'৭১ পরবর্তী - অতঃপর আত্ন পরিচয়হীন বাঙ্গালী
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
প্রথমতঃ
“হে তোমরা শুনে রাখো ১৯৭১ সালে কোন মুক্তিযুদ্ধ হয়নি! হয়েছিল ভাইয়ে-ভাইয়ে গণ্ডগোল”- আমজামাতি।
দ্বিতীয়তঃ
“হে তোমরা শুনে রাখো ১৯৭১ সালে কোন মুক্তিযুদ্ধ হয়নি! হয়েছিল দুই কুত্তার কামড়াকামড়ি”- আমপ্রগতি।
এই দুইটা ধারায় বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি বা রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনার নিয়ামক হিসেবে সচল আছে। আর একটি ধারার প্রবর্তন খুব শীঘ্রই আসবে। আর তা হল-
তৃতীয়তঃ
“১৯৭১ সালে কোন মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, জাতির জনক এবং স্বাধীনতার ঘোষক বলে কেউ ছিল না”।
তবে এই ধারার প্রবর্তক কে বা কারা হবে তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও উপরোক্ত ধারা দুটির সংকর প্রজাতি-ই হয়ত হবে!
যে কারণেই হোক স্বাধীনতা পরবর্তী বিবর্তনের ধারা এই পথেই ধাবিত হচ্ছে। যারা সাধারণ মানুষ নিজের জীবন বাজি রেখে মহান স্বাধীনতার জন্যে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং দেশ ও জাতিকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করেছিল। অথচ স্বাধীন দেশে তাঁরা পদে পদে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত হতে লাগল। আর কৌশলে স্বাধীনতা বিরোধীরা রাষ্ট্রীয় ভাবে ক্ষমতার কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নিয়ামক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে লাগল।
আমরা কারণে অকারণে ধর্ম ভিত্তিক কিছু দলকে স্বাধীনতা বিরোধী বলে অকথ্য গালাগালি করে থাকি। এমন কি আমরা অনেকে ধর্ম ভিত্তিক দল গুলকে বকাবকি করতে গিয়ে ধর্মকেই অনেক অশ্রাব্য ভাষায় ধিৎকার করি। আমরা ধর্ম এবং ধর্ম ভিত্তিক দল বিষয় দুটির মধ্যে যে বিস্তর ফারাক আছে তা উপলব্ধি করতে পারি না, হয় আমাদের জ্ঞানের অভাব না হয় আমরা ধর্ম বিরুদ্ধ।
তবে ধর্মহীন বা ধর্ম বিরোধী বলে যে কিছু দল বা ব্যাক্তি আমাদের দেশে আছে তারা অনেকে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শুধু অস্বীকার নয় রীতিমত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ছিল এবং আছে। যারা নিজেদেরকে রীতিমত প্রগতিশীল বলে দাবি করে। কিন্তু আমি কোন ভাবেই বুঝে উঠতে পারি না যে ধর্ম বিরোধী বা ধর্মহীন হলে তাকে কিভাবে প্রগতিশীল বলা যায়।
আমরা জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে বীরের মর্যাদা পেলেও আজকে হয়ত উপলব্ধি করার সময় এসেছে যে, আমরা জাতি হিসেবে আদর্শহীন, মেধাহীন, বিবেকহীন এবং এক অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে পরিচিত হতে যাচ্ছি।যে যাই বলুক খুব ধীরে গতিতে হলেও দেশ উন্নয়নের লাইনেই আছে তাতে সন্দেহ নেই। বাঙ্গালী জাতি বা ধর্ম বিশ্বাসে জাতি হিসেবে আমরা আমাদের আত্ন পরিচয় যে হারাতে বসেছি তাতে হয়ত কেহ দ্বিমত প্রসন করবেন না।
আমরা সামান্যতেই আমাদের ধর্মীয় আদর্শের কথা বা অসাপ্রদায়িক বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে রাজনীতির মাঠে ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে বেশ পারঙ্গম।
আমাদের ভাগ্য অনেক ভাল যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। এই একবিংশ শতাব্দীতে মুক্তিযুদ্ধ হলে দেশ কোন দিনই স্বাধীন হত না, কারণ আমরা বিশেষ করে কিছু নতুন প্রজন্ম যে ভাবে জ্ঞানহীন, বিবেকহীন, আদর্শহীন হয়ে যাচ্ছি তা থেকেই পরিষ্কার। একজন বলল জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিল না ছিল রাজাকার এবং পাকিদের চর অমনি আমরা এক গোষ্ঠী চিৎকার করে বললাম ইয়ে ইয়ে বস...... আবার একজন বলল শেখ মুজিব ছিল রাজাকার সে আসলে দেশ নেতা ছিলনা ঠিক অমনি আমরা অন্য আরেকটি গোষ্ঠী চিৎকার করে বললাম ইয়ে ইয়ে বস......। তাহলে আমরা কেমন জাতি! আমরা বিবেকহীন নয়? আদর্শহীন নয়? জ্ঞানহীন নয়?
সময়ের প্রয়োজনে ক্ষমতাসীন দলগুলোর পালা বদলের সাথে সাথে তারা মেতে উঠল নগ্ন প্রতিযোগিতায়। কে কত বেশি স্বাধীনতা বিরোধীদের পুরস্কৃত করতে পারে। একদল মনে করল যে, কে বা কারা বেশি স্বাধীনতা বিরোধী ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা তাকে বা তাদের স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভাগ দিয়ে ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা কে ভুলন্ঠিত করি। তা তারা করেছিল বটে। আর এই পুরুস্কার প্রাপ্তরা হল ধিক্কৃত আমজামাতি যারা প্রথম উক্তির প্রবর্তক। কিন্তু অন্য দল যখন ক্ষমতার স্বাদ পেল তারা ভাবল নাহ! তা কি করে হয় যে ভাবেই হোক আমরা এর চেয়ে নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত কারা আছে তাদের আমরা ক্ষমতার ভাগি বা অংশীদার করে মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের আত্ন ত্যাগ পদ ধূলায় মিশে দিব। যে ভাবা সেই কাজ। নিয়োগ করা হলো বিশেষজ্ঞ কমিটি , খুজে বের কর আমজামাতির চেয়ে নিকৃষ্টদের। কমিটির রিপোর্টে বলা নেত্রীর আদেশ যথাযথ ভাবেই পালন করা হয়েছে। আমরা এই নগ্ন প্রতিযোগিতায় এবারের মত চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছি। নেত্রি বললেন তোমরা আমাকে তারাতারি জানাও আমার তর সয়ছেনা। বিশেষজ্ঞ কমিটি একে একে যুক্তি সহকারে উপস্থাপন করলেন যে কেন এরা ওদের চেয়ে নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত। আমজামাতিরা ও আমপ্রগতিরা উভয়ে স্বাধীনতার বিরোধিতা করলেও গালাগালিতে আমপ্রগতিরা অনেকটা এগিয়ে। যেমনঃ
১. আমজামাতিরা গালিগালাজ করতে পারে না যেটা আমপ্রগতিরা পারে, এরা বাঙ্গালী জাতিকে কুত্তার বাচ্চা বলেছে, জাতির পিতাকে কুত্তা বলে গালাগালি করেছে যা ওরা পারেনি।হ্যাঁ আমি দিলীপ বুড়ার কথা বলছি। সেই বলেছিল ১৯৭১ সালে কোন মুক্তিযুদ্ধ হয়নি হয়েছে দুই কুত্তার কামড়াকামড়ি মানে আমাদের বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হল কুত্তা আর আমরা হলাম কুত্তার বাচ্চা।
২. আমজামাতিরা ভোটে দাঁড়ালে মোটামুটি ৫ ভাগ ভোট পায় কিন্তু এরা দাঁড়ালে জামানত বাতিল হয়।
৩. আমজামাতিদের প্রতীক অনেক চেনে কিন্তু আমপ্রগতিদের প্রতীক নাই।
৪. বাঙ্গালীর প্রানের স্পন্দন বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকাশ্যে তেমন কিছু না বললেও আমজামাতিরা মুসলিম মিল্লাতের মাগফেরাতের সময় নিশ্চয় তাঁকে ব্যতিরেখে দোয়া করে না। কিন্তু আমপ্রগতিরা বাঙ্গালীর প্রানের স্পন্দন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে ট্যাঙ্কের উপর উল্লাস করে ও শোক প্রকাশের পরিবর্তে মিষ্টি বিলিয়ে আনন্দ উল্লাস করে। হ্যাঁ আমি ইনুর কথাই বলছি। যে মূর্খ সমাজ তান্ত্রিক গণতন্ত্রের পণ্ডিত হয়ে নেত্রীদের জ্ঞান দেয়।
অতএব কমিটির সুপারিশ ভিত্তিতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত হিসেবে নেত্রি তাদের কে প্রাপ্যের চেয়ে অধিক ক্ষমতার ভাগ দিয়ে ক্ষমতাসিন করে শহীদদের আত্নত্যাগ ও জাতির জনক কে যথাযথ ভাবে অসম্মান করলেন এবং নগ্ন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করলেন।
তবে কালের বিবর্তনে যে তৃতীয় ধারাটি আসবে তা প্রথম এবং দ্বিতীয় ধারাগুলোকে বিদায় করে দিবে এবং মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার স্থপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক বলে কিছু নেই এইভাবে একদিন জাতি আত্ন পরিচয় সংকটে পতিত হবে! যদি এই আত্ন পরিচয় ইতিহাস বিকৃত হওয়া এখনি চিরতরে বন্ধ না হয়।
তবে আশার কথা হল, রাত যত গভীর হয় দিনের আলোর প্রভাত ততই ঘনিয়ে আসে।অতএব সুদিন আসন্ন।
পাকিপন্থী নিপাত যাক—বাংলাদেশপন্থী জিন্দাবাদ
ভারতপন্থী নিপাত যাক—বাংলাদেশপন্থী জিন্দাবাদ
জয় হোক মেহনতি মানুষের।।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন