_এক_
অনবরত ফোন এর রিংটোন বেজে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। কিন্তু সেদিকে অভ্রের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অভ্রের মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। আর কিছুক্ষণের মাঝেই সে তার জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলবে। একসাথে বিশটা স্লিপিং পিল খেয়েছে আজ অভ্র। জ্ঞ্যান হারানোর ঠিক আগ মুহূর্তেই ধারালো ব্লেড দিয়ে হাতের শিরায় টান দিয়ে দিলো।
ধীরে ধীরে অভ্র গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়লো। স্লিপিং পিল তার কাজ ঠিক সময়মতই করা শুরু করেছে। স্লিপিং পিল খাওয়ার কারণে অভ্র অতি সহজেই ঘুমিয়ে পড়বে। আর হাতের শিরা কেটে ফেলায় আলাদা করে তাকে যন্ত্রণাও সহ্য করতে হবেনা। কারণ ততক্ষণে অভ্র ঘুমের মাঝেই কখন যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে নিজেই জানতে পারবেনা।
_দুই_
একা একা ছাদে পায়চারি করছিলো আদিবা। প্রতিদিন রাতে এভাবে ছাদে একাকি পায়চারি করা এক ধরনের অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে আদিবার। হঠাৎ একটি ম্যাসেজে আদিবার পৃথিবী যেনো নিমিষেই উলট পালট হয়ে গেলো। ম্যাসেজটায় লেখা ছিলো।
‘প্রিয় আদিবা,
তুমি আমার জন্য এপর্যন্ত যা করেছো তার ঋণ হয়তো আমি কখনও শোধ করতে পারবোনা। আমার জীবনে সবচেয়ে কষ্টকর মুহূর্তে একমাত্র তুমিই আমার পাশে এসে দাড়িয়েছিলে। সর্বক্ষণ আমি যাতে ভালো থাকি তা নিয়ে ভেবেছো তুমি। বিনিময়ে আমি শুধু তোমায় অবহেলাই করে গিয়েছি। আমি জানি তুমি আমায় অনেক ভালোবাসো। কিন্তু আমি তোমায় আগেও বলেছিলাম যে, আমি তোমায় কখনও ভালোবাসতে পারবোনা। আমি আজ জীবিত থেকেও মৃত প্রায়। আমি চাইনা আমার জন্য তোমার জীবনটা নষ্ট হোক। তাই আজ আমি তোমার হতে চিরবিদায় নিয়ে নিচ্ছি। আমায় ভুলে যেও আদিবা।’
ম্যাসেজটি পড়ে আদিবা কি করবে বুঝতে পারছিলোনা। যেই অভ্রকে ছাড়া সে একমুহূর্ত ও অন্য কিছু কল্পনা করতে পারেনা। সেই অভ্রকে ছাড়া সে সারাটিজীবন কিভাবে কাটাবে। অভ্রকে যে করেই হোক তার বাচাতেই হবে। এরপর থেকে অনবরত ফোন করেই যাচ্ছে আদিবা। কিন্তু অভ্র ফোন রিসিভ ই করছেনা। কোনো উপায় না দেখে এই মাঝরাতেই আদিবা বেড়িয়ে পড়লো।
সারা রাস্তা শুধু দুশ্চিন্তা করেই কাটিয়েছে আদিবা। অবশেষে অভ্রের বাসায় গিয়ে পৌছায় সে। অনেকক্ষণ দরজায় নক করার পরেও যখন অভ্র দরজা খুললোনা। তখন পাশের ফ্লাটের মানুষদের ডেকে দরজা ভেঙ্গে অভ্রের বাসায় ঢুকে পড়ে আদিবা। ঘরে ঢুকেই আদিবা একদম নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বিছানায় অভ্র শুয়ে আছে। আর হাত হতে টপ টপ করে রক্ত ঝরে পড়ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব বেশী সময় হয়নি হাত কেটেছে। প্রচুর ব্লেডিং হচ্ছে সেখান থেকে। আদিবা আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে চিৎকার করে কেদে উঠলো।
_তিন_
ক্যাম্পাসে একটি ছেলে দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছে। আর সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। পড়নে কালো শার্ট ও জিন্স। চোখে গোলগাল একটি চশমা আর কাধে ব্যাগ। হঠাৎই একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা খায় ছেলেটি। কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আবার দৌড়াতে শুরু করে ছেলেটি। আর অর্পি অবাক নয়নে ছেলেটির চলে যাওয়া দেখতে থাকে।
দুই দিন পর...
‘এক্সকিউজ মি!’
‘আরে আপনি সেই না? যে কিনা সেদিন আমায় ধাক্কা দিয়ে কিছু না বলেই চলে গিয়েছিলো?’
‘না মানে আমিই সেই। আসলে সেই দিনের জন্য আমি খুবই দুঃখিত। পরে আপনাকে অনেক খুঁজেছিলাম। কিন্তু আর পাইনি।’
‘তো আজ কি মনে করে?’
‘আসলে সেদিন একটা ইমপর্টেন্ট ক্লাস ছিলো। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো সেদিন। তাই তাড়াহুরোয় আর স্যরি বলা হয়নি। আই অ্যাম এক্সট্রিমলি স্যরি ফর দ্যাট।’
‘ইট'স ওকে। আমিও কিছু মনে করিনি।’
‘থ্যাঙ্কস। বাই দ্যা ওয়ে, আমি অভ্র। অনার্স থার্ড ইয়ারে।’
‘আমি অর্পি। এবার অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে।’
এভাবেই অভ্র আর অর্পির পরিচয়। একই ভার্সিটিতে হওয়ায় দুজনের প্রায় সময়ই দেখা হতো। এরপর ফোন নম্বর আদান-প্রদান। দুজনের রোজ কথা হত, প্রচুর কথা হতো। দুজন দুজনার ভালো লাগার কথা বলা, মনের কথা বলা। ভালো লাগা আর এরপর ভালোবাসা। এত সহজে, এত দ্রুত দুজনের কাছাকাছি আসা টা অভ্রের কাছে কাছে ছিল জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্নের মত।
এসবকিছুর মাঝে আরো একটি চরিত্র আড়ালেই ছিলো। আর সে হলো আদিবা। অভ্রের কলেজ লাইফের বান্ধবী সে। আদিবা অভ্রকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসতো। কিন্তু কখনও মুখ ফুটে বলতে পারেনি। ভেবেছিলো অভ্র নিজেই তা বুঝে নিবে। কিন্তু যখন সে জানতে পারে অভ্র অন্য কাউকে ভালোবাসে। সেদিন সে নীরবে কেদে নিজ হতেই অভ্রের জীবন হতে সরে পরে।
_চার_
একদিন হঠাৎ অভ্র অর্পিকে অন্য একটি ছেলের সাথে পার্কে ঘনিষ্ঠভাবে দেখে। পরে অর্পিকে জিজ্ঞেস করলে সে তা অস্বিকার করে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারে অর্পি একটি প্লে গার্ল। ওর এরকম আরো কয়েকজনের সাথে রিলেশন আছে। এসবকিছু জানতে পেরে অভ্র পাগলের মতো হয়ে যায়। সে তো অর্পিকে নিজের চাইতেও বেশী ভালোবেসেছিলো। কিন্তু তার সাথেই কেনো এমন হলো। আস্তে অভ্র নেশার জগতে নিজেকে জরিয়ে ফেলে। আদিবা এসবকিছু জেনে নিজেকে আর দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনি অভ্রের কাছ থেকে। সারাক্ষণ অভ্রের কেয়ার নেওয়া। নিজের ভালোবাসা দিয়ে অভ্রকে আগলিয়ে রাখা যেনো আদিবার নিত্যদিনের নিয়ম হয়ে গিয়েছিলো। আর এরপরেই একদিন হঠাৎ আদিবার ফোনে অভ্রের ম্যাসেজ। আর গিয়ে দেখা অভ্রের সুইসাইড অ্যাটেম্প।
_চার_
‘এই শুনছো! আজ কিন্তু অফিস থেকে তারাতারি বাসায় আসবে। আজকের দিনের কথা মনে আছে তো?’
‘জ্বি মহারানী! মনে থাকবেনা আবার। আজ যে আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী। কিন্তু আজ তো আমার দেরী হবে।’
‘মানে কি? দেরী হবে কেনো?’
‘আজ একটা সুন্দরী মেয়ের সাথে আমার মিটিং আছে।’
‘কিইইই! পাজি একটা। আমি বাদে অন্য কোনো মেয়ের দিকে যদি চোখ তুলে তাকাও। তাহলে একদম চোখ উপরিয়ে ফেলবো।’
‘হায় হায়!! কোন ডাইনির পাল্লায় শেষ পর্যন্ত পড়লাম রে বাবা।’
‘আমি ডাইনি? আজ তোমাকে পেয়ে নেই।’, বলেই অভ্র আর আদিবা দুজনে খুনশুটিতে মেতে উঠলো।
সেদিন অভ্রকে তৎক্ষণাত হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। আইসিইউ তে রেখে অনেক চেষ্টার পর ব্লেডিং অফ করা হয়। এবং শেষমেষ ডাক্তার অভ্রকে বাঁচাতে সক্ষম হয়। এরপর আদিবার সেবা শুশ্রুষায় অল্প দিনেই অভ্র সুস্থ হয়ে উঠে। অভ্র ও বুঝতে পারে আদিবা ই তার প্রকৃত ভালোবাসা। এরপর দুজন পড়ালেখা কমপ্লিট করে জব এ ঢুকে যায়। তার সাথে সাথে দুজন বিয়ের পিড়িতে বসে পরে। আর এখন তো দেখছেন ই দুজন কেমন খুনশুটিতে মেতে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৮