somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন যখন যেমন (২য় এবং শেষ পর্ব)

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




পলাশকে এগিয়ে আসতে দেখে শীলা উঠে দাড়ালো। তারপর কি মনে করে আবার বসেও পড়লো, যেন কি করবে বুঝতে পারছে না! শীলার এই অপ্রস্তুত অবস্থা দেখে ওর মজাই লাগলো। ও নিজেও অপ্রস্তুত, তবে আপ্রান চেষ্টা করছে যেন বোঝা না যায়। ধীর পদক্ষেপে শীলার সামনে গিয়ে দাড়ালো ও।
- কেমন আছো শীলা? পৃথিবীটা আসলেই গোল তাই না? পরিচিত মানুষের সাথে কিভাবে কিভাবে যেন দেখা হয়েই যায়! পলাশ বললো।
- তুমি এখানে কোথ্থেকে? ইংল্যান্ডে কবে এসেছো? শীলা জিজ্ঞেস করলো।
- বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল। কেন তুমি জানতে না?
- নাতো! কেউতো বলেনি আমাকে! অবশ্য দেশে খুব বেশী মানুষের সাথে যোগাযোগ নাইও আমার।
- কফি খাবে? কফি খেতে খেতে কথা বলি? পলাশ বললো। তারপর ওকে হ্যা - না বলার সুযোগ না দিয়েই বললো, দাড়াও, কফি নিয়ে আসি।

আসলে এই ব্রেকটুকু পলাশ ইচ্ছে করেই নিলো। যতোই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুক, এতদিনের পুষে রাখা রাগ বার বার বের হয়ে আসতে চাইছে। ওর মাথায়ই ঢোকে না একটা মেয়ে কিভাবে একজনের সাথে প্রেম করে আরেকজনের সাথে ঘর-সংসার করতে পারে! মেয়েরা আসলে এমনই হয়! সবই পারে!! কফির দোকানের লাইনে দাড়িয়ে এসবই আবার অনেকদিন পর নতুন করে চিন্তা করলো ও। যাইহোক, মাথা ঝাকিয়ে মাথা থেকে এসব চিন্তা দুর করার চেষ্টা করলো। শীলার কাছ থেকে আঘাত পাওয়ার পর কোন ব্যাপারেই অবাক না হওয়ার, নির্বিকার থাকার যে প্র্যাকটিস ও করে এসেছে এতদিন, সেটাকে ও নষ্ট হতে দিতে পারে না। কোনভাবেই না। আবার স্বাভাবিক হয়ে মুখের হাসি ফিরিয়ে আনলো পলাশ, একেবারেই সাধারন আচরণ করবে ও শীলার সাথে এখন!

ফিরে এসে দেখে শীলা সেভাবেই বসে আছে। উদাস দৃষ্টি দূরে কোথাও নিবদ্ধ, কিংবা কিছুই দেখছে না, হয়তো বা। - নাও, কফি নাও। পলাশ কফির পেপার কাপটা এগিয়ে দিল। তোমার স্বামী কেমন আছে? জিজ্ঞেস করলো।
- আছে একরকম। শীলা কাপটা নিলো, আলতো করে একটা চুমুক দিয়ে বললো,
- সিগারেট ধরেছো দেখছি, বউ কিছু বলে না! স্যরি, না জেনেই বললাম। বিয়ে তো নিশ্চয়ই করেছো, বউ কেমন আছে?
- না, বিয়ে আর করা হয়ে ওঠেনি, সম্ভাবনাও কম! এই সিগারেটটাই সঙ্গ দেয় এখন আমাকে!
- কেন? সারা জীবন একাই কাটিয়ে দেয়ার প্ল্যান! বিয়ে করে ফেলো!
- মাঝে-মধ্যে যে বিয়ের কথা ভাবি না তা না, কিন্তু সাহস পাই না। কোন মেয়েকেই আর বিশ্বাস করতে পারিনা।

শীলা আর কোন কথা বললো না। মাথা নীচু করে বসে রইলো। পলাশ বললো, কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, খাও। শীলা এবার তাকালো পলাশের দিকে। চোখ টলমল করছে, যে কোন সময় গড়িয়ে পড়বে পানি! বললো, সবাই তো আর একরকম না। ভালো দেখে একটা মেয়ে বিয়ে করো। শীলার চোখের পানি দেখে পলাশের ভিতরটা তেতে উঠলো। এই মেয়ে তো দেখা যাচ্ছে ভালো অভিনয়ও জানে! পলাশ আর নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলো না। অনেকদিনের জমানো রাগ উগরে দিলো। বললো,

- ভালো মেয়ে? সে তো এক সময় তুমিও ছিলে। ছিলে না? তারপর কি করলে? এতো দিনের সম্পর্ককে লাথি মেরে বিদেশে থাকা ছেলেকে বিয়ে করলে। কারন কি, কারন তোমার বিদেশে থাকার শখ! তোমার প্রেমিকের অনিশ্চিত ভবিষ্যত! ভালো মেয়ের ডেফিনেশান কি শীলা? ভালো মেয়ে দুনিয়াতে অনেক-ই আছে, কিন্তু বুঝবো কিভাবে কে ভালো আর কে তোমার মতো? আমারই দোষ। বুঝতে পারি নাই যে তুমি একটা লোভী, বেইমান। এই যে, কে কেমন বুঝতে পারি না, তাই কারো সাথে সম্পর্কেও জড়াই না। বিয়ের পর যদি দেখি আমার বউ তোমার চেয়েও খারাপ, তখন?

পলাশ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ শীলা ওকে অপ্রস্তুত করে দিয়ে দু’হাতে মুখ ঢেকে হাউমাউ করে অদম্য কান্নায় ভেগে পড়লো। এমন খোলা জায়গায় শীলা এই কান্ড করবে এটা ওর চিন্তায়ও আসে নি। হতচকিত পলাশ আসে-পাশে তাকিয়ে দেখলো। বিশাল খোলা জায়গা। ধারে কাছে কেউ নাই, দুরে কয়েকজন বসা। তারা নিজেদের নিয়েই ব্যাস্ত, এদিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। তাকাবেও না, পলাশ জানে। এটাই ইংলিশ কালচার। কিন্তু সমস্যাটা অন্যখানে। কিংস ক্রস স্টেশান টা খুব বড় আর ব্যাস্ত স্টেশান। তাছাড়া লাগোয়া কিংস ক্রস প্যানক্রাস স্টেশানটা একটা আন্তর্জাতিক রেল স্টেশান। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এখানে নিরাপত্তা অত্যন্ত কড়া। চারিদিকে প্রচুর পুলিশ থাকে। এই মূহুর্তে কোন পুলিশ দেখছে না, কিন্তু তিন চারটা পুলিশের গাড়ী ঠিকই দাড়িয়ে আছে।

এদিকে শীলার কান্না থামার কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। দু’এক বার, এ্যাই শীলা, কি করছো, বলেছে কিন্তু লাভ হয়নি কোনো। শেষ পর্যন্ত যা ভয় করছিলো তাই হলো। সবচেয়ে কাছের গাড়ীটা থেকে দু’জন নেমে এলো। একটা মহিলা, আরেকটা পুরুষ পুলিশ। কাছে এসে মহিলা পুলিশটা বললো,

- ম্যাম, আর ইউ ওকে? সব ঠিক আছে? কোন সমস্যা?
- ঠিক আছে অফিসার। আসলে, শী’জ গোয়িং থ্রু এ সিরিজ অফ ফ্যামিলি ডিজাস্টার্স। একটু পরই ঠিক হয়ে যাবে। পলাশ বললো।
- ওকে স্যার, লেট হার টেইক সাম টাইম। আশাকরি দ্রুতই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা কাছেই আছি, সমস্যা হলে জানিও। এবার পুরুষ অফিসারটা বললো।

কথা শেষ করে ওরা আবার গাড়িতে ঢুকে গেল। কিন্তু পলাশ জানে ওদের ওপর থেকে নজর সরাবে না এই দু’জন। এদিকে পুলিশের সাথে কথোপকথনে একটা উপকার হয়েছে, শীলার কান্না থেমেছে, যদিও হেচকির মতো শব্দ করছে এখনও। ওকে আরেকটু সময় দিল পলাশ, তারপর বললো, আসলে অনেক দিনের রাগ, তারপরও বেশীই বলে ফেলেছি। স্যরি। শীলা বললো, না পলাশ, তোমার দিক থেকে তুমি ঠিকই আছো। যা বলেছ এটাই আমি ডিজার্ভ করি আসলে। তবে তুমি সবটা জানো না। তারপর শীলার কাহিনী শুনলো পলাশ।

শীলার স্বামী জামিলের বাবা রহমান সাহেব আর শীলার বাবা রফিক সাহেব, দু’জন ছোট বেলার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শীলার যখন ছয় বছর বছর বয়স তখন রফিক সাহেব ব্যবসায় লোকসান দিয়ে প্রায় পথের ফকির হয়ে যান। সেখান থেকে রহমান সাহেব ওনাকে টেনে তোলেন। তখন সম্পর্কটাকে আরও মজবুত করার জন্যে রফিক সাহেব বন্ধুর কাছে প্রতিজ্ঞা করেন শীলা বড় হলে বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন। এই ঘটনা শীলা জানতো, তবে গুরুত্ব দেয়নি কখনও। এরই মধ্যে জামিল ইংল্যান্ডে চলে আসে পড়তে আর শীলা প্রেমে পড়ে পলাশের। পলাশের সাথে শীলার শেষ যেদিন কথা হয় তার কয়েকদিন আগেই জামিল দেশে যায় বিয়ে করতে। স্মার্ট আর সুন্দরী শীলাকে জামিলের আগেই পছন্দ ছিল।

শীলা যখন দেখলো বিয়ের ব্যাপারে সবাই সিরিয়াস তখন ও জামিলকে ওর সম্পর্কের কথা খুলে বলে। ওর বাবা জামিলের কাছ থেকে সব শুনে শীলাকে বকাঝকা কিছুই করেন নি, শুধু বলেছেন, শীলা যদি জামিলকে বিয়ে না করে, পরিবারের অসন্মান করে, তাহলে বিষ খেয়ে মরা ছাড়া ওনার আর কোন উপায় থাকবে না। তখন বাধ্য হয়ে শীলা রাজী হয় আর অনুকে ওসব কথা বলে যাতে করে পলাশ ওকে ঘৃনা করে এই সম্পর্ক ভূলে যায়, আর নতুন করে জীবন শুরু করে।

ইংল্যান্ডে এসে শীলা চেষ্টা করে জামিলের সাথে মানিয়ে নিতে। কিন্তু কিছু হলেই জামিল ওর পুরানো সম্পর্কের কথা বলে খোটা দিতো, সব সময় খারাপ ব্যাবহার করতো। এমনকি দু’বছর আগে যখন শীলার বাবা মারা যান, ওকে দেশেও যেতে দেয়নি। কারন ওর ধারনা ছিল শীলা দেশে গিয়ে পলাশের সাথে দেখা করবে। তিক্ততা দিনকে দিন বাড়তেই থাকে এবং বছর খানেক আগে এক পর্যায়ে জামিল শীলাকে প্রচন্ড মারধোর করে ফলে বাধ্য হয়ে শীলা পুলিশ ডাকে। তারপর থেকেই শীলা আলাদা থাকে, ছোট-খাটো একটা চাকুরী নিয়েছে। ইতোমধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে ডিভোর্সের আবেদন করেছে, আগামী মাসে হয়ে যাবে।

সব শুনে পলাশ স্তব্ধ হয়ে গেল! দু’জন চুপচাপ বসে থাকলো অনেকক্ষণ। তারপর পলাশ বললো,
যে কোন কারনেই হোক, এক সময় তুমি আমার হাত ছেড়েছিলে। আমার হাত কিন্তু বাড়ানোই আছে, এখনও। তুমি কি ধরবে? আবার!!!




পড়া শেষ? ওয়েইট এ বিট! এই গল্পের আইডিয়াটা মূলতঃ একটা গান থেকে এসেছে। সেই গানটা শুনে যান;
view this link


প্রথম পর্বের লিংক
view this link

ছবিটা নেট থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:২৯
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×