- দরজা খোলো
- কেনো?
- বাইরে প্রচুর বৃষ্টি
- হুম, জানালায় দেখতে পাচ্ছি।
- আমি বৃষ্টিতে ভিজছি।
- এতো রাতে বৃষ্টিতে ভিজতে কে বলেছে?
রুমে যাও।
- তুমি তো দরজা খুলছো না। কেমন
করে রুমে যাবো?
- তোমার রুমের
দরজা আমি কিভাবে খুলবো?
- আমি তোমার রুমের
সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
- মানে কি?
রাত কয়টা বাজে খেয়াল আছে?
- আছে, এখন রাত ১টা ১২ মিনিট
- তুমি আমার সাথে ফাজলামো করছো,
না?
- না, আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।
তুমি দরজা খোলো।
- তুমি পাগল একটা।
বাসার কেউ দেখলে কি ভাববে বলতো?
- কেউ দেখবে না।
তুমি দরজা খোলো।
তোমাকে দেখতে খুব বেশি ইচ্ছে করছে।
- ঠিক আছে, আসছি।
অনিতা মোবাইলটি বিছানায়
রেখে দরজা খুলতে গেলো।
তার রুমটি আবার মুল ফটক
থেকে কিছুটা দূরে।
সে নিজের জন্য সবচেয়ে সুন্দর রুমটি
বেছে নিয়েছে।
মা-বাবার একমাত্র আদুরের মেয়ে সে।
মাসখানেক আগে রুহানের
সাথে তারা এঙ্গেজমেন্ট হয়েছে।
রুহান একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব
করে।
যথেষ্ট স্মার্ট ছেলে রুহান।
অনিতাও কোনো দিক দিয়ে কম নয়।
প্রথম দেখাতেই অনিতাকে ভালো লেগে যায় রুহানের।
তাই দেরি না করে পারিবারিকভাবে এঙ্গেজমেন্ট
সেরে ফেলে রুহান।
অনিতার পড়াশুনা শেষ হলে সুন্দর
একটি দিন দেখে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের
মাধ্যমে নিজের ঘরে অনিতাকে তুলে নেবার
পরিকল্পনা করে রেখেছে রুহান।
মাত্র আর ক'টা দিন।
অনিতা এখন একটি প্রাইভেট
ভার্সিটিরর টেন সেমিষ্টারে আছে।
অপেক্ষার সময় কিছুতেই
যেনো যেতে চাচ্ছে না। তারপরেও এই
সময়টি তারা দিব্যি প্রেম
করে কাটাচ্ছে।
এই এক মাসেই তারা একে অপরের খুব আপন
হয়ে গেছে।
রুহান প্রতিদিন বিকেলে অফিস
থেকে ফিরেই অনিতাকে নিয়ে বের
হয়ে পড়ে।
শহরের বিভিন্ন প্রান্তে
রিকসা দিয়ে ঘুরে বেড়ায় শুধুই দু'জনে।
অনিতা দরজা খোলে ভয় পেয়ে যায়।
বাইরে কেউ নেই।
প্রচন্ড রাগও হয় রুহানের উপর।
দরজা বন্ধ করে মোবাইলটি আবার হাতে নেয় অনিতা।
দেখে রুহান এখনো লাইনে আছে।
অনিতা মোবাইল কানে নিয়ে কিছু
বলার আগেই রুহান বলছে,
- রেগে গেছো, না?
রাগলে যে তোমাকে এতো সুন্দর
দেখায় তা আমার
আগে জানা ছিলো না।
- ফাজলামোর
একটি সীমা থাকা উচিত।
আমি এতো কষ্ট
করে গিয়ে দরজা খুলেছি।
তুমি একটা মিথ্যুক।
- টি-শার্ট পড়া তোমাকে আজ প্রথম
দেখলাম।
- তুমি কিভাবে জানলে যে আমি এখন
টি-শার্ট পড়ে আছি?
- আমি তো এখন তোমার খুব কাছে আছি।
- আন্দাজে ঢিল মারলেই হলো!
বলতো কালার কি?
- পবিত্রতার আবরণ সাদা। তোমার টি-শার্টের রং সাদা।
সাদা রং আমার খুব প্রিয়। তাই আমিও
আজ সেই সাদা পোষাকে তোমার
কাছে এসেছি।
- এই, তুমি কি আমাকে ভয়
দেখাতে চাচ্ছো?
ভাবছো কি তুমি?
হুমম, আমি ভীতু?
আর কিছুই বুঝি না, না?
সব ছেলেরাই জানে বেশিরভাগ
মেয়েরা রাতে টি-শার্ট পড়ে ঘুমায়।
আর বেশিরভাগক্ষেত্রেই তা সাদা বা পিংক কালার হয়।
- তোমার টেবিলের মোমবাতি প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
অনিতা টেবিলের দিকে তাঁকিয়ে দেখে সত্যি-ই মোমবাতি শেষ পর্যায়ে।
তার মনে এখন আগের ভয়টা আরো বেড়ে গেলো।
অন্ধকারের চাদরে ঢাকা চারিপাশ।
বৃষ্টি পড়ার শব্দ আজ কোনো এক অসহায় নারীর আর্তনাদের মতো মনে হচ্ছে।
অজানা আতঙ্কে অনিতার বুক বার বার কেঁপে উঠছে।
তারপরেও সে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।
বাইরে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে।
তাই বিদ্যুৎ নেই অনেকক্ষণ যাবত।
অনিতা ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
- রুহান, সত্যি-ই আমি খুব ভয় পাচ্ছি এখন।
প্লিজ, তুমি কোথায় বলো?
- ভয় পাচ্ছো কেনো?
আমি তোমার খুব কাছেই আছি।
- তাহলে সামনে আসছো না কেনো?
- সামনে যাওয়া যাবে না
- আমি আসতে বলছি।
- আমি আছি
- সামনে এসো
- না, আসা যাবে না।
তুমি ভয় পাবে।
- ভয় পাবো কেনো?
তুমি এসো প্লিজ...
- তাহলে মোমবাতিটি নিভাতে হবে
- আমি অন্ধকারে তোমাকে কিভাবে দেখবো?
- ভালোবাসার আলো দিয়ে দেখবে।
- ঠিক আছে, নিভাচ্ছি।
অনিতা মোমবাতি নিভিয়ে বললো, "কোথায়
তুমি? সামনে এসো। "
কেউ একজন তখন বললো,
"পিছনে ফিরে দেখো"
অনিতা পিছনে তাঁকিয়ে জোরে চিৎকার
দিয়ে অজ্ঞান
হয়ে মেঝেতে পড়ে গেলো।
চিৎকার শুনে তার মা-
বাবা ছুটে এলো তার রুমে।
সাথে সাথে তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো।
জ্ঞান ফিরতে ফিরতে সকাল হলো।
অনিতা চোখ খোলেই রুহানকে খুজছে।
সবাই আছে,
কিন্তু রুহান নেই।
অনিতা জানতে চাচ্ছে রুহান কোথায়?
কিন্তু কেউ কোনো উত্তর দিচ্ছে না।
অবশেষে অনিতাকে যে দৃশ্যের
সামনে নেয়া হলো,
তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
রাতের অন্ধকারে যে মানুষটি শূণ্যে ঝুলছিলো,
সেই মানুষটি এখন চিরতরে ঘুমিয়ে আছে তার চোখের সামনে।
সমস্ত শরীর তারা সাদা কাপড়ে ঢাকা।
অনিতার এখন রাতের সবকিছু মনে পড়ছে।
সে যখন পিছনে ফিরে তাঁকিয়েছিলো তখন
দেখতে পেয়েছিলো রুহান এই সাদা কাপড়
গায়ে জড়িয়ে শূণ্যে দুলছে।
এই দৃশ্য দেখেই সে জ্ঞান হারিয়েছিলো।
কাল ঝড়ের রাতে খুন হয় রুহান।
তার রক্তাক্ত নিথর দেহটি পুলিশ ভোরে খোঁজে পায়।
অনুমান করা হচ্ছে, রাত এগারটা/বারোটারর দিকে হয়তো তাকে খুন
করা হয়েছে।
তাহলে রাত একটার পর কার সাথে কথা হয়েছে অনিতার!
সেন্সলেস হয়ে অনিতা মেঝেতে পড়ার সময়ে-ই তার হাত থেকে মোবাইল নিচে ছিটকে পড়ে কয়েক অংশে ভাগ হয়ে গিয়েছিলো,
যার ফলে আর উদ্ধার করাও সম্ভব হয়নি সেই ১৮ মিনিট ফোনকলের রহস্য।
অনিতা এখন নির্বাক।
সে এখন জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে আছে।
সেই একটি অভিশপ্ত রাত্রি জীবনের সবকিছু এলোমেলো করে দিলো।
দু'টি জীবনের সাজানো স্বপ্ন হারিয়ে গেলো এক নিমিষেই।
সঞ্চিত ভালোবাসার কাব্যের অপমৃত্যু হলো।
আজ রুহান নেই।
শুধু আছে তার পড়িয়ে দেয়া সেই আংটি অনিতার অনামিকায়।
তবে অনিতা আজো বেঁচে আছে,
পালকহীন পাখির মতো।
শুধু নির্বাক তাঁকিয়ে থাকে দূর আকাশে।
আর কি জানি সেখানে খোঁজে বেড়ায়,
সে ছাড়া আর কেউ জানে না.....!!