ইচ্ছা ছিলো, ৭১ এর নিজের স্মৃতি কথা লিখবো কিন্তু লেখা আর হলো না । বিশ্বজিৎ হত্যা আর দ্য ইকোনমিস্টের হ্যাক করা তথ্য ফাঁস, সব কিছু গোলমাল করে দিছে।
আমার গ্রামে কোন মুক্তিযুদ্ধা বা রাজাকার ছিলো না, তবুও আমরা মান ইজ্জত আর প্রানের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পলাতক ছিলাম । পলাতক বাহিনি ছিল ভিকটিমদের দল ।
ছাত্র জীবনে কলেজ সাময়িকে একটা গল্প লিখে ছিলাম, ৭১’এ যুদ্ধের সময় ছোট একটা ছেলে হারিয়ে যায়, সে কি ভাবে কি করে, কোথায় আশ্রয় নেয়, কে আশ্রয় দেয়, এই সব।
মিসেস মিত্র লেখা টা দেখে, কিছু টিকটাক করে বলেন, উপন্যাস হয়ে গেছে, আরো সর্ট করে নিয়ে আস । আমি শুধু বানান গুলা টিকটাক করে ফিরত দিয়েছিলাম।
প্রকাশ হওয়ার পর বন্ধুরা বললো সুন্দর হয়েছে, তারা জানতে চাইলো এই গল্পটা কি আমার বানানো, কাল্পনিক?বলেছিলাম কাল্পনিক ।
হ্যা সেই গল্পটা ছিলো কাল্পনিক কিন্তু হারিয়ে যাওয়া সেই ছোট ছেলেটা ছিলাম আমি নিজে । বাড়িতে যদি সে দিন ফিরত না আসতে পারতাম তা হলে আমার কি হত, এই সব কাল্পনা করেই লিখেছিলাম সেই গল্প ।
যখন ৭১ এর সত্য গল্পটা লিখতে লাগলাম, কিন্তু কিছু লেখা প্রকাশ করার পর থেমে গেলাম । পারলাম না, অনেক পরিচিত বন্ধু বান্ধবের মুখ চোখের সামনে ভেসে আসে, পারিনা তাহাদের আঘাত দিতে ।
ওই ৭১’র গল্প যখন লেখছিলাম তখন মৌলানা সাঈদীর বিচার শুরু হচ্ছে-হবে । আমি মৌলানা সাঈদীকে জানি আনেক দিন আগ থেকে যখন তিনি জামাতের কোন সদস্য ছিলেন না । সিলেটে ওয়াজ করতেন, এত জনপ্রিয় ছিলেন, আজও লোকে সেই জনপ্রিয়তার কথা বলে ।
একদিন চলার পথে ইস্ট লন্ডন মসজিদের পিচনে ওয়াজ করতে প্রথম দেখি মৌলানা সাঈদীকে, তখন তিনি হয়ত জামাতের সদস্য হলে হতেও পারেন (১৯৮২+), উনি ইস্ট লন্ডন মসজিদের জন্য ফান্ড রাইজিং করছিলেন ।
দ্বিতীয়বার দেথি খুব ভোরে রাস্তায় তখন তিনি জামাতের বড় নেতা, সংগে ৩/৪ জন লোক ।
এতটুকুই মৌলানা সাঈদীকে জানতাম, কিন্তু তিনি যে এত বড় অপরাধী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে তাঁর বিচার হবে, ১ নম্বার আসামি হিসাবে সেটা ছিলো চিন্তার বাহিরে ।
মৌলানা সাঈদী সম্বন্ধে জানতে বড় ইচ্ছা হল, জনকন্টে পেলাম বিরাট রিপট-অভিযোগ, আর এটাই প্রথম প্রকাশিত অভিযোগ । রিপটের শেষ অংশে লেখা মৌলানা সাঈদী এত সাল পর্যন্ত নিখোজ ছিলেন, আরেক রিপটে লেখা মৌলানা সাঈদী সিলেটে তাবিজ বিক্রয় করতেন ।
হা বনে গেলাম ।
এক জন পরিচিত মুক্তিযুদ্ধা, যদিও মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স কম থাকায় অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন নাই । শুধু খবরা খবর আদান প্রদান ও খাবার সংগ্রহ পৌছাইয়া দেওয়াই ছিলো তাঁর কাজ ।
প্রতিবেশি এবং আমরা মাত্র দুই ঘর বাংগালী হওয়ায়, আশে আর কোন বাংগালী না থাকায়, আমাদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্কটা ছিলো খুব গভীর ।
আওমীলিগের একটিভ সদস্য হওয়ায়, আমরা ঘরে বসে যে সব আলোচনা করতাম, বাহিরে এইসব কথা কখন ও বলতে পারবেন না, কারন বললে, একজন খাটি আওমীলিগার-মুক্তিযুদ্ধা হলে কি হবে, রাজাকার উপাধি নিয়ে ঘরে বসে থাকতে হবে ।
উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনে মৌলানা সাঈদী সম্পকে কি জানেন?
জানতে চাইলেন কেন?
বললাম, আমিতো জানি মৌলানা সাঈদী এত সাল পর্যন্ত সিলেটে খুব জনপ্রিয় ছিলেন ।
তিনি বললেন, টিকতো, আমরা ও তো মৌলানা সাঈদীকে গোলাবাজার নিয়ে আসছিলাম ।
একলক্ষ টাকা দিয়েছিলাম, প্লাস ঢাকা থেকে সিলেট, সিলেট থেকে ঢাকার প্লেন ভাড়া প্লাস খাওয়া থাকার খরচ্ছ ।
তার পর বললেন, আমরা একটা কমিটি করেছিলাম প্রত্যেক বৎসর মৌলানা সাঈদীকে এনে ওয়াজ করাইবো ।
কমিটির বেশি সদস্যই ছিলেন আওমীলিগের লোক । কিন্তু পরের বৎসর জামাতে যোগ দেওয়ায়, আর আনা হয় নাই ।
বললাম, তখন থেকে উনার জন প্রিয়তা ভাটা পড়ে যায়, তখন আমি বাংলাদেশে ছিলাম , আপনার, সময় মনে আছে ।
বললেন, মাস টিক মনে নেই, তবে বসর বলতে পারবো ।
বললাম, দেখেন পত্রিকায় কি লিখছে, আর এটা নাকি প্রামাণিক তথ্য ।
বললেন, মিথ্যা লেখেছে ।
তার পর আমি মৌলানা সাঈদীর জীবনি,অপরাধ অনুসন্ধান করতে থাকি, পিরোজ পুরের লোক খুজতে থাকি, জামাত, শিবিরের ফ্রেইবুকে অনুসন্ধান করতে থাকি যার ফলে, এখন আমার অনেক জামাত, শিবির ফ্রেইবুক বন্ধু হয়ে গেছে, এর জন্য গালিও শুনতে হয় ।
অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে সামুতে অনেক তথ্য পেলাম, আর মৌলানা সাঈদীকে খুজতে গিয়ে সামুতে ব্লগার হয়ে গেলাম ।
ইকোনমিস্টের রিপট আর ফাঁস হয়া তথ্য জেনে যেটা বলা যায়, সেটা হল সরকারের মারাত্বক ভুল হয়েছে মৌলানা সাঈদীকে এক নাম্বার আসামি করে ।
এখন মৌলানা সাঈদীকে সাজা দেওয়া যেমন কঠিন, আবার ছেড়ে দেওয়াটা ও মহা বিপদ ।
আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বানচালের জন্য মুল দায়ী ব্যক্তি হচ্ছেন ছোট আইন মন্ত্রী । অযোগ্যদের দিয়ে যে কাজটা করানো যায় না, সেই কাজটা করাতে গেলে, যে ফল হয় সেটাই হচ্ছে ।
সম্পাদকীয় নোট
এই লেখাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের চেয়ারম্যান মো. নিজামুল হক ও ব্রাসেলসভিত্তিক আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যে ১৭ ঘণ্টার কথোপকথন ও ২৩০টিরও বেশি ই-মেইলের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
আমরা সাধারণভাবে এসব গোপনীয় ই-মেইল কথোপকথন প্রকাশ করতাম না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের এ ব্যাপারে প্রচণ্ড আগ্রহ রয়েছে। এমনকি মানুষের জীবন আজ হুমকির মুখে। আদালতের মর্যাদাও এখানে প্রশ্নবিদ্ধ।
আমরা সম্ভাব্য সবরকম উপায়ে যাচাই করে দেখেছি, তথ্যগুলো সম্পূর্ণ সত্য। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় আমরা নিজামুল হক ও জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেছি, যারা স্বীকার করেছেন যে তাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে।
কিন্তু ডিসেম্বরের ৬ তারিখ নিজামুল হক বিচারক থাকাকালে ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে এক আদেশ জারি করেন, যাতে ইকোনমিস্টের দুইজনকে আদালতে হাজির হয়ে ই-মেইল ও কথোপকথন জানার ব্যাপার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এ আদেশের ফলে নিজামুল হক বা জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সাধারণভাবে এসব তথ্যের উৎস প্রকাশ করতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু সেটা আমাদের উৎসের জন্য বিপদজনক হতে পারে। আমরা এটা ভেবে ভয় পাই না যে এতে আমাদের উৎস হুমকির মুখে পড়বে। বরং আমাদের আশঙ্কা, এতে আমাদের উৎস হামলার শিকার হতে পারেন।
এর আগে নভেম্বর মাসের ৫ তারিখ বিবাদী থেকে বাদী পক্ষে পরিবর্তন হওয়া এক সাক্ষীকে (সুরঞ্জন বালি) ট্রাইবুন্যালের সামনে থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। এর জন্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে দায়ী করেছিল বাদী পক্ষ। সরকার ব্যাপারটি অস্বীকার করলেও এরপর আর সেই সাক্ষীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কেউ আমাদের এসব তথ্য জানাতে বলেনি। কেউ আমাদের এজন্য টাকা দেয়নি, আমরা কারও কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধও নই। আমরা এটাও মনে করিনা যে অডিও টেপ ও ই-মেইলগুলো নকল।
দ্য ইকোনমিস্ট এটাও জানে না অভিযুক্তরা দোষী নাকি নির্দোষ। আমরা শুধুই এটাই চাই তাদের যেন নির্দোষ ধরে বিচার শুরু করা হয় ও আদালতে দুই পক্ষকে সমান সুযোগ দেওয়া হয়।
দ্য ইকোনমিস্টের জবাব
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দেশবিরোধী ও মানবতাবিরোধী কাজে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ সরকার।
নামে আন্তর্জাতিক হলেও এটি মূলত একটি জাতীয় আদালত, যা ১৯৭৩ সালের একটি অধ্যাদেশের (২০০৯ ও ২০১২ সালে সংশোধিত) উপর ভিত্তি করে গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে দীর্ঘ সময় পার হলেও ব্যাপারটা যেহেতু যুদ্ধাপরাধ, তাই ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
মূল অপরাধীদের বেশিরভাগই জীবিত কিংবা মৃত অবস্থায় পাকিস্তানে বসবাস করছেন। কিন্তু অভিযুক্তদের অনেকে এখনো বাংলাদেশে জীবিত রয়েছেন। তাদের মধ্য থেকেই ধর্ষণ, হত্যা, গণহত্যাসহ আরও কিছু অভিযোগে দশজনকে গ্রেফতার করা হয়।
চলতি সপ্তাহেই এ দশজনের মধ্যে অন্যতম দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা। এমনকি এ রায়ে তার ফাঁসি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকায় ট্রাইবুন্যালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের কিছু ব্যক্তিগত ই-মেইল ও ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যায়। এরপরই পদত্যাগ করেন তিনি। ইকোনোমিস্ট এসব ই-মেইল ও ফোনালাপের গুরুত্ব ও সত্যতা যাচাই করেছে।
এসব ই-মেইল ও ফোনালাপ বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আদালতের উপর সরকারের চাপ, অবৈধভাবে প্রবাসী এক আইনজীবীর সঙ্গে ট্রাইবুন্যালের চেয়ারম্যানের পরামর্শ, সাঈদীর মামলায় বাদী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণের আগেই রায় চূড়ান্ত করাসহ নানারকম বিতর্কিত বিষয় স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে এতে।
এ বিষয়গুলো এতোই স্পর্শকাতর যে এগুলোর সংশোধন না করে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে বাংলাদেশের ইতিহাস তো কলঙ্কমুক্ত হবেই না, বরং আরও কলঙ্কিত হবে।
যদিও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালকে বারবার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে, তারপরও বিচারপতির ১৪ অক্টোবরের একটি কথোপকথন থেকে আদালতের ওপর রাজনৈতিক চাপ স্পষ্ট।
নিজামুল হক সেখানে বলেন, “গভর্নমেন্ট গেছে পাগল হইয়া... তারা ১৬ ডিসেম্বরের আগে একটা রায় চায়।” এছাড়া পরের দিনের কথোপথনে মন্ত্রী তার বাসায় এসে দ্রুত রায় প্রদানের তাগাদা দেন বলেও উল্লেখ করেন বিচারপতি।
এর আগে ৫ ডিসেম্বর ইকোনোমিস্টের সঙ্গে ফোনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি আদালতকে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত বলে দাবি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমরা আমাদের নিজস্ব রাস্তায় নিজস্ব ইচ্ছামতোই আগাচ্ছি।”
সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক হিসেবে নিজামুল হকের স্বাধীনতা এখানে যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া তিনি যার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, সেই জিয়াউদ্দিন বিচারক প্যানেলের কেউ নন। তিনি একজন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ও বেলজিয়ামের বাংলাদেশ সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক। ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা নিজেদের চেনেন। জিয়াউদ্দিনের বড়ভাই নিজামুল হকের সহপাঠী ছিলেন।
কথোপকথন বোঝা যায় যে বিচার প্রক্রিয়ায় জিয়াউদ্দিনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। নিজামুল তাকে বিচার মামলার খবরাখবর সহ নানা খুঁটিনাটি জানাচ্ছিলেন, নথিপত্র দিচ্ছিলেন।
অথচ একজন বিচারককে তার রায়ের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হয়, যাতে তৃতীয় কোনো পক্ষ দ্বারা রায় প্রভাবিত না হতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধানেও বিচারব্যবস্থার এই নিরপেক্ষতাকে ‘অপরিহার্য’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
অবশ্য এটাও বোধগম্য যে যেহেতু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা চলছে, তাই সে ব্যাপারে একজন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন নিজামুল হক।
কিন্তু এ ব্যাপারে ইকোনমিস্টের পক্ষ থেকে নিজামুল হককে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি অস্বীকার করে বলেছিলেন, একজন বিচারক তৃতীয় পক্ষ বা বহিরাগত কারও সাহায্য নিতে পারেন না।
তিনি স্বীকার করেন যে জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে তার কথা হয়েছে, কিন্তু এটাও জানান যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক হিসেবে এসব ব্যাপারে নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গেও আলাপ করেন না বলে জানিয়েছিলেন নিজামুল হক।
এছাড়া জিয়াউদ্দিনও আদালতের সঙ্গে তার যে কোনো সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছিলেন।
বিচারকরা অবশ্যই পরামর্শ নিতে পারেন। কিন্তু সেটা নিয়ম মেনে, বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষকে জানিয়ে। এক্ষেত্রে সেটা করা হয়নি। এমনকি গত ৬ ডিসেম্বর সাঈদীর মামলার ব্যাপারে যে আদেশ দেওয়া হয়, তার পেছনে জিয়াউদ্দিনের ভূমিকা স্পষ্ট। কিন্তু তার ব্যাপারে আদালতে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।
আগস্ট মাসের ২৮ তারিখ থেকে অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন ২০ মিনিট করে প্রায় ১৭ ঘণ্টা কথোপকথনের রেকর্ড রয়েছে ইকোনমিস্টের কাছে। এছাড়া এসময় জিয়াউদ্দিন ও নিজামুল ২৩০টিরও বেশি মেইল চালাচালি করেছেন। বিচ্ছিন্নভাবে এসব মেইল, কথোপকথনের ব্যাখ্যা হয়তো দেওয়া সম্ভবত, কিন্তু সবগুলো একত্র করলেই সন্দেহজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
প্রথমত, জিয়াউদ্দিন মামলা চলাকালে এমন কিছু নথিপত্র তৈরি করতে সাহায্য করেছেন, যা নিজামুল হকের ভাষায় অবৈধ। মে মাসের ১২ তারিখ জিয়াউদ্দিন নিজামুল হককে গোলাম আযমের চার্জের একটি ড্রাফট পাঠিয়েছিলেন।
পরেরদিনই আদালত গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে, যা মূলত জিয়াউদ্দিনের ড্রাফটেরই অনুরূপ। জিয়াউদ্দিন ও নিজামুল হক, দুইজনই এ ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
দ্বিতীয়ত, সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখের এক কথোপকথনে নিজামুল হক শাহিনূর ইসলাম নামক ট্রাইবুন্যালের এক বিচারককে নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। শাহিনূর ইসলাম বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
উত্তরে জিয়াউদ্দিন বলেন, শাহিনূরকে এসব বন্ধ করতে হবে, নইলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে। তাকে ক্ষতিকর বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এসময় তার কথাবার্তায় মনে হচ্ছিল, একজন বিচারককে বাতিল করার ক্ষমতাও জিয়াউদ্দিনের আছে।
এছাড়া ২০১১ সালের ২৬ নভেম্বর নিজামুল জিয়াউদ্দিনকে বাদী পক্ষের এক গুরুত্বপূর্ণ আর্জির ব্যাপারে একটি মেইল পাঠিয়েছিলেন, যাতে লেখা ছিল, ‘আদেশ এখনো পাইনি। খুবই শঙ্কিত। প্লিজ বাংলাদেশ সময়ে আজকে রাতের মধ্যে পাঠান, নাহলে আমার নিজেরটাই ফলো করতে হবে। নাসিম।”
এ মেইল থেকে স্পষ্ট, নিজামুল হক জিয়াউদ্দিনের মতামতকে তার নিজের মতের ওপর প্রাধান্য দিয়েছিলেন।
তৃতীয়ত, ২০১১ সালের ৮ নভেম্বর জিয়াউদ্দিনের পাঠানো একটি মেইল থেকে ধারণা করা যায়, তার বাদীপক্ষ ও বিচারকের সঙ্গে একই সাথে একই বিষয়ে যোগাযোগ ছিল।
সেই মেইলে বাদী পক্ষের আর্জির ব্যাপারে কিছু নথিপত্র ছিল, যার প্রথম পাঁচটি সরবরাহ করেন ট্রাইবুন্যালের প্রধান কৌঁসুলী জায়েদ-আল-মালুম। সেখানে প্রধান কৌঁসুলীকে এমন কারও সাহায্য নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, যার সাহায্য স্বয়ং বিচারকও নিয়ে থাকেন।
বিচারক ও কৌঁসুলীর সঙ্গে জিয়াউদ্দিনের যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। ২০১১ সালের ডিসেম্বরের ১১ তারিখ তিনি জিয়াদ-আল-মালুমসহ দুইজন কৌঁসুলীকে মেইল পাঠান, যা তাদের মামলার যুক্তিতর্ক সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়।
আরও বলা যায় সাঈদীর ব্যাপারে নিজামুলকে পাঠানো একটি মেইলের কথা, যেটি গুগল ডকসের মাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছিল নিজামুল হকের সঙ্গে। মেইলে লেখা ছিল, এটি সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর এডিট করা হয়েছে, যা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার অনেক আগে। সেই মেইলে সাক্ষ্য, চ্যালেঞ্জ, অভিযোগ, শাস্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের উল্লেখ ছিল।
এ ব্যাপারে নিজামুল হককে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অস্বীকার করে বলেছিলেন, সাঈদীর জাজমেন্ট তো তখনো শুরুই হয়নি।
বিচারক আমাদের অভিযোগকে ‘উদ্ভট’ ও ‘মিথ্যা’ বলেছেন। জিয়াউদ্দিন যদিও বলেছিলেন এ ব্যাপারটার ব্যাখ্যা রয়েছে তার কাছে, আদালত ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে আদেশ জারি করার পর তিনিও আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আমরা বিশ্বাস করি না যে তিনি কোনো আইন ভঙ্গ করেছিলেন কিংবা তাকে অন্যদের অপরাধে দায় নিতে হবে। তবুও এসব তথ্য এমন কিছু বৈধ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, যার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের শিগগিরই তদন্ত শুরু করা উচিত। বিশেষ করে বিচারপতি নিজামুল হকের পদত্যাগ তদন্তের কাজ দ্রুত শুরু করার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি করেছে।
দ্য ইকোনমিস্টের: banglanews24.com
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৫১