দৃষ্টি আকর্ষণ: (প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি, দেরি করে আজ পোস্ট দেওয়ার জন্য। সকালে ল্যাপটপ নিয়ে বসেও নেটের স্পিড কম থাকায় লিখতে পারিনি। সারাদিনের ব্যস্ততা কাটিয়ে এখন লিখছি)
গত পর্বের পর:
* নেপালের ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আমাদের গন্তব্য কাঠমান্ডুর বাচপান নামের এক জায়গায়। অনেক পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে, অলি গলি ঘুরে প্রায় আধা ঘন্টা পর এলাম হোটেলে। মোটামুটি মাঝারি মানের এই হোটেল পেয়েছিলাম একেবারে সস্তায়।
সস্তায় পাওয়ার একটা কারণও অবশ্য ছিল। আমার শ্যালকের যে ফ্রেন্ড এলনার কথা বলেছিলাম, এই হোটেল তার জানি দোস্ত স্কুলের বান্ধবী সুজানার বাবার। তো এই কারণে মাত্র ৬০০ নেপালি রুপিতে পেয়ে যাই এই হোটেল। গরম পানি, ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা ছিল। রুমটা মাঝারি মানের। মন্দ না। মাত্র তো এক রাতের ব্যাপার। পরদিনই আমাদের গন্তব্য পোখরা। তো রুমে ঢুকে ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে গোসল সেরে বের হলাম খেতে। ক্ষুধায় আমাদের সবার জান যায়। আমার ছোট্ট মেয়ে মৌলি সারাদিন কিছু খেতে চায় না, সেও বলছে মামনি ক্ষুধা লেগেছে।
আমরা একটা ট্যাক্সি করে চলে এলাম থামেল নামের এক জায়গায়। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল তখন। থামেল নেমে ডলার ভাঙালাম। এক ডলারের বিপরীতে পেলাম ৯৭.৫০ টাকা করে। বাংলাদেশের তুলনায় অনেক। কিছু ডলার ভাঙালাম। কিছু রেখে দিলাম। এরপর একটা খাবার হোটেলের খোঁজে গেলাম। নেপালে বেলা একটার মধ্যে লাঞ্চ শেষ হয়ে যায়। আমরা পড়লাম বিপদে। তাহলে উপায়! আরেকটি ছোটো কিন্ত ভালো মানের রেস্তরায় ঢুকলাম। সেখানে অর্ডার দিলাম খাবার। নেপালি খাবার।বলল একটু দেরি হবে। নেপালি প্লেন রাইস। নেপালি শাক শবজি। মাটন। ডাল। টক দই। চার প্লেট খাবার। ১৩০০ রুপি। খেলাম। মন্দ লাগল না। তবে ওরা খাবারে ঝালের চেয়ে মিষ্টি একটু বেশি দেয়।খাবার খেয়ে আমাদের নিয়ে গেল একটা পুরনো জমিদার বাড়িতে। জায়গাটার নাম বসনত পুর। ওলড হেরিটেজের অন্তভুক্ত ওই জমিদার বাড়িটা এখন মিউজিয়াম। ওরা বলে দরবার হল। এটা নাকি নেপালি রাজার প্রথম দরবার হল।
সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাটছি তো হাটছি। যেন পুরনো ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের গলি। অনেকটা পথ হেটে তবে সেখানে এলাম। দেখি আমাদের দেশের মতো খোল, করতাল, হারমনিয়াম, বাঁশি বাঁজিয়ে নাম -কীর্তন করছে অনেক লোক। একদল লোক মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেটা শুনছে। আমরা যখন গিয়ে পৌছালাম ততক্ষণে দরবার ক্লোজড। মানে সেদিনকার মতো বন্ধ। বাইরে থেকে পুরাকীর্তির বেশ কিছু ছবি তুললাম। মিউজিয়ামের গেটে অল্প একটু গিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম আসলেই কি আছে ভেতরে। অল্প একটু যাওয়ার পর নিরাপত্তা কর্মকর্তা বাধা দিল। মেয়েকে নিয়ে গেটের বাইের দাড়িয়ে ছবি তুললাম।
নেপালি মেয়েরা পরনে কোনো ওড়না ব্যবহার করেনা। টপলেস, সঙ্গে জিনস। পুরা ইউরোপিয়ান স্টাইল। স্কুট্টি চালাচ্ছে মেয়েরা। দৃশ্যটা দেখার মতো।হাতে গ্লাভস। মাথায় হেলমেট। চোখে গগলস। ফর্সা মেয়েরা যখন রাস্তা কাপিয়ে ছোটে চুল উড়িয়ে এত সুন্দর লাগে। দেখি আর ভাবি দৃশ্যটা আমাদের দেশে হলে এতক্ষণ মৌলবাদীরা কি চিল্লাপাল্লা লাগিয়ে দিত। সে যাক। আর একটা কথা মেয়েরা কখনো মোটরসাইকেলের পেছনে বসলে এক দিকে পা দিয়ে বসে না। দু দিকে পা দিয়ে বসে। আবাল বৃদ্ধবণিতা সবাই। বিষয়টা আমাকে অবাক করেছে।তো যার জন্য এটা বলা। চলনে বলনে ইউরোপিয়ান হলেও মনে প্রাণে তারা সবাই প্রচুর ধার্মিক। মন্দিরের শহর বলা হয় কাঠমান্ডুকে । যে মন্দিরেই গেছি, দেখেছি মেয়েরা মাথায় সিঁদুরের মতো ফোটা নিচ্ছে। পুজা করছে। দরবার হলের পাশের মন্দিরেও এর ব্যতিক্রম চোখে পড়ল না। সেখানে দেখলাম বানর আর কবুতর। বিশাল আকৃতির দুটা তবলা। সেখান থেকে হাটতে হাটতে চলে এলাম সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর হেটে একটা মার্কেটে ঢুকলাম। এক দোকানে দেখি এক বাঙালি মালিক। ভদ্র মহিলার বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুর। আমাদের দেখে খুব খুশি হলেন। অনেকক্ষণ কথা বললেন। ওই মার্কেটে একটা চশমা কিনলাম বউয়ের। এরপর এক দোকানে নেপালি চা খেলাম।হাটতে হাটতে সবাই ক্লান্ত। এরপর এক দোকানে গিয়ে আচার ও চাটনি কিনলাম। পরে একটা ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে ফেরা। একটা এনসেল মোবাইল কোম্পানির সিম কিনে দিলো এলনা বান্ধবী। রাতে ওদের সঙ্গে টুকটাক গল্প করে সকালে পোখরা যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানালাম। পাশেই একটা প্রাইভেট কার স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন পোখরা যায় অনেক কার। সেটারই একটাতে আমাদের জন্য বুকিং দেওয়া হলো। ভাড়া মাত্র ৫০০ রুপি। তবে আমাদের লাগেজ ও দুই জন মিলিয়ে ১৫০০ রুপি চাইলো। দরদাম করে ১২০০তে রাজি হলো। এসব শেষ করে চোখে রাজ্যের ঘুম নিয়ে বিছানায় ঢলে পড়লাম।
আরেকটা ব্যাপার বলে রাখি: নেপালে মদ, বিয়ার, জিন, হুইস্কি, স্কচ একেবারে উন্মুক্ত। পানের দোকান, চায়ের দোকান, টং ঘর থেকে শুরু করে যেকোনো ফাইভস্টার হোটেল দেদারছে মিলছে সব। চাইলেই যে কেউ এখান থেকে সব কিনতে পারবেন।
আগামীকাল পড়ুন: পোখরা ভ্রমণের বিস্তারিত গল্প।
আগের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন:
Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





