারটা এরকম যে তাকে কেউ একজন বলল-তুই একটা বেজন্মা।তুই জারজ।
সে বলল-আমি এই কথা একবিন্দু বিশ্বাস করিনি।সে গালি দিয়েছে,আমার কি আসে যায়?
ধর্মকে মানুষ কত হালকা করে দেখছে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
.....এবার অতি আস্তিকদের কথায় আসি।
অভিজিতের মৃত্যুতে একটা উৎসব দেখা যাচ্ছে।এখানে উৎসবের কি আছে ভাই?
একটা নাস্তিক গেছে আরো দশটা পয়দা হবে।নাস্তিকরা মরে কমবে না।
নাস্তিকদের আটকাতে হবে কলম দিয়ে,কথা দিয়ে।
নাস্তিক কেন হয় মানুষ?যখন তার মনের প্রশ্নের জবাব পায়না তখনই হয়।
আমাদের আলেমরা মানুষের মনের জবাব দেয়ার জন্য কতটা প্রস্তুত?
সাহাবীগণের ইতিহাস,বিভিন্ন পীরের কেরামতি,অমুককে তমুককে কটাক্ষ করে হাসি তামাশা করে ওয়াজ করার দিন আর নাই।মানুষ এখন শিক্ষিত হচ্ছে।মানুষের মনে নানান প্রশ্ন আসে।
সবকিছুতেই 'করতে হবে তাই করো' বললে কাজ হবেনা।নাস্তিকের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
নাস্তিকরা যখন সবাই এক তখন আলেমদের এক অংশ জাকির নায়েক ইহুদী এজেন্ট না খ্রীষ্টান এজেন্ট এটা নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত আর আরেক অংশ তাবলীগ হালাল না হারাম সেটা নিয়ে ফতোয়া খুজে বেড়াচ্ছেন।ইসলামের মাঝে এতগুলো ভাগ!
নাস্তিকবাদী বই এ যখন বাজার সয়লাব তখন ইসলামী কোন বই নেই।তাদের যুক্তি খন্ডানোর মতো করে কেউ লিখছেনা।যদিও কেউ চেষ্টা করে তবে খোদ ইসলামপন্থীরাই তাকে সন্দেহ করে।
মানুষ নাস্তিক হওয়ার পেছনে দায়ভার কিছুটা হলেও আলেমদের নিতে হবে।
একশোজন ট্রেইনড নাস্তিক ইসলামের
যতটা না ক্ষতি করে দুইজন ফেতনাবাজ আলেম তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে।
....আবার অভিজিৎ এ আসি।
অভিজিৎ এর মৃত্যুর দায় চোখ বন্ধ করে ইসলামিস্টদের দেয়া হচ্ছে।
কেন অন্য কোন কারণে খুন হতে পারেনা?
নাকি ব্যক্তি জীবনে সে ফেরেশতা ছিলো?
রাজীব হত্যার পরও এরকম বলা হয়েছিল।পরে দেখা গেল অন্য কাহিনী।
নিজের ঘর পুড়িয়ে আরেকজনকে ফাসানোর কাজটা গ্রামের অশিক্ষিতরাও করতে পারে।
এরা ট্রেইনড এন্টি ইসলামিস্ট।এরা কি করতে পারবে না?
তবে আবারো বলছি যদি ইসলামিস্টরা মেরেও থাকে তবে এভাবে মৃত্যু সমর্থনযোগ্য না।
একটা মুসলিম দেশে এরকম একটা কীটকে ব্লাসফেমী আইনে ফাসিতে না লটকিয়ে হত্যা করতে হবে কেন?
দেশে ব্লাসফেমী আইন নাই এ ব্যর্থতা সবার।
অনেকেই বলছে কোন কোরানে লেখা আছে ইসলামকে গালি দিলে হত্যা করতে হবে?
ইসলাম বিধর্মীদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছে।কিন্তু ইসলামকে আঘাত করলে আঙুল চুষে বসে থাকতে বলেনি।
এরকম কাউকে হত্যা করতে হবে এমন অনেক রেফারেন্স আছে।দিতে ইচ্ছে করছেনা।কারো দরকার হলে বলবেন দিয়ে দেব।
ইসলাম এত ঠুনকো না রে ভাই।ইসলাম তার অনুসারীদের কুলাংগার করে গড়ে তুলেনা যে আঘাত আসলে তারা রুখতে পারবে না।যেসব কীট কুলাংগার হয়ে যায় তাদেরকে ইসলাম ত্যজ্য করেছে।
.....নাস্তিকদের নিয়ে যত মাতামাতি কম হবে ততই মঙ্গল।তাদের এত পাত্তা দেয়ার কোন মানে নেই।
তারা তাদের শাস্তি পাবেই।
শেষ করব কৌতুকের মতো একটা কথা দিয়ে।
অভিজিৎ পন্থীরা চোখের পানিতে সয়লাব হয়ে বলছে-যেখানেই থেকো ভালো থেকো অভিজিৎ দা।শান্তিতে থাকো।
তাদের কাছে প্রশ্ন-আচ্ছা আপনাদের অভিজিৎ দা এখন কই আছে বলুন তো?
আপনাদের ভাষায় তো পরকাল বলে কিছু নাই।তাহলে শান্তি আসবে কই থেকে?
আহাম্মকের পরিচয় এই জায়গাতেই।
নাস্তিকদের শেষ কৃত্য সম্পর্কে আমার ধারণা নেই।
কেউ কি বলতে পারবেন অভিজিৎ দার লাশ কি করা হবে?
কোন সৎকারে না গিয়ে কি তবে তবে মুক্ত স্থানে মারা যাওয়া মুক্তমনার প্রতিষ্টাতার লাশ কোন মুক্ত স্থানেই ফেলে রাখা হবে?
.....আমার লেখা সবচেয়ে অগোছালো এবং অত্যন্ত দীর্ঘ এই স্ট্যাটাস যারা পড়েছেন সবাইকে ধন্যবাদ।
অনেকেই আঘাত পাবেন।কিছু করার নাই।আমি মুক্তমনা না বদ্ধমনা।
কাউকে আঘাত দিয়ে থাকলে আবারো দুঃখিত,তবে অনুতপ্ত নই।
(লিখাটা জয়নুল আবেদীন নামক এক ফেইসবুকারের, ভাল্লাগলো, রেখে দিলাম )