somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষের অমরত্ব প্রাপ্তি আর কয় দশক দূরে ???

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জন্মিলে মরিতে হবে ,অমর কে কোথা কবে ? ... কবি লিখেছিলেন ,আমরা পড়ে ছিলাম। অথবা ওনলি কনস্ট্যান্ট ইন লাইফ ইস ডেথ। এই সব ধারণা যদি হটাৎ করে বদলে যায় তো কি রকম শক লাগবে আমাদের ?

অবশ্য প্রায় সমস্ত ধর্মগ্রন্থেই অমরত্বের কথা বলা আছে , তবে সেগুলো ইহজন্মে নয় পরজন্মে ,অবশ্য তাও মাগনা নয় --এর জন্য ঈশ্বর /আল্লাহ কে অনেক খুশী করতে হবে ,ভয় করতে হবে । তাঁর কাছ থেকে সবাই এসেছে আবার তাঁর কাছেই সবাই ফিরে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।ইহজন্মে মৃত্যুর পর স্বর্গ - টর্গ ,জান্নাত -মন্নাত এ গিয়ে হুরি -পরী -অপ্সরি নিয়ে অমর হওয়ার কথা এই পৃথিবীর ৯৯ শতাংশ মানুষই বিশ্বাস করে। কিন্তু ইহজন্মে যদি মৃত্যুই না হয় , মানুষ ঈশ্বর /আল্লার সাথে গিয়ে মিলবে কেম্নে ? বড় কঠিন প্রশ্ন। যাইহোক , ঈশ্বর /আল্লাহ কে খুশি বা ভয় করে অমরত্ব প্রাপ্তি এই পোস্টের বিষয় নয়।

গত ১৫০ বছরে মানুষের গড় আয়ু প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আগামী ৫০ বছরে অন্তত কিছু মানুষ কি অমর হতে পারে ?মানে এই ইহজন্মে ? বিজ্ঞানীরা কি মানুষের মৃত্যু কে অবলুপ্ত করতে পারে ? সম্ভবনা কতটা ?
সম্ভাবনা অনেকটাই। কিছু বিজ্ঞানী দাবী করছেন কাজ তারা প্রায় সেরে ফেলেছেন আরকি ! খুব বেশী হলে ২০৫০ সাল। না , পৃথিবীর ৭৫০ কোটি জনগণ অমর হবে না। কিছু সংখক হতে পারে। আসলে ইহজন্মে অমর হওয়ার জন্য ঈশ্বর -আল্লাহ লাগবে না ,শুধু ট্যাঁকের জোর থাকলেই চলতে পারে।

মানব শরীরের মৃত্যু কি জিনিস?
একদম সাদা বাংলায় এটা হল আমাদের শরীরের কোষ গুলোর ডিগ্রেডেশন একটা পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন এ চলে যাওয়া, যেখান থেকে এই ডিগ্রেডেশন রিভার্স করা সম্ভব না।
কিন্তু যদি এই ডিগ্রেডেশন রোধ করে দেয়া যায় ? মানুষের শরীর কিন্তু কিছুটা হলেও তা করে যাচ্ছে। জেনে অবাক হবেন মোটামুটি প্রতি সাত বছর পর পর মানব শরীরের কোষ রিফ্রেশ হয়।পুরোনো কোষের মৃত্যু হয় ,নতুন কোষের জন্ম হয়। জন্মের সময় একটা শিশু যে কোষ গুলো নিয়ে ভুমিষ্ট হয়েছিল , তার প্রাপ্ত -বয়সে মৃত্যুর সময় পুরোনো একটা কোষ ও শরীরে থাকে না। ঘটনা হচ্ছে একটা সময় পরে মানব শরীরের কোষগুলো নিজেদের আর রিফ্রেশ করতে পারে না। তাই মানুষ বুড়ো হয় এবং তার মৃত্যু হয়। এই একটা সময় বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয় , জীনগত কারণ মানুষের বুড়ো হওয়ার সময় নির্ধারণে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
কিন্তু যদি এমন হয় যে :
১) কোষ গুলোকে infinitely রিফ্রেশ করানো যায় ? অন্তত কয়েকশো বা কয়েক হাজার বা কয়েক লক্ষ বছর ধরে ? তার মানে কোষের ডিগ্রেডেশন হবে না অর্থাৎ শরীরের স্বাভাবিক মৃত্যু হবে না। মানুষ অমর হবে। কিন্তু এখানে একটা রিস্ক আছে। যদি এক্সিডেন্ট এ মৃত্যু হয় অথবা জটিল কোন রোগে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় পদ্ধতি .....
২) একটা মানুষের সমস্ত শরীরের সমস্ত অঙ্গ -প্রত্যঙ্গ ,নার্ভাস সিস্টেম সহ ক্লোন করে ল্যাবরেটরিতে সুরক্ষিত রাখা হলো। এর সাথে মগজের মাল -মশলা মানে স্মৃতি, জ্ঞান , অভিজ্ঞতা ,বিশ্বাস , চেতনা /কনসিয়াসনেস ,লোভ ,ক্রোধ , ভালোবাসা ,যৌনতা --মানে যা কিছু একটি মানুষের ব্রেন ধারণ করে তা কপি -পেস্ট করে ক্লাউড বা কোন হার্ড -ডিস্কে স্টোর করে রাখা হলো।


অর্থাৎ ১ নম্বর পদ্ধতিতে একজন মানুষের বায়োলজিক্যালি শরীরের কোষ ডিগ্রেডেশন রোধ করে তার বুড়ো হওয়া বন্ধ করে মৃত্যুকে আটকে দেওয়া অথবা যদি এক্সিডেন্ট এর কারণে তার মৃত্যুও হয় তাহলে ২ নম্বর পদ্ধতি অনুসারে সেই ব্যক্তির আগে থেকে বানিয়ে রাখা ক্লোনের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার মানে ক্লাউড থেকে ব্রেনের মাল -পত্তর ডাউনলোড করে নিলেই হলো। কেল্লা ফতে ,মানুষ অমর ! রাম -শ্যাম -মোহাম্মদ এর মৃত্যু হলে আবার তাদের রাম -শ্যাম -মোহাম্মদ বানিয়েই ফেরত আনা যাবে।


ঘটনা হচ্ছে গুগল সহ একাধিক সংস্থা এই সব ব্যাপারে অত্যন্ত জোর-তোড় রিসার্চ করছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং , ন্যানো -টেকনোলজি এবং আর্টিফিশিয়াল -ইন্টেলিজেন্স --এই বিষয় গুলোতে বিলিয়নস অফ ডলার খরচ করা হচ্ছে এবং টেকনোলজির এই দিকগুলো ভয়ংকর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। টেকনোলজির এই ভয়ংকর অগ্রগতি আমাদের নিয়ে যাচ্ছে Singularity -র দিকে।
Singularity কি??

The term singularity describes the moment when a civilization changes so much that its rules and technologies are incomprehensible to previous generations. Think of it as a point-of-no-return in history.

একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
ধরুন আপনাকে বলা হলো ১৫০০ আগে জন্ম নেওয়া কাউকে ইন্টারনেট কি সেটা বোঝান । ব্যাপারটা কি রকম হবে ? সে কিছুই বুঝতে পারবে না। এটা বুদ্ধিমত্তার কম -বেশীর ব্যাপার না , বিজ্ঞানীরা বলেন গত ৫০০০ বছরে একজন সাধারণ মানুষের বেসিক ইন্টেলিজেন্সের কোনো পরিবর্তন হয় নি। আসলে ১৫০০ বছর আগে জন্ম নেওয়া একজন মানুষের "ফ্রেম অফ রেফারেন্স " এতটাই আলাদা হবে যে সে ইন্টারনেটের কিছুই বুঝবে না বা comprehend করতে পারবে না।


বিজ্ঞানীরা বলছেন ভবিষ্যতের সিঙ্গুলারিটির নিরিখে আমরা মানে বর্তমানের সাধারণ মানুষেরা আদিম যুগে আছি। আর ওই পরবর্তী সিঙ্গুলারিটি ১৫০০ বছর দূরে নয় , মাত্র ৩০ বা ৪০ বছর দূরে। মানে সহজ ভাষায় যেটা বলা হচ্ছে সেটা হলো এই ২০১৭ সালে দাঁড়িয়ে ২০৪৭ সালের সিঙ্গুলারিটি আমাদের বোধগম্য হবে না ,বিশ্বাস হবে না অথবা মেনে নেওয়ার সমস্যা হবে। এবং ভবিষ্যতের সিঙ্গুলারিটি গুলোর টাইম-স্প্যান ছোট হতে থাকবে।

সিঙ্গুলারিটি -অমরত্ব -মরালিটি (morality ) :
অনেকেই বলছেন মানুষের বা শুধু মাত্র কিছু মানুষের অমর হওয়া একদম ঠিক হবে না , সামাজিক ,এথিক্যাল সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবে। অল্প কিছু মানুষ অর্থের জোরে অমর হবে আর বাকীরা আঙ্গুল চুষবে এটা হতে পারে না ,এটা মেনে নেওয়া যায় না।
কথাগুলো ঠিক। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে মরালিটি বা নৈতিকতা নির্ধারণ করে সাধারণ মানুষ , বিজ্ঞানীরা নন , সাধারণ মানুষের বুদ্ধিমত্তা অনেক কম এবং নৈতিকতার পরিধি পরিবর্তনশীল। সভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত হামেশা বিজ্ঞান -প্রযুক্তি কে এগিয়ে নিয়ে গেছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ। ১০০ বছর আগে পর্যন্ত এটা এগিয়েছে বেবি -স্টেপে মানে হাঁটি হাঁটি পা পা করে কিন্তু গত ১০০ বছরে এটার অগ্রগতি হয়েছে ,ইংরেজিতে যাকে বলে ,একেবারে জায়ান্ট লিপে
আগামী ৫০-১০০ বছরে এই অগ্রগতি সাধারণ মানুষের কল্পনার সীমা ছাড়িয়ে যাবে। আগামী ৫০-১০০ বছরের singularity গুলো আমাদের সাধারণ মানুষের "ফ্রেম অফ রেফারেন্স " এ রেজিস্টারই হবে না। অমরত্ব অনেক সিঙ্গুলারিটির মধ্যে হবে একটা।
গুগল সংস্থা Calico ছাড়াও Buck Institute of Technology ,হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল এবং আরো অনেক সংস্থা এই সমস্ত রিসার্চে প্রথম সারিতে।

এই সংক্রান্ত কিছু লিংক দেখুন :
১) Google's chief futurist Ray Kurzweil thinks we could start living forever by 2029
২)Silicon Valley Is Trying to Make Humans Immortal—and Finding Some ...
৩)Exclusive: TIME Talks to Google CEO Larry Page About Its New Venture to Extend Human Life
৪)Ray Kurzweil: We'll Become Godlike When We Connect Our Brains to The Cloud
৫)Is Google’s Calico Really Trying to Conquer Death?

অমরত্ব এবং আমার ভাবনা !

আমার বর্তমান "ফ্রেম অফ রেফারেন্স" এ অমরত্ব রেজিস্টার করছে না ! আমি যেন সেই ১৫০০ বছর আগের ব্যক্তি যে ইন্টারনেট কি বুঝতে পারছে না ! ওই সিঙ্গুলারিটির সমস্যা আর কি ! আপনাদের কি অবস্থা? একটু ভাবতে থাকুন। আমি বরং ততক্ষন একটা বলিউডি ডায়লগ মারি : বাবু মশাই ! জিন্দেগী বড়ি হোনি চাহিয়ে ,লম্বী নেহি !!!



সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪২
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×