আজ দুটো গল্প বলব। দুটোই অত্যন্ত বায়াজড ও নেগেটিভ। পজিটিভ মানুষেরা পড়বেন না।
।।--।।
নেগেটিভ ও পজিটিভ: থার্ড ডাইমেনশন:-
।।--।।
আমাকে নেগেটিভ মানুষ মনে করবেন না।
আমি নেগেটিভ না। বরং স্ট্রংলী পজিটিভ। তবে আমার এপ্রোচটি ভিন্ন।
মানুষ পজিটিভ ঘটবে-এটা ধরে নিয়ে সন্তুষ্ট ও রিল্যাক্স থাকে। আমি যেকোনো কিছুর নেগেটিভ দিকটি আগে খুঁজি। সেটার প্রোটেকটিভ খুঁজি।
আমার এপ্রোচ হল, পজিটিভ ইমপ্যাক্টের জন্য রেডি থাকা লাগেনা। পজিটিভ এমনিতেই ন্যাচারালি ঘটে। কিন্তু নেগেটিভ ইমপ্যাক্টের জন্য প্রস্তুতির বিষয় আছে। ওটার জন্য সতর্কতার দরকার আছে। যেমন ধরুন, আপনার একটি প্রোমোশন হল। আপনাকে সেজন্য বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নেবার তেমন জরুরী নেই।
কিন্তু আপনি যদি জানেন, কাল আপনার চাকরী যাবার সম্ভবনা আছে, তবে আজকে অবশ্যই আপনার বহু কিছু করার বিষয় আছে। আমার নেগেটিভ এপ্রোচটি ওই ডাইমেনশনে। তবে মজার ব্যাপার হল, মনুষ্য সমাজে নেগেটিভিটি কথাটা আপাত অর্থে বাঁকা বা খারাপ চোখে দেখা হলেও পৃথিবী চলে কিন্তু নেগেটিভিটিতে ভরসা করে।
ভেবে দেখেছেন, নেগেটিভ আয়ন না হলে পৃথিবীর মৌলিক স্বত্ত্বা পরমাণু অচল। কারন নেগেটিভ চার্জের টানেই ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়।
নেগেটিভ হতেই পজিটিভ ফটো প্রষ্ফূট হয়।
নেগেটিভিটি না থাকলে বিদ্যুত প্রবাহ ঘটেনা। বিদ্যুত ছাড়া পৃথিবী কয়েক সেকেন্ডে শেষ হয়ে যাবে।
সেই আঙ্গিকে একটা নেগেটিভ কথা বলি।
বাংলাদেশে (আমাদের যতই খারাপ লাগুক), আগামী ২০ বছরে যত পজিটিভ বা নেগেটিভ চেঞ্জ আসতে পারে, তার মধ্যে একটা হল-অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন (যদিও সাসটেইনেবল হবার কথা না, হবে কসমেটিক উন্নয়ন।)।
আর নেগেটিভগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে, আমাদের মৌলিক জাতিস্বত্ত্বাবোধ, জাতীয়তাবোধ, জীবনবোধ, জাতীয় স্ট্যান্ড, জাতিগত উৎকর্ষ, নিজস্ব শিল্প, নিজস্ব সাহিত্য, সাহিত্য চর্চা, নিজস্ব গানের ধারা, সোস্যাল নর্মস ও ইতিহাসবোধ বিলুপ্ত হবে। হবেই। তার জায়গায় স্থান নেবে এক বোধহীন, কসমেটিক, ইমপোজড, পরাশ্রয়ী, মেকি, সুপার ফাস্ট অসহ্য জেনারেশন।
টাকা থাকবে, দান থাকবে না,
দান থাকবে তো প্রাণ থাকবে না।
গান থাকবে সুর থাকবে না,
শিল্প থাকবে তো প্রাণস্পন্দন থাকবে না।
কসমোপলিটন একটি বাংলাদেশে পরিণত হচ্ছি আমরা দিনকে দিন। নিজেদের অজান্তেই। যদি আশাবাদ দিয়ে এই মন্তব্যকে কাউন্টার করতে চান, তবে করুন। শুধু ’চেতনা’, ’দেশপ্রেমের ফাঁকাবুলি’, ’জিডিপির উর্দ্ধগতি’ আর ‘এমডিজি’ ওই পতনের ধারায় কোনো বাঁধাই হবে না। হচ্ছেও না। তারই ধারাবাহিকতায় সবগুলো ক্ষেত্রে আমরা দিনকে দিন নামছি আর নামছি।
বিশ্বাস না হলে বা অতিরঞ্জিত মনে হলে, নিশ্চিন্তে নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। বি পজিটিভ।
পুরুষ তুমি মানুষ নও, তুমি শুধুই পুরুষ:-
।।--।।
পুরুষের সুপ্রাচীন একতরফা কর্তৃত্ব’র অবসান আর নারীর মুক্তি নিয়ে কাজ করতে করতে আর কথা বলতে বলতে আমরা বোধহয় একটু বেশি বেশি নারীবাদী কিংবা পুরুষ বিদ্বেষী হয়ে যাচ্ছি।
জগতের সব লেখক কেন শুধু ‘একজন নারী’কেই নির্যাতিতার রূপে দেখাতে চান? নারী বা পুরুষ যেই লেখেন, সবার কলমেই নারীই একমাত্র নির্যাতিত ও বঞ্চিতরুপে সমবেদনার পাত্রী।
কেন, পুরুষ কি নির্যাতিত হয় না? বঞ্চনায় পুরুষ কি ভোগে না? সেকি প্রতারিত হয় না নারীর কাছে? তবে কেন শুধু সবার কলমে একমাত্র নারীই প্রষ্ফূট? কেন সাহিত্যে, খবরে, আচারে, সংস্কৃতিতে, সেমিনারে শুরু নারীর বঞ্চনার বন্দনা?
পপুলারিটি? ক্রেজ?
ট্রেন্ড? মেজরিটি? লোকলজ্জা?
পাবলিক এটিচুড? জড়ু কা গোলাম? পুরুষতান্ত্রিক অহংবোধ? (যে, গল্পেও পুরুষ বলবান থাকবে)?
নারীমুক্তির দূত পুরুষ ও রমনীবৃন্দ: আপনারা আমার নমস্যঃ। সিরিয়াসলি। তবে অনলাইন ও অফলাইন যত লেখা পড়ি সবগুলোতে ভিলেন ওই পুরুষ (অন্তত ৯৫% লেখায়), এটা খুব পিড়া দেয়। মনে রাখতে হবে, আমাদের যুদ্ধটা পুরুষের বিরুদ্ধে না, পুরুষকে ইনফেরিয়র করে দেয়া না, পুরুষের এতদিনের ডোমিনেশনের প্রতিশোধের জন্য না। পুরুষকে নারীর বা নারীকে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী বা শত্রূ পরিগনিত করার জন্যও না। আমাদের লক্ষ্য নারীর মুক্তি, নারীর সত্যিকারের মর্যাদা অর্জন, তার প্রাপ্য সম্মান প্রতিষ্ঠা আর নারীকে পুরুষের মতোই একজন ব্যক্তিস্বত্ত্বা ও মানুষ হিসেবে পরিচয় প্রদান।
এবার আসল কথা পাড়ি। কয়েকদিন আগে লাইফ ইন্সু্র্যান্স কোম্পানী হতে দু’জন এজেন্ট এসেছিলেন। আমাকে তারা ধৈর্য ধরে বোঝান, আমি মরলে আমার ইন্সুর্যান্সের টাকায় আমার পরিবার কীভাবে সুরক্ষিত থাকবে। কীভাবে আমার মরার পরেও ওই টাকা আমার প্রিয়জনদের নিরাপত্তা আর কমফোর্ট দেবে। হায় পুরুষ মানুষ! সারাজীবন তো দায়ীত্ব নিতেই হয়, মরার পরেও তার পরিবারের কী হবে তার জন্য মরার আগেই মরার প্রস্তুতি নিতে হয়।
পুরুষ, হে মহান পুরুষ! তোমার মরার পরে কীভাবে তোমার মৃত্যুপূর্ব দায়ীত্ব সুন্দরভাবে চলতে থাকবে তার চিন্তাও তোমাকে মরার আগেই ভেবে ও করে যেতে হয়। তুমি স্বাধীনভাবে মরতেও পারবে না।
তুমি জীবনেও স্বাধীন নও, মরণেও নও।
তুমি মানুষ নও, তুমি শুধুই পুরুষ।
ছবিয়াল: নিজ হস্তে নিজ মুঠোফোনে। একটি কন্টকীত সুখ তথা পজিটিভিটি অর্থে। দ্বিতীয়টি পুরুষের প্রতিভূ অর্থে।