আজ আরেকটি দশই জানুয়ারি। এই দিনে পিতা তুমি ছেড়ে গিয়েছিল আমাদের। এরকমই দারুণ শীতের একটি দিন ছিল সেটা। আর তোমার যাবার পর পরই একে একে কতো যে বন্ধ দরোজা খুলে গেল আমার! তারপর থেকেই আমি অদম্য সাহসী একজন মানুষ। কোনওকিছুতেই আর ভয় পাই না। মাকড়সা টিকটিকি কচ্ছপ কুমির ইত্যাদি তাবৎ বুকে ভর ক’রে হাটা সরীসৃপদের আজ আমি আর একটুও ভয় পাই না। তোমার যাবার পর থেকেই সহসা এই পরিবর্তন। অথচ তার আগে কী হাস্যকর ছেলেমানুষি ভয়টাই না পেতাম! বানরের মতো তরতরিয়ে গাছে ওঠার বিদ্যেটাও রপ্ত করেছি বেশ ইত্যবসরে, আর বাটুল মেরে ঝাঁঝরা করা অমল পাখির বুক- এসব আজ নেহায়েতই জলের মতো সহজ আমার কাছে। তোমার জীবিতাবস্থায় যেগুলো কল্পনাতীত ছিল! এখন আমি আর নিরামিষভোজীও নই পিতা- বিভিন্ন প্রাণীর মাংস, মাছ, ডিম সব খাই রসিয়ে রসিয়ে আর ভীষণ আফসোস করি এইসব উপাদেয় সুস্বাদু খাবার থেকে বিগত দীর্ঘসময় বঞ্চিত থাকবার জন্য! তোমার যাবার পর পরই এরকম আরও কতকিছু যে খোলনলচে বদলে গেল পিতা! সেসব বিস্তারিত লিখে শেষ করা যাবে না! আজ আমি অনেকটাই অন্য একজন মানুষ। আমূল বদলে ফেলেছি নিজেকে আগাগোড়া। এখন মাঝেমাঝে আমার বড্ড আফসোস হয় তোমার অকারণ দীর্ঘ জীবনের জন্য! এদেশের মানুষের স্বাভাবিক গড় আয়ু পেরিয়েও আরও দীর্ঘ সময় বেঁচেছিলে তুমি! ঠিক সময়মতো পটল তুললে আরও আগেই পেতে পারতাম এই অমৃতোপম সুখের জীবন। আরও আগে কেন তুমি মরে গেলে না পিতা!
পিতা, আজ আরেকটি দশই জানুয়ারি। তোমার কমলা খাওয়া দাঁতগুলো কি এখনও অক্ষত আছে কবরের ভিতর! লোকে বলে মানুষ মরে গেলেও নাকি তার দাঁত ও নখের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। আজ এতো বছর পর কতোটা বৃদ্ধি পেয়েছে তোমার কমলা খাওয়া ছোটো ছোটো হলদেটে দাঁত আর বিরাট পাঞ্জার নখগুলো- ওই এক রত্তি কবরটাতে!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:৩৫