somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নযাত্রা: ইটালী - ৪

২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শিল্পীর চোখে ভিসুভিয়াসের অগ্নুৎপাত। পিয়ার জ্যাগ ভুলেইর (১৭৭০) পেইন্টিং।


সমস্ত আগ্নেয়গিরি জীবনে অন্ততঃ ৫০ বার অগ্নুৎপাত করেছে ভিসুভিয়াস। শেষবার (আপাততঃ) করে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৪ এর মার্চে।


বাস থামার স্থান আর চুড়ায় উঠার ট্রেইল।

স্বপ্নযাত্রা: ইটালী - ৩

ভিসুভিয়াস। নামটার মধ্যেই কেমন যেন একটা ভীষন ভয়ানক আর অশুভ ভাব আছে। আজ ইওরোপের একমাত্র জীবন্ত এবং পৃথিবীর অন্যতম ভয়ংকর এই আগ্নেয়গিরি দেখতে যাওয়ার কথা।

জীবনে কোনদিন সামনাসামনি কোন আগ্নেয়গিরি দেখিনি, তাও আবার জীবন্ত এবং যার ইতিহাস এতটা ভয়াবহ। সেজন্যে খুবই উত্তেজিত! পম্পেই থেকেই ভিসুভিয়াসের প্যাকেজ ট্যুরের বাস যাতায়াত করে। কিন্তু আমার প্ল্যান একটু ভিন্ন। আগেই জানা ছিলো পম্পেই এর সাথে সাথে ভিসুভিয়াস আরেকটা শহরও ধ্বংস করে, যার নাম হারকিউলেনিয়াম। এটি ভিসুভিয়াসের কাছেই অবস্থিত। ভিসুভিয়াস থেকে পম্পেই এর দুরত্ব ১৩.৫ নটিক্যাল মাইল আর হারকিউলেনিয়ামের দুরত্ব প্রায় ৪ নটিক্যাল মাইল। পম্পেই দুরে হওয়াতে লাভাস্রোত এই নগরী পর্যন্ত আসতে পারেনি, চাপা পড়েছিল বাতাসে ভেসে আসা ছাই আর পিউমিসের নীচে। কিন্তু হারকিউলেনিয়াম লাভার নীচে চাপা পড়েছিলো। পম্পেই ছিল একটা নগরী এবং সেসময়ের বিখ্যাত জনপদ, আর হারকিউলেনিয়াম ছিল একটা ছোট শহর, তাই এটি ততটা প্রচার পায়নি।

রিসেপশানে আলাপ করে জানলাম এরকোলানো শহর (যেখানে হারকিউলেনিয়ামের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে) থেকেও ভিসুভিয়াসের প্যাকেজ ট্যুরের বাস যাতায়াত করে। তাই ঠিক করলাম প্রথমে এরকোলানো যাবো, সেখানে হারকিউলেনিয়ামের ধ্বংসাবশেষ দেখে ভিসুভিয়াস অভিযান শেষ করে আবার পম্পেই ফিরবো কারন এখান থেকেই আমাকে বিকেলে রোমের বাস ধরতে হবে।

দুপুর ১২ টা হচ্ছে হোটেলের চেকআউটের শেষ সময়, আমার সব ঘুরে ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকাল হয়ে যাবে তাই সকালেই চেকআউট করে ব্যাগ রিসেপশানে রেখে ট্রেনে চেপে বসলাম। এরকোলানো ট্রেন স্টেশানের সাথেই ভিসুভিয়াস ট্যুরের অফিস, সেখান থেকেই বাস ছাড়ে আবার সেখানেই নামিয়ে দেয়। ট্রেন থেকে নেমে আগে ভিসুভিয়াসের টিকেট করে রওয়ানা দিলাম হারকিউলেনিয়ামের দিকে। খুব কাছেই, ট্রেন স্টেশান থেকে ৭/৮ মিনিটের হাটাপথ। হারকিউলেনিয়াম দেখে একটু হতাশই হলাম। আসলে এটাও দেখার মতো তবে খুব একটা বড় না। আমার মনে হলো যেন পোলাও খেয়ে পান্তা খেলাম! বুঝতে পারলাম, হারকিউলেনিয়াম দেখা উচিত পম্পেই এর আগে!



হারকিউলেনিয়াম, প্রবেশপথ




হারকিউলেনিয়ামের ২টা ছবি

১১ টার সময় আমাদের বাস যাত্রা শুরু করলো ভিসুভিয়াসের উদ্দেশ্যে। এই পর্বতটার উচ্চতা পম্পেই ধ্বংসের আগে ছিলো প্রায় ৯,০০০ ফিট। পম্পেই অগ্নুৎপাতের সময় প্রচন্ড বিস্ফোরনে এর চুড়া উড়ে যায় আর একটা বড় অংশ ধ্বসে পড়ে। পরবর্তীতে এটি আরও কিছুটা উচ্চতা হারায়। বর্তমানে এর উচ্চতা ৪,২০০ ফিট। এর জ্বালামুখের গভীরতা ২,৩০০ ফিটের মতো। পম্পেই এর পরে আরও অনেকবার এটি অগ্নি উদগীরন করেছে, শেষবার ১৯৪৪ সালে। এর উদগীরনের ট্রেন্ড বিশ্লেষন করে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, এর পরবর্তী উদগীরন হবে ভয়াবহ কারন এটি ইতোমধ্যে প্রচুর শক্তি সন্চয় করে ফেলেছে! আমি অবশ্য আল্লাহর নাম নিচ্ছিলাম যেন আমি থাকতে থাকতে এটি আবার শুরু না করে দেয়, তাহলে সামুতে আর এর দর্শনের পোষ্ট দেয়া সম্ভব হবে না!!!

সাপের মতো প্যাচানো রাস্তা দিয়ে বাস যতো উপরে উঠতে লাগলো, ততোই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকলো। একপর্যায়ে এমন এক গা ছমছম করা পরিবেশে চলে এলাম যা পৃথিবীর সাধারন পরিবেশ থেকে আলাদা। চারিদিকের মাটি পাথর সব কেমন কালো কালো। গাছের গোড়াগুলিও যেন কেমন! আস্তে আস্তে গাছের পরিমানও কমে গেলো। আশেপাশের পর্বতের ঢালগুলোও যেনো পোড়া। অবশেষে প্রায় ১,৬০০ ফিট উচ্চতায় এসে বাস থামলো।




চলন্ত বাস থেকে তোলা, ছবিতে যেমনই দেখা যাক, বাস্তবে আসলেই গা ছমছম করে!


বাকী ২,৬০০ ফিট হেটে উঠতে হবে। বাসের ড্রাইভার জানিয়ে দিল, এই মূহুর্ত থেকে আমাদের হাতে সময় আছে ১ঘন্টা ৫০ মিনিট। তারপরে আর কারো জন্য দাড়াবে না, ফিরতি পথে রওয়ানা দিবে (এই জন্যই আমার প্যাকেজ অপছন্দ)। পাহাড়ে উঠার একটা সাধারন নিয়ম আছে। তাড়াহুড়া করা যাবে না, আর থামা যাবেনা। তবুও ২/৩ জায়গায় থামলাম ছবি তোলার জন্য। শেষপর্যন্ত প্রায় বিশ হাজার বছরের পুরানো পর্বতের চুড়ায় যখন উঠলাম তখন শুয়ে পরতে ইচ্ছা করছিলো! মনে হচ্ছিল একটু বড় করে হা করলে বোধহয় হৃদপিন্ডটা লাফিয়ে মুখ দিয়ে বের হয়ে আসবে!



চুড়ায় উঠার ট্রেইল



জ্বালামুখ




জ্বালামুখের এখান-সেখান দিয়ে সবসময়ই এমন সালফার মিশ্রিত ধোয়া বের হয়। বেশি কাছে যাওয়া নিষেধ।



নীচে মেঘ, আর দুরে ঝাপসা দেখা যায় নেপলস নগরী আর বে অফ নেপলস। মেঘ না থাকলে পরিস্কার দেখা যায়।



নীচের মেঘ উঠে এসে জ্বালামুখের ভিতরে প্রবেশ করেছে।



লাভা পাথর। এটাই অগ্নুৎপাতের সময় গলিত আকারে বের হয়ে আসে, পরে জমাট বেধে পাথর হয়। এই ৪টা ভিসুভিয়াসের জ্বালামুখ থেকে নিয়ে এসেছিলাম স্মৃতি হিসাবে।


নামার সময়ও বেশ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় কারন পায়ের নীচে কোন ঘাস নেই, আছে অতি ক্ষুদ্রকায় নুড়ি পাথর। একটু অসাবধান হলেই পিছলে পড়ার সম্ভাবনা।



ফেরার পথে বাসের জানালা দিয়ে শেষ বারের মতো দেখলাম ভিসুভিয়াসকে। মনে মনে বললাম, মানুষকে যথেষ্ট জ্বালাতন করেছো। এবার অন্ততঃ তোমার রিটায়ারমেন্টে যাওয়া উচিত!


জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা, একরাশ মুগ্ধতা আর বিপদে না পরার স্বস্তি নিয়ে পম্পেই ফিরে এলাম। হোটেল থেকে ব্যাগ নিয়ে রওয়ানা দিলাম বাস স্ট্যান্ডের দিকে। এর পরের এবং ইটালীর শেষ গন্তব্য রোমের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হবে এবার।

তথ্য কিছু গুগলের, কিছু ওখানকার পরিচিতিমূলক পুস্তিকা এবং বোর্ডের, প্রথম ছবি তিনটা নেট থেকে, বাকিগুলো আমার ক্যামেরা এবং ফোনের।

চলবে.........

স্বপ্নযাত্রা: ইটালী - ৫
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ৯:৩৮
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×